ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

সরকারের জিরো টলারেন্স প্রমাণিত

প্রকাশিত: ১০:৫৪, ২৮ নভেম্বর ২০১৯

  সরকারের জিরো  টলারেন্স  প্রমাণিত

স্টাফ রিপোর্টার ॥ হলি আর্টিজান বেকারিতে নজিরবিহীন জঙ্গী হামলার ঘটনায় রায়ের পর বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের পক্ষ থেকে প্রতিক্রিয়ায় বলা হয়েছে, এ রায়ের মধ্য দিয়ে জঙ্গীবাদের বিরুদ্ধে সরকারের জিরো টলারেন্স নীতি প্রমাণিত হলো। পাশাপাশি নেতারা বলছেন, এই রায় বিপথগামী তরুণদের স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে সহায়ক হবে। তাছাড়া হত্যা করে যে পার পাওয়া যায় না এ রায়ের মধ্য দিয়ে আজ তা প্রতিষ্ঠিত হলো। রায় ঘোষণার পর ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ, বিরোধী দল জাতীয় পার্টি, বিএনপি, জাসদসহ বিভিন্ন দলের নেতারা গণমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলেন। তিন বছর আগে ঢাকার কূটনীতিকপাড়া গুলশানে হলি আর্টিজান বেকারিতে নজিরবিহীন জঙ্গী হামলায় ২২ জনকে হত্যার দায়ে নব্য জেএমবির সাত সদস্যের ফাঁসির রায় দিয়েছে আদালত। ঢাকার সন্ত্রাসবিরোধী বিশেষ ট্রাইব্যুনালের বিচারক মজিবুর রহমান বুধবার জনাকীর্ণ আদালতে আলোচিত এ মামলার রায় ঘোষণা করেন। জঙ্গীবাদের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতি প্রমাণিত হয়েছে হলি আর্টিজান হামলা মামলার রায়ে সাতজনের মৃত্যুদন্ডের রায়ের মধ্য দিয়ে জঙ্গীবাদের বিরুদ্ধে সরকারের জিরো টলারেন্স নীতি প্রমাণ হয়েছে বলে মন্তব্য করছেন ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ নেতারা। পাশাপাশি হত্যা করে যে পার পাওয়া যায় না- এ রায়ের মাধ্যমে তা নিশ্চিত হয়েছে বলে মনে করেন তারা। বুধবার হলি আর্টিজান হত্যা মামলার রায়ের পর এক প্রতিক্রিয়ায় এমন মন্তব্য করেন আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতারা। দলটির সভাপতিমন্ডলীর সদস্য ও সাবেক কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী বলেন, মানুষ মেরে বীরত্ব প্রদর্শনের কথা কোন ধর্মে নেই। নিরস্ত্র মানুষকে হত্যা করা- কোন যুদ্ধেও ছিল না। আমি মনে করি ইসলামের নামে যে জঘন্য কাজ তারা করেছে বিচারের রায়ে এ ধরনের লোকদের শুভবুদ্ধির উদয় হবে কিনা আমি জানি না, কিন্তু অন্যায় করে, হত্যা করে যে পার পাওয়া যায় না সেটা আজ প্রতিষ্ঠিত হলো। শেখ হাসিনা সেই জায়গাটা নিশ্চিত করলেন। শেখ হাসিনার উচ্চারণ এই পৃথিবীকে শিশুর বাসযোগ্য করবেন এই সংগ্রামে তিনি অবিচল। উনার (শেখ হাসিনার) পরিবার-পরিজন হত্যাকান্ডের বিচার করতে ২৮ বছর লেগেছে। কিন্তু আজ যারা মারা গেছেন তাদের পরিবার-পরিজন কিন্তু শেখ হাসিনার শাসনামলেই যৌক্তিক সময়ের মধ্যে বিচার পেয়েছেন। সরকার তাদের জন্য ন্যায় বিচার নিশ্চিত করেছে। আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ বলেন, শেখ হাসিনার সরকার জঙ্গীবাদ ও সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতিতে অটল। দেশে যে সন্ত্রাস জঙ্গীবাদের উদ্ভব হয়েছিল কঠোরভাবে তা সরকার দমন করেছে। বাংলাদেশের মাটিতে সন্ত্রাস ও জঙ্গীবাদের ঠাঁই নেই। দেশের প্রচলিত আইনে হলি আর্টিজানের ঘটনার সঙ্গে জড়িত ও হত্যাকারীদের বিচারে ফাঁসির রায় সেটাই প্রমাণ হয়েছে। এই রায় বিপথগামী তারুণদের স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে সহায়ক হবেÑ জাপা হলি আর্টিজান বেকারিতে জঙ্গী হামলা মামলায় ৭ আসামির মৃত্যুদন্ড ঘোষণায় সন্তোষ প্রকাশ করেছেন জাতীয় পার্টিও চেয়ারম্যান ও বিরোধী দলীয় উপনেতা গোলাম মোহাম্মদ কাদের এমপি। তিনি বলেন, এই রায়ে আইনের প্রতি সাধারণ মানুষের শ্রদ্ধাবোধ বৃদ্ধি পাবে। বুধবার গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে জাপা চেয়ারম্যান আরও বলেন, সাড়ে ৩ বছর আগে গুলশানের হলি আর্টিজান বেকারিতে পৈশাচিক হামলায় দেশে ভাবমূর্তি দারুণভাবে ক্ষুণœ হয়েছে। এ রায়ে দেশের ভাবমূর্তি অনেকাংশে পুনরুদ্ধার হবে। বাংলাদেশ এবং এদেশের সাধারণ মানুষ কখনই জঙ্গীবাদে বিশ^াস করে না। তাই কখনই জঙ্গীবাদ এদেশে মাথাচাড়া দিয়ে উঠতে পারবে না। তিনি বলেন এই রায় বিপথগামী তরুণদের স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে সহায়ক হবে। জাসদের সন্তোষ প্রকাশ জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জাসদের কার্যকরী সভাপতি এ্যাডভোকেট রবিউল আলম এবং সাধারণ সম্পাদক শিরীন আখতার এমপি আজ এক বিবৃতিতে হলি আর্টিজান বেকারিতে হামলাকারী জঙ্গীদের আদালতের রায়ে সর্বোচ্চ শাস্তি হওয়ায় সন্তোষ প্রকাশ করেছেন। তারা বলেন, জনতার আদালতের পাশাপাশি আইনের আদালতেও জঙ্গীবাদীরা অপরাধী হিসাবে প্রমাণিত হলো। তারা বলেন, এ রায় দেশে জঙ্গীবাদ দমনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। সাজানো অপরাধের বিচার কেউ চায় না- বিএনপি আলোচিত রাজধানী গুলশানের হলি আর্টিজান বেকারিতে সন্ত্রাসী হামলা মামলায় সাতজনের মৃত্যুদন্ডের রায়ের বিষয়ে তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে অধিকাংশ বিএনপি নেতা এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন। তারা বলেন, আমরা ব্যক্তিগতভাবে এ বিষয়ে কিছু বলতে চাই না। এমনকি দলের মুখপাত্র হিসেবে যিনি প্রতিদিনই সংবাদ সম্মেলন করেন সেই রহুল কবির রিজভীও এ বিষয়ে কোন মন্তব্য করতে রাজি হননি। তবে দলের যুগ্ম-মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল বলেছেন, প্রকৃত অপরাধীর বিচার সবাই চায়। সাজানো অপরাধের বিচার কেউ চায় না। বিএনপির সর্বোচ্চ নীতি-নির্ধারণী ফোরাম জাতীয় স্থায়ী কমিটির সবচেয়ে সিনিয়র সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, এটা আদালতের ব্যাপার। এখানে আমার ব্যক্তিগত কোন মতামত নেই। স্থায়ী কমিটির অপর সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, সবকিছুতে প্রতিক্রিয়া দেয়া লাগে না। অপরাধ প্রমাণ হয়ে থাকলে ফাঁসি তো হবেই, হয়েছে। একটা দুর্ঘটনা ঘটছে, বিচার হয়েছে। রায় হয়েছে, এটাই স্বাভাবিক ঘটনা। যুগ্ম-মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল বলেন, অন্যায় করলে বিচার হবে এটাই স্বাভাবিক। তবে বাহবা নেয়ার জন্য যে বাড়াবাড়ি সেটা সাধারণ মানুষের কাছে গ্রহণযোগ্য নয়। মানুষ প্রকৃত অপরাধের বিচার চায়, সাজানো অপরাধের না। যারা অন্যায় করেছে, তাদের বিচার হয়েছে, অসুবিধার কিছু নেই। দলীয় মুখপাত্র রুহুল কবির রিজভী বলেন, এ বিষয়ে এখন আমি কিছু বলতে পারব না।
×