ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

গোপাল নাথ বাবুল

ইতিহাস থেকে শিক্ষা

প্রকাশিত: ০৯:৫০, ২৮ নভেম্বর ২০১৯

  ইতিহাস থেকে শিক্ষা

ইতিহাস কী বলে? ‘এই সময় বাংলায় মুসলিম লীগ সরকারের পতন হয়। গবর্নর শাসন ক্ষমতা নিজের হাতে নেন। শহীদ সাহেব দেখলেন যুদ্ধের সময় অধিক লাভের আশায় ব্যবসায়ীরা কালোবাজারে কাপড় বিক্রি করার জন্য গুদামজাত করতে শুরু করছে। একদিকে খাদ্য সমস্যা ভয়াবহ, শহীদ সাহেব রাত-দিন পরিশ্রম করছেন, আর একদিকে অসাধু ব্যবসায়ীরা জনগণের জীবন নিয়ে ছিনিমিনি খেলতে শুরু করেছে। শহীদ সাহেব সমস্ত কর্মচারীদের হুকুম দিলেন, মাড়োয়ারি ব্যবসায়ীদের আড্ডাখানা বড়বাজার ঘেরাও করতে। সমস্ত বড় বাজার ঘেরাও করা হলো। হাজার হাজার গজ কাপড় ধরা পড়ল, এমনকি দালানগুলোর নিচেও এক একটা গুদাম করে রেখেছিল তাও বাদ গেল না। এমনি করে সমস্ত শহরে চাল গুদামজাতকারীদের ধরার জন্য একইভাবে তল্লাশি শুরু করলেন। কয়েক লাখ টাকা তুলে লীগ মন্ত্রিসভাকে খতম করার জন্য কয়েকজন এমএলএকে কিনে ফেলল। ফলে এক ভোটে লীগ মন্ত্রিত্বকে পরাজয়বরণ করতে হলো। যদিও এটা অনাস্থা প্রস্তাব ছিল না। খাজা নাজিমুদ্দীন সাহেব চ্যালেঞ্জ দিলেন এই কথা বলে যে, আগামীকাল আমি আস্থা ভোট নেব, যদি আস্থা ভোট না পাই তবে পদত্যাগ করব। স্পিকার ছিলেন নওশের আলী সাহেব। পরেরদিন তিনি এ ব্যাপারে রুলিং দিলেন, মন্ত্রীদের বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাব পাস হয়ে গেছে, আর আস্থা ভোটের দরকার নেই। আমি কিছুসংখ্যক ছাত্র নিয়ে সেখানে উপস্থিত ছিলাম। খবর যখন রটে গেল লীগ মন্ত্রিত্ব নাই, তখন দেখি টুপি ও পাগড়ি পরা মাড়োয়ারিরা বাজি পোড়াতে শুরু করেছে এবং হৈচৈ করতে আরম্ভ করেছে।...’ দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের শেষের কথা। বঙ্গবন্ধুর ‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী’র ৩৩ পৃষ্ঠা থেকে উদ্ধৃতি দিলাম, মজুদদাররা কী করতে পারে তা বোঝানোর জন্য। কালোবাজারি, মুনাফাখোর ও মজুদদাররা এতই বেশি শক্তিশালী যে, তারা সরকারপক্ষের প্রভাবশালী লোকগুলোকে কিনে নিয়ে সরকারের পতন পর্যন্ত ঘটাতে পারে। রাজনৈতিক জীবনে তিক্ত অভিজ্ঞতা সঞ্চয়কারী বঙ্গবন্ধু দূরদর্শী ও বিচক্ষণ রাজনীতিবিদ হিসেবে জানতেন, সরকারী দলের নেতারা প্রভাবশালীদের অর্থে বিক্রি হয়ে যায়। তাই তিনি বাহাত্তরের সংবিধানে ৭০ অনুচ্ছেদ সংযোজন করেছিলেন যাতে সংসদ সদস্যরা সংসদে নিজ দলের বিরুদ্ধে ভোট দিতে না পারেন। অসাধু ব্যবসায়ীদের একচেটিয়া ক্ষমতাকে খর্ব করার জন্য বঙ্গবন্ধু টিসিবি (ট্রেডিং কর্পোরেশন অব বাংলাদেশ) গঠন করেছিলেন যাতে ন্যায্যমূল্যে জনগণকে যে কোন সময় মালামাল সাপ্লাই দেয়া যায়। সরকার ও জনগণের সঙ্গে মশকারা শুরু করেছে কালোবাজারিরা। বর্তমানে চাল ও শীতের সবজিতেও অস্থিরতা চলছে। এতকিছুর পড়েও সরকার মজুদদারদের বিরুদ্ধে সর্বাত্মক এ্যাকশন নিয়েছে বলে জানা নেই। সরকার কি মজুদদারদের কাছে জিম্মি হয়ে পড়ল? এমন প্রশ্ন কেউ কেউ তুলছে। তাছাড়া বাণিজ্যমন্ত্রীও কি যথেষ্ট তৎপর নন? দুঃসময়ে আমরা অত্যন্ত সক্রিয় বাণিজ্যমন্ত্রী চাই। ব্যবসায়ীদের জনগণের প্রতি দায়িত্ব পালনে আন্তরিক হতে হবে। তবে দেশের বাজার কিছুটা সহনশীল হবে বলে মনে করি। দোহাজারী, চট্টগ্রাম থেকে
×