অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ গত দশ বছরে প্রবৃদ্ধি যে হারে বেড়েছে, সে হারে বাড়েনি রাজস্ব আয়। এমনকি মাথাপিছু জাতীয় আয়ের গতির সঙ্গেও মিল নেই আয়কর আদায়ে। তাহলে, কোথায় গেল বাড়তি টাকা? অন্যদিকে, অর্থনীতির আয়তন বাড়লেও, মোটা খেলাপী ঋণসহ নানা সঙ্কট বাড়ছে ব্যাংক খাতে। এছাড়া সরকারের অতিমাত্রায় ব্যাংক নির্ভরতাও নিরুৎসাহিত করছে উদ্যোক্তাদের। বিশ্লেষকরা বলছেন, এমন বহুমুখী সঙ্কট থাকার পরও কি করে রেকর্ড গড়ে প্রবৃদ্ধি?
অর্থনীতির সরল তত্ত্ব হলো ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান বা পরিবারের আয় বাড়লে সমানতালে বাড়ে খরচ। এই খরচের বিপরীতে ভোক্তাদের কাছ থেকেও কর আকারে রাষ্ট্রীয় কোষাগারে জমা হয় কিছু অংশ। যাকে রাজস্ব আয় হিসেবে ধরে করা হয় আর্থিক পরিকল্পনা। অন্যদিকে অর্থনীতির আয়তন বাড়লে ইতিবাচক প্রভাব পড়ে মাথাপিছু জাতীয় আয়ে। যা গেল পাঁচ বছরে ১৩১৬ ডলার থেকে দাঁড়িয়েছে ১৯৯০ ডলারে। কিন্তু যে গতিতে আয় বেড়েছে মানুষের, সেই একই গতি কি পেয়েছে সরকারের রাজস্ব?
এখনও জিডিপির অনুপাতে রাষ্ট্রের আয় দশ শতাংশের নিচে। অথচ উন্নয়নশীল দেশের জন্য এটি হওয়ার কথা অন্তত ১৫। অন্যদিকে ২০১০ থেকে ১৪ পর্যন্ত প্রতি ১ শতাংশ প্রবৃদ্ধির বিপরীতে প্রত্যক্ষ আয়কর প্রায় ২ শতাংশ হারে বাড়লেও পরের পাঁচ বছরে তা নেমেছে এক শতাংশে। তাহলে কোথায় যাচ্ছে মাথাপিছু আয় বৃদ্ধির সুবিধা?
বিশ্ব ব্যাংকের সাবেক ইকোনমিস্ট ড. জাহিদ হোসেন বলেন, সমস্যাটা কোথায়? সমস্যাটা কি আমাদের রেভিনিও অর্জনের ক্ষেত্রে আমাদের যে সক্ষমতা ছিল সেটা দুর্বল হয়ে যাচ্ছে? পলিসি আগের মতো কাজ করছে না নাকি জেডিপির আকার বৃদ্ধির যে হিসাবটা আমরা করছি সেই হিসাবে কোন রকম গলদ আছে। আসলেই প্রবৃদ্ধি যা বলা হচ্ছে তা না হয়ে থাকে তাহলে রেভিনিও আসবে কিভাবে।
পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান বলেন, যখন একটা ইকোনমিক গ্রোথ হবে চারদিকে, তুমি সামলাতে পারছ না, চারদিকে যাচ্ছে তখন কিন্তু ওয়েস্টও হবে চুরিও হবে। এজন্য কাজ বন্ধ করা যাবে না।
অর্থনীতি বলে, প্রবৃদ্ধি ভাল হলে স্বস্তি থাকবে আর্থিক খাতে। কিন্তু বাস্তবতা হলো, খেলাপী ঋণ ছাড়িয়েছে ১ লাখ ১২ হাজার কোটি টাকা। যা শিক্ষা খাতে খরচ করা অর্থের দ্বিগুণের বেশি। আর স্বাস্থ্য বাজেটের প্রায় পাঁচগুণ। আর বিপুল টাকা খেলাপী থাকায় বিনিয়োগের জন্য পর্যাপ্ত ঋণ পাচ্ছেন না উদ্যোক্তারা। উল্টো রাজস্ব আয় কমে যাওয়ায় অভ্যন্তরীণ আর্থিক ব্যবস্থার ওপর নির্ভরতা বাড়ছে সরকারের। তাই প্রবৃদ্ধির পরিমাণ এবং গুণগতমান নিয়ে প্রশ্ন উঠছে চারদিকে।
পিআরআইয়ের নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান এইচ মনসুর বলেন, ২৪-২৮ হাজার কোটি টাকার মতো পুরো বছরের জন্য ধরা ছিল সেটা ৩ মাসেই খেয়ে ফেলছে সরকার। আগামী ৯ মাসে কি খাবে তাইলে? প্রথম ৩ মাসে তো কোন ব্যয়ই হয় না।
পরিকল্পনা কমিশনের সিনিয়র সচিব ড. এম শামসুল আলম বলেন, এখন এটার অংক দিয়ে আমরা নাই বললাম। প্রবৃদ্ধি যেটা পরিবর্তন ঘটাচ্ছে এটি কিন্তু আমাদের পরিবর্তন হচ্ছে। সত্যিকার পরিবর্তনকে প্রতিহত করছে। এখন অংকের হিসেবে একটু কম বেশি হতেই পারে।
সিপিডির সম্মানীয় ফেলো ড. মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, প্রবৃদ্ধি বৃদ্ধি হলে তার মানে সে উৎপাদন করছে, লাভ হচ্ছে এবং সে ট্যাক্সও দিচ্ছে এবং সে ব্যাংকের ঋণও পরিশোধ করছে।
ব্যাংকের মতো পুঁজিবাজারেও নেই প্রবৃদ্ধির প্রতিফলন। কারণ, দুই বছরে বাজার মূলধন কমেছে ৬৮ হাজার কোটি টাকা।
আরো পড়ুন
শীর্ষ সংবাদ: