ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

নেতানিয়াহুর নতুন চাল!

প্রকাশিত: ১২:০২, ২৭ নভেম্বর ২০১৯

নেতানিয়াহুর নতুন চাল!

গত ১২ নবেম্বর এখানে একটি ইসরাইলী ক্ষেপণাস্ত্র ও পরে ইসরাইলী জঙ্গী বিমান গাজার একটি বাড়িতে আঘাত হেনে প্যালেস্টাইনিয়ান ইসলামিক জিহাদ (পিআইজে) নামে একটি জঙ্গী গোষ্ঠীর কমান্ডার রাজা আবু আল-আতা ও তাঁর স্ত্রীকে হত্যা করে। জবাবে গ্রুপটি ইসরাইলে রকেট বর্ষণ করে যদিও তাতে কেউ হতাহত হয়নি। এরপর ইসরাইল আরও বিমান হামলা চালায় যার পরিণতিতে কমপক্ষে ৩৪ জন ফিলিস্তিনী নিহত হয়। গত মে মাসেও দু’পক্ষের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছিল। উভয় পক্ষ দু-তিন দিন ধরে গোলাগুলি চালায়। তারপর মিসরের মধ্যস্থতায় অস্ত্রবিরতি হয়। পিআইজে হুঁশিয়ারি দিয়েছে যে এবারের অবস্থা অন্যরকম হবে। সংগঠনের নেতা জিয়াদ আল নাখালে বলেন, আমরা যুদ্ধ করব। ইসরাইলী নেতা নেতানিয়াহু সমস্ত সীমারেখা অতিক্রম করেছেন। উল্লেখ করা যেতে পারে যে গাজায় এ ধরনের হত্যাকা- নিয়ে মাঝেমধ্যেই বৃহত্তর সংঘর্ষের সূত্রপাত ঘটেছে। ২০১২ সালে এক হামাস নেতার হত্যাকে কেন্দ্র করে ইসরাইলের সঙ্গে স্বল্প স্থায়ী যুদ্ধ ঘটে গিয়েছিল। পিআইজে হচ্ছে গাজার দ্বিতীয় বৃহত্তম জঙ্গী সংগঠন। হামাসের তুলনায় এটি আকারে ছোটই শুধু নয় উপরন্তু বাস্তবতা জ্ঞানও কম। এই ইসলামী সংগঠনটি ২০০৭ সাল থেকে ভূখ- নিয়ন্ত্রণ করছে। পিআইজে যুদ্ধে যাওয়ার কথা বললেও হামাস স্পষ্টতই লড়াইয়ে যোগ দিতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে। তবে তাই বলে হামাস ইসরাইলে পিআইজের রকেট ছোড়া বন্ধ করায়নি যদিও ছোট জঙ্গী সংগঠনগুলো হামাসের অনুমতি ছাড়া ইসরাইলে হামলা চালালে প্রায়শই হামাস তাদের থামিয়ে দিয়ে থাকে। হামাস ও পিআইজের নেতারা অপারেশন রুমে বসে তাদের কর্মধারার সমন্বয় সাধন করলেও হামাস তার নিজস্ব অস্ত্রভা-ার থেকে রকেট বের করেনি। ইসরাইলের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ যুদ্ধের মধ্য দিয়ে ১৯৮০ এর দশকে হামাসের উত্থান। গাজায় ক্ষমতায় আসার পর থেকে সংগঠনটি ইসরাইলের বিরুদ্ধে তিন তিনটি যুদ্ধে লড়েছে। সব যুদ্ধের পরিণতি গাজার ২০ লাখ লোকের জন্য বিপর্যয়কর হয়েছে। হাজার হাজার নর-নারী ও শিশু নিহত এবং অসংখ্য গৃহ ধ্বংস হয়েছে। ২০০৭ সাল থেকে ইসরাইল ও মিসরের আরোপিত অবরোধে অর্থনীতি অচল হয়ে পড়ে। হাজার হাজার তরুণ কাজকর্ম ও ভবিষ্যতের সন্ধানে অন্যত্র পাড়ি জমায়। ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য হামাস অবরোধ শিথিল করার বিনিময়ে ইসরাইলের সঙ্গে অস্ত্রবিরতিতে রাজি। কিন্তু তা করতে গেলে নিজ দলের জঙ্গী ক্যাডারদের কাছেই নেতারা জনপ্রিয়তা হারিয়ে বসবেন। অন্যদিকে ইসরাইলও হামাসকে উত্ত্যক্ত করে বৃহত্তর সংঘর্ষে জড়ানোর ঝুঁকি থেকে নিজেকে বিরত রেখেছে। উপরন্তু গাজার নিয়ন্ত্রণ হামাসের হাতে ছেড়ে দিলে নেতানিয়াহুরই লাভ। কারণ তা হলে হামাস ও পশ্চিম তীরের ফিলিস্তিনী কর্তৃপক্ষ বা পিএর মধ্যে বিভাজন অক্ষুণœ থাকবে। গাজায় সাম্প্রতিক বিমান হামলা চালানো নেতানিয়াহুর এক নতুন চাল হতে পারে। নয়া সরকার গঠন করার জন্য মধ্যপন্থী ব্লু এ্যান্ড হোয়াইট পার্টিকে তার সঙ্গে কোয়ালিশনে যোগ দিতে রাজি করাতে হবে। কিন্তু দলটি ফৌজদারি তদন্তের উল্লেখ করে তার সঙ্গে যোগ দিতে এ পর্যন্ত অস্বীকৃতি জানিয়েছে। নেতানিয়াহুও তো কম যান না। ব্লু এন্ড হোয়াইট পার্টির নেতা সাবেক সেনাপ্রধান বেনি গানজকে সম্প্রতি তিনি গাজা পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনায় টোপ দেখিয়ে নিয়ে এসেছেন। ভাব দেখানো হয়েছে যে তাঁকে প্রতিরক্ষামন্ত্রী নিয়োগ করা হবে। রাজনীতিতে নবাগত গানজও ইতোমধ্যে নানা টানাপোড়েনে ক্লান্ত হয়ে পড়েছেন। তিনি নেতানিয়াহুর নতুন কোয়ালিশন ব্যবস্থা মেনে নিতে পারেন। গাজায় সর্বশেষ ঘটনাটিকে তার রাজি হওয়ার প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত করতে পারে। সূত্র : দি ইকোনমিস্ট
×