ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

জলবায়ু সম্মেলনে যোগ দিতে প্রধানমন্ত্রী রবিবার স্পেন যাচ্ছেন

প্রকাশিত: ১০:৫৪, ২৮ নভেম্বর ২০১৯

  জলবায়ু সম্মেলনে  যোগ দিতে প্রধানমন্ত্রী  রবিবার স্পেন যাচ্ছেন

বিশেষ প্রতিনিধি ॥ জাতিসংঘের ২৫তম জলবায়ু সম্মেলনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে যোগ দিতে রবিবার স্পেন যাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। স্পেনের রাজধানী মাদ্রিদে ২ থেকে ১৩ ডিসেম্বর পর্যন্ত এ সম্মেলন চলবে। তবে ৩ ডিসেম্বর (মঙ্গলবার) প্রধানমন্ত্রী দেশে ফিরবেন। রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন পদ্মায় এক সংবাদ সম্মেলনে বুধবার পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আবদুল মোমেন এসব তথ্য জানান। ২৫তম বিশ্ব জলবায়ু সম্মেলনে অন্তত ২৫ দেশের সরকার প্রধানরা যোগ দেবেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ সম্মেলনে বিশ্ব নেতাদের সামনে রোহিঙ্গা সমস্যাও তুলে ধরবেন। সফরকালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সম্মেলনে অংশ নেয়ার পাশাপাশি স্পেনের রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাত করবেন। এছাড়া নেদারল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গেও সৌজন্য সাক্ষাত করবেন প্রধানমন্ত্রী। প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে বাংলাদেশ প্রতিনিধি দলে নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যসহ প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ের সদস্য এবং পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয়, সংশ্লিষ্ট অন্য মন্ত্রণালয়ের উচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তা ও জলবায়ু বিশেষজ্ঞরা রয়েছেন বলে জানান পররাষ্ট্র মন্ত্রী। তিনি বলেন, জলবায়ু সম্মেলনে অংশ নিয়ে প্রধানমন্ত্রী জলবায়ু পরিবর্তন ও বাংলাদেশের অবস্থান বিষয়ক বক্তব্য দেবেন। তিনি জলবায়ু সংক্রান্ত বাংলাদেশের গৃহীত পদক্ষেপসমূহ তুলে ধরার পাশাপাশি জলবায়ু সংক্রান্ত ম্যান্ডেট আরও শক্তিশালী করার মাধ্যমে আর্থিক ক্ষতিপূরণের বিষয়টি বিবেচনার জন্য বিশ্ব নেতৃবৃন্দের প্রতি আহ্বান জানাবেন। প্যারিস চুক্তির মাধ্যমে উন্নয়নশীল ও স্বল্পোন্নত দেশগুলোর জন্য অর্থায়ন পরিকল্পনা বাস্তবায়নের আহ্বান জানাবেন প্রধানমন্ত্রী। বিশ্বের দেশগুলোর প্রাপ্তি ও অপ্রাপ্তি, সম্মেলনে দাতা দেশগুলোর প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়ন অঙ্গীকারসহ বিশ্ব নিরাপত্তা পরিস্থিতিতে পরিবেশ ও উদ্বাস্তু সংক্রান্ত বিষয়সমূহ স্থান পাবে। পররাষ্ট্রমন্ত্রী জানান, প্যারিস জলবায়ু চুক্তির অভিষ্ট লক্ষ্যসমূহ অর্জনের ক্ষেত্রে বিশ্বনেতাদের একত্রিত করে একটি সুনির্দিষ্ট কার্যকর ও অভিন্ন কর্মপন্থা প্রণয়নে প্রয়োজনীয় দিক নির্দেশনা অর্জন করা কপ-২৫ হিসেবে পরিচিত মাদ্রিদ জলবায়ু সম্মেলনের অন্যতম প্রধান উদ্দেশ্য। প্যারিস জলবায়ু চুক্তির ওপর ভিত্তি করে জলবায়ু পরিবর্তন সম্পর্কিত কাঠামো প্রণয়ন এবং জলবায়ু পরিবর্তনজনিত বৈশ্বিক চ্যালেঞ্জসমূহ সম্মিলতভাবে মোকাবেলার পরিকল্পনা এবং এর প্রয়োগ ও বাস্তবায়নের বিষয়ে এ সম্মেলনে বিস্তারিতভাবে আলোচনা হবে। তিনি বলেন, বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধিসহ জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে বিশ্বের উপকূলবর্তী যেসব দেশ সবচেয়ে অরক্ষিত ও হুমকির সম্মুখীন, বাংলাদেশ তার অন্যতম। জলবায়ু পরিবর্তনের ব্যাপকতা এবং এ কারণে সৃষ্ট ঝুঁকির ভয়াবহতা বিবেচনায় প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে জলবায়ু পরিবর্তন সংক্রান্ত বৈশ্বিক আলোচনা এবং নেগোসিয়েশনে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করে যাচ্ছে। ড. মোমেন বলেন, স্পেনের রাজধানী মাদ্রিদে অনুষ্ঠিতব্য সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রীর অংশগ্রহণের মাধ্যমে জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব মোকাবেলায় বাংলাদেশের দৃঢ় অঙ্গীকারের কথা বিশ্ব দরবারে আরও একবার তুলে ধরা সম্ভব হবে, যা বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল ও জলবায়ু ঝুঁকিপূর্ণ দেশের জন্য বিশেষ গুরুত্ব বহন করে। এছাড়া জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে উদ্ভূত প্রতিকূলতাকে জয় করে সহনশীল অর্থনীতি হিসেবে অবস্থান তৈরি করতে বাংলাদেশ যেসব ভবিষ্যত কর্মকৌশল গ্রহণ করছে বৈশ্বিক পরিম-লে তা তুলে ধরা সম্ভব হবে। পররাষ্ট্রমন্ত্রী আরও বলেন, স্পেনের রাষ্ট্রপতির সঙ্গে বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী পারস্পরিক স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয়সমূহ যেমন- উন্নয়ন সহযোগিতা, বাণিজ্য ও বিনিয়াগ, পারস্পরিক সহযোগিতাসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক বিষয়ে তারা মতবিনিময় করবেন। তিনি বলেন, স্পেন ও বাংলাদেশের মধ্যে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক অত্যন্ত গভীর ও বন্ধুত্বপূর্ণ। স্পেন বাংলাদেশের অন্যতম উন্নয়ন সহযোগী এবং একক দেশ হিসেবে বাংলাদেশী রফতানি পণ্যের চতুর্থ বৃহত্তম গন্তব্য। ইউরোপের দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশে অন্যতম বিনিয়োগকারী স্পেন। বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশের বিনিয়োগ সংক্রান্ত সুবিধাদি অবহিত করে স্পেনকে জ্বালানি, যোগাযোগ ও অবকাঠামো খাতে বিনিয়োগের আহ্বান জানাবেন। এ বৈঠকে দ্বিপাক্ষিক পারস্পরিক বোঝাপড়া আরও সুসংহত হবে বলেও আশা করেন মন্ত্রী। ড. মোমেন বলেন, নেদারল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকে সহযোগিতা, বাণিজ্য ও বিনিয়োগ, পারস্পরিক সহযোগিতা বিশেষ করে জলবায়ু পরিবর্তন, ডেটা প্ল্যান ২১০০ বিষয়ে আলোচনা হবে বলে আশা করা হচ্ছে। রোহিঙ্গা ইস্যুতে ফ্রান্সের সমর্থন অব্যাহত থাকবে এদিকে বাসস জানায়, বাংলাদেশে ফ্রান্সের নবনিযুক্ত রাষ্ট্রদূত বলেছেন, রোহিঙ্গা ইস্যুতে তারা বাংলাদেশের প্রতি তাদের সমর্থন অব্যাহত রাখবে। ফ্রান্সের নবনিযুক্ত রাষ্ট্রদূত জিন-ম্যারিন সুও বুধবার সকালে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে তার কার্যালয়ে সৌজন্য সাক্ষাতে একথা বলেন। রাষ্ট্রদূত বলেন, ‘রোহিঙ্গা ইস্যুতে ফ্রন্স বাংলাদেশের প্রতি সমর্থন অব্যাহত রাখবে।’ বৈঠকের পর প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহসানুল করিম সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন। ফ্রান্সের টেকসই জ্বালানি নীতির কথা উল্লেখ করে রাষ্টদূত বলেন, তারা বাংলাদেশের জ্বালানি ক্ষেত্রে সহযোগিতা করতে আগ্রহী। স্যাটেলাইট বঙ্গবন্ধু-২ উৎক্ষেপণে বাংলাদেশকে সহযোগিতার বিষয়েও তিনি আকাক্সক্ষা ব্যক্ত করেন। তিনি পারস্পরিক সুবিধার্থে বাংলাদেশের সঙ্গে তার দেশের অর্থনৈতিক সহযোগিতা জোরদার করার বিষয়েও আগ্রহ দেখান। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনায় বাংলাদেশের ভূমিকার ভূয়সী প্রশংসা করে ফরাসী রাষ্ট্রদূত বলেন, এ বিষয়ে বাংলাদেশের সক্ষমতা বৃদ্ধি পেয়েছে। এর উত্তরে শেখ হাসিনা বলেন, তার সরকার সাম্প্রতিক ঘূর্ণিঝড় ‘বুলবুল’র সময়ে উপকূলীয় এলাকা থেকে ২২ লাখ মানুষকে নিরাপদ আশ্রয়ে সরিয়ে আনে। জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব মোকাবেলায় নিজস্ব অর্থায়নে জলবায়ু ট্রাস্ট ফান্ড গঠনের প্রসঙ্গ উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তার সরকার দেশের বনাঞ্চল বৃদ্ধির উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। তার সরকারের সকল উন্নয়ন পরিকল্পনাই গ্রামভিত্তিক উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, দেশের ৯৪ শতাংশ মানুষ এখন বিদ্যুতের সুবিধার আওতায় এসেছে এবং দারিদ্র্যের হার উল্লেখযোগ্য হারে হ্রাস পেয়েছে। বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে ফ্রান্সের সরকার ও জনগণের অবদানের কথা স্মরণ করেন প্রধানমন্ত্রী এবং সাবেক ফরাসী প্রেসিডেন্ট জ্যাক শিরাকের সঙ্গে তার বৈঠকের কথাও স্মরণ করেন তিনি। বৈঠকে তারা সুনীল অর্থনীতির সম্ভাবনা, নদী খনন এবং লিঙ্গ সমতার বিষয়েও আলোচনা করেন বলে প্রেস সচিব জানান। প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব মোঃ নজিবুর রহমান এ সময় উপস্থিত ছিলেন। বাস্তুচ্যুতি ও অভিবাসনে আলাদা মেকানিজম প্রতিষ্ঠার দাবি এদিকে, জলবায়ু পরিবর্তনে ক্ষতিগ্রস্ত দেশসমূহের জন্য ইউএনএফসিসিসির অধীনে বাস্তুচ্যুতি এবং অভিবাসনের ক্ষেত্রে আলাদা মেকানিজম প্রতিষ্ঠার দাবি জানিয়েছেন নাগরিক সমাজ। জাতীয় প্রেসক্লাবে অনুষ্ঠিত এক সংবাদ সম্মেলন থেকে ক্লাইমেট এ্যাডভোকেসি নেটওয়ার্কের বিভিন্ন নাগরিক সমাজ সংগঠন এই দাবি জানায়। সম্মেলনে বলা হয়, বাস্তুচ্যুতি এবং জলবায়ুর ক্ষয় ও ক্ষতি (লস এ্যান্ড ডেমেজ) এর বিষয়টি নিয়ে ওয়ারশ ইন্টারন্যাশনাল মেকানিজমের কার্যক্রম হতাশাজনক বলে নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিগণ মনে করনে। তারা আরও বলেন, উপরোক্ত বিষয়সমূহ নিয়ে আসন্ন জলবায়ু সম্মেলনে সরকারকে নেতৃত্ব দেয়ার পাশাপাশি অধিক বিপদাপন্ন দেশ হিসেবে গ্রীন ক্লাইমেট ফান্ডের অর্থপ্রাপ্তি সহজ করার বিষয়ে সরকারের জোরালো দাবি জানাতে হবে। ‘মাদ্রিদ জলবায়ু সম্মেলন এবং নাগরিক সমাজের প্রত্যাশা’ শিরোনামে ওই সংবাদ সম্মেলনটি সঞ্চালনা করেন সেন্টার ফর সাসটেইনেবল রুরাল লাইভলিহুডের জিয়াউল হক মুক্তা এবং মূল দাবিসমূহ উপস্থাপন করেন ইক্যুইটিবিডির সৈয়দ আমিনুল হক। এতে আরও বক্তব্য রাখেন কোস্ট ট্রাস্টের মোস্তফা কামাল আকন্দ, সিপিআরডি এর প্রধান নির্বাহী মোঃ শামসুদ্দোহা, বাংলাদেশ ক্লাইমেট চেঞ্জ জার্নালিস্ট ফোরামের সভাপতি কাওসার রহমান, বাংলাদেশ কৃষক ফেডারেশনের সভাপতি বদরুল আলম এবং কোস্টাল ডেভেলপমেন্ট পার্টনারশিপের আতিকুর রহমান টিপু। সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, আসন্ন জলবায়ু সম্মেলন আমাদের সরকারের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কারণ এটি বাস্তবায়ন নীতিমালা বিশেষত প্যারিস এগ্রিমেন্টের আর্টিকেল-৬ বাস্তবায়ন করার উদ্দেশ্যে একটি নীতিমালা প্রণয়ন করতে চলেছে যা গ্রীন হাউস গ্যাস নির্গমন হ্রাসে সকল দেশ তাদের প্রতিশ্রুত জাতীয় ভিত্তিক অবদানের ও বাজারভিত্তিক প্রশমন কার্যক্রমসমূহ বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে অনুসরণ করবে। এছাড়াও লস এ্যান্ড ডেমেজ ইস্যুটি পর্যালোচনাসহ পরবর্তী কর্মপরিকল্পনা প্রণয়ন করা হতে পারে, যেখানে জলবায়ু বিপদাপন্ন দেশ হিসেবে বাংলাদেশের স্বার্থ সংরক্ষণের বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
×