ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

বাজেটের বাইরে গবেষণায় পাচ্ছে ২০ কোটি টাকা

শতবর্ষপূর্তি ও স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে ঢাবিতে ‘শতবর্ষ স্মৃতিস্তম্ভ’ হচ্ছে

প্রকাশিত: ১০:৪০, ২৫ নভেম্বর ২০১৯

  শতবর্ষপূর্তি ও স্বাধীনতার  সুবর্ণজয়ন্তীতে ঢাবিতে  ‘শতবর্ষ স্মৃতিস্তম্ভ’ হচ্ছে

মুনতাসির জিহাদ ॥ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শতবর্ষপূর্তি ও মহান স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপন সামনে রেখে ক্যাম্পাসে নির্মিত হতে যাচ্ছে ‘শতবর্ষ স্মৃতিস্তম্ভ’। মহান মুক্তিযুদ্ধ থেকে শুরু করে সব গণতান্ত্রিক আন্দোলনে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূমিকা ও বাংলাদেশ বিনির্মাণে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অবদান ওই স্মৃতিস্তম্ভে ফুটিয়ে তোলা হবে। এছাড়া শতবর্ষ সামনে রেখে ঢাকা বিশ্ববিদ্যায়ের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো বাজেটের বাইরে গিয়ে গবেষণার মানোন্নয়নে ২০ কোটি টাকা বরাদ্দ দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। গবেষণার ক্ষেত্রে এটি একটি মাইলফলক হতে পারে, মনে করছেন শিক্ষকরা। ইতোমধ্যেই শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (বিশ্ববিদ্যালয়) আবদুল্লাহ আল হাসান চৌধুরীর সভাপতিত্বে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শতবর্ষপূর্তি ও মহান স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপন উপলক্ষে বিশ্ববিদ্যালয়ের চাহিদা বিষয়ক এক সভায় এসব প্রস্তাব গৃহীত হয়েছে। এর আগে ঢাবির শতবর্ষপূর্তি ও মহান স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপনে বিভিন্ন কর্মসূচী বাস্তবায়নের লক্ষ্যে ৪১ কোটি আশিটি, আটানব্বইটি এক শ’ বিশ টাকার একটি চাহিদা শিক্ষা মন্ত্রণালয়কে প্রেরণ করে, যেখানে শতবর্ষ স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণে ২৫ কোটি টাকা এবং মৌলিক ও প্রায়োগিক গবেষণা বৃদ্ধি ও জার্নালসমূহ আধুনিকায়নে ১৫ কোটি টাকার চাহিদা পেশ করা হয়। সভায় শতবর্ষ স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণের জন্য ১৫ কোটি টাকা এবং গবেষণার মানবৃদ্ধি ও প্রসারের লক্ষ্যে ২০ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়। গবেষণার ক্ষেত্রে বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব তহবিল থেকে কমপক্ষে তিন কোটি টাকা যোগ করতে বলা হয়। ১৯৭২ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল চত্বরে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেছিলেন তৎকালীন উপাচার্য অধ্যাপক ড. মোজাফফর আহমেদ। কিন্তু নানা কারণে ওই শহীদমিনার আর গড়ে উঠেনি। অযত্ন অবহেলায় বর্তমানেও পড়ে আছে সেই ভিত্তিপ্রস্তর ও শহীদমিনারের অংশবিশেষ। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ একাধিকবার উদ্যোগ নিলেও শেষ পর্যন্ত কোন অগ্রগতি হয়নি। অবশেষে শতবর্ষের দ্বারপ্রান্তে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ সেখানে ‘শতবর্ষ স্মৃতিস্তম্ভ’ নির্মাণের উদ্যোগ নেয়। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সভায় উপস্থিত ছাড়াও এ উদ্যোগের সঙ্গে যুক্ত আছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. এ এস এম মাকসুদ কামাল। তিনি বলেন, বাজেটের বাইরে গিয়ে এই প্রথম ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ২০ কোটি টাকার গবেষণা বরাদ্দ পেতে যাচ্ছে। পর্যাপ্ত গবেষণা বরাদ্দ নিয়ে আসার প্রতিশ্রুতি আমরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির নির্বাচনে দিয়েছিলাম। বলা হয়ে থাকে, সরকার গবেষণায় পর্যাপ্ত বরাদ্দ দিচ্ছে না। এই বরাদ্দের মধ্য দিয়ে এটা প্রমাণ হচ্ছে, সরকার গবেষণায় বরাদ্দ দেয়ার ক্ষেত্রে সবসময় আন্তরিক। এই বরাদ্দের অধীনে গবেষণা প্রকল্প জমা দিয়ে প্রতিবছর কমপক্ষে তিন শ’ শিক্ষক গবেষণায় যুক্ত হতে পারবেন। শতবর্ষ টাওয়ার নির্মাণ বিষয়ে তিনি বলেন, স্মৃতিস্তম্ভের ডিজাইন তৈরিসহ যাবতীয় কাজের জন্য বাংলাদেশ ইনস্টিউট অব আর্কিটেক্টের সঙ্গে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি সমঝোতা স্মারক হবে। ঢাবির বিজ্ঞান অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. তোফায়েল আহমদ চৌধুরী বলছিলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শতবর্ষ উপলক্ষে এরকম একটি মন্যুমেন্ট অবশ্যই আকর্ষণীয় হবে। মার্কেটিং বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. মিজানুর রহমান বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণায় অর্থ সঙ্কট ছিল একটি বড় সঙ্কট, যার নেতিবাচক প্রভাব পড়ে আমাদের সামগ্রিক বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার ওপর। কারণ অনেক মেধাবী শিক্ষক আছেন যাদের গবেষণায় আন্তর্জাতিক মানের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মতো দূরের কথা, ন্যূনতম আর্থিক যোগানও আমরা দিতে পারি না। গবেষণায় অর্থ সঙ্কটের কারণে আন্তর্জাতিক মানদ-েও আমরা পিছিয়ে পড়ি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতিকে ধন্যবাদ জানান। কলা অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. আবু মোঃ দেলোয়ার হোসেন বলেন, শিক্ষক সমিতি অনেকগুলো কার্যক্রম হাতে নিয়েছে। শতবর্ষ টাওয়ার নির্মাণ ও শিক্ষকদের জন্য গবেষণা বরাদ্দের ব্যবস্থা সেসব কার্যক্রমের অংশ। বিশ্ববিদ্যালয়ের অবকাঠামোগত উন্নয়নসহ সার্বিক উন্নয়নে শিক্ষক সমিতি ও প্রশাসন কাজ করে যাচ্ছে। শতবর্ষ টাওয়ার নির্মাণের উদ্যোগে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করে বিশ্ববিদ্যালয়ের তৃতীয় বর্ষের ছাত্র আজিজুর রহমান বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ে শতবর্ষ উদযাপনে এই টাওয়ার এক অনন্য মাত্রা যোগ করবে। তবে টাওয়ার নির্মাণে যেন ঢাবি সবুজায়ন ক্ষতিগ্রস্ত না হয় সেদিকে সতর্ক থাকতে হবে। ডাকসু সদস্য তানভীর হাসান সৈকত বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ঐতিহ্যসম্মৃদ্ধ শতবর্ষ স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণ বিশ্ববিদ্যালয়কে আরও এক ধাপ এগিয়ে নিয়ে যাবে। বঙ্গবন্ধু, মুক্তিযুদ্ধসহ বিভিন্ন গণতান্ত্রিক আন্দোলন সংগ্রামে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূমিকা-সব কিছুকে একফ্রেমে নিয়ে আসবে এই শতবর্ষ টাওয়ার। বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক-কর্মচারীরাও পাবেন স্বল্প সুদে গৃহঋণ পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-কর্মচারীরাও এবার গৃহনির্মাণ ঋণ পেতে যাচ্ছে। তারা ২০ থেকে ৭৫ লাখ টাকা পর্যন্ত ঋণ নিতে পারবেন যা ৫ শতাংশ হারে ২০ বছরের মধ্যে পরিশোধ করতে হবে। ৫ শতাংশ সুদ পরিশোধের পর বাকি সুদের অর্থ সরকার ঋণগ্রহীতাদের ভর্তুকি হিসেবে দেবে। অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগে সম্প্রতি অনুষ্ঠিত এক বৈঠকে সরকারী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-কর্মচারীদের গৃহনির্মাণ ঋণ সুবিধা দেয়ার জন্য আলাদা প্রজ্ঞাপন জারির সিদ্ধান্ত হয়।
×