ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

বাউফলে ধর্মীয় উন্মাদনা সৃষ্টিকারী কে এই রহমান?

প্রকাশিত: ০৯:৩১, ২৭ নভেম্বর ২০১৯

বাউফলে ধর্মীয় উন্মাদনা সৃষ্টিকারী কে এই রহমান?

নিজস্ব সংবাদদাতা, বাউফল, পটুয়াখালী, ২৬ নবেম্বর ॥ বাউফলের তেঁতুলিয়া নদী বেষ্টিত চন্দ্রদ্বীপ ইউনিয়নের চর ওয়াডেলে এক অচেনা ব্যক্তির আগমন নিয়ে এলাকার মানুষের মধ্যে সন্দেহের সৃষ্টি হয়েছে। অভিযোগ রয়েছে, ওই ব্যক্তি ধর্মীয় বয়ান দিয়ে লোকজনের মধ্যে উন্মাদনা সৃষ্টি করছেন। তার নাম হযরত মাওলানা খন্দকার আবদুর রহমান (৩২)। তিনি কুষ্টিয়া থেকে এখানে এসেছেন। এমন এক অচেনা ব্যক্তির এই দুর্গম জনপথে আগমনের কারণ খুঁজতে গিয়ে বেরিয়ে এসেছে চাঞ্চল্যকর অনেক তথ্য। সরেজমিনে শুক্রবার সকাল ১০টার সময় চন্দ্রদ্বীপ ইউনিয়নের চর ওয়াডেলের খানকায় গিয়ে দেখা গেছে, একটি ঘরে তিনি ঘুমাচ্ছেন। আগের দিন রাতে ওই খানকার সামনে তিনি ওয়াজ মাহফিল করেছেন। তাই একটু বেশি বেলা করে ঘুমাচ্ছেন বলে জানান তার খাদেম। ওই খানকার মসজিদে তিনি ইমামতিও করেন। বিনিময়ে কোন টাকা পয়সা নিচ্ছেন না। বরং তিনি ওই মসজিদের ছাদ দেয়ার জন্য কমিটিকে টাকা দিচ্ছেন। স্থানীয় কয়েক ব্যক্তি জানান, এককালীন ওই মসজিদের জন্য তিনি দেড় লাখ টাকা দিয়েছেন। খানকার আশপাশ এলাকায় অনেক নারী পুরুষের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, কয়েক মাস হয় তিনি এখানে এসেছেন। এরপর ওই মসজিদে ইমামতির পাশাপাশি ঝাড়ফুক শুরু করেন। বিনিময় মসজিদের উন্নয়নের নামে জনপ্রতি একশ’ টাকা করে নেন। পাশাপাশি লতাপাতা দিয়ে তৈরি বড়ি বিক্রি করে এক হাজার টাকা করে নিচ্ছেন। জানা গেছে, খন্দকার আবদুর রহমান মাসোয়ারা দিয়ে স্থানীয় প্রভাবশালী কয়েক ব্যক্তিকে লালনপালন করছেন। সে জন্য সাধারণ মানুষের কথা বলার কোন সুযোগ নেই। তিনি চন্দ্রদ্বীপ ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রামে ওয়াজ মাহফিলের নামে ধর্মীয় উন্মাদনার সৃষ্টি করছেন। তিনি সৌদি আরবে পড়াশুনা করেছেন। এখনও মোবাইল ফোনে ইন্টারনেটের মাধ্যমে পড়াশুনা করছেন। তার মেধার কারণে সৌদি সরকার তাকে মাসিক ১৮ হাজার টাকা করে বৃত্তি দিচ্ছে। নিজের সম্পর্কে নিজেই এমন প্রচার চালাচ্ছেন। তার একথা ওই ইনিয়নের প্রায় সব মানুষই জানে। তবে তার উদ্দেশ্য সম্পর্কে অবহিত নয় কেউ। তবে তার গতিবিধি অনেকের কাছেই সন্দেহজনক। ওই চরের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক ব্যক্তি অভিন্ন সুরে বলেন, ‘ওনি অন্য সব হুজুরের চেয়ে আলাদা। ধর্মীয় বয়ান দেন। এমন ভাবে বয়ান দেন যা শুনলে গা শিউরে ওঠে। ইচ্ছে করে অমুসলিমদের বিরুদ্ধে যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ি’ এ ব্যাপারে কথা হয়, খন্দকার আবদুর রহমানের সঙ্গে। প্রথমেই তার পরিচয় জানতে চাইলে বলেন, কুষ্টিয়া জেলার কুমারখালী থানার চাঁপুর ইউনিয়নের নাভদিয়া গ্রামে তার বাড়ি। বাবার নাম মৃত খন্দকার আবদুল জলিল। তিনি রাজবাড়ী জেলার পাংশা থানার আজিজপুর রশিদিয়া কাওমি মাদ্রাসায় পড়াশুনা করেছেন। তিনি একজন হাফেজ। দেশের বাইরে পড়াশুনা করেছেন কিনা, এমন প্রশ্ন করা হলে, তিনি কিছু সময় নিশ্চুপ থেকে বলেন, ‘পড়াশুনার বিষয়টি গোপনীয় থাক’। কেন গোপন থাকবে, গোটা চন্দ্রদ্বীপের মানুষ জানে আপনি সৌদি আরব পড়াশুনা করেছেন। সৌদি সরকার আপনাকে মাসে মাসে বৃত্তি দিচ্ছে। তাহলে আমার কাছে স্বীকার করতে অসুবিধা কোথায়? এমন প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, ‘নিজের সম্পর্কে প্রচার করতে আমার ভাল লাগে না। আর প্রচার করলে আমার আমল নষ্ট হয়ে যাবে। আমি আমার সম্পর্কে ইউনিয়নের চেয়ারম্যানকে সব বলেছি। আমি চাই না আমকে নিয়ে লেখালেখি করা হোক’। কুষ্টিয়া থেকে তিনি এই দুর্গম চরে কেন এলেন, প্রশ্ন করা হলে কোন উত্তর না দিয়ে মাগরিবের নামজ পড়ার কথা বলে মসজিদের দিকে চলে যান। এ ব্যাপারে চন্দ্রদ্বীপ ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ও স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা এনামুল হক আলকাস মোল্লা বলেন, তার সম্পর্কে তিনি আমাকে কিছু বলেননি। তিনি খানকা মসজিদে ইমামতি করেন। এলাকা এলাকায় ওয়াজ মাহফিল করেন। তবে আমার সন্দেহ হয়, নিশ্চই ওনি কোন উদ্দেশ্য নিয়ে এখানে এসেছেন। হতে পারে ওনি কোন সংস্থার এজেন্ট, হতে পারে জামায়াতে ইসলামীর শীর্ষ পর্যায়ের কোন ব্যক্তি, গা ঢাকা দিতে এখানে এসেছেন। এমনও হতে পারে কোন মৌলবাদী সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর সঙ্গে জড়িত।
×