ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

মেয়র হানিফের মৃত্যুবার্ষিকী আজ

প্রকাশিত: ১০:২৩, ২৮ নভেম্বর ২০১৯

 মেয়র হানিফের মৃত্যুবার্ষিকী আজ

বিশেষ প্রতিনিধি ॥ জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর ঘনিষ্ঠ স্নেহভাজন, ঢাকার প্রথম নির্বাচিত মেয়র, জনতার মঞ্চের রূপকার, ঢাকা মহানগরআওয়ামী লীগের সভাপতি মোহাম্মদ হানিফের আজ ত্রয়োদশ মৃত্যুবার্ষিকী। গণতান্ত্রিক আন্দোলনের অগ্রনায়ক এই জনপ্রিয় রাজনীতিক ১৯৪৪ সালের ১ এপ্রিল পুরানো ঢাকার এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জম্নগ্রহণ করেন। যৌবনের শুরু থেকে জীবনের শেষ দিনটি পর্যন্ত মোহাম্মদ হানিফ ছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আদর্শের প্রতি অবিচল। তার সবচেয়ে বড় অর্জন ছিল তিনি সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালী জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর খুব কাছে থেকেছেন এবং তার মাধ্যমেই রাজনীতিতে হাতেখড়ি। উদার চিন্তাচেতনা, প্রখর ব্যক্তিত্ব ও সংবেদনশীলতা তার চারিত্র্যিক বৈশিষ্ট্যকে উজ্জ্বল করে। তিনি পরিণত হন দলমত নির্বিশেষে সকল শ্রেণীর মানুষের নেতায়। ২১ আগস্ট ভয়াল গ্রেনেড হামলায় মানবঢাল রচনা করে বঙ্গবন্ধুর কন্যা বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে রক্ষা করতে পারলেও নিজেকে বাঁচাতে পারেননি। মস্তিষ্কসহ সর্বাঙ্গে বিঁধে থাকা ঘাতক গ্রেনেডের স্প্লিন্টারের দুঃসহ যন্ত্রণা নিয়ে চিকিৎসাধীন ২০০৬ সালের ২৮ নবেম্বর ঢাকার এ্যাপোলো হাসপাতালে মৃত্যুর কাছে পরাজিত হন। মোহাম্মদ হানিফ ছিলেন বর্ণাঢ্য রাজনৈতিক জীবনের অধিকারী। ছাত্রাবস্থায় ছাত্রলীগের সক্রিয় কর্মী, ধারাবাহিক পথচলায় জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর একান্ত সচিবের দায়িত্ব পালন করেন তিনি। একান্ত সচিব থাকাকালীন ঐতিহাসিক ছয়দফা আন্দোলনের প্রস্তুতি, ছয়দফা মুক্তি সনদ প্রণয়ন এবং প্রচারে বিশেষ ভূমিকা পালন করেন। পরবর্তীতে ’৬৯-এর গণঅভ্যুত্থান, ’৭০-এর নির্বাচন, মহান মুক্তিযুদ্ধ এবং স্বাধীনতা পরবর্তী সকল আন্দোলন-সংগ্রামে রাজপথের প্রথম কাতারে থেকে নেতৃত্ব দিয়েছেন মোহাম্মদ হানিফ। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু মোহাম্মদ হানিফকে অত্যন্ত স্নেহ ও ভালবাসতেন। তাই স্বাধীনতার পর ১৯৭৩ সালে বঙ্গবন্ধু তার ঢাকা-১২ আসন ছেড়ে দিয়ে মোহাম্মদ হানিফকে সংসদ সদস্য হিসেবে নির্বাচিত করিয়ে আনেন। পরবর্তীতে সংসদে হুইপেরও দায়িত্ব পালন করেন তিনি। ১৯৭৬ সালে মোহাম্মদ হানিফ ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি নির্বাচিত হন। মাঝখানে কিছু সময় বিরতি দিয়ে আমৃত্যু ৩০ বছর এই দায়িত্ব পালন করেন। ’৯০-এর স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন মোহাম্মদ হানিফ। ১৯৯৪ সালে বিপুল ভোটের ব্যবধানে ঢাকা সিটি কর্পোরেশনের প্রথম নির্বাচিত মেয়র হন তিনি। তার নেতৃত্বেই ’৯৬ সালের মার্চের শেষ সপ্তাহে ‘জনতার মঞ্চ’ গঠন করে তৎকালীন বিএনপি সরকারের পতনকে ত্বরান্বিত করেন। পরে ’৯৬ সালের ১২ জুন নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে আওয়ামী লীগ বিপুল ভোট পেয়ে দেশ পরিচালনার সুযোগ পায়। মোহাম্মদ হানিফের ত্রয়োদশ মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মোঃ আবদুল হামিদ, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও জাতীয় সংসদের স্পীকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী পৃথক পৃথক বাণীতে তার অবদানের কথা উল্লেখ করেছেন। আওয়ামী লীগসহ তার সকল সহযোগী ও ভাতৃপ্রতীম সংগঠন, ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন, মেয়র মোহাম্মদ হানিফ মেমোরিয়াল ফাউন্ডেশন, মেয়র মোহাম্মদ হানিফ স্মৃতি সংসদসহ বিভিন্ন সংগঠন বিস্তারিত কর্মসূচী গ্রহণ করেছে। কর্মসূচীর মধ্যে রয়েছে- আজিমপুর কবরস্থানে তার কবরে শ্রদ্ধাঞ্জলি নিবেদন, কবর জিয়ারত, স্মরণসভা, দোয়া ও মিলাদ মাহফিল। বেলা সাড়ে ১১টায় নগর ভবনে স্মরণসভা ও দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত হবে। সভায় আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য ও সাবেক বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন। মোহাম্মদ হানিফের একমাত্র পুত্র ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের মেয়ার আলহাজ মোহাম্মদ সাঈদ খোকন পিতার রুহের মাগফিরাত কামনায় দেশবাসীর দোয়া কামনা করেছেন।
×