ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

গাজীপুরে ফিল্মি স্টাইলে ডাকাতি- এক দম্পতিসহ আটক ১০

প্রকাশিত: ১০:৩৯, ২৫ নভেম্বর ২০১৯

  গাজীপুরে ফিল্মি স্টাইলে ডাকাতি- এক  দম্পতিসহ আটক ১০

জনকণ্ঠ রিপোর্ট ॥ গাজীপুরে শ্রীপুরের জৈনাবাজারে গুলি করে ও ককটেল ফাটিয়ে দু’টি জুয়েলারি দোকানে ফিল্মি স্টাইলে সশস্ত্র ডাকাতির ঘটনায় জড়িত এক দম্পতিসহ আন্তঃজেলা দুর্ধর্ষ ডাকাতদলের ১০ জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। এদের মধ্যে ধামরাই ও আশুলিয়ার দুই স্বর্ণ ব্যবসায়ীও রয়েছে। তাদের কাছ থেকে লুণ্ঠিত স্বর্ণালঙ্কার ও নগদ টাকাসহ ককটেল, চাপাতি ও মোটরসাইকেল এবং ডাকাতি কাজে ব্যবহৃত মাল জব্দ করা হয়েছে। ডাকাতির প্রস্তুতিকালে সোনারগাঁয়ে আটক করা হয়েছে ৪ ডাকাত। এদিকে চট্টগ্রামের হাটহাজারী ও ফটিকছড়িতে গত চার মাসে আটটি ডাকাতির ঘটনা ঘটেছে। এ সময় পুলিশ বিশেষ অভিযান চালিয়ে বিপুল আগ্নেয়াস্ত্র-গুলিসহ ২৫ জনকে গ্রেফতার করেছে। গাজীপুর থেকে স্টাফ রিপোর্টার জানান, গাজীপুরে গ্রেফতার ডাকাত দলটি ঢাকা, গাজীপুর ও না’গঞ্জসহ রাজধানীর আশপাশের জেলায় বিভিন্ন জুয়েলারি, মোবাইল ও বিকাশের দোকানে ইতোপূর্বে ডাকাতি করেছে। তারা না’গঞ্জ ও গাজীপুরের দু’টি দোকানে এ সপ্তাহেও ডাকাতির চক্রান্ত করেছিল। এজন্য তারা প্রাথমিক প্রস্তুতির কাজ ইতোমধ্যে সম্পন্ন করে। পুলিশের অভিযানে তাদের সে পরিকল্পনা পন্ড হয়ে যায়। রবিবার দুপুরে গাজীপুরের পুলিশ সুপার শামসুন্নাহার তার কার্যালয়ে সাংবাদিকদের এ তথ্য নিশ্চিত করেন। গ্রেফতারকৃতরা হলো পাবনার সুজানগরের রাইপুর ক্ষেতুপাড়ার মৃত খবির উদ্দিনের ছেলে ডাকাত সর্দার মনির মোল্লা ওরফে মনির ওরফে মনি মোল্লা ওরফে আকুব্বর হোসেন আকু (৩৮), মনিরের স্ত্রী মোসাম্মৎ ছুম্মা খাতুন (৩২), সদর থানার শালাইপুর কামরীপাড়ার ইছহাক প্রামাণিকের ছেলে ডাকাত দলের সেকেন্ড ইন কমান্ড আলমগীর হোসেন ওরফে আলম (৪০), মাদারীপুরের শিবচরের চর চান্ডার মৃত ইউনুছ সরদারের ছেলে সাইদুর সরদার (৪৪), রাজবাড়ীর পাংশা থানার রূপীয়াট এলাকার লিয়াকত আলী শেখের ছেলে রানু শেখ ওরফে নান্নু শেখ (৩৮), বগুড়ার গাবতলীর মাঝবাড়ী পশ্চিমপাড়ার মৃত নঈম প্রামাণিকের ছেলে বাদশা প্রামাণিক ওরফে বাবু ওরফে বাদশা বাবু (৩৮), শরীয়তপুরের ডামুড্যার বড় সীধুলকুড়ার আব্দুল মতিনের ছেলে নাজমুল (২৬), না’গঞ্জের রূপগঞ্জের থানার বানিয়াদীর আব্দুল মোতালিবের ছেলে সুজন (২৪), আশুলিয়া থানার বারইপাড়ার মৃত চিত্তরঞ্জন সরকারের ছেলে স্বর্ণ ব্যবসায়ী সঞ্জয় সরকার (৪০) ও ধামরাই থানার নোয়ানগরের ভবতোষ পালের ছেলে স্বর্ণ ব্যবসায়ী বিবেক পাল (৪২)। এদের সবার বিরুদ্ধে বিভিন্ন জেলায় একাধিক ডাকাতির মামলা রয়েছে। পুলিশ সুপার শামসুন্নাহার জানান, গত ১৫ নবেম্বর সন্ধ্যায় শ্রীপুরের জৈনাবাজার এলাকার লক্ষ্মী জুয়েলার্স ও পাশর্^বর্তী নিউ দিপা জুয়েলার্স নামের দু’টি স্বর্ণের দোকানে গুলি করে ও ককটেল ফাটিয়ে একযোগে ডাকাতি করে সশস্ত্র একটি ডাকাত দল। ডাকাতরা ২ মিনিট ৪৩ সেকেন্ড স্থায়ী এই ডাকাতিকালে দু’দোকান থেকে ৮০ ভরি স্বর্ণ, ৫০০ভরি রুপা ও নগদ ৪ লাখ ৬৫ হাজার টাকা লুট করে নিয়ে যায় ডাকাতরা। ডাকাত দল এক দোকানের ক্লোজ সার্কিট ক্যামেরার হার্ডডিস্কও খুলে নিয়ে যায়। এ সময় বাধা দেয়ায় ডাকাতদের ছোড়া গুলিতে দিপা জুয়েলার্সের মালিক দেবেন্দ্র কর্মকার গুরুতর আহত হন। ঘটনার পরপরই জেলা গোয়েন্দা পুলিশ ও থানা পুলিশের সমন্বয়ে গঠিত টিম অভিযানে নামে। এ টিমের নেতৃত্ব দেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার রাসেল শেখ। তিনি জানান, ঘটনার পর পুলিশ গোপন সংবাদের ভিত্তিতে জয়দেবপুর থানার হোতাপাড়ার এলিগেন্স গার্মেন্টস ফ্যাক্টরির পাশর্^বর্তী একটি বাসা থেকে ডাকাত দলের সেকেন্ড ইন কমান্ড আলমগীর হোসেন ওরফে আলমকে আটক করে। এ সময় তার ভাড়া বাসা থেকে ককটেল ও চাপাতিসহ ডাকাতি কাজে ব্যবহৃত বিভিন্ন সরঞ্জাম জব্দ করা হয়। তার দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে সিরাজগঞ্জ, পাবনা, রাজবাড়ী, মাদারীপুর, নারায়ণগঞ্জ, ঢাকা ও গাজীপুরের বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে ডাকাত দলের ওই ১০ জনকে গ্রেফতার করা হয়। তাদের কাছ থেকে লুণ্ঠিত ৪৩ ভরি স্বর্ণালঙ্কার, ২ কেজি ৬০০ গ্রাম রুপা, এক লাখ ৫৬ হাজার ৩২০ টাকা, সাতটি ককটেল, একটি চাপাতি ও একটি মোটরসাইকেল জব্দ করা হয়। ডাকাত দলের সদস্যদের গ্রেফতারের ফলে ঢাকা ও আশপাশের জেলাগুলোয় ডাকাতি প্রবণতা হ্রাস পাবে। কালিয়াকৈর থানার মৌচাকের ভান্নারায় স্ত্রী ও দু’সন্তানকে নিয়ে ভাড়া বাসায় থাকত ডাকাত সর্দার মনির। দুর্ধর্ষ মনির ঝুট ব্যবসার আড়ালে ডাকাতি করত। শ্রীপুরের এ ডাকাতির আগে মনিরের স্ত্রী ছুম্মা ও অপর দু’জন ঘটনাস্থল রেকি করে। ঘটনার দিন সকালে না’গঞ্জ ও কালিয়াকৈর থেকে ডাকাত দলের সদস্যরা গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের ভোগড়ায় এসে মিলিত হয়। পরে তারা মাইক্রোবাস ও মোটরসাইকেলে চড়ে জৈনাবাজারে এসে ডাকাতি করে। তারা স্বর্ণালকারসহ লুণ্ঠিত মাল হোতাপাড়ায় ডাকাত দলের সেকেন্ড ইন কমান্ড আলমগীর হোসেনের বাসায় জমা রেখে পালিয়ে যায়। পরদিন লুণ্ঠিত স্বর্ণ ও রুপার অলংকার স্বর্ণব্যবসায়ী সঞ্জয় সরকার ও বিবেক পালের কাছে ১৮ লাখ টাকায় বিক্রি করে। এ টাকা থেকে পৌনে দু’লাখ টাকা অস্ত্র কেনার জন্য জমা রাখে। অবশিষ্ট টাকা তারা নিজেদের মধ্যে ভাগাভাগি করে নেয়। ডাকাতির ঘটনায় আটক স্বর্ণ ব্যবসায়ী সঞ্জয় সরকার ও বিবেক পাল ডাকাত দলকে তিন লক্ষাধিক টাকা অগ্রিম দেয় বলে ডাকাতরা পুলিশকে জানিয়েছে। ডাকাত দলটি কোনাবাড়ীর বিকাশ এজেন্টের একটি অফিসে এবং না’গঞ্জের একটি জুয়েলারি দোকানে এ সপ্তাহেও ডাকাতি করার চেষ্টা করেছিল। এজন্য রেকিসহ ডাকাতির প্রাথমিক কাজ ইতোমধ্যে সম্পন্ন করে। দুই ডাকাতি, আর অস্ত্র কেনার জন্য পৌনে দু’লাখ টাকা পাবনার এক অস্ত্র ব্যবসায়ীকে দেয়। তারা ওই অস্ত্র হাতে পাওয়ার জন্য অপেক্ষা করছিল। অস্ত্র হাতে পেলে ওই দুই জেলার জুয়েলারি ও বিকাশ এজেন্টের দোকানে ডাকাতি করত। জৈনাবাজারে ডাকাতির ঘটনার পর পরই পুলিশ তদন্ত শুরু করে অভিযানে নামে। তারা ডাকাতির ঘটনায় ধারণকৃত এক দোকানের সিসিটিভির ফুটেজ পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে। ফার্মগেট, মানিকগঞ্জ, আশুলিয়া ও মাওনাসহ ঢাকা ও আশপাশে বিভিন্ন স্বর্ণের দোকানে ডাকাতির ঘটনাগুলো পর্যালোচনা করে। পুলিশের একাধিক টিম বিভিন্ন জেলায় একযোগে অভিযান চালিয়ে ওই ১০ জনকে গ্রেফতার ও লুণ্ঠিত মাল উদ্ধার করে। অবশিষ্ট মাল ও ডাকাত দলের অপর সদস্যদের গ্রেফতারের জন্য পুলিশের অভিযান অব্যাহত রয়েছে। চট্টগ্রামে গ্রেফতার ২৫ চট্টগ্রাম থেকে স্টাফ রিপোর্টার জানান, চট্টগ্রামের হাটহাজারী ও ফটিকছড়ি থানায় অক্টোবর পর্যন্ত চারমাসে ঘটে ৮টি ডাকাতির ঘটনা। এতে আতঙ্ক দেখা দেয় জনমনে এবং একইসঙ্গে উদ্বিগ্ন হয় পুলিশ প্রশাসন। এ অবস্থায় দুই থানার ওসির নেতৃত্বে পৃথক দুটি টিম গঠন করে শুরু হয় অভিযান। এতে নেতৃত্ব দেন হাটহাজারী সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার। উদ্ধার হয় বিপুল পরিমাণ আগ্নেয়াস্ত্র, গুলি এবং গ্রেফতার হয় অপরাধকর্মের সঙ্গে জড়িত ২৫ ডাকাত। এলাকার পরিস্থিতি শান্তিপূর্ণ রাখতে চলছে সতর্ক নজরদারি। পুলিশ প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, দুই থানার ওসিদের নিয়ে গঠন করা হয় আলাদা দুটি টিম, নেতৃত্বে থাকেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (হাটহাজারী সার্কেল)। শুরু হয় অভিযান। এক পর্যায়ে ফটিকছড়ি থানাধীন লেলাং এলাকা হতে টিম ফটিকছড়ি কর্তৃক ধরা পড়ে ওসমান। তার দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে অভিযানে গ্রেফতার হয় ১৪ ডাকাত, যারা সুন্দরপুর, কাঞ্চননগর, লেলাং, পাইন্দং এবং ধর্মপুরে ডাকাতিতে জড়িত ছিল। গ্রেফতার ডাকাতরা ওসমান (৩৫), হাসান (৩৮), জাহাঙ্গীর (৩৯), রহিম (৩০), সুমন (৩২), মোঃ মঞ্জুর আলম (৩২), রুবেল (২৬), নূর নবী (৩৫), সরোয়ার (২৮), সুমন (২৯), মহিউদ্দিন (২৪), রাশেদ (২২), আলমগীর (৩০) ও নাসির প্রকাশ বন্দুক নাসির (৩৮)। তাদের তথ্যমতে উদ্ধার করা হয় লুণ্ঠিত কম্বল, নগদ টাকা, মোবাইল সেট ও স্বর্ণালঙ্কার। এর মধ্যে ওসমান, হাসান, জাহাঙ্গীর, রহিম ও রাশেদ স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী দেয়। অপরদিকে, হাটহাজারী থানার ধলই, ফরহাদাবাদ ও মন্দাকিনীতে ডাকাতির ঘটনা উদ্ঘাটনে চলতে থাকে অভিযান। নবেম্বরের প্রথম সপ্তাহে চট্টগ্রাম নগরীতে অভিযান চালিয়ে আটক করা হয় ৬ জনকে। এরা হলো শাহাব উদ্দিন ওরফে উজ্জল (২৭), জাহাঙ্গীর (৩১), জাফর আলম ওরফে জাফর (৩৪), টিটু ধর (৪০), আলাউদ্দিন ওরফে আলমগীর (৩৮) ও মানিক (২৪)। তাদের কাছ থেকে উদ্ধার হয় লুণ্ঠিত টাকা, মোবাইল সেট ও স্বর্ণালঙ্কার। আসামি উজ্জল, জাহাঙ্গীর, আলমগীর ও মানিক ডাকাতির ঘটনায় জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে জবানবন্দী দেয়। কক্সবাজারের উখিয়া থানার কুতুপালং ক্যাম্পেও পরিচালিত হয় অভিযান। হাটহাজারীর অতিরিক্ত পুলিশ সুপারের নেতৃত্বে পরিচালিত এ অভিযানে গ্রেফতার হয় বখতিয়ার ওরফে জসিম (৩০) নামে এক ডাকাত। জসিমের বিরুদ্ধে হাটহাজারী পৌরসভার এক বিকাশ এজেন্টের ৭৭ লাখ টাকা ডাকাতির অভিযোগ রয়েছে। তার তথ্যে গ্রেফতার করা হয় আরও ৫ জনকে। এরা হলো মোঃ রাসেল ওরফে মানিক (২৮), লিয়াকত (৩৪), সালাহউদ্দিন ওরফে সরোয়ার (৩০), আমির হোসেন ওরফে আমিরা (৩০) ও আনোয়ার (২৯)। বাঁশখালীতে অভিযান চালিয়ে এদের গ্রেফতার করা হয়। উদ্ধার করা হয় বিকাশ এজেন্টের লুণ্ঠিত প্রায় ১৪ লাখ নগদ টাকা। এ ঘটনায় জড়িত থাকার বিষয়ে সরোয়ার, বখতিয়ার ও আমির আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী দেয়। এছাড়া এ দুই থানায় নিয়মিত পরিচালিত হয় মাদকবিরোধী অভিযান। পুলিশ জানায়, গত এক বছরে হাটহাজারী সার্কেলে অভিযানে উদ্ধার হয়েছে ২০ আগ্নেয়াস্ত্র। এর মধ্যে ৩ পিস্তল, একটি একে-২২ রাইফেল, দুটি এলজি, তিনটি পাইপগান ও দুটি দোনলা বন্দুক রয়েছে। এছাড়া বিপুল গুলি, কার্তুজ ও ধারালো অস্ত্র উদ্ধার হয়। ১৩টি অস্ত্র মামলা দায়ের হয়েছে। সোনারগাঁয়ে ৪ ডাকাত সোনারগাঁ থেকে সংবাদদাতা জানান, সোনারগাঁয়ে ডাকাতির প্রস্তুতিকালে ৪ ডাকাতকে আটক করছে থানা পুলিশ। শনিবার গভীর রাতে ছোট সাদীপুর থেকে আটক করা হয়। এরা হলো শাওন (২৩) কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামের মৃত বাইজুল মিয়ার ছেলে বাবু (২২) চাঁদপুরের ফতেপুর গ্রামের কালামের ছেলে রনি (২৫) বরিশালের মেহেদীগঞ্জের কালিপুরা গ্রামের নিজাম বেপারির ছেলে মনির (৩৫) ও না’গঞ্জের জেলার বন্দর উপজেলার মিনারবাড়ী গ্রামের মজিদ মিয়ার ছেলে।
×