ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

জে এস সি’র পাঠ

প্রকাশিত: ০৮:৪৯, ২৭ নভেম্বর ২০১৯

জে এস সি’র পাঠ

শিক্ষক, হাইমচর কলেজ হাইমচর-চাঁদপুর। ২। সৃজনশীল অনুশীলন শিল্প উৎপাদনকপোড়ামাটির শিল্পতালপাতার শিল্পনকশিকাঁথাকষ্টিপাথরখচর্যাগীতি,কীর্তনগানমঙ্গল, কাব্য,পুঁথিসাহিত্য,গদ্যসাহিত্য ক) চর্যাপদের কাল নির্ণয় করেন কে ? খ) সংস্কৃতিরআত্তীকরণ কেন ঘটে ? গ) বর্ণিত ’ক’ শিল্পটি ধরণব্যাখ্যা করা। ঘ) ”বাঙালির সংস্কৃতিরবিকাশে ’খ’ শিল্পটির গুরুত্ব অপরিসীম-বিশ্লেষণ” কর। ক) উত্তর ঃ ভাষাবিদ ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ চর্যাপদের কাল নির্ণয় করেন । খ) উত্তর ঃ অন্য সংস্কৃতির ধারা নিজ সংস্কৃতিতে আয়ত্ত করার মাধ্যমে সাংস্কৃতিক আত্তীকরণ ঘটে। সাংস্কৃতিক আত্তীকরণ এমন একটি প্রক্রিয়া যে প্রক্রিয়ার মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি বা গোষ্ঠী অন্যের সংস্কৃতি আয়ত্ত করে। যখন মানুষ কোন নতুন সংস্কৃতি বা সংস্কৃতিক পরিবেশে বসবাস করতে আসে তখন সেখানকার মানুষের দৃষ্টিভঙ্গি,আচরণ,চিন্তা,চেতনা,মূল্যবোধ এক কথায় সামগ্র জীবন ধারার সাথে নিজেকে মানিয়ে নিতে চায়। আর এভাবেই সাংস্কৃতিক আত্তীকরণ হয়ে যায়।। গ) উত্তর ঃ বৈশিষ্ট্য অনুযায়ী উদ্দপিকে বর্ণিত ’ক’ শিল্পটি হচ্ছে দৃশ্যশিল্প। প্রাচীনকালে বাংলা এলাকায় ছাঁচ অনুযায়ী মাটির তৈরি ইট দিয়ে মন্দির বানানো হয়েছে। তবে এ ক্ষেত্রে শিল্পমূল্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে মাটির ফলক তৈরি করে তাতে ছবি উৎকীর্ণ করে পুড়িয়ে স্থায়ী রূপ দেওয়া। এগুলোকে টেরাকোটা বা পোড়ামাটির শিল্প বলা হয়। এছাড়া কালো রঙের কষ্টিপাথর আর নানা রকম মাটি দিয়ে হিন্দু ও বৌদ্ধ দেবদেবীর মূর্তি বানানোর ঐতিহ্যও বেশ পুরনো। তবে পালযুগে তালপাতার পুঁথিতে দেশীয় রঙ দিয়ে যেসব ছবি আঁকা হয়েছে তার প্রশংসা আধুনিক শিল্পরসিকদের কাছ থেকেও পাওয়া যায়। অন্যদিকে বাংলার নকশিকাঁথার ঐতিহ্যও অনেক পুরনো। মহিলারা ঘরে ঘরে কাঁথা সেলাই করে তাতে আশ্চার্য নিপুনতার গল্পকাহিনী ও ছবি ফুটিয়ে তুলত। উদ্দীপকে ’ক’ শিল্পের উপাদান হিসেবে পোড়ামাটির শিল্প,তালপাতার শিল্প, নকশিকাঁথা, কষ্টিপাথরের নাম উল্লেখ করা হয়েছে। যেহেতু এগুলো দৃশ্যশিল্পের অর্ন্তভুক্ত,সেহেতু বৈশিষ্ট্য অনুযায়ী ’ক’ শিল্পটিও দৃশ্যশিল্প ঘ) উত্তর ঃ বাঙালির সংস্কৃতির বিকাশে ’খ’ শিল্পটির গুরুত্ব অপরিসীম। উদ্দীপকে ’খ’ শিল্পের উপাদান হিসেবেচর্যাগীতি, কীর্তনগান, মঙ্গল কাব্য, পুঁথিসাহিত্য ও গদ্যসাহিত্যের কথা বলা হয়েছে। যেহেতু এগুলো সাহিত্য শিল্পের অন্তর্ভুক্ত, সেহেতেু ’খ’ শিল্পও সাহিত্য শিল্প। আর বাঙালির সংস্কৃতির বিকাশে সাহিত্য শিল্পের গুরুত্ব অপরিসীম। মানুষ যেভাবে জীবনযাপন করে,যেসব জিনিস ব্যবহার করে,যেসব আচার অনুষ্ঠান পালন করে,যা কিছু সৃষ্টি করে সব নিয়েই তার সংস্কৃতি। সাহিত্যও সংস্কৃতির অংশ। বাঙালির প্রথম সাহিত্যকর্ম হচ্ছে চর্যাপদ। প্রায় দেড় হাজার বছর আগে বৌদ্ধ সাধকরা এই চর্যাগীতিগুলো লিখেছেন। এগুলো বাংলা সাহিত্যের আদি নমুনা। অন্যদিকে সুলতানি আমলে শ্রীচৈতন্যের বৈষ্ণব ভাবধারার প্রভাবে বাংলায় কীর্তন গান রচনা শুরু হয় যা বৈষ্ণব পদাবলী নামে পরিচিত। অনেক মুসলিম কবিও এই পদাবলী রচনা করেন। যা সেই সময়ের সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির চিত্র ফুটিয়ে তুলে।এক সময় দেবদেবীকে নিয়েও নানা কাব্যকাহিনী রচিত হয়েছে। এগুলো মঙ্গলকাব্য নামে পরিচিত। এছাড়া এক সময় মুসলিম সমাজেও পুঁথি সাহিত্যের ব্যাপক কদর ছিল। পারস্য থেকে পাওয়া নানা কল্পকাহিনী এবং রোমান্টিক আখ্যান নিয়ে এগুলো রচিত হতো। পরবর্তীকালে উনিশ শতকে আমাদের দেশে বাংলা গদ্যের সূচনা হয়। ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর আধুনিক বাংলা সাহিত্যের ভিত রচনা করেন। সার্বিক আেেলাচনার প্রেক্ষিতে বলা যায়,সাহিত্য শিল্প বাঙালি সংস্কৃতির অবিচ্ছেদ্য অংশ এবং ধীরে ধীরে তা বঙ্কিমচন্দ্র, রবীন্দ্রনাথ, শরৎচন্দ্র, কাজী নজরুল ইসলামসহ বিভিন্ন সাহিত্যিকের লেখনিতে বিকাশ লাভ করে। তাই বাঙালি সংস্কৃতির বিকাশে সাহিত্য শিল্পের গুরুত্ব অপরিসীম।
×