ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

বলিভিয়া কেন অশান্ত

প্রকাশিত: ১২:০৩, ২৭ নভেম্বর ২০১৯

বলিভিয়া কেন অশান্ত

বলিভিয়ার প্রেসিডেন্ট ইভো মোরালেস গত ১০ নবেম্বর হঠাৎ করেই পদত্যাগ করে বসার দু’দিন পর রাজধানী লাপাজে অস্বস্তিকর শান্তভাব নেমে আসে। রাজপথ জনশূন্য হয়ে পড়ে। বাস, ট্যাক্সি অলস পড়ে থাকে। বেশিরভাগ বাসিন্দা বাড়িতেই থেকে যায়। সেনাবাহিনী রাজপথ নিয়ন্ত্রণে নেয়। কিন্তু এই থমথমে ভাব বেশিক্ষণ স্থায়ী হয়নি। পরদিনই রাজধানীসহ বেশ কিছু অঞ্চলে আবার সহিংসতা বেঁধে যায়। গোলযোগে এ পর্যন্ত ১০ ব্যক্তি নিহত হয়েছে। নতুন করে সহিংসতা শুরুর কারণ অন্তর্বর্তী প্রেসিডেন্ট হিসেবে জিনাইন আনেজের নাম ঘোষণা। মোরালেসের পদত্যাগের আগ পর্যন্ত তিনিই ছিলেন সিনেটের দ্বিতীয় ভাইস প্রেসিডেন্ট হিসেবে কংগ্রেসে সর্বোচ্চ স্তরের বিরোধীদলীয় রাজনীতিক। অন্তর্বর্তী প্রেসিডেন্ট হিসেবে তিনি একটা মন্ত্রিসভা গঠন করেছেন এবং শীঘ্রই নতুন নির্বাচন অনুষ্ঠানের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। বলিভিয়ার মানুষ এখনও মোরালেসকে দারুণ শ্রদ্ধার চোখে দেখে। তাদের অনেকেই এই অন্তর্বর্তী সরকারকে বৈধ হিসেবে মেনে নেয় কিনা তার ওপর অনেক কিছু নির্ভর করছে। প্রশ্ন হচ্ছে মোরালেসের পতন হলো কেন, কেন তিনি পদত্যাগ করলেন? এখানে দুটো কথা বলে নেয়া ভাল। ইভো মোরালেস লাতিন আমেরিকার বামপন্থী আন্দোলনের প্রতীক হিসেবে পরিগণিত। ২০০৫ সালের নির্বাচনে তার দল মুভমেন্ট ফর সোশালিজম জয়ী হলে তিনি দেশের প্রথম দেশজ প্রেসিডেন্ট হয়ে দাঁড়ান। পদত্যাগের আগ পর্যন্ত ১৪ বছর তিনি ক্ষমতায় থাকাকালে বলিভিয়ার অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির হার লাতিন আমেরিকার দেশগুলোর মধ্যে হয়ে দাঁড়িয়েছিল অন্যতম সর্বোচ্চ। দেশজ মানুষের অধিকারের তিনি প্রসার ঘটিয়ে ছিলেন। প্রাকৃতিক গ্যাস বিক্রি করে প্রাপ্ত অর্থ তিনি দারিদ্র্য লাঘবের কাজে লাগিয়ে ছিলেন। দারিদ্র্য প্রায় অর্ধেকে নেমে এসেছিল। কিন্তু তার পরও মোরালেসের পতন ঘটেছিল কারণ এটা স্পষ্ট হয়ে উঠেছিল যে তিনি প্রায় নিরঙ্কুশ ক্ষমতা নিয়ে সম্ভবত আজীবন ক্ষমতায় থাকতে চান। ২০০৫ সালে প্রথম ক্ষমতায় আসার পর নিজের জনপ্রিয়তার সুযোগ নিয়ে মোরালেস প্রথম মেয়াদ শেষ হওয়ার আগেই ২০০৯ সালে আগাম নির্বাচন দিয়ে দ্বিতীয়বারের মতো সহজ বিজয় অর্জন করেন। ২০১৪ সালে তাঁর পুনর্নির্বাচনে না দাঁড়ানোর প্রতিশ্রুতি ছিল। তা ছাড়া নতুন সংবিধানেও বলা ছিল যে একজন প্রেসিডেন্ট দুই মেয়াদের বেশি ক্ষমতায় থাকতে পারবেন না। কিন্তু কোর্টের এক রুলিংকে কাজে লাগিয়ে মোরালেস তৃতীয়বারও নির্বাচিত হন যদিও বলিভিয়রা ব্যাপারটা পছন্দ করেনি। গত অক্টোবরের নির্বাচনে মোরালেস চতুর্থবারের মতো প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন এবং যথারীতি তাকে বিজয়ী ঘোষণা করা হয়। নির্বাচনের ফল ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গে বিতর্ক সৃষ্টি হয়। এতে ব্যাপক কারচুপি হয়েছে বলে অভিযোগ ওঠে। লাখ লাখ লোক প্রতিবাদমুখর হয়। সঙ্কট আরও তীব্র রূপ নেয় যখন আমেরিকান রাষ্ট্র সংস্থা (ওএএস) জাল ভোটের তথ্য দিয়ে রিপোর্ট প্রকাশ করে। মোরালেসের দল মুভমেন্ট ফর সোশালিজম কংগ্রেসে সংখ্যাগরিষ্ঠতা বজায় রাখলেও জালিয়াতি অভিযোগ জোরালো রূপ নেয়। বলিভিয়াবাসী স্পষ্টতই দুটো পক্ষে বিভক্ত হয়ে যায়। লাখ লাখ মানুষ মোরালেসের পক্ষে ও বিপক্ষে রাস্তায় নেমে আসে। মোরালেসবিরোধী বিক্ষোভে বলিভিয়ার বৃহত্তম নগরী সান্তাক্রুজ অচল হয়ে যায়। মোরালেস শান্তি ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করেন। কিন্তু ভোট জালিয়াতির প্রমাণ ওঠায় তিনি নতুন নির্বাচনের প্রতিশ্রুতি দেন। তাতে বিক্ষোভকারীদের শান্ত করা যায়নি। পুলিশ বাহিনী সরকারের আদেশ মানতে অস্বীকৃতি জানায়। সশস্ত্র বাহিনী শান্তি ও স্থিতির স্বার্থে মোরালেসকে ক্ষমতা ছাড়তে পরামর্শ দেন। মোরালেস ক্ষমতা ছেড়ে মেক্সিকো চলে যান। তবে তার ক্ষমতা ত্যাগকে ‘নাগরিক, রাজনৈতিক ও পুলিশী অভ্যুত্থান’ আখ্যায়িত করেন এবং বলেন তিনি বৃহত্তর শক্তি ও উদ্যম নিয়ে ফিরে আসবেন। মোরালেস বলেন ‘তার অপরাধ তিনি একজন দেশজ মানুষ, ‘ইতালিয়ান নেতা ও কোকা কৃষক।’ এদিকে মোরালেসের সমর্থনে বলিভিয়ায় এখনও বিক্ষোভ চলছে। বিরুদ্ধেও চলছে। এর সমাধান কিভাবে হবে বলার সময় এখনও আসেনি। চলমান ডেস্ক সূত্র : ইকোনমিস্ট
×