ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ১৭ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

খোকন ভূঁইয়া

নিয়মিত চলচ্চিত্রে কাজ করতে চাই -ফজলুর রহমান বাবু

প্রকাশিত: ১১:৫৪, ২৮ নভেম্বর ২০১৯

নিয়মিত চলচ্চিত্রে কাজ করতে চাই -ফজলুর রহমান বাবু

‘শুরুটা ১৯৭৮ সালে মঞ্চ নাটক দিয়ে। এরপর ১৯৯১ সালে টেলিভিশন নাটকে কাজ করেন। তারপর বিরতিহীনভাবে দাপটের সঙ্গে অভিনয় করছেন। অভিনয়ের জন্য সম্ভাবনাময় চাকরিজীবন ছেড়েছেন। নিশ্চিত বিলাসী জীবন ছেড়ে অভিনয়কে আপন করে নিয়েছেন। পেয়েছেন দর্শকের অফুরন্ত ভালবাসা। পেয়েছেন কাজের স্বীকৃতি। তিনি আর কেউ নয় তিনবার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারপ্রাপ্ত অভিনেতা ফজলুর রহমান বাবু। ইতোমধ্যে অভিনয় দক্ষতা দিয়ে নাটক ও সিনেমায় নিজের একটি অবস্থান তৈরি করে নিয়েছেন তিনি। এদিকে, ২০১৭ সালের সেরা কৌতুক অভিনেতা হিসেবে ফজলুর রহমান বাবুকে বদরুল আনাম সৌদ পরিচালিত ‘গহীন বালুচর’ সিনেমায় অভিনয়ের জন্য সেরা কৌতুক অভিনেতার পুরস্কার দেয়া হয়েছে। এরই মধ্যে শেষ করেছেন ‘বিশ্বসুন্দরী’ ছবির ডাবিং। ‘জ্যাম’, ‘ঢাকা ড্রিম’, ‘পায়রার চিঠি’সহ বেশ কয়েকটি ছবির কাজ নিয়ে যাচ্ছে তার ব্যস্ততা। অভিনয়ের পাশাপাশি গায়ক হিসেবেও বেশ গ্রহণযোগ্যতা পেয়েছেন অভিনেতা ফজলুর রহমান বাবু। তার গাওয়া গানের ভক্তও নেহাত কম নয়। অল্প না বয়সের সখিনা ছেড়ি, সোনাই হায় হায় রে, ইন্দুবালা ইত্যাদি গানসহ বেশ কিছু গান তিনি উপহার দিয়েছেন শ্রোতাদের। মাঝেমাঝেই তিনি অডিও ও চলচ্চিত্রের গানে কণ্ঠ দেন। সম্প্রতি নতুন একটি গানে কণ্ঠ দিয়েছেন তিনি। ‘দুঃখ দিবা কারে’ শিরোনামের গানটির সুর করেছেন সঙ্গীতশিল্পী বেলাল খান। গানটির কথা লিখেছেন এ মিজান। শীঘ্রই গানটি প্রকাশ পাবে।’ জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পেয়েছেন কৌতুক অভিনেতা হিসেবে। অথচ অভিনয় করেছেন খল চরিত্রে। এ প্রসঙ্গে কি বলবেন? কৌতুক অভিনেতা ও খল কৌতুক অভিনেতা ভিন্ন ক্যাটাগরি। আমার খল চরিত্রটি একটু হাস্যরসাত্মক ছিল। তাই হয়ত আমার পরিচালক কৌতুক অভিনেতা হিসেবে নাম দিয়েছেন। আমার শুভাকাক্সক্ষী তারা অনেকেই আপত্তি তুলেছেন। তবে আমার ব্যাখ্যা হচ্ছে হাস্যরস কোন ইস্তুল শিল্প নয়। যাদের আমরা আইডল মনে করি চার্লি চ্যাপলিন, আলতাফ মাহাবুব তারাও কিন্তু কমেডি চরিত্রে অভিনয় করেছেন। সেই জায়গায় কৌতুক অভিনেতা হিসেবে পুরস্কার পেলে সমস্যা নেই। সাম্প্রতিক কয়েক বছরে কমেডি অভিনয়ে কেউ কেউ একটু ভাড়ামি করছেন তাই হয়ত সবাই ব্যাপারটি অন্যরকমভাবে দেখছেন। আমি সব ধরনের চরিত্রে অভিনয় করেছি। নিজেও কমেডি অনেক পছন্দ করি। উইলিয়াম শেক্সপিয়ার তার নাটককে দুই ভাগে ভাগ করেছেন ট্র্যাজেডি ও কমেডি। তার কমেডি নাটকগুলো অনেক জনপ্রিয়। বাংলাদেশের জনপ্রিয় মঞ্চ নাটকেও কমেডি আছে। আমি যদি হাস্যরসের ভেতর দিয়ে জীবনের গভীরকে তুলে ধরতে পারি সমাজের নানা শোসন সত্যকে তুলে আনতে পারি তাহলে এই হাস্যরসে সমস্যা কি? ইন্দুবালা গো, তুমি কোন আকাশে থাকো, জ্যোৎস্না কারে মাখো, কার উঠোনে পড়ো ঝরিয়া, ডুবিয়া মরিলাম, মরিয়া ডুবিলাম, ডুবিয়া মরিলাম, মরিয়া ডুবিলাম, ইন্দুবালা গো, ইন্দুবালা গো জনপ্রিয় অভিনেতা ও কণ্ঠশিল্পী ফজলুর রহমান বাবুর গাওয়া এই গানটি নিয়ে সিনেমা নির্মাণ করেছেন জয় সরকার। এই সিনেমায় ইন্দুবালার নায়ক হিসেবে আছেন আনিসুর রহমান মিলন আর ইন্দুবালা চরিত্রে অভিনয় করেছেন নবাগত পায়েল। ছবিটিতে আরও অভিনয় করছেন ফজলুর রহমান বাবু, শহিদুল আলম সাচ্চু, সাদেক বাচ্চু, শামীমা নাজনীন প্রমুখ। ছবিটি আগামীকাল (২৯ নবেম্বর) মুক্তি পেতে যাচ্ছে। গ্রামীণ পটভূমির গল্প নিয়ে নির্মিত হয়েছে ‘ইন্দুবালা’ সিনেমাটি। এক অবহেলিত নারীর জীবন সংগ্রাম এবং সংগ্রাম শেষে তার জীবনের সাফল্যগাথা ছবিতে দর্শক দেখতে পাবে। ছবিটি হলে গিয়ে সবাইকে দেখার অনুরোধ জানিয়েছেন এ দাপুটে অভিনেতা। টেলিভিশন ও চলচ্চিত্র দুই মাধ্যমেই কাজ করছেন। কোন মাধ্যমে স্বাচ্ছন্দ্য লাগে? ‘সব মাধ্যমেই স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করি। তবে আমি চার মাধ্যমে কাজ করি। মঞ্চ , রেডি, টেলিভিশন ও চলচ্চিত্র। কাজের চাপের কারণে মঞ্চ নাটকে কাজ করতে পারছি না। কিন্তু প্রতিটি জায়গায় সমান গুরুত্ব দেই। তবে চলচ্চিত্রে এখন একটু বেশি প্রাধান্য দেই। কারণ, চলচ্চিত্রে একটা সময় গৌরবোজ্জ্বল জায়গায় ছিল। তবে সেটি আমরা ধীরে ধীরে নষ্ট করে ফেলছি। কিছু তরুণ চলচ্চিত্রকার, প্রযোজক ও অভিনয় শিল্পী ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছেন। সেই জায়গা থেকে আমি মনে করছি আমাদের চলচ্চিত্রে কাজ করা উচিত। দীর্ঘদিন থেকে আমরা যে ফরম্যাটের ছবি দেখতেছি সেই ফরম্যাট থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। তরুণদের সঙ্গে কাজ করতে ভাল লাগে। তরুণদের চিন্তা-চেতনাও তরুণ। এ গায়ক ও অভিনেতা মনে করেন একজন পরিপূর্ণ অভিনেতা হবার জন্য গারেুর চর্চা দরকার। চরিত্রের সঙ্গে অভিনয় ফুটিয়ে তুলে দর্শকদের চরিত্রটি বিশ্বাস করাতে হবে।’ তবে ফজলুর রহমান বাবুর ভক্তরা মনে করছেন তৌকীর আহমেদ পরিচালিত ‘অজ্ঞাতনামা’ ছবিটির জন্য তাকে সেরা অভিনেতার পুরস্কার দেয়া উচিত ছিল। কেননা তার চরিত্রটি এমনভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন যে কেউ সেটি অভিনয়ের চোখে না দেখে বাস্তবই নিয়েছেন। কাঁদিয়ে ছিলেন শত শত ভক্তদের। তাই এই ছবিটির জন্য পুরস্কার না দেয়ায় অনেকে আক্ষেপও করেছেন। এই আক্ষেপ বাবুরও। বলেন, ‘অজ্ঞাতনামা যে বছর করেছিলাম ওই বছরই অজ্ঞাতনামার জন্য পুরস্কার পাবার কথা ছিল। যারা ছবিটি দেখেছেন একশত ভাগই একমত পোষণ করেছেন। তবে সেই পুরস্কারটি অন্য ছবিতে এসেছে। ‘স্বপ্নজাল’ ছবিটির জন্য মনে করেছিলাম এবং আমার শুভাকাঙ্খীরা মনে করেছিল আমি পাবো কিন্তু সেটিও পাইনি। যার কারনে আক্ষেপ হয়। ভাল কাজের জন্য পেলে স্বার্থক মনে হয়। অনেক বেশি অনুপ্রেরণা পাই। না পেলে আক্ষেপ থাকে।’ ১৯৭৮ সাল থেকে ২০০৫ পর্যন্ত নিয়মিত করেছেন মঞ্চ নাটক। জীবনের প্রতিটি মুহূর্তে স্বপ্ন দেখেছেন অভিনেতা হওয়ার। বরাবরই তিনি নিজেকে অভিনেতা হিসেবে পরিচয় দিতে পছন্দ করেন।
×