ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

বিষাক্ত বাতাস

প্রকাশিত: ০৮:৫৫, ২৮ নভেম্বর ২০১৯

 বিষাক্ত বাতাস

ঘনবসতিপূর্ণ ঢাকার প্রতিদিনের নিয়মিত চিত্র তীব্র যানজট, যা কোন স্থানের পরিবেশ দূষণের জন্য দৃস্যমান এক অপশক্তি। মেয়াদোত্তীর্ণ গাড়ি, ভারি যানবাহনের কালো ধোঁয়াই শুধু নয়, মাত্রাতিরিক্ত শব্দের প্রকটতায় রাজধানী ঢাকা আজ এক অসহনীয় পরিবেশ বিষাক্ততার শিকার। এমন দুঃসহ অস্থির পরিবেশ শুধু দৃশ্যমান তো বটেই, তার চেয়েও বেশি। শান্ত স্নিগ্ধ শরৎ-হেমন্ত তাদের বিদায় জানান দিয়ে শুষ্ক হাওয়ায় শীতকে আমন্ত্রণ জানাতে উদগ্রীব। আর এই প্রাকৃতিক পরিবর্তন প্রক্রিয়ায় বায়ুদূষণ তার অন্যতম সহায়ক অনুষঙ্গ বললে অত্যুক্তি হবে না। প্রকৃতির ধূসর চিত্র যেমন সাধারণ মানুষের নিরাপত্তা আর বাসযোগ্যতাকে প্রশ্নবিদ্ধ করছে, তেমন অবকাঠামোগত বাস্তব কর্ম প্রক্রিয়াও সে মাত্রা আরও অসহনীয় করে তুলছে। উন্নয়নের অভিগামিতায় দেশ আজ নিরন্তর সামনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। পাশাপাশি চলছে মানুষের নিত্যনৈমিত্তিক চাহিদার আরও উন্নত আর আধুনিক বাংলাদেশ নির্মাণের স্বপ্ন। যা অবধারিতভাবে চারপাশের সবুজ প্রকৃতির অবারিত দানের প্রতি অযাচিত হস্তক্ষেপও বটে। ফলে পারিপার্শ্বিক অবস্থা দূষিত হতে সময় নিচ্ছে না। শিল্প কারখানা নির্মাণ থেকে শুরু করে বহুতল ভবনের সুদৃশ্য আর উচ্চ ইমারত তৈরির কর্মপরিকল্পনায় প্রকৃতির ভারসাম্য কতখানি বিঘ্নিত হচ্ছে তা পরিবেশ বিজ্ঞানী ও বিশেষজ্ঞদের সুচিন্তিত অভিমত ও তথ্য উপাত্তের মাধ্যমে আজ সুস্পষ্টভাবে প্রকাশিত। তার ওপর মেট্রোরেলের নির্মাণ কার্যক্রমে খোঁড়াখুঁড়ি বাতাসের ধূলিকণাকে আরও বাড়ন্ত পর্যায়ে নিয়ে যায়। যা সাধারণ মানুষের স্বাস্থ্য ঝুঁকির অন্যতম উপাদান। এক্ষেত্রে মানা হচ্ছে না কোন ধরনের নিয়ম কানুন আর শৃঙ্খলা। পানি নিষ্কাশনের প্রকল্প নিয়ে ড্রেন তৈরির যে মহাকর্মযজ্ঞ তাতেও পরিবেশের ভারসাম্যতা রক্ষা করা এক দুরূহ অবস্থায় দাঁড়িয়েছে। উন্নত যাতায়াত ব্যবস্থায় মেট্রো রেল কিংবা সেতু, উড়াল সেতু, চারলেন বিশিষ্ট মহাসড়কের সংযোগ স্থলের নির্মাণাধীন প্রকল্প আজ সারা বাংলাদেশের বৃহত্তর জেলাগুলোর এক করছে। কোন প্রকল্পই সময় মতো তার গন্তব্যে পৌঁছায় না। প্রকৃতিকে বিপন্ন করতে পারে দীর্ঘ মেয়াদী এমন সব কার্যক্রমের ধীরগতি কিংবা অযথা সময় ক্ষেপণ পুরো পরিবেশকে যে অস্বাস্থ্যকর অবস্থায় নিয়ে যাচ্ছে, তারও যথার্থ সমাধান কবে হবে তেমন সদুত্তর কারও কাছেই নেই। এমন সব মেগা কর্মযজ্ঞ চারপাশের শ্যামল প্রকৃতিকে যে মাত্রায় আঘাত হানে তাও পরিবেশ বিপর্যয়ের আশঙ্কাকে অনেকখানি বাড়িয়ে দেয়। আর এসব মিলিয়েই বাংলাদেশ আজ পরিবেশ ভয়াবহতার আতঙ্কিত মাত্রায়। জনবহুল এই ছোট দেশটির মানুষের নজর থাকে ঢাকায় এসে নিরাপদ বসতি তৈরি করা। ফলে বর্তমানে রাজধানীর জনসংখ্যা প্রায় দুই কোটি, যারা আজ চরম পরিবেশ বিপর্যতায় স্বাস্থ্য ঝুঁকির মধ্যে প্রতিদিন অতিবাহিত করছে। তবে উন্নয়নের নিরন্তর যাত্রায় নির্মাণাধীন প্রকল্পগুলোর প্রভাব যেমন থাকবে, একইভাবে ভাবতে হবে ক্ষতিকর অবস্থাকে যাতে সামলানো যায়। একই সঙ্গে দৃশ্যমান অবকাঠামোগত উন্নয়ন ধারাকে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব তার কর্মপ্রক্রিয়ায় নির্ধারিত সময়ের মধ্যে শেষ করাও জরুরী। পরিবেশ নিজের নিয়মে তার গতিতে জনবান্ধব করে তোলে। তারপরেও উন্নয়ন অভিযাত্রায় তার বিপর্যয় মোকাবেলা করেই এগোতে হবে, যাতে নিরাপদ, দূষণমুক্ত ও বাসযোগ্য বাংলাদেশ পেতে আমাদের বেশি সময় অপেক্ষা করতে না হয়।
×