জনকণ্ঠ ডেস্ক ॥ তথ্যমন্ত্রী হাছান মাহমুদ বলেছেন, বিএনপি সবসময় জনগণকে জিম্মি করে রাজনীতি করে।
তিনি রবিবার সচিবালয়ে তার কার্যালয়ে এক প্রেস ব্রিফিংয়ে সাংবাদিকদের বলেন, ‘বিএনপি সব সময় জনগণকে জিম্মি করে রাজনীতি করেছে- এ কারণেই এটি একটি জনবিচ্ছিন্ন দলে পরিণত হয়েছে।’
মন্ত্রী বলেন, বিএনপি যদি রাজনীতিতে অব্যাহতভাবে ভুল পথ অনুসরণ করে এবং সাধারণ মানুষের বিপক্ষে দাঁড়ায় ও তাদের ওপর আক্রমণ চালায় তাহলে এই দলটি একটি ‘জনবিচ্ছিন্ন দ্বীপের বাসিন্দা’ হবে। খবর বাসসর।
এর আগে ওমানের রাষ্ট্রদূত তায়ীদ সেলিম আব্দুল্লাহ আল আলাবি তথ্যমন্ত্রীর সঙ্গে তার কার্যালয়ে সৌজন্য সাক্ষাত করেন।
হাছান মাহমুদ বলেন, বিএনপি সাধারণ মানুষের কল্যাণে রাজনীতি করে না। সাধারণ মানুষের জন্য নয়, কেবল নিজেদের স্বার্থেই তারা রাজনীতি করে।
তথ্যমন্ত্রী বলেন, বিএনপি অসুস্থ রাজনীতি করছে। আওয়ামী লীগের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক বলেন, ‘আওয়ামী লীগ জনসাধারণ, দেশ এবং জনগণের কল্যাণে রাজনীতি করে। কিন্তু বিএনপি সাধারণ মানুষের ওপর পেট্রোল বোমা নিক্ষেপ ও অগ্নিসংযোগের রাজনীতি করে।’
যুবলীগ নেতৃত্ব সম্পর্কিত এক প্রশ্নের জবাবে তথ্যমন্ত্রী বলেন, যুবলীগ এবং আওয়ামী লীগের অন্যান্য সহযোগী সংগঠনের নবনির্বাচিত প্রতিটি নেতা সৎ এবং সমাজে এই নেতাদের স্বচ্ছ ভাবমূর্তি রয়েছে। তিনি বলেন, এরশাদ ও বেগম খালেদা জিয়া রাজনীতিকে পরিপূর্ণভাবে অপরাধপ্রবণ করেছেন, যে কাজটি শুরু করেছেন জিয়াউর রহমান। তিনি আরও বলেন, এখন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রাজনীতির অপরাধ ও বাণিজ্যিকীকরণের বাইরে এসে ভাল ভাবমূর্তি শিক্ষিত ও সৎ লোকদের নেতা বানাচ্ছেন।
মন্ত্রী বলেন, ‘আমি মনে করি এই ধারা রাজনীতির পাশাপাশি দেশের জন্যও ভাল হবে। আমি আশা করছি যে সব দল অপরাধ ও পেট্রোল বোমা হামলার আশ্রয় নেয় এবং সন্ত্রাসবাদকে মদদ দেয় তারা প্রধানমন্ত্রীর এই উদ্যোগ থেকে শিক্ষা নেবে।
হাছান মাহমুদ বলেন, যুবলীগের চেয়ারম্যান ও সাধারণ সম্পাদক উভয়ই শিক্ষিত, সৎ ও ভাল সংগঠক। আমি আশা করছি নতুন নেতৃত্ব আগামী দিনে নতুন প্রজন্মের কাছে এই সংগঠনকে ভ্যানগার্ড হিসাবে প্রতিষ্ঠা করবে।
ওমান রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে বৈঠক সম্পর্কে মন্ত্রী বলেন, তার সঙ্গে বহু দ্বিপক্ষীয় বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। তিনি বলেন, রাষ্ট্রদূত তাকে জানিয়েছেন ওমানে কর্মরত ২০ লাখ প্রবাসীর মধ্যে প্রায় সাত লাখ বাংলাদেশী এবং তারা দক্ষতা ও সততার সঙ্গে কাজ করছে। ওমানের অর্থনৈতিক বিকাশে তারা অবদান রাখছে।
হাছান মাহমুদ বলেন, ‘আমাদের মধ্যে রোহিঙ্গা বিষয়েও আলোচনা হয়েছে। রাষ্ট্রদূত রোহিঙ্গা সঙ্কট নিরসনে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করার ওপর জোর দিয়ে আমাকে আরও জানান, ওমান রোহিঙ্গাদের জন্য কক্সবাজারের একটি গ্রাম তৈরি করেছে- সেখানে ১৬শ’ পরিবার স্থান পেয়েছে।’ অনুষ্ঠানে তথ্য সচিব আব্দুল মালেক উপস্থিত ছিলেন।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অস্থিরতা ছড়ানোর দায় সেবা প্রদানকারী সংস্থা এড়াতে পারে না
তথ্যমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের প্রচার সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ বলেছেন, ‘সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অস্থিরতা ছড়ানোর দায় সার্ভিস প্রোভাইডার বা সেবা প্রদানকারী সংস্থা এড়াতে পারে না।’
রবিবার ঢাকায় শিল্পকলা একাডেমি’র চিত্রশালা মিলনায়তনে ‘উগ্রবাদ ও সাইবার অপরাধ প্রতিরোধে করণীয়’ সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে মন্ত্রী একথা বলেন। অভিনয় শিল্পী সংঘের অংশগ্রহণে বাংলাদেশ পুলিশের সন্ত্রাস দমন ও আন্তর্জাতিক অপরাধ (সিটিটিসি) প্রতিরোধ কেন্দ্র নির্মাণ প্রকল্প এ সেমিনার আয়োজন করে।
মন্ত্রী বলেন, ‘ফেসবুক, ইউটিউবসহ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের অপব্যবহারে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের দায় অস্বীকার করার উপায় নেই। এ বিষয়টি এখন বিশ্বব্যাপী স্বীকৃত।’
‘ইউরোপ-আমেরিকার মানুষ মনে করে অনেকক্ষেত্রেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম সমাজে অস্থিরতা ছড়ানোর কাজে ব্যবহৃত হচ্ছে উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, ‘আমি এ বিষয়ে কয়েকটি দেশের মতামত নিয়েছি। তারা এই ধরনের অপব্যবহারের জন্য সার্ভিস প্রোভাইডার বা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের দায়বদ্ধতা নিশ্চিত করতে আইন প্রণয়ন করেছে। আমরাও অনুরূপ ব্যবস্থা গ্রহণের উদ্যোগ নিচ্ছি। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এ্যাকাউন্ট খুলতে জাতীয় পরিচয়পত্র ব্যবহারের বিষয় নিয়েও আমরা আলোচনা করছি।
এছাড়া সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অনুমতিহীন বিজ্ঞাপন নিয়ে সার্ভিস প্রোভাইডাররা ব্যাপক অর্থ এদেশ থেকে নিয়ে যাচ্ছে। সেটিও নিয়মের মধ্যে আসা প্রয়োজন, বলেন ড. হাছান মাহমুদ।
ড. হাছান বলেন, ‘সংস্কৃতিচর্চা উগ্রবাদ-জঙ্গীবাদ রোধে অত্যন্ত কার্যকর। এ কারণে সংস্কৃতি চর্চার ব্যাপক প্রসার একান্ত প্রয়োজন। সরকার দেশীয় সংস্কৃতি চর্চার প্রসারে আন্তরিকভাবে কাজ করে চলেছে।’
মন্ত্রী বলেন, ‘বিদেশী সিরিয়াল প্রচারের জন্য আমরা যে কমিটি করে দিচ্ছি, তার অনুমতি নিতে হবে। আর আমাদের দেশে যথেষ্ট প্রতিভাবান শিল্পী থাকা সত্ত্বেও তাদের বাদ দিয়ে বিদেশী দ্বিতীয়-তৃতীয় গ্রেডের শিল্পীদের দিয়ে মডেলিং করিয়ে বিজ্ঞাপন নির্মাণ করে এদেশে প্রচার করতে হলেও অতিরিক্ত শুল্ক গুনতে হবে।’
আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে ধন্যবাদ জানিয়ে তথ্যমন্ত্রী বলেন, ‘পুলিশ এবং গোয়েন্দা বাহিনী অত্যন্ত সফলভাবে উগ্রবাদ দমনে সক্ষম হয়েছে। নির্মূল না হলেও অন্যান্য অনেক দেশের চেয়ে আমরা এ বিষয়ে অনেক বেশি সফল।’
ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ- ডিএমপি’র সিটিটিসি ইউনিটের অতিরিক্ত কমিশনার মোঃ মনিরুল ইসলামের সভাপতিত্বে সেমিনারে অভিনয় শিল্পী সংঘের সভাপতি শহীদুজ্জামান সেলিম, সাধারণ সম্পাদক আহসান হাবিব নাসিম, ফেডারেশন অভ টিভি প্রফেশনালস অর্গানাইজেশন-এফটিপিও আহ্বায়ক নাট্যকার মামুনুর রশীদ, বিশিষ্ট নাট্যব্যক্তিত্ব ড. ইনামুল হক, বিশিষ্ট অভিনেতা কে এস ফিরোজ, ডিরেক্টরস গিল্ডের সভাপতি সালাহউদ্দীন লাভলু, অভিনয় শিল্পী সংঘের উপদেষ্টা তৌকির আহমেদ, জাহিদ হাসান, টিভি প্রযোজক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মুনতাসীর সাজু, নাট্যকার সংঘের সাধারণ সম্পাদক এজাজ মুন্না, শিল্পী সাজু খাদেম, শবনম ফারিয়া, মৌসুমী হামিদ প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।
ডিএমপি’র সিটিটিসি ইউনিটের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার মাহফুজা লিজা ও অতিরিক্ত উপ-কমিশনার নাজমুল ইসলাম বিষয় ভিত্তিক উপস্থাপনা দেন। বক্তারা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমসহ ইন্টারনেটে ব্যক্তিগত নিরাপত্তা বজায় রাখার প্রযুক্তি ও ব্যবহারগত বিভিন্ন দিক নিয়ে খোলামেলা আলোচনা করেন ও এ বিষয়ে পুলিশের সহায়ক ভূমিকার জন্য অকুণ্ঠ চিত্তে ধন্যবাদ দেন।