ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

বাংলাদেশের সামনে আরও কঠিন পরীক্ষা

প্রকাশিত: ১১:৫০, ২৭ নভেম্বর ২০১৯

বাংলাদেশের সামনে আরও কঠিন পরীক্ষা

মিথুন আশরাফ ॥ চারবছর আগে ২০১৫ সালে বাংলাদেশের যে স্বর্ণময় বছর মিলেছে তা কী আর মিলবে? তা কঠিনই মনে হচ্ছে। দিন দিন যে সামনে আরও কঠিন পরীক্ষা দিতে হবে বাংলাদেশের। ২০১৯ সালেই যে অবস্থা দাঁড় হয়েছে, তাতে সামনে বাংলাদেশের আরও খবর আছে। এ বছর বাংলাদেশের আর কোন আন্তর্জাতিক ম্যাচ নেই। ভারতের বিরুদ্ধে হোয়াইটওয়াশ দিয়ে সিরিজ খেলা শেষ হয়েছে। আর ইনিংস হারে আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলা শেষ হয়েছে। সামনে বাংলাদেশ টি২০ বিশ্বকাপের আগে একটি ওয়ানডে সিরিজ খেলবে। বছরটিতে দুটি ওয়ানডে সিরিজ খেলা হবে। টি২০ আর টেস্টই খেলবে বেশি। টি২০ বিশ্বকাপ আর টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের ম্যাচগুলো খেলবে। এমন দলগুলোর বিরুদ্ধে খেলবে যেখানে বাংলাদেশের ভাল করা কঠিনই। ২০২০ সালটি ভাল হলে তো কথাই নেই। কিন্তু আগামী বছরটিতেই বাংলাদেশের সবচেয়ে করুণ দশা হতে পারে। টানা আন্তর্জাতিক সিরিজ খেলার মধ্যে থাকবে বাংলাদেশ। তাতে ইনজুরি সমস্যা থাকবেই। পাশাপাশি ক্লান্তি ঘিরে ধরবে। আবার খেলাগুলো শক্তিশালী দলগুলোর বিরুদ্ধে। সব সিরিজই আবার খেলতে হবে সাকিব আল হাসানকে ছাড়া। তিনি যে এক বছর নিষিদ্ধ হয়ে আছেন। ম্যাচ পাতানোর প্রস্তাব পেয়েও আইসিসি এ্যান্টি করাপশন ইউনিটকে না জানিয়ে অপরাধ করেছেন। তাই ২৯ অক্টোবর ২০২০ পর্যন্ত ক্রিকেট থেকে তাকে দূরে সরিয়ে দেয়া হয়েছে। সাকিবকে ছাড়া ভারতের বিরুদ্ধে কি দশা হয়েছে। তা ভালভাবেই দেখা হয়ে গেছে। সামনের বছরটিতে তাহলে কী বেহাল দশা অপেক্ষা করছে? আগামী বছর শুরুতেই বাংলাদেশ খেলবে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে। ২ টেস্ট, ৩ টি২০ ম্যাচের সিরিজ খেলবে। সিরিজটি পাকিস্তানের হোম সিরিজ। এরপর অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে দেশের মাটিতে ২ ম্যাচের টেস্ট সিরিজ খেলবে বাংলাদেশ। মার্চে জিম্বাবুইয়ের বিরুদ্ধে হোমে ১ টেস্ট ও ৫ টি২০ খেলার কথা রয়েছে। এরপর এপ্রিল-মে মাসের মাঝামাঝি পর্যন্ত বিরতি মিলবে। মে-জুনে আবার আয়ারল্যান্ডে গিয়ে এক টেস্ট, ৩ ওয়ানডে ও তিন টি২০ ম্যাচের সিরিজ রয়েছে। বছরটিতে টি২০ বিশ্বকাপের আগে এই একটি ওয়ানডে সিরিজই খেলবে বাংলাদেশ। অক্টোবরে অস্ট্রেলিয়ায় টি২০ বিশ্বকাপ হবে। এই উদ্দেশ্যে সবদলই টি২০তে বিশেষ জোর দিচ্ছে। আর টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের ম্যাচগুলোও খেলতে হচ্ছে। আর তাই ওয়ানডে সবদলের মতো বাংলাদেশও কমই খেলবে। তবে টি২০ বিশ্বকাপের আগে মাত্র একটি ওয়ানডে সিরিজই খেলবে বাংলাদেশ। জুলাই-আগস্টে শ্রীলঙ্কার মাটিতে শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে তিন ম্যাচের টেস্ট সিরিজ রয়েছে। এরপর আগস্টে নিউজিল্যান্ডের বিরুদ্ধে দেশের মাটিতে দুই ম্যাচের টেস্ট সিরিজ আছে। সেপ্টেম্বরে আছে এশিয়া কাপ টি২০। রাউন্ড রবীন লীগ হলে কম করে ৫টি ম্যাচ খেলতে পারবে বাংলাদেশ। গ্রুপপর্বের খেলা হলে কম করে দুটি ম্যাচ খেলবে। এরপর সেমিফাইনাল-ফাইনালে গেলে আরও ২টি ম্যাচ বাড়বে। রাউন্ড রবীন লীগ হওয়ার সম্ভাবনাই বেশি। গত বছরও তাই হয়েছে। পাকিস্তানে হওয়ার কথা এশিয়া কাপ। নাহলে সংযুক্ত আরব আমিরাতে হবে। এরপরই অক্টোবরে অস্ট্রেলিয়ায় টি২০ বিশ্বকাপ হবে। এই বিশ্বকাপে প্রথমপর্বে তিনটি ম্যাচ খেলা নিশ্চিত। এরপর মূলপর্বে, সুপার ১২তে উঠলে আরও ৫টি ম্যাচ পাবে বাংলাদেশ। স্বাভাবিকভাবেই মূলপর্বে বাংলাদেশ উঠবে ধরেই নেয়া যায়। সেমিফাইনাল ও ফাইনালে উঠতে পারলে তো আরও ম্যাচ বাড়বে। বিশ্বকাপ শেষে ডিসেম্বরে দেশের মাটিতে শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে আবার তিন ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজ আছে। এই সিরিজটি এগিয়েও আনা হতে পারে। এপ্রিল-মে মাসের মাঝামাঝি যেহেতু আন্তর্জাতিক ম্যাচ নেই। আবার মাশরাফি বিন মর্তুজার অবসরের বিষয়টিও সামনে চলে আসছে। তাই সিরিজ এগিয়ে আনা হতেও পারে। নাহলে ডিসেম্বরেই হবে। সেটিই দেশের মাটিতে খেলা দিয়ে মাশরাফির অবসরের সিরিজ হতে পারে। এই বছর বাংলাদেশ ৫টি টেস্ট খেলে সবকটিতে হেরেছে। সব ম্যাচেই নাজেহাল হয়েছে। চার ম্যাচেই আবার ইনিংস ব্যবধানে হেরেছে। বছরের শুরুতে নিউজিল্যান্ডের বিরুদ্ধে দুটি টেস্টে এবং শেষে ভারতের বিরুদ্ধে দুটি টেস্টে ইনিংস ব্যবধানে হেরেছে। নিউজিল্যান্ডের বিরুদ্ধে ফেব্রুয়ারিতে প্রথম টেস্টে ইনিংস ও ৫২ রানে এবং মার্চে ইনিংস ও ১২ রানে হেরেছে বাংলাদেশ। সিরিজের তৃতীয় ম্যাচটি সন্ত্রাসী হামলার জন্য হয়নি। নাহলে আরেকটি হার হয়তো যুক্ত হতো। ভারতের বিরুদ্ধে সম্প্রতি প্রথম টেস্টে ইনিংস ও ১৩০ রানে এবং দ্বিতীয় টেস্টে ইনিংস ও ৪৬ রানে হেরেছে বাংলাদেশ। মাঝখানে যে আফগানিস্তানের বিরুদ্ধে একমাত্র টেস্টটিতে বড় রানের ব্যবধানে, ২২৪ রানে হেরেছে বাংলাদেশ, তাতে তো লজ্জাই মিলেছে। বছরটিতে ১৮টি ওয়ানডে খেলে ১১টিতে হেরেছে। জিতেছে ৭টিতে। এর মধ্যে আয়ারল্যান্ডে প্রথমবারের মতো ফাইনালে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে হারিয়ে শিরোপা জিতেছে বাংলাদেশ। দ্বিপক্ষীয় কোন সিরিজের বাইরে প্রথমবার শিরোপা জিততে পেরেছে। বিশ্বকাপে দক্ষিণ আফ্রিকার মতো দলকে হারিয়েছে। ওয়েস্ট ইন্ডিজের শক্ত দল ছিল না। তবে বাংলাদেশ যে প্রথমবার শিরোপা জিতেছে সেটিতে প্রশংসা জড়িয়ে আছে। আর দক্ষিণ আফ্রিকাকে হারিয়ে যে বিশ্বকাপের সূচনাটা অসাধারণভাবে করেছে সেটিও অসাধারণ হয়েছে। কিন্তু বিশ্বকাপে সেমিফাইনাল খেলার আশা ছিল। সেটি তো হয়নি। এমনকি শেষটাও ভাল হয়নি। তাতে করে প্রশংসা সব ভেসে গেছে। বিশ্বকাপে শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে তিন ম্যাচে যে টানা হেরেছে বাংলাদেশ তাতে বছরটিই খারাপ হয়ে গেছে। শেষ বেলায় টানা ৫টি ওয়ানডে হেরেছে বাংলাদেশ। যে ফরমেটেই বাংলাদেশ সবচেয়ে বেশি প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ দল হিসেবে গড়ে উঠেছে। টেস্টে দুর্দশাগ্রস্ত বছর গেছে। ওয়ানডেতে সাফল্য মিলেছে। তবে শেষ পর্যন্ত ব্যর্থতাও যুক্ত হয়েছে। টি২০তে বছরটি দুর্দান্ত কেটেছে। ৭ ম্যাচ খেলে চারটিতেই জিতেছে বাংলাদেশ। তবে আফগানিস্তানের বিরুদ্ধে একটি টি২০ হার বাংলাদেশের সাফল্যে ব্যর্থতার ছোঁয়া লাগিয়ে দিচ্ছে। আর ভারতকে তিন ম্যাচের টি২০ সিরিজে প্রথমটিতে হারিয়ে পরের দুই ম্যাচে যে করুণ হার হয়েছে তাতেও শেষ পর্যন্ত ব্যর্থতাই যুক্ত হয়ে গেছে। কোন সিরিজ জেতা যায়নি। মাঝে মধ্যে একটি করে ম্যাচ জিতে চারটি ম্যাচ জেতা হয়েছে। কিন্তু সাফল্যের খাতায় শতভাগ প্রাপ্তি নেই। আগামী বছরটিতে ওয়ানডে খেলা তেমন নেই। তার মানে বাংলাদেশ নিজেদের সেরা ফরমেটে, পছন্দের ফরমেটে খুব বেশি খেলতে পারবে না। ৬টি ওয়ানডে খেলতে পারবে। আছে বেশি করে টেস্ট ও টি২০। ৯টি টেস্ট ও কম করে হলেও ২৪টি টি২০ ম্যাচ খেলবে। টেস্ট যাদের বিরুদ্ধে খেলবে, এর মধ্যে জিম্বাবুইয়ে ও আয়ারল্যান্ডের বিরুদ্ধেই জেতার সম্ভাবনা আছে। অস্ট্রেলিয়া ও শ্রীলঙ্কাকে এর আগে বাংলাদেশ হারালেও এবার তা খুবই কঠিন। দলে যে নেই সাকিব। আবার টানা খেলতে থাকায় ইনজুরির সমস্যা থাকতে পারে। ক্লান্তিও একটা বড় ব্যাপার হয়ে দাঁড়াতে পারে। এ বছর বিশ্বকাপের পরপরই শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে বাংলাদেশ খেলায় হোয়াইটওয়াশ হওয়ায় তো ক্লান্তিও একটা বড় বিষয় হিসেবে দাঁড় হয়েছিল। টি২০তেও যে দলগুলোর বিরুদ্ধে বাংলাদেশ খেলবে এর মধ্যে জিম্বাবুইয়ে, আয়ারল্যান্ড ও এশিয়া কাপে এবং টি২০ বিশ্বকাপে প্রথম রাউন্ড ছাড়া জয়ের সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে না। যদি বাংলাদেশ ক্রিকেটাররা নিজেদের মেলে ধরতে পারেন, তাহলে কথাই নেই। কিন্তু তা না করতে পারলে বাংলাদেশের আগামী বছরটি করুণ দশাতেই কাটাতে হবে। সামনে তাই বাংলাদেশকে কঠিন পরীক্ষাই দিতে হবে।
×