ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

মেরিটাইম অঞ্চল আইন

প্রকাশিত: ০৮:৫৫, ২৮ নভেম্বর ২০১৯

মেরিটাইম অঞ্চল আইন

সম্প্রতি একদল সমুদ্র সন্ত্রাসী তথা জলদস্যু নিঃশর্ত আত্মসমর্পণ করেছে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে কক্সবাজারে। ইতোপূর্বে কয়েক ধাপে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও র‌্যাবের মহাপরিচালকের কাছে আত্মসমর্পণ করেছিল সুন্দরবনের কয়েক দল জলদস্যু অস্ত্রশস্ত্রসমেত। এ সবই সরকারের ইতিবাচক পদক্ষেপ। এবার সমুদ্র ও নৌবন্দরগুলোতে অধিকতর সুরক্ষা দিতে মন্ত্রিসভা অনুমোদন করেছে ‘টেরিটোরিয়াল ওয়াটার্স এ্যান্ড মেরিটাইম জোন (এ্যামেন্ডমেন্ট) আইন-২০১৯। বাংলাদেশ মেরিটাইম অঞ্চল আইন চূড়ান্ত হলে তা ব্যাপকভিত্তিক মেরিটাইম অঞ্চল নির্ধারণসহ অভ্যন্তরীণ জলসীমা ও রাষ্ট্রীয় জলসীমা ২০০ নটিক্যাল মাইল পর্যন্ত অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠা করবে। এর পাশাপাশি ৩৫০ নটিক্যাল মাইল পর্যন্ত মহীসোপানে সমুদ্রসম্পদের ওপর বাংলাদেশের সার্বভৌম অধিকার নিশ্চিত হবে। এ ছাড়াও জলদস্যুতা, সমুদ্র সন্ত্রাস, সমুদ্র দূষণসহ সমুদ্রে সংঘটিত অপরাধ ও নৌ-জাহাজ চলাচলে নিরাপত্তা বিঘœকারী বেআইনী কর্মকান্ড প্রতিহত করতে সহায়ক হবে। তদুপরি বৈজ্ঞানিক গবেষণা, সুষ্ঠু সমুদ্র ব্যবস্থাপনা, জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ, তেল-গ্যাস-খনিজসম্পদ আহরণসহ আঞ্চলিক মেরিটাইম সহযোগিতা থেকে সুফল পাওয়ার পথ সুগম হবে। এই আইনের আওতায় জলদস্যুতা, সমুদ্রে চুরি বা সমুদ্রে সন্ত্রাস করতে গিয়ে কেউ খুন করলে মৃত্যুদন্ডের বিধান এবং কেউ জলদস্যুতা কিংবা সমুদ্র সন্ত্রাস করলে অথবা চেষ্টা করলে যাবজ্জীবন বা সর্বোচ্চ ১৪ বছর কারাদন্ডের বিধান রাখা হয়েছে। এর ফলে বঙ্গোপসাগরে ও নৌবন্দরগুলোতে সন্ত্রাস ও জলদস্যুতা একেবারে নির্মূল না হোক, অনেকাংশে কমবে নিঃসন্দেহে। তবে এই আইন ও বিধি প্রয়োগে বাংলাদেশ নৌবাহিনী, কোস্টগার্ডসহ নৌ-পুলিশ ও নৌ-বন্দরের থানাগুলোকে আরও আধুনিক, তৎপর ও শক্তিশালী করতে হবে। পর্যায়ক্রমে সরকার তা করবে বলেই প্রত্যাশা। বাংলাদেশের সমুদ্র সম্পদ এখন পর্যন্ত প্রায় অনাবিষ্কৃত ও অব্যবহৃত। সীমিত পর্যায়ে কিছু পরিমাণ তেল-গ্যাস এবং মৎস্য সম্পদ আহরণ করা হলেও, তার পরিমাণ বিপুল বঙ্গোপসাগরের অফুরন্ত সম্পদের তুলনায় খুবই নগণ্য। এমনকি সমুদ্র সম্পদ সম্পর্কে জরিপ চালানোর উপযোগী জাহাজ পর্যন্ত নেই। সময়ে সময়ে বাপেক্সসহ বিদেশী সহায়তায় যৎসামান্য জরিপ কার্য চালানো হলেও বঙ্গোপসাগরের অমিত ও অপার সম্ভাবনা সম্পর্কে আমরা খুব কম জানি। অথচ বাংলাদেশের রয়েছে সুবিশাল সমুদ্রসীমা। ২০১৪ সালের জুলাইয়ে ভারত এবং ২০১২ সালে মিয়ানমারের সঙ্গে বিরোধ নিষ্পত্তির পর বাংলাদেশ ১ লাখ ১৮ হাজার ৮১৩ বর্গকিলোমিটারের বেশি সমুদ্র এলাকায় (টেরিটোরিয়াল সি) অধিকার লাভে সফল হয়। ২০০ নটিক্যাল মাইলের একচ্ছত্র অর্থনৈতিক অঞ্চল এবং চট্টগ্রাম উপকূল থেকে ৩৫০ নটিক্যাল মাইল পর্যন্ত মহীসোপানের তলদেশে সব ধরনের প্রাণিজ ও অন্যান্য সম্পদের ওপর সার্বভৌম অধিকার লাভ করে। এই বিশাল অঞ্চলে কী পরিমাণ মৎস্য ও খনিজ সম্পদ রয়েছে, সে সম্পর্কে আমাদের কোন ধারণা নেই। ব্লু-ইকোনমি বা নীল সমুদ্রের অর্থনীতি হিসেবে খ্যাত এই অঞ্চলের সম্ভাবনা খতিয়ে দেখতে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে ১৯টি মন্ত্রণালয়কে একযোগে কাজ করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। বিদ্যুত, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ে প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে ব্লু-ইকোনমি সেল। গভীর সমুদ্র এলাকায় তেল-গ্যাস অনুসন্ধান ও মৎস্যসম্পদ আহরণের জন্য ১ হাজার ৬০০ কোটি টাকার বহুমুখী প্রকল্প হাতে নেয়া হয়েছে। এর আওতায় ৯৫০ কোটি টাকা ব্যয়ে কেনা হবে অত্যাধুনিক মাল্টিডিসিপ্লিনারি জাহাজ। বাকি ৬৫০ কোটি টাকা ব্যয় করা হবে অবকাঠামো উন্নয়নসহ গবেষণার কাজে। তবে দুঃখজনক হলো, সমুদ্র সম্পদ আহরণ, রক্ষণাবেক্ষণসহ সার্বিক ও সমন্বিত ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করতে জাতীয় পর্যায়ে কোন নীতিমালা নেই। ফলে সমুদ্র অর্থনীতি বা ব্লু-ইকোনমির আদৌ কোন সুফল ভোগ করতে পারছে না বাংলাদেশ। মেরিটাইম অঞ্চল আইন এক্ষেত্রে একধাপ অগ্রগতি।
×