ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

নির্বাচন কমিশনে স্বেচ্ছাচারিতা চলছে : মাহবুব তালুকদার

প্রকাশিত: ০৬:২০, ২৫ নভেম্বর ২০১৯

 নির্বাচন কমিশনে স্বেচ্ছাচারিতা চলছে  :  মাহবুব তালুকদার

অনলাইন রিপোর্টার ॥ নির্বাচন কমিশন (ইসি) সচিবালয়ে স্বেচ্ছাচারিতা চলে আসছে, যা এতদসংক্রান্ত সংবিধান, গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ, নির্বাচন কমিশন সচিবালয় আইন ও নির্বাচন কমিশন কার্যপ্রণালী বিধিমালা সমর্থন করে না। জানালেন নির্বাচন কমিশনার মাহবুব তালুকদার। আজ সোমবার (২৫ নবেম্বর) নির্বাচন কমিশনের নিজ ভবনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করে তিনি এসব কথা বলেন। লিখিত বক্তব্যে মাহবুব তালুকদার আরও বলেন, গত ২৪ নবেম্বর কমিশনের এখতিয়ারের বিষয়টি মিডিয়ায় প্রকাশ পাওয়ায় সাংবাদিকবৃন্দ আমার বক্তব্য জানতে চান। এই প্রতিষ্ঠানের স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার স্বার্থে আমার অভিমত ব্যক্ত করতে হলো। তিনি বলেন, গত ১২ নবেম্বর আমি সংবাদ পাই যে, নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের সাম্প্রতিক কর্মচারী নিয়োগ পরীক্ষায় ১৩৫ জন পরীক্ষার্থীকে বহিষ্কার করা হয়েছে কিন্তু কারও বিরুদ্ধে কোনও শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি। বিষয়টি সম্পর্কে বিশদভাবে জানার জন্য আমি নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের কাছে লিখিতভাবে কিছু তথ্য ও জিজ্ঞাসার জবাব জানতে চাই। ১৪ নবেম্বর আমাকে জানানো হয় যে, হাতের লেখার অমিল বা পরিচয়পত্রের অমিলের কারণে ভাইভার সময় ওই ১৩৫ জনকে বহিষ্কার করা হয়। তাদের প্রতারণার দায়ে কী শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে, আমার এহেন প্রশ্নের জবাবে জানানো হয়- ‘মৌখিক পরীক্ষায় অকৃতকার্য দেখানো হয়েছে। কারও কারও নিকট হতে লিখিত স্বীকারোক্তি নেয়া হয়েছে।’ তিনি বলেন, লিখিতভাবে আমাকে আরও জানানো হয়, কর্মচারী নিয়োগ পরীক্ষায় ৩৩৯টি শূন্যপদের বিপরীতে ৮৫,৮৯৩ জন প্রার্থী অংশগ্রহণ করেন। পরীক্ষার প্রশ্নপত্র তৈরি ও উত্তরপত্র যাচাইয়ের জন্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি অনুষদকে ৪ কোটি ৮ লাখ টাকা প্রদান করা হয়েছে। এই অর্থ প্রধান নির্বাচন কমিশনার অনুমোদন করলেও কতজন পরীক্ষককে কীভাবে এই টাকা প্রদান করা হয়, তার কোনও হিসাব নির্বাচন কমিশনের কাছে নেই। এমনকি নিয়োগ কমিটির সদস্যবৃন্দ এ বিষয়ে অবহিত নন। কমিশন সচিবালয় পরীক্ষা সম্পর্কে কিছুই জানে না। পরীক্ষায় প্রশ্নপত্রের ধরনের বিষয়টিও প্রশ্নবিদ্ধ। তিনি বলেন, বিগত ১৪ নবেম্বর তারিখে প্রধান নির্বাচন কমিশনারের সভাপতিত্বে তার অফিসকক্ষে অনুষ্ঠিত সভায় নির্বাচন কমিশনারবৃন্দ অভিযোগ করেন যে, কমিশন সচিবালয় উক্ত নিয়োগ পরীক্ষা সংক্রান্ত ও অর্থব্যয় সম্পর্কিত বিষয়ে কমিশনকে কোনও পর্যায়েই অবহিত করেনি। উত্তরে কমিশন সচিবালয়ের সিনিয়র সচিব জানান, উল্লিখিত নিয়োগ বা এতদসংক্রান্ত ব্যয় নির্বাচন কমিশনের এখতিয়ারবহির্ভূত। প্রধান নির্বাচন কমিশনারও তার বক্তব্য সমর্থন করেন। স্বাভাবিক কারণেই নির্বাচন কমিশনারবৃন্দ গত ২৪ নবেম্বর প্রধান নির্বাচন কমিশনারের কাছে একটি ইউও নোটের মাধ্যমে নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের কার্যাদির বিষয়ে কমিশনের এখতিয়ার সম্পর্কে অবহিত হতে চান। মাহবুব তালুকদার আরও বলেন, আমি মনে করি, অভ্যন্তরীণ অনিয়মের কারণে, এই সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানটির কার্যক্রম এখন প্রশ্নের সম্মুখীন। অনেক ক্ষেত্রে সচিবালয়ের কোনও দায়বদ্ধতা নেই, কিন্তু নির্বাচন কমিশনকে প্রায় সর্বক্ষেত্রেই দায় বহন করতে হয়। এই অনভিপ্রেত অবস্থার অবসানের জন্য নির্বাচন কমিশন সংক্রান্ত বিষয়ে সংবিধান, গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ, নির্বাচন কমিশন সচিবালয় আইন ও নির্বাচন কমিশন কার্যপ্রণালী বিধিমালা কঠোরভাবে পরিপালন করা আবশ্যক। নির্বাচন কমিশন ও সচিবালয়ের মধ্যে সমন্বয় না থাকলে কোনও সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয়।
×