ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

বটতলার আন্তর্জাতিক নাট্যোৎসব ও রঙ্গমেলার সমাপনী আজ

প্রকাশিত: ১২:০৯, ২৬ নভেম্বর ২০১৯

বটতলার আন্তর্জাতিক নাট্যোৎসব ও রঙ্গমেলার সমাপনী আজ

স্টাফ রিপোর্টার ॥ তৃতীয়বারের মতো ঢাকায় আয়োজিত ‘বটতলা রঙ্গমেলা ২০১৯’ শিরোনামের আন্তর্জাতিক নাট্যোৎসব আয়োজন করল বাংলাদেশের অন্যতম জনপ্রিয় নাট্য সংগঠন বটতলা। রাজধানীর আগারগাঁওয়ের মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরে ১১ দিনব্যাপী বহুল আলোচিত এই উৎসব আজ শেষ হচ্ছে। উৎসবের সমাপনী দিন আজ সন্ধ্যা ৭-৩০ মিনিটে বটতলা রঙ্গমঞ্চে বিশিষ্ট নাট্যজন মামুনুর রশীদকে আজীবন সম্মাননা প্রদান করা হবে। এর আগে বিকেল বেলা ৩-৩০মিনিটে রয়েছে ‘মঞ্চ সারথী আতাউর রহমান’ শীর্ষক চিত্র প্রদর্শনী। ৫ টায় রঙ্গমঞ্চে রয়েছ ‘বটতলার আলাপ’। ‘নৃশংস নৈঃশব্দ্য কালে সুনন্দ সাহসের থিয়েটার’ শীর্ষক আলাপে অংশ নেবেন অসিত বসু ও কামালউদ্দিন কবির। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করবেন আশিস গোস্বামী। সভাপতিত্ব করবেন অধ্যাপক শফি আহমেদ। এদিকে এবারের বটতলার উৎসবের আয়োজনে অনেকটাই মুগ্ধ স্থানীয় দর্শক শ্রোতা। উৎসবে প্রতিদিন সন্ধ্যা থেকে রাত অবধি দেশী-বিদেশী অতিথিদের পদচারণায় মুখর ছিল। বিশেষ করে ৬-৩০ থেকে ৭টা পর্যন্ত বহিরাঙ্গনের নাদিম মঞ্চে গান, নাটক, কবিতা, নৃত্য পরিবেশনা উপস্থিত দর্শক শ্রোতাদের মুগ্ধ করেন দেশ বিদেশের শিল্পীরা। এসব পরিবেশনায় অংশ নেয় মনিপুরী থিয়েটার, ‘ক্ষ্যাপা বাউল’, ‘জবিরঙ্গ’, ‘সমগীত’, ‘এশিয়ান ইউনিভার্সিটি ফর উইমেন’, ‘এফ মাইনর’, ‘ঢাকা থিয়েটার’, ‘মাদল’, ‘সর্বনাম’, ‘জাককানইবি নাট্যকলা ও পরিবেশনা বিভাগ’ এবং ‘বেতাল’। তারা নাচ, গান, পথনাটক ও পারফর্মেন্স দিয়ে বহিরাঙ্গন মাতিয়ে রাখেন। প্রতিদিন নাদিম মঞ্চে নির্দেশকের মুখোমুখি দর্শকের রঙ্গ আড্ডা ছিল রাত ৯-৩০ থেকে ১০টা পর্যন্ত। উৎসবে ১৭-২৪ নবেম্বর মূল রঙ্গমঞ্চে বিভাগীয় নাট্যজন সম্মাননা প্রদান করা হয়। এ আয়োজন ছিল প্রতিদিন সন্ধ্যা ৭টা থেকে ৭-৩০ মিনিট পর্যন্ত। এবার এই আয়োজনে যথাক্রমে বরিশাল বিভাগের খান দেলোয়ার হোসেন, সিলেট বিভাগের হেমেন্দ্র চৌধুরী, ঢাকা বিভাগের হরিপদ সূত্রধর, রংপুর বিভাগের সবিতা সেনগুপ্ত, ময়মনসিংহ বিভাগের গৌরাঙ্গ আদিত্য, চট্টগ্রাম বিভাগের মিলন চৌধুরী, রাজশাহী বিভাগের অনিতা মৈত্র এবং খুলনার রোহানি বেগম মেরীকে বিভাগীয় সম্মাননা দেয়া হয়। এছাড়াও প্রতিদিন নাটক শেষে পর্দার অন্তরালে থাকা থিয়েটারের অপরিহার্য কুশলিদের সম্মান জানানো হয় প্রথমবার চালু হওয়া এ সম্মাননা ‘অন্তরালের সম্মাননা’ নামে পরিচিত হয়েছে। প্রতিদিন রঙ্গমঞ্চে সন্ধ্যা ৭-৩০ মিনিটে ছিল নাটক পরিবেশনা। উৎসবের উদ্বোধনী দিনে মঞ্চস্থ হয় বটতলার নাটক ‘ক্রাচের কর্নেল’। এরপর ধারাবাহিকভাবে ভারতের রঙ্গাশ্রম প্রযোজিত নাটক ‘আমার মুখের আঁচলখানি’, স্পেনের মুন প্যালেসের ‘দিলেমমাস উইথ মাই ফ্লামেনকো টেলকোট’, ইরানের ক্রেজি বডি গ্রুপের ‘মিসটেরিয়াস গিফট’, নেপালের আরোহন গুরুকুলের ‘৪.৪৮ ফিকোসিস’, ভারতের চাকদহ নাট্যজনের ‘বিল্বমঙ্গল’, বাংলাদেশের পদাতিক নাট্য সংসদের ‘ম্যাকবেথ’, জলপাইগুড়ি কলাকুশলীর ‘শুক’, ভারতের জয়তি দরগার ‘ব্ল্যাক হোল’, সুখচর পঞ্চমের ‘আচার্য প্রফুল্লচন্দ্র’ নাটকের মঞ্চায়ন হয়। উৎসবের সুমন মঞ্চে গত ২১, ২২, ২৩ নবেম্বর ৩-৩০ মিনিট থেকে ৫টা পর্যন্ত চারটি তথ্যচিত্রের প্রদর্শনী হয়। তথ্যচিত্রগুলো হলো ভারতের তাপস সেনের ওপর ‘লেট দেয়ার বি লাইট’, বাংলাদেশের ‘ফেরদৌসি মজুমদার’, এবং ভারতের ‘বিহাইন্ড দ্য সার্টেন : বিভাস চক্রবর্তী’ । ২৪ নবেম্বর সুমন মঞ্চে বিকেল ৫টায় ‘তথ্যচিত্র দ্য টিচার ঃ সৈয়দ জামিল আহমেদ’ দেখানো হয়। এছাড়া সুমন মঞ্চে গত ২১, ২২ এবং ২৩ নবেম্বর ৫টা থেকে ৬-৩০ পর্যন্ত তিনটি মাস্টারক্লাস অনুষ্ঠিত হয়। এতে সঙ্গীত ও নাট্য বিষয়ে মাস্টারক্লাস নেন নাট্যজন শিমুল ইউসুফ, চিত্রকলা ও নাট্যশিল্প নিয়ে বলেন শিল্পী ঢালী আল মামুন এবং শরীর, নৃত্য ও প্রশ্ন নিয়ে মাস্টারক্লাসে উপস্থিত ছিলেন ভারতের শৈবাল বসু। ২২ ও ২৩ নবেম্বর সকাল ১০টায় শিশু প্রহর মঞ্চে ছিল শিশুদের জন্য পরিবেশনা। এতে ছিল শব্দাবলী, বরিশালের ‘আওয়ার কিংডম’, ফুলকি, চট্টগ্রামের পুঁথি পড়া, পাখি পড়া এবং বাংলাদেশের পুতুল নাট্য গবেষণা ও উন্নয়ন কেন্দ্রের ‘পুতুলনাচ’। এ দুইদিন আর্টক্যাম্পে উপস্থিত ছিল সিসিমপুর। ২২ নবেম্বর সকাল ১০-৩০টা থেকে দুপুর ১-৩০ পর্যন্ত ছিল শিশুদের আঁকাআঁকি। সব মিলিয়ে সবশ্রেণী পেশার দর্শকদের জন্য বটতলার এই আয়োজনটি ছিল বেশ উপভোগ্য। আয়োজনের বৈচিত্রতা এবং সংস্কৃতি অঙ্গনের বিভিন্ন বিভাগের লোকজনের সম্পৃক্ততার কারণে এবারের উৎসব অনেকটাই ব্যতিক্রমী হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন নাট্য ও সংস্কৃতি অঙ্গনের মানুষরা। গত ১৬ নবেম্বর উৎসবের উদ্বোধন করেন নাট্যজন আতাউর রহমান। আয়োজনে প্রধান অতিথি ছিলেন সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ। বিশেষ অতিথি ছিলেন তিন তরুণ নাট্যকার সাধনা আহমেদ, রুমা মোদক ও শুভাশিস সিনহা।
×