ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

পেঁয়াজকান্ডের কুশীলব

প্রকাশিত: ০৯:৫১, ২৮ নভেম্বর ২০১৯

পেঁয়াজকান্ডের কুশীলব

গুজব অত্যন্ত দ্রুত ছড়ায় আর মূল্যবৃদ্ধির গুজব কাজে লাগিয়ে দেশের বিভিন্ন এলাকার ব্যবসায়ীরা অতিরিক্ত দামে পণ্য বিক্রি করে। নিত্যপ্রয়োজনীয় খাদ্যসামগ্রী নিয়ে দেশবিরোধী খাদ্য মজুদদারদের কারসাজিতে ক্ষতিগ্রস্ত হয় দেশের সাধারণ মানুষ। বাজারজুড়ে খাদ্য-সঙ্কট তৈরির অন্যতম প্রধান কারণ আস্থাহীনতা। যেমন সদ্য বাংলাদেশে ঘটে যাওয়া পেঁয়াজ কাণ্ডে যা হলো তাতে লবণের গুজবে আস্থা রেখে মানুষ চুপচাপ বসে থাকতে পারেনি। কারণ ঘর পোড়া গরু সিঁদুরে মেঘ দেখলে ভয় পায়। ক্রেতার ভয়কেও অমূলক বলা যায় না। আমেরিকার মনোবিজ্ঞানী রবার্ট এইচ ন্যাপ গুজব সম্পর্কে গবেষণা করে এ সাইকোলজি অব হিউমার গ্রন্থে লিখেছেন, ‘গুজব ব্যবহার করে মানুষের ভাবাবেগকেই। সমাজের ভাবাবেগকে প্রকাশ ও তুষ্ট করার অদ্ভুত ক্ষমতা আছে গুজবের।’ সুযোগ শিকারের জন্য সিন্ডিকেট ওত পেতে থাকে। সিন্ডিকেটের নামে জনগণের পকেট কেটে অসাধু ব্যবসায়ীরা স্বল্প সময়ে আঙ্গুল ফুলে কলাগাছ হয়ে ওঠে। সর্ষের ভেতরের ভূত আছে কিনা খুঁজে বের করার দায়মুক্তি নেই। গত দুই মাসে পেঁয়াজের দাম দফায় দফায় বেড়ে আড়াই’শ টাকায় পৌঁছেছে। একশ্রেণীর ব্যবসায়ী পেঁয়াজের মজুদ থাকা সত্ত্বেও বাজারে সরবরাহ বন্ধ রেখে মূল্যবৃদ্ধির চক্রান্ত করেছে। এটা বুঝা গেছে যখন চট্টগ্রামের আড়তের কাছাকাছি খালে-নদীতে পচা পেঁয়াজের বস্তা ফেলে দেয়া হয়েছে। ছোটখাটো ছুতোয় এক শ্রেণীর ব্যবসায়ী প্রায়ই নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বাড়িয়ে দিচ্ছে। প্রথম থেকেই বাণিজ্য মন্ত্রণালয় পেঁয়াজের দাম বাড়ানোর জন্য অসাধু ব্যবসায়ীদের দায়ী করে আসছে। পৃথিবীজুড়ে ‘বিজনেস ইন্টেলিজেন্স’ বলতে একটা ব্যবস্থা চালু আছে। এটা কাজে লাগিয়ে দেশের ভোগ্যপণ্যের ব্যবসায়ীরা ঠিকই খবর রাখেন কোথায় কোন ফসল মার খেয়েছে, কোথায় দাম বেড়েছে বা কোথায় দাম কমেছে। মুনাফালোভী অসাধু ব্যবসায়ীরা আত্মস্বার্থ চিন্তা, অর্থলিপ্সা, নোংরা মন- মানসিকতার কারণে নৈতিকতাবোধ ও বিবেকবোধ হারিয়ে ফেলে খাদ্য মজুদ করে। এর ফলে পণ্যের মূল্য বেড়ে সাধারণ মানুষের ক্রয় ক্ষমতার বাইরে চলে যায় এবং জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে। ইসালামের দৃষ্টিতে মজুদদারি জঘন্য অপরাধ। রসূল (সা) বলেন, ‘যে ব্যক্তি চল্লিশ রাত পর্যন্ত খাদ্যদ্রব্য মজুদ করবে, তার সঙ্গে আল্লাহর কোন সম্পর্ক থাকবে না।’ খাদ্যসামগ্রী মজুদে জড়িত অসাধু ব্যবসায়ীদের কোন ছাড় নয়। তাদের সামাজিকভাবে বয়কট করতে হবে। দেশের আইনে দণ্ডনীয় অপরাধীদের শাস্তি এবং জরিমানার বিধান আছে যা কঠিনভাবে বাস্তবায়ন করতে হবে। ধর্ম ও মানবিকতা কোন দিক দিয়েই মজুদদাররা সমর্থনযোগ্য নয়। তাই এই ধরনের হীন কাজের সঙ্গে জড়িত অসাধু ব্যবসায়ীদের আইনের আওতায় এনে তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে। সরকারের ভূমিকা সঠিক নজরদারিতে তল্লাশি ও দ্রুত আইনগত শাস্তির ব্যবস্থা নেওয়া। সুফল পেতে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়সহ সব পক্ষের সঠিক কাজটাই পারে মুনাফাখোর দেশবিরোধী মজুদদারদের অপতৎপরতা রোধ করে দ্রব্যসামগ্রীর মূল্য নিয়ন্ত্রণে রাখতে। ব্রাহ্মণবাড়িয়া থেকে
×