ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

একসঙ্গে দেশে ফিরছেন না ক্রিকেটাররা, কোচ রাসেল ডোমিঙ্গো, ল্যাঙ্গেভেল্ট যাচ্ছেন ছুটিতে

ভারত সফরের শিক্ষা কাজে লাগবে তো?

প্রকাশিত: ১২:০২, ২৬ নভেম্বর ২০১৯

ভারত সফরের শিক্ষা কাজে লাগবে তো?

মোঃ মামুন রশীদ ॥ ভারত সফরের শুরুটা হয়েছিল স্বপ্নের মতো। বারবারই বুঝে ওঠার জন্য নিশ্চিত হতে হয়েছে- ঘটনা বাস্তব তো? ভারতকে আগেও ওয়ানডেতে হারিয়েছে বাংলাদেশ দল, টি২০ ক্রিকেটেও কয়েকবার শ্বাসরুদ্ধকর লড়াই করে অভিজ্ঞতার অভাবে হেরেছে। কিন্তু এবার তাদেরই মাটিতে টি২০ সিরিজের প্রথম ম্যাচে বাংলাদেশ জয় তুলে নেয়। অথচ দলটিতে নেই অন্যতম অলরাউন্ডার সাকিব আল হাসান ও নির্ভরযোগ্য ওপেনার তামিম ইকবাল ও ফর্মে থাকা পেস অলরাউন্ডার মোহাম্মদ সাইফউদ্দিন। সে কারণেই জয়টা অবিশ্বাস্য ছিল। তবে এরপর গল্পটাই পাল্টে হয়েছে হতাশায় পূর্ণ। ভারতীয়দের বিপক্ষে পুরো সফরে আর মাথাও তুলতে পারেনি বাংলাদেশ দল। বিশেষ করে দুই টেস্টের সিরিজে চরমভাবে নাজেহাল হয়ে আত্মসমর্পণ করেছে ৩ দিন শেষ হওয়ার আগেই। টেস্ট ক্রিকেট কেমন হয় তার চরম শিক্ষা দিয়েছে ভারত! এমনকি ভারতীয় অধিনায়কও সুযোগ পেয়ে উন্নতির জন্য দিক নির্দেশনামূলক কথা শুনিয়ে দিয়েছেন। ভারতের দেয়া সেই শিক্ষাটা কি কাজে লাগাতে পারবে বাংলাদেশ দল? ইডেন টেস্ট তৃতীয় দিন সকালে শেষ হতেই রাতে ঢাকায় ফিরেছেন টেস্ট অধিনায়ক মুমিনুল হক সৌরভসহ ৪ জন। বাকিরা সোমবার আসবেন এমনটা শোনা গেলেও এদিন সকালে শুধুমাত্র নাঈম হাসান ফিরেছেন। বাকিরা বুধবার রাতের মধ্যেই ফেরার কথা রয়েছে। আর প্রধান কোচ রাসেল ডোমিঙ্গো, বোলিং কোচ চার্ল ল্যাঙ্গেভেল্ট ঢাকায় ফিরে আবার নিজ নিজ দেশে ফিরে যাবেন ছুটিতে। স্পিন কোচ ড্যানিয়েল ভেট্টরি কলকাতা টেস্টের প্রথম দিন শেষেই দেশে ফিরে গেছেন। এমন পরাজয় হয় তো ঘুণাক্ষরেও ভাবতে পারেনি বাংলাদেশ দল। কারণ দুই বছর আগে ভারতের মাটিতে একমাত্র টেস্ট বেশ ভালই খেলেছিল তারা। এবার তাই আরেকটু ভাল করার প্রত্যয় ছিল। তাছাড়া সফরটা জয় দিয়ে শুরু হওয়াতে আত্মবিশ্বাসে ঘাটতির কোন কারণ ছিল না। তবে সিরিজের দ্বিতীয় টেস্ট দিবারাত্রির হওয়াতে তা নিয়ে ছিল অজানা আশঙ্কা। কারণ, গোলাপি বলে খেলার অভিজ্ঞতা যেমন নেই তেমনি দিবারাত্রির টেস্ট একেবারেই নতুন এক চ্যালেঞ্জ। সেই চ্যালেঞ্জের আগেই ইন্দোর টেস্টে তৃতীয় দিন বিকেলে ইনিংস ব্যবধানে হারের লজ্জা বরণ করে বাংলাদেশ দল। সেই লজ্জা এড়ানোর জন্য জোর অনুশীলন শুরু করে দেয় সফরকারীরা। কিন্তু আরও বিভীষিকাময় হয়েছে ইডেন টেস্টের অবিস্মরণীয় মুহূর্তটা। ২ দিন পেরিয়ে আর মাত্র ৪৭ মিনিট পর্যন্ত টিকে থাকতে পেরেছেন মুমিনুলরা। হেরে গেছেন আবার ইনিংস ব্যবধানে। চরম শিক্ষার একটি সফর হয়েছে দলের জন্য। এমনটা মুমিনুলও বলেছেন। কিন্তু ১৯ বছর ধরে টেস্ট ক্রিকেট খেলার পর এখন পর্যন্ত শিক্ষাটা অভিজ্ঞরা নিতে থাকলে ভাল কিছু করবে কখন? সেই ভাল কিছু করার জন্য কত অপেক্ষা করতে হবে? ক্রিকেটের অবকাঠামো, কেন্দ্রীয় চুক্তিতে নির্দিষ্ট পরিমাণ ক্রিকেটারদের আর্থিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করা, ক্রিকেটারদের সঙ্গে বোর্ড ও ম্যানেজমেন্টের সম্পর্কের ব্যাপারগুলো নিয়ে নানা কথা শুনিয়েছেন ভারতীয় অধিনায়ক কোহলি। অস্ট্রেলিয়া, ইংল্যান্ড ও নিউজিল্যান্ডের ক্রিকেটীয় অবকাঠামোর দৃষ্টান্ত অনুসরণ করে ভারত এখন ফল পেতে শুরু করেছে সেটিও জানিয়ে দিয়েছেন। কোহলি সরাসরি প্রশ্ন তুলেছেন বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) কাছে যে তারা আসলে কি চায়? টেস্ট ক্রিকেটে উন্নতির জন্য কি করতে হবে তা বলার পাশাপাশি তিনি বোর্ড ও ক্রিকেটারদের ইচ্ছাশক্তির সঙ্গে কর্মকা-ের সামঞ্জস্য থাকার বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ তা জানিয়েছেন। কোহলিরা নিজ দেশ থেকেই শিখেছেন বলেই এসব জানাতে পেরেছেন। এখন যারা জাতীয় দলে সুযোগও পান না নিয়মিত, তাদের একটি নির্দিষ্ট বেতন কাঠামো দিয়ে আর্থিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হয়েছে এবং নিয়মিত তারা যেন সর্বোচ্চ সুবিধা নিয়ে অনুশীলন চালিয়ে যেতে পারে তা নিশ্চিত করা হয়েছে। তাই কোহলির দাবি, এখন ভারতীয় দলের রিজার্ভ বেঞ্চ অনেক শক্তিশালী হয়ে উঠেছে। তার প্রমাণ পরপর দুই সিরিজে দক্ষিণ আফ্রিকা ও বাংলাদেশ দলকে নাস্তানাবুদ করার মাধ্যমেই দিয়েছে ভারতীয় দল। বিশেষ করে পেসারদের যতœ নেয়ার ক্ষেত্রে তারা যে কতটা এগিয়ে তাই জানা গেছে কোহলির কথা থেকে। এই শিক্ষাগুলো বিসিবি যদি কাজে লাগাতে পারে হয়তো ফল আসতে পারে। ভারত সফরের আগেই ঘরোয়া ক্রিকেটে বেতন ভাতাসহ ফিটনেস ট্রেনিং, অনুশীলন এবং বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধার ঘাটতি নিয়ে আন্দোলন করেছিলেন ক্রিকেটাররা। কেন্দ্রীয় চুক্তিতে ক্রিকেটারদের সংখ্যা বাড়ানোরও দাবি করা হয়। কোহলির কথার পর আরও যৌক্তিক মনে হচ্ছে এখন ক্রিকেটারদের সেই আন্দোলনকে। এসব ছাড়াও ভারতীয় পেসারদের দেখে অনেক কিছুই শিখেছেন এবার বাংলাদেশ দলের পেসাররা। এ বিষয়ে আবু জায়েদ রাহী বলেন, ‘পেস বোলিং যেহেতু দলের জন্য গুরুত্বপূর্ণ, যদি আমরা আরেকটু ভাল করতাম, দলের জন্য আরও ভাল হতো। গোলাপি বলের অভিজ্ঞতা বলতে গেলে ভাল। যেহেতু বলটা একটু বাড়তি সুইং করে। বিশেষ করে পেস বোলারদের জন্য ভাল। এ থেকে আমরা শিক্ষা নিয়েছি। আশা করি ভবিষ্যতের টেস্টগুলোতে আরও ভাল হবে।’ পেসাররা অবশ্য এবার দারুণ বোলিং করেছেন এবং সাফল্যও পেয়েছেন। কিন্তু মুশফিকুর রহীম ছাড়া আর কোন ব্যাটসম্যান ভাল করতে পারেননি। সেই আক্ষেপেই হয়তো ক্রিকেটাররা দেশে একসঙ্গে ফিরছেন না এবার। ইডেন টেস্ট তৃতীয় দিন রবিবার সকালে শেষ হওয়ার পর সেদিনই দেশে ফিরে এসেছেন মুমিনুল, মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ, আল-আমিন হোসেন ও মুস্তাফিজুর রহমান। আর সোমবার সকালে ফিরলেন শুধু অফস্পিনার নাঈম। এভাবে কোন সিরিজ শেষ করে সফর থেকে এর আগে বাংলাদেশ দলকে ফিরতে দেখা যায়নি। ভারত সফর শেষে যেন হতাশায়ই এভাবে ফিরছেন তারা। অবশ্য বিসিসিআই ট্যুর প্রোগ্রামের আওতায় মঙ্গলবার সিরিজ শেষে তবেই বাংলাদেশ দলের ফেরার কথা ছিল। কিন্তু আগেভাগেই সিরিজ শেষ হওয়াতে এমন অগোছালো ফেরা। কিন্তু বাংলাদেশ ক্রিকেটদল যেভাবে দেশে ফিরছে গত দশ বছরেও তাদের এমন ফেরা দেখা যায়নি! সিরিজ কিংবা টুর্নামেন্ট শেষে জরুরী প্রয়োজন থাকলে সর্বোচ্চ এক কি দুজন আলাদাভাবে দেশে ফিরতেন। বাদ বাকিরা ফিরতেন টিম ম্যানেজমেন্টর সঙ্গেই। কিন্তু এবারের চিত্রটি যেন পুরোপুরিই অন্যরকম। এক নয়, দুইও নয়! তিন ভাগে বিভক্ত হয়ে ভারত থেকে দেশে ফিরছে লাল সবুজের দল। কারণ, বাকিরা ফিরবেন ২৭ তারিখ রাতের মধ্যেই। এছাড়া ডোমিঙ্গো ও ল্যাঙ্গেভেল্ট টেস্ট ইডেন শেষ হওয়ার দিনই ঢাকায় ফিরেছেন। এরপর নিজেদের দেশ দক্ষিণ আফ্রিকায় ফিরে যাবেন তারা। ভেট্টরি কলকাতা থেকেই চলে গছেন তার স্বদেশ নিউজিল্যান্ডে। সেটি ইডেন টেস্টের প্রথম দিন শেষ হওয়ার পরই। পরবর্তী সিরিজ আসার আগে এখন ভারত থেকে পাওয়া শিক্ষা কাজে লাগাতে পারলেই হয়। সেজন্য কোহলির বলা কথায় কতটা টনক নড়ে বোর্ড ও ক্রিকেটারদের সেটাই দেখার অপেক্ষা।
×