ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

আন্তর্জাতিক সম্মেলনে ড. রাজ্জাক

বায়ুদূষণের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় সমন্বিত উদ্যোগের তাগিদ

প্রকাশিত: ১০:২২, ২৮ নভেম্বর ২০১৯

 বায়ুদূষণের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় সমন্বিত উদ্যোগের তাগিদ

স্টাফ রিপোর্টার ॥ কৃষিমন্ত্রী ড. আব্দুর রাজ্জাক বলেছেন, বায়ুদূষণ সরকারের জন্য একটি চ্যালেঞ্জ। এ বিষয়ে সরকার সচেতন রয়েছে। ঢাকা নাকি বিশ্বের এক নম্বর বায়ুদূষণের শহর। এটা মোকাবেলায় সুষ্ঠু কর্মসূচী থাকতে হবে। যারা বিজ্ঞানী আছেন, নীতিনির্ধারক আছেন, তাদেরকেও সম্মিলিতভাবে কাজ করতে হবে। নতুন প্রজন্মকে একটি নিরাপদ জাতি হিসেবে গড়ে তুলতে দূষণের হাত থেকে মুক্ত রাখার বিকল্প নেই। আগামী প্রজন্মের জন্য সত্যিকার অর্থে নিরাপদ পৃথিবী তৈরি করতে সচেষ্ট সরকার। তিনি বলেন, সরকার পরিবেশগত বিষয় নিয়ে কাজ করতে বৃহৎ প্রকল্পও হাতে নিয়েছেন। বুধবার সকালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নওয়াব আলী চৌধুরী সিনেট ভবন মিলনায়তনে আওয়ামী লীগের বন ও পরিবেশ বিষয়ক উপকমিটির আয়োজনে টেকসই ভবিষ্যতের জন্য সবুজ পরিবেশ বিষয়ক আন্তর্জাতিক সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন। তিনি বলেন, নানা কারণে বায়ু দূষিত হয়ে পড়ছে। আমাদের সীমিত সম্পদ। এই সীমিত সম্পদ নিয়ে মোকাবেলা করতে হচ্ছে। আগামীতে বায়ু দূষণরোধ করতেও সরকার সক্ষম হবে। জ্ঞান, বুদ্ধি, প্রযুক্তি অভিজ্ঞতার মাধ্যমে বিশেষজ্ঞরা যে সুপারিশ করবেন সেটা বাস্তবায়ন করা হবে। দেশের ১৬ কোটি মানুষের খাদ্যের চাহিদা মেটাতে জমিতে বছরে তিন থেকে পাঁচবার ফসল ফলাতে হচ্ছে। যার কারণে জমির ওপর চাপ বাড়ছে। অথচ বিশ্বের অনেক উন্নত দেশের কোথাও একই জমিতে বছরে একাধিকবার ফসল ফলানো হয় না। কৃষিমন্ত্রী বলেন, সরকারের এটি বিবেচনায় নিয়েই প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে একজন জাতীয় সমন্বয়ক নিয়োগ করা হয়েছে। একটি সেল প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে, তারা সর্বক্ষণিকভাবে টেকসই উন্নয়ন লক্ষমাত্রার (এসডিজি) ওপর কাজ করে। সব মন্ত্রণালয়ের কাজের মধ্যে যাতে পরিবেশগত ইস্যুটি সবাই বিবেচনায় নেয়, বিভিন্ন উন্নয়ন কর্মকা-ে যাতে আমরা পরিবেশকে দূষিত না করি, সম্পদের যেন অপব্যবহার এবং অতিমাত্রায় ব্যবহার না হয় এবং এটিকে যেন আমরা ধ্বংস না করি। আমি আপনাদের নিশ্চয়তা দিতে চাই যে, সরকারের যথেষ্ট পরিকল্পনা আছে এই বিষয়ে। কৃষিমন্ত্রী বলেন, সরকারের উন্নয়নের ছোঁয়া এখন তৃণমূল পর্যন্ত। গ্রামের মানুষের ঘরবাড়ি দেখলে বোঝা যায় দেশ কতটা উন্নত হয়েছে। শতভাগ মানুষের ঘরবাড়ি এখন টিনের। শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দেশ এগিয়ে চলেছে। তিনি বিশ্বকে বোঝাতে সক্ষম হয়েছেন উন্নয়নের দিক দিয়ে আমরা অনেক এগিয়ে রয়েছি। দেশের মানুষকে উন্নত জাতিতেও রূপান্তিরত করতে সক্ষম হব। এজন্য সরকার নতুন প্রজন্মকে কাজে লাগানোর চেষ্টা করছে। তাদের কর্মসংস্থান সৃষ্টির উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। তাদের মেধা কাজে লাগিয়ে যাতে উদ্যোক্তা সৃষ্টি করা যায় সে লক্ষ্যে সরকার কাজ করে যাচ্ছে। তরুণ প্রজন্মকে উদ্যোক্তা হিসেবে গড়ে তুলতে প্রকল্প নেয়া হয়েছে। এই প্রকল্পের মাধ্যমে তাদের মেধাকে কাজে লাগাতে হবে। এ সময় কৃষিমন্ত্রী দেশের কৃষি উৎপাদনের নানাদিক তুলে ধরে বলেন, ডিম, মাছ, মাংসের মতো পুষ্টিজনিত খাবার আমাদের দেশে উদ্বৃত্ত। কিন্তু মানুষের আয় কম হওয়ায় তারা তা কিনে খেতে পারে না। খাদ্য নিরাপত্তার তিনটি পিলার। তার একটি হলো খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা। আজকে ধানে আমরা স্বয়ংসম্পূর্ণ। আমাদের দেশে আলুর চাহিদা ৬০-৭০ লাখ টন, আমরা সেখানে ১ কোটি ১০ লাখ টন আলু উৎপাদন করি। প্রায় ৪০ লাখ টন আলু আমাদের উদ্বৃত্ত হয়। ডিম, মাছ, মাংস উৎপাদনেও আমাদের উদ্বৃত্ত আছে। মানুষ যাতে পুষ্টিকর খাবা কিনে খেতে পারে, সরকারের চ্যালেঞ্জ হলো মানুষের আয় বাড়ানো। অনুষ্ঠনে বক্তৃতাকালে আব্দুস সোবহান গোলাপ এমপি বলেন, শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দেশ একটি শক্ত অর্থনৈতিক ভিত্তির ওপর প্রতিষ্ঠিত। জিডিপি এখন ৮.২ ভাগে এসে দাঁড়িয়েছে। বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ৩৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। যা বিএনপির আমলে নাজুক অবস্থায় ছিল। শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দেশের ফসল উৎপাদন অনেক বেড়েছে। উৎপাদনের মাধ্যমে তিনি দেশকে উন্নত বিশ্বের কাতারে নিয়ে যাচ্ছেন। বহির্বিশ্ব থেকে তিনি এর স্বীকৃতিও লাভ করছেন। স্বাস্থ্য চিকিৎসা, দুর্যোগ সাফল্যের সঙ্গে মোকাবেলা করছেন। প্রত্যেক সেক্টরের উন্নয়নের জন্য তিনি কঠোর পরিশ্রম করে যাচ্ছেন। এ কারণে শেখ হাসিনা ক্ষমতায় থাকলে সবাই নিরাপদ বোধ করতে পারে বলে তিনি উল্লেখ করেন। এর আগে সম্মেলনের উদ্বোধন করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক আখতারুজ্জামান। সম্মেলনে বক্তব্য রাখেন আওয়ামী লীগের বন ও পরিবেশ বিষয়ক উপকমিটির চেয়ারম্যান অধ্যাপক খন্দকার বজলুল হক, সম্মেলনের আয়োজক সভাপতি ড. মোহাম্মদ আফতাব আলী শেখ, আওয়ামী লীগের বন ও পরিবেশ বিষয়ক সম্পাদক দেলোয়ার হোসেনসহ অনেকে। আওয়ামী লীগের বন ও পরিবেশ বিষয়ক উপকমিটি আয়োজিত এই সম্মেলনে দেশী-বিদেশী অতিথিরা তাদের প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন। এই সম্মেলনের মিডিয়া পার্টনার দৈনিক জনকণ্ঠ। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের পর সেমিনারের দেশী-বিদেশী বিশেষজ্ঞরা তাদের পরিবেশ ও প্রকৃতি রক্ষায় তাদের মতামত তুলে ধরেন। সেমিনারের দ্বিতীয় পর্বের অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গবর্নর আতিউর রহমানের সভাপতিত্বে পরিবেশ ও উন্নয়ন বিষয়ে বক্তব্য রাখেন দেশের প্রখ্যাত পরিবেশ ও জলবায়ু বিশেষজ্ঞ আইনুন নিশাত। তিনি বলেন, উন্নয়নের কারণে আজ বিশ্ব বাংলাদেশের দিকে তাকিয়ে আছে। তারা পর্যবেক্ষণ করছে বাংলাদেশের উন্নয়ন কতটা টেকসই। তিনি বলেন, মানুষের সংখ্যা বাড়ার কারণে এখন প্রকৃতির ওপর অধিক চাপ বাড়ছে। আমাদের প্রয়োজনের সবকিছুই প্রকৃতি থেকে আসছে। এজন্য অবশ্যই প্রকৃতিকে বোঝার প্রয়োজন রয়েছে।
×