ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

সবচেয়ে হাল্কা উপগ্রহ নির্মাণে সফলতা

প্রকাশিত: ১৩:০৪, ২৬ নভেম্বর ২০১৯

সবচেয়ে হাল্কা উপগ্রহ নির্মাণে সফলতা

সম্প্রতি ভারতে একদল তরুণ বিজ্ঞানী চমকে দিলেন গোটা বিশ্বকে। সাধারণত কয়েক টন ওজনের স্যাটেলাইট দেখেই বিশ্ববাসী অভ্যস্ত। কিন্তু এই তরুণ বিজ্ঞানীর দলটি কালাম স্যাট-ভি-টু নামে মাত্র এক কেজি ২৬০ গ্রাম ওজনের বিশ্বের সবচেয়ে হালকা স্যাটেলাইট উপগ্রহ ডিজাইন ও নির্মাণ করে ভূয়সী প্রশংসা কামিয়ে নিয়েছেন বিজ্ঞানী মহলে। উপগ্রহটি তারা তৈরি করেছেন মাত্র ছয় দিনের মাথায়, যা কিনা কক্ষপথে সফলভাবে উৎক্ষেপন করাও সম্ভব হয়! সাধারণত এ ধরনের নেতৃত্বে থাকেন অভিজ্ঞতাসম্পন্ন কিছুটা বয়সী গোছের কোন বিজ্ঞানের প্রফেসর। কিন্তু এ ক্ষেত্রে সবচেয়ে মজার যে ব্যাপার তা হলো, শিক্ষার্থীদের সেই দলটির নেতৃত্বে ছিলেন ভারতেরই ১৯ বছর বয়সী স্নাতক পড়ুয়া এক তরুণ, যিনি কি-না মাত্র ১৪ বছর বয়সে স্যাটেলাইট ডিজাইনে গভীর আগ্রহ দেখিয়েছিলেন। যার নাম রিফাথশারুক। সবচেয়ে কনিষ্ঠ সদস্য হওয়া সত্ত্বেও যিনি দাপটের সঙ্গে নেতৃত্ব দিয়েছেন সাতজনের ওই দলটিকে। ‘আমরা ভাষা হারিয়ে ফেলেছিলাম। আমরা পরে আনন্দে একে অপরকে জড়িয়ে ধরলাম। ওটা আমাদের জন্য খুব আবেগঘণ মুহূর্ত ছিল। যেটা আসলে কোন ভাষায় প্রকাশ করা সম্ভব না।’ নিজেদের উপগ্রহের সফল উৎক্ষেপণের খবর পাওয়ার অনুভূতি ব্যক্ত করেন রিফাথশারুক। ভারতের মহাকাশ গবেষণা সংস্থা-ইসরোতাদের ক্ষুদ্র এই উপগ্রহটি এ বছরের শুরুর দিকে একটি রকেটের মাধ্যমে কক্ষপথে সফলভাবে নিক্ষেপ করে। ইসরোও উপগ্রহটি অতিরিক্ত পেলোড হিসেবে বিনেপয়সায় বহন করে মহাকাশে নিয়ে যায়। এরপরই উপগ্রহটির সফল উৎক্ষেপণের ঘটনায় দলের সদস্যদের প্রতি প্রশংসার বাণী আসতে শুরু করে বিভিন্ন মহল থেকে। এ ব্যাপারে শারুক বলেন, ‘আমরা রাতারাতি তারকা বনে যাইনি। এর পেছনে আমাদের বছরব্যাপী কঠোর পরিশ্রম জড়িয়ে আছে। উৎক্ষেপণের আগে উপগ্রহটিকে বিভিন্ন পরীক্ষার মধ্যে দিয়ে যেতে হয়েছিল।’ তিনি বলেন, ‘কালামস্যাট-ভি-টু নামের এই উপগ্রহটির নামকরণ করা হয়েছে ভারতের প্রয়াত ও সাবেক প্রেসিডেন্ট এবং মহাকাশ গবেষণার বিশিষ্ট পথিকৃৎ ড. এ পিজে আব্দুল কালামের নামানুসারে।’ যেভাবে শুরু হয়েছিল এ যাত্রা- প্রকল্পের শুরুতেই ভারতীয় এই দলটি কালাম স্যাট-ভি-টু নির্মাণের ক্ষেত্রে এ যাবতকালের প্রমাণিত এবং পরীক্ষিত মডেলগুলো অনুসরণ করবে না বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। এ বিষয়ে গণমাধ্যমকে শারুক জানানÑ ‘পূর্ববর্তী উপগ্রহগুলো তৈরির সময় আমরা যে জ্ঞান অর্জন করেছিলাম সেগুলোই পরে আমাদের কাজে এসেছে। তবে আমরা আরও কিছু উদ্ভাবনী ভাবনা এ ক্ষেত্রে প্রয়োগ করছি। ইসরো’র বিজ্ঞানী রাশুর থেকে, মানে বলতে গেলে উপগ্রহের নক্সা আঁকার পর্যায় থেকে আমাদের সাহায্য করে আসছেন। যখনই আমাদের কোন বিষয় নিয়ে সন্দেহ হয়েছে আমরা তাদের পরামর্শ নিয়েছিলাম।’ শারুক সাক্ষাতকারে আরও বলেন, ‘আমরা ইসরো থেকে যে সহায়তা পেয়েছি, তার জন্য আমরা অনেক কৃতজ্ঞ। যদি আমরা বাণিজ্যিকভাবে পরিচালিত রকেট দিয়ে উপগ্রহটি মহাকাশে নিক্ষেপ করতাম তাহলে তারা এই উপগ্রহের জন্য ৬০ হাজার থেকে ৮০ হাজার ডলার দাবি করত। যেটা কিনা আমাদের পক্ষে বহন করা সম্ভব ছিল না।’ ‘উপগ্রহটি তৈরি করতে আমাদের খরচ পড়েছে প্রায় ১৮ হাজার ডলারের মতো। এটা অপেশাদার রেডিও যোগাযোগে সাহায্য করার জন্য ডিজাইন করা হয়েছে। যেটা মহাকাশে প্রায় দুই মাসের মতো টিকবে। আমরা উপগ্রহটি নক্সা করার জন্য দুই দিনের মতো সময় নিয়েছিলাম। বাকি সময় লেগেছে সেটা নির্মাণ এবং পরীক্ষার জন্য।’ যদিও এর আগে ২০১৭ সালে কালাম-স্যাট-ওয়ান নামে মাত্র ৬৪ গ্রাম ওজনের একটি স্যাটেলাইট নির্মাণ করা হয়েছিল। তবে কক্ষপথে সেটা সফলভাবে উৎক্ষেপণ হয়নি। দক্ষিণ ভারতের বন্দরনগরী চেন্নাইয়ের একটি বাণিজ্যিক এলাকায় ছোট একটি ফ্ল্যাটকে অফিসকক্ষ বানিয়ে উপগ্রহ নির্মাণের কাজ করছিল দলটি। ২১ বছর বয়সী জাগনাসাই দলটির সবচেয়ে প্রবীণ সদস্য। যিনি মাত্র কয়েক মাস আগে মহাকাশ প্রকৌশল বিদ্যায় তার ডিগ্রী সম্পন্ন করেন।
×