ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

হংকংয়ে গণতন্ত্রপন্থীদের জয়

প্রকাশিত: ০৯:০৯, ২৬ নভেম্বর ২০১৯

হংকংয়ে গণতন্ত্রপন্থীদের জয়

হংকংয়ের রবিবার অনুষ্ঠিত স্থানীয় গণতন্ত্রপন্থী আন্দোলনকারীরা সংখ্যাগরিষ্ঠ আসনে জিতেছে। প্রাথমিক ফল অনুযায়ী নগরীর ৪৫২টি স্থানীয় পরিষদ আসনের মধ্যে গণতন্ত্রপন্থী প্রার্থীরা ৩৮৫টিতে জয় পেয়েছেন। পক্ষান্তরে বেজিংপন্থী প্রার্থীরা জয় পেয়েছেন ৫৮টিতে। হংকংয়ের প্রধান নির্বাহী ক্যারি লাম বলেছেন, সরকার রবিবারের স্থানীয় পরিষদের এই ভোটের ফলাফলকে সম্মান জানাচ্ছে। এদিকে বেজিং বলেছে, ভোটের ফলাফলে যাই ঘটুক হংকং চীনের অংশ। এপি ও এএফপি। চীনের বিশেষ প্রশাসনিক অঞ্চল হংকংয়ে গত ছয় মাস ধরে চলা অস্থিরতার ধারাবাহিকতায় ভোট গ্রহণে বিশৃঙ্খলা তৈরি হওয়ার অথবা ভোট বাতিল হওয়ার আশঙ্কা থাকলেও রবিবার তেমন কিছু ঘটেনি, শান্তিপূর্ণভাবেই ভোটের দিনটি পার হয়। দিনের পর দিন ধরে চলা অস্থিরতা, সরকারবিরোধী প্রতিবাদ ও সংঘর্ষের পর এই নির্বাচনকে সরকারের পক্ষে হংকংবাসীর সমর্থনের একটি পরীক্ষা হিসেবে দেখা হচ্ছিল। হংকং সরকার ও বেজিংয়ের ধারণা ছিল, এই নির্বাচন তাদের প্রতি তথাকথিত ‘নীরব সংখ্যাগরিষ্ঠ’ ভোটারদের সমর্থনকে তুলে ধরবে, কিন্তু বাস্তবে তা হয়নি। তার বদলে বেজিংপন্থী উল্লেখযোগ্য কিছু প্রার্থীও তাদের আসন হারিয়েছেন। আসন হারানো এসব প্রার্থীদের মধ্যে বিতর্কিত বেজিংপন্থী জুনিয়াস হো বলেছেন, ‘স্বর্গ-মর্ত্য ওলটপালট হয়ে গেছে।’ হংকংয়ের স্থানীয় পরিষদের কাউন্সিলরদের রাজনৈতিক ক্ষমতা সীমিত। তাদের প্রধানত বাস রুট, আবর্জনা পরিষ্কার ইত্যাদি স্থানীয় ইস্যু নিয়েই কাজ করতে হয়। তাই স্বাভাবিক সময়ে স্থানীয় পরিষদ নির্বাচন নিয়ে এখানে তেমন একটা আগ্রহ দেখা যায় না। কিন্তু এবার পরিস্থিতি পুরো বিপরীত ছিল। টানা সরকারবিরোধী আন্দোলনের পর প্রথমবারের মতো ভোটের মাধ্যমে নিজেদের মনোভাব তুলে ধরার সুযোগ পেয়েছিল হংকংবাসী, যা তারা পুরোপুরি কাজে লাগায়। প্রায় ৭৪ লাখ জনসংখ্যার মধ্যে অর্ধেকেরও বেশি রেকর্ড ৪১ লাখ লোক ভোটার হিসেবে নাম রেজিস্ট্রি করে। এর মধ্যে ২৯ লাখেরও বেশি লোক ভোট দেয়। এবার ভোট পড়ার হার ছিল ৭১ শতাংশ, যা আগেরবার ২০১৫ সালের ৪৭ শতাংশ থেকে অনেক বেশি। আগেরবারের এ নির্বাচনে গণতন্ত্রপন্থীরা প্রায় ১০০ আসন পেয়েছিল। গত কয়েক মাসের মধ্যে রবিবারই ছিল প্রথম সাপ্তাহিক ছুটির দিন, যে দিনটিতে হংকংয়ে কোন সংঘাত বা সহিংসতা দেখা যায়নি। ভোটের পর ক্যারি লাম বলেন, ‘অত্যন্ত চ্যালেঞ্জিং পরিস্থিতির মুখে, আমি সন্তুষ্টির সঙ্গে জানাচ্ছি, আজকের নির্বাচনের দিনটিতে আমরা তুলনামূলকভাবে শান্ত ও শান্তির পরিবেশে ছিলাম।’ সোমবার এক বিবৃতিতে লাম বলেন, সরকার খোলা মনে জনগণের মতামত শুনবে। তিনি আশা প্রকাশ করেন যে, নির্বাচনের দিনের মতো শান্তিপূর্ণ অবস্থা অব্যাহত থাকবে। তিনি বলেন, বিভিন্ন বিশ্লেষণ ও ব্যাখ্যায় উঠে এসেছে এই নির্বাচনের ফলাফলে জনগণের অসন্তুষ্টির প্রতিফলন ঘটেছে যার সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে চলমান ঘটনাবলী এবং শিকড় গেড়ে বসা সমস্যা। এদিকে চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ই সোমবার বলেছেন, হংকংয়ের স্থানীয় পরিষদ নির্বাচনে কি হয়েছে সেটা কোন বিষয় না, হংকং চীনের অংশ। টোকিওতে জাপানী প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবের সঙ্গে বৈঠকের পর তিনি সাংবাদিকদের বলেন, হংকংকে বিশৃঙ্খল করার অথবা এমনকি এর সমৃদ্ধি ও স্থিতি নষ্ট করার যেকোন প্রচেষ্টা সফল হবে না। বিতর্কিত একটি বিল বাতিলের দাবিতে গত জুনে হংকংয়ে বিক্ষোভ শুরু হয়। ধীরে ধীরে তা হংকংয়ের স্বাধীনতা আন্দোলনে রূপ নিচ্ছে।
×