ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

সংস্কৃতি সংবাদ

মুনীর চৌধুরী সম্মাননা ও জাকারিয়া স্মৃতিপদক প্রদান

প্রকাশিত: ১০:২৫, ২৮ নভেম্বর ২০১৯

  মুনীর চৌধুরী সম্মাননা ও জাকারিয়া  স্মৃতিপদক প্রদান

স্টাফ রিপোর্টার ॥ বাংলাদেশের নাট্যচর্চার আধুনিক চেতনা সঞ্চারে অগ্রণী পুরুষ মুনীর চৌধুরী। পরিবেশের প্রবল বিরুদ্ধাচরণ উপেক্ষা করে তিনি জ্বালিয়েছিলেন আলোকশিখা, অন্তরে এবং বাহিরে। যেমন নিমগ্ন ছিলেন নাট্যরচনার একনিষ্ঠ সাধনায়, তেমনি আলো দিয়ে আলো জ্বালানোর প্রয়াসে নাট্যান্দোলনের সামাজিক ব্রতও নিয়েছিলেন সমভাবে নিবেদিত। অন্যদিকে নাট্যব্যক্তিত্ব মোহাম্মদ জাকারিয়া বাংলা নাটকের ইতিহাসে এক অনন্যসাধারণ সৌভাগ্য দ্বারা বারিত হয়েছিলেন। চল্লিশের দশকে কলকাতায় বাংলা নাটকের যে যুগান্তর ঘটেছিল গুণীকয় নবীন প্রতিভার মিলিত প্রয়াসে, তিনি ছিলেন সেই তরুণ কা-ারিদের অন্যতম।সত্তরের দশকের সূচনায় স্বাধীন উত্তর বাংলাদেশে যে নবনাট্যধারা কল্লোলিত হয়ে উঠল তিনি ছিলেন সেই জাগরণেরও প্রবীণ অংশী। নাট্যঙ্গনের এই দুই গুণীর নামাঙ্কিত সম্মাননা ও স্মৃতিপদক প্রবর্তন করেছে দেশের জনপ্রিয় নাট্যদল থিয়েটার। থিয়েটার প্রবর্তিত মুনীর চৌধুরী সম্মাননা ও মোহাম্মদ জাকারিয়া স্মৃতিপদক-২০১৯ প্রদান করা হয় শিল্পকলা একাডেমির এক্সপেরিমেন্টাল থিয়েটার হলে বুধবার সন্ধ্যায়। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী। সভাপতিত্ব করেন অভিনয়শিল্পী ফেরদৌসী মজুমদার। ‘মুনীর চৌধুরী সম্মাননা ২০১৯’ প্রদান করা হয় নাট্য অনুবাদক, সামালোচক অধ্যাপক শফি আহমেদকে এবং ‘মোহাম্মদ জাকারিয়া স্মৃতিপদক ২০১৯’ প্রদান করা হয় তরুণ নাট্যকর্মী, নাট্যকার, নাট্য নির্দেশক, সংগঠক, গীতিকার শিশির রহমানকে। থিয়েটারের পরিচালক রামেন্দু মজুমদারের স্বাগত বক্তব্যের মধ্য দিয়ে শুরু হয় অনুষ্ঠান। তিনি বলেন, নাট্যজন মুনীর চৌধুরী স্মরণীয় হয়ে আছেন কারাজীবনে রচিত ‘কবর’ নাটকের জন্য। মুক্তিযুদ্ধের বিজয়লগ্নে ধর্মান্ধ পাশবিক সাম্প্রদায়িক শক্তির নির্মম আঘাতে তার মৃত্যু আমাদের জাতীয় চেতনা ও গৌরবের অঙ্গাঙ্গি অংশ হয়ে তুলেছে তাকে। মুনীর চৌধুরী তাই আমাদের নাটক ও আমাদের জাতির গৌরবগাথার অংশী। তিনি থিয়েটার গোষ্ঠীর অন্তহীন প্ররণা। মুনীর চৌধুরীর নামাঙ্কিত পদক প্রদানের মধ্যদিয়ে আমরা সম্মান জানাতে চাই আমাদের নাট্যজগতের নিবেদিতপ্রাণ প্রতিভাবানদের এবং রক্তের ভেতরে পুনরায় অনুভব করতে চাই সেই অঙ্গীকার, নাটকের শিল্পিত চর্চার মধ্য দিয়ে জাতির জাগরণের যে স্বপ্ন আমরা সমবেতভাবে বহন করে চলেছি। অন্যদিকে স্বাধীনতা-পরবর্তী বাংলাদেশে নাটকের আশ্চর্য উত্থান সম্পাদিত হয়েছিল একদল তরুন নাট্যশিল্পীর দ্বারা এবং অনায়াসে তাদের সঙ্গে মিশে তাদেরই একজন হয়ে উঠেছিলেন সবার আপনকার জাকারিয়া দাদা। ১৯৭২ সালে তিনি থিয়েটার গোষ্ঠীতে যোগ দেন এবং অভিনয়ে অতীত দক্ষতার নব রূপায়ণ ঘটান ঢাকার মঞ্চে। আমরা স্থির নিশ্চিত আগামী দিনের নাট্যকর্মীদের হাতে বাংলা নাটকের নবতর উত্তরন নিশ্চিত হবে। সেই প্রত্যাশায় ১৯৯৭ সাল থেকে থিয়েটার তরুণ নাট্যকর্মীদের সম্মানিত করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে। এবং এর নামকরণ করেছে মোহাম্মদ জাকারিয়া স্মৃতিপদক’। এরপর অধ্যাপক শফি আহমেদের হাতে ‘মুনীর চৌধুরী সম্মাননা -২০১৯’ পদক তুলে দেন অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম। সম্মাননার অর্থমূল্য পঞ্চাশ হাজার টাকার চেক প্রদান করেন অনুষ্ঠানের সভাপতি ফেরদৌসী মজুমদার। পরে শিশির রহমানের হাতে ‘মোহাম্মদ জাকারিয়া স্মৃতিপদক -২০১৯’ তুলে দেয়া হয়। অনুষ্ঠানের দ্বিতীয় পর্বে মঞ্চায়ন হয় থিয়েটার প্রযোজিত মুনীর চৌধুরীর দুটি নাটিকা। এর একটি হচ্ছে খুরশীদ আলম নির্দেশিত ‘স্বামী সাহেবের অনশনব্রত’ এবং অন্যটি তানজুম আরা পল্লী নির্দেশিত নাটিকা ‘গতকাল ঈদ ছিল’।
×