ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

অন্তিম শ্রদ্ধা শহীদ মিনারে, শেষ শয্যা মিরপুর বুদ্ধিজীবী কবরস্থানে

প্রকাশিত: ১২:১২, ২৮ নভেম্বর ২০১৯

 অন্তিম শ্রদ্ধা শহীদ মিনারে, শেষ শয্যা মিরপুর বুদ্ধিজীবী কবরস্থানে

স্টাফ রিপোর্টার ॥ নানা শ্রেণী-পেশার মানুষ। সামাজিক-সাংস্কৃতিক-রাজনৈতিক সংগঠন। সরকারী-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান। ভক্ত-অনুরাগী। সবার পক্ষ থেকে শেষ বিদায় জানানো হলো কবি, স্থপতি ও মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের ট্রাস্টি রবিউল হুসাইনকে। বুধবার সকালে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার প্রাঙ্গণে তার কফিনে ফুল দিয়ে অন্তিম শ্রদ্ধা জানানো হয়। শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে মিরপুর বুদ্ধিজীবী কবরস্থানে তাকে দাফন করা হয়। এর আগে বুধবার বেলা পৌনে ১১ টার দিকে মরদেহ কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে নিয়ে আসা হয়। মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে থাকা গগনশিরীষের নিচে স্থাপন করা হয় কফিন। ততক্ষণে ফুল হাতে দাঁড়িয়ে থাকা মানুষের লাইন দীর্ঘ থেকে দীর্ঘতর হয়েছে। কেউ পুষ্পস্তবক নিয়ে এসেছেন। কেউ গুচ্ছ গুচ্ছ গোলাপ। দলবেঁধে যেমন এসেছেন তেমনি এসেছেন একলাটি হয়ে। এত নিভৃতচারী প্রচারবিমুখ একজন কবির জন্য, স্থপতির জন্য, একজন সংগ্রামীর জন্য এমন শোক সমাবেশ হতে পারে, অনেকেই হয়ত ভাবেননি। কিন্তু তা-ই হয়েছে। জীবদ্দশায় রবিউল হুসাইন নিজেকে অতি সামান্য অতি ক্ষুদ্র হিসেবে উপস্থাপন করতে পছন্দ করতেন, পরিচিতরা, স্বজনরা তা জানেন। বিদায়ের দিনে অবাক হয়েছেন তারাও। নাগরিক সমাজের পক্ষে শ্রদ্ধা-ভালবাসা নিবেদনের এই সুযোগ করে দেয় সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট। জোটের আয়োজনটি দেখতে দেখতে সবার হয়ে ওঠে। এদিন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পক্ষ থেকে রবিউল হুসাইনের কফিনে পুষ্পার্ঘ অর্পণ করেন তার বিশেষ সহকারী বিপ্লব বড়ুয়া ও আওয়ামী লীগের দফতর সম্পাদক আব্দুস সোবহান গোলাপ। সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের পক্ষে শ্রদ্ধা জানান সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ। আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকেও কফিনে ফুল দেয়া হয়। শ্রদ্ধা জানান সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব কামাল লোহানী, মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের ট্রাস্টি ডাঃ সারওয়ার আলী, মফিদুল হক, ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির সভাপতি শাহরিয়ার কবির, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য আখতারুজ্জামান, প্রতœতত্ত্ব অধিদফতরের মহাপরিচালক হান্নান মিয়া প্রমুখ। প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে ছিল বাংলা একাডেমি, জাতীয় জাদুঘর, মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্মৃতি জাদুঘর ও জাদুঘরগুলোর আন্তর্জাতিক সংগঠন আইকমের বাংলাদেশ শাখা। শ্রদ্ধা জানায় সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট, জাতীয় কবিতা পরিষদ, বেঙ্গল ফাউন্ডেশন, বাংলাদেশ ইতিহাস সম্মিলনী, শিশু কিশোর সংগঠন কেন্দ্রীয় কচিকাঁচার মেলা, বাংলাদেশ স্থপতি ইনস্টিটিউট, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এ্যালামনাই এ্যাসোসিয়েশন, সম্মিলিত সামাজিক আন্দোলনসহ বিভিন্ন সামাজিক, সাংস্কৃতিক সংগঠন। প্রচ- রোদের মধ্যেও লম্বা সময় ধরে চলতে থাকে শ্রদ্ধা নিবেদন পর্ব। শ্রদ্ধা জানাতে আসা বিশিষ্টজনরা মাইকে রবিউল হুসাইনের স্মৃতিচারণ করেন। আলাদা আলাদাভাবে কথা বলেন সাংবাদিকদের সঙ্গেও। এ সময় জাতীয় অধ্যাপক আনিসুজ্জামান বলেন, রবিউল হুসাইন কবি হিসেবে বিশিষ্টজন ছিলেন। স্থাপত্যবিদ্যায় তার একটা বড় ভূমিকা ছিল। পাশাপাশি সব সময় মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে হৃদয়ে ধারণ করেছিলেন। নিজের সৃষ্টির মধ্যে, গুণগ্রাহীদের ভালবাসায় রবিউল হুসাইন বেঁচে থাকবেন বলে মনে করেন তিনি। বিশিষ্ট সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব ও সাবেক সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর বলেন, রবিউল হুসাইন আমাদের ভাই ছিলেন। বন্ধু ছিলেন। তার মৃত্যু আমাদের জন্য অত্যন্ত বেদনার কারণ হয়েছে। সারা জীবন মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে সযতেœ লালন করেছিলেন তিনি। বহু প্রগতিশীল সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। নেতৃত্ব দিয়েছেন। সেসব সংগঠন তার হয়ে কাজ করলে সমাজ, রাষ্ট্র, দেশ নিশ্চয়ই ভাল কিছু পাবে। কিছু কিছু মানুষ জীবদ্দশায় তার কাজের স্বীকৃতি ও মর্যাদা পেয়ে যান মন্তব্য করে তিনি বলেন, আমি মনে করি, রবিউল হুসাইনও পেয়েছেন। শুধু পুরস্কারের মধ্য দিয়ে নয়, শিল্প-সংস্কৃতির মানুষ তাকে আন্তরিকভাবে ভালবেসেছেনÑ এটাও গুরুত্বপূর্ণ দিক।
×