ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

নিত্যপণ্যে সমস্যা হবে না ॥ বাজারে সরবরাহে কোন ঘাটতি নেই

প্রকাশিত: ১০:৩৫, ২৫ নভেম্বর ২০১৯

নিত্যপণ্যে সমস্যা হবে না ॥ বাজারে সরবরাহে কোন ঘাটতি নেই

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি বলেছেন, বাজারে পণ্য সরবরাহের কোন ঘাটতি নেই। আমরা চালে স্বয়ংসম্পূর্ণ, পর্যাপ্ত মজুদও রয়েছে। লবণ, চিনি, তেল, চাল, ডাল বা পেঁয়াজ এ ধরনের নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের ক্ষেত্রে ভবিষ্যতে কোন সমস্যা হবে না। আগামী ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহেই পেঁয়াজের মূল্য স্বাভাবিক হবে। কারণ, আগামী ১০ দিনের মধ্যে আমদানি করা পেঁয়াজ বাজারে আসবে। ওই পেঁয়াজ এলে স্বাভাবিক হবে বাজার। তাছাড়া দেশীয় নতুন পেঁয়াজ এই সময়ের মধ্যে বাজারে উঠতে পারে। ফলে ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহে পেঁয়াজের মূল্য স্বাভাবিক হয়ে আসবে। রবিবার রাজধানীর মতিঝিলে ফেডারেশন অব বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স এ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজ (এফবিসিসিআই) ভবনে নিত্যপণ্যের দাম নিয়ন্ত্রণে ব্যবসায়ীদের সঙ্গে শিল্প, কৃষি, বাণিজ্য ও খাদ্য মন্ত্রণালয়ের বৈঠক শেষে মন্ত্রী এ তথ্য জানান। এফবিসিসিআই সভাপতি ফজলে ফাহিমের সভাপতিত্বে বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি, খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার, এনবিআর চেয়ারম্যান মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়া, শিল্প মন্ত্রণালয়ের সচিব আবদুল হালিম, খাদ্য মন্ত্রণালয়ের সচিব শাহাবুদ্দিন আহমেদ, বাংলাদেশ প্রতিযোগিতা কমিশনের চেয়ারপার্সন মফিজুল ইসলাম, এফবিসিসিআইয়ের পরিচালক ও বিজিএমইএর সাবেক সভাপতি সিদ্দিকুর রহমানসহ সংশ্লিষ্ট সংস্থার প্রধান এবং ব্যবসায়ীরা এ সময় উপস্থিত ছিলেন। জানা যায়, কিছুটা কমার পর গত শনিবার থেকে আবারও লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়তে শুরু করে পেঁয়াজের দাম। শেষ দু’দিনে রাজধানীতে পেয়াজের দাম কেজিতে বাড়ে ৪০ টাকা। পেঁয়াজসহ নিত্যপণ্যের মূল্য বৃদ্ধিতে ব্যবসায়ীদের সঙ্গে বৈঠকের সিদ্ধান্ত নেয় সরকার। এর পরিপ্রেক্ষিতে রবিবার ব্যবসায়ীদের সঙ্গে জরুরী বৈঠকে বসে চার শীর্ষ মন্ত্রণালয়। বৈঠক শেষে বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, ‘জাহাজে করে আমদানি করা পেঁয়াজ আগামী ১০ দিনের মধ্যে দেশের বাজারে আসবে। এ পেঁয়াজ চট্টগ্রাম বন্দর পর্যন্ত আমদানি খরচ পড়ছে কেজিপ্রতি ৩২ টাকা। তবে খুচরা বাজারে এটি সর্বোচ্চ ৬০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হবে। এছাড়া ডিসেম্বরের প্রথমেই বাজারে দেশী নতুন পেঁয়াজ আসতে শুরু করবে। সবমিলিয়ে বলতে পারি আগামী ১০ দিনের মধ্যে (ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহ) পেঁয়াজের বাজার স্বাভাবিক হয়ে যাবে।’ টিপু মুনশি বলেন, ‘বছরে আমাদের ২৪ লাখ টনের মতো পেঁয়াজ প্রয়োজন। এর মধ্যে এক লাখ টন পেঁয়াজ আমদানি করতে হয়, যার ৯০ থেকে ৯৫ শতাংশই আসে পাশের দেশ ভারত থেকে। কিন্তু ভারত হঠাৎ পেঁয়াজ রফতানি বন্ধ করায় দেশের বাজারে সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে। সঙ্কট মোকাবেলায় ইতোমধ্যে বড় বড় ব্যবসায়ীদের পেঁয়াজ আমদানি করতে বলা হয়।’ ‘তারা মিসর, তুরস্কসহ বিভিন্ন দেশ থেকে পেঁয়াজ আমদানি কার্যক্রম শুরু করেছে। কিন্তু আমরা বুঝতে পারিনি, আমদানি পেঁয়াজ আসতে একমাস সময় লাগবে। তাৎক্ষণিক সঙ্কট মেটাতে উড়োজাহাজে আমদানির সিদ্ধান্ত নিই। বিমানে আমদানি করা পেঁয়জের মূল্য অনেক বেশি পড়বে এরপরও ভোক্তা পর্যায়ে আমরা এই পেঁয়াজ ৪৫ টাকায় বিক্রি করব।’ ‘চালের দাম স্বাভাবিক রয়েছে’ জানিয়ে খাদ্যমন্ত্রী বলেন, পাইকারি বাজারে চালের দাম বাড়েনি। কেজিতে দু-এক টাকা দাম বেড়েছে খুচরা বাজারে। তবে মোটা চালের নয় সরু চালের দাম বেড়েছে। কারণ এখন আমাদের লোকজন সরু চাল বেশি খায়। খাদ্যপণ্য পর্যাপ্ত মজুদ রয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, আগামীতে কোন নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বাড়ার আশঙ্কা নেই। সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের উত্তরে এনবিআর চেয়ারম্যান বলেন, ব্যবসায়ীরা ব্যবসা করবে তবে নৈতিকতার দিকে খেয়াল রাখতে হবে। বাজারে কোন জিনিসের ঘাটতি নেই। কিন্তু যদি কেউ অনৈতিকভাবে সমস্যা সৃষ্টি করে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে। লবণ, চিনি, তেল, চাল, ডাল বা পেঁয়াজ এ ধরনের নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের ক্ষেত্রে ভবিষ্যতে কোন সমস্যা হবে না জানিয়ে এনবিআর চেয়ারম্যান বলেন, আমরা ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলেছি। আমরা বলেছি, সরকার পক্ষ বা ব্যবসায়ী পক্ষ না- আমরা সবাই বাংলাদেশী। এখানে বড় বড় প্রায় সব সেক্টরের ব্যবসায়ীরা রয়েছেন। তাদের একটি সহজ ইনফরমেশন দেয়া হয়েছে। তা হলো, যদি কেউ মজুদদারি করে বা অহেতুক দাম বৃদ্ধি করে, তবে তাদের চিহ্নিত করে শাস্তি দেয়া হবে। দ্বিতীয়ত, নৈতিকতার দিকে ব্যবসায়ীদের অবশ্যই খেয়াল রাখতে হবে। বাজারে কোন দ্রব্যের এখন সরবরাহের কোন ঘাটতি নেই। এমনকি পেঁয়াজের ঘাটতিও হওয়ার কথা নয়। কারণ পেঁয়াজ বাজারে আছে তো। পাওয়া যাচ্ছে। জাতীয় রাজস্ব বোর্ড থেকে পেঁয়াজসহ এসব নিত্যপণ্যের মধ্যে কি কি আমদানি হয়েছে এবং কোথায় আমদানিকারকরা এসব বিক্রি করেছে, কে কবে বিক্রি করেছে- এসব বিষয়ে তথ্য নেয়া হচ্ছে। আমরা আরও বলেছি, নিত্যপ্রয়োজনীয় দব্যাদির যে ডিউটি ট্যাক্স আছে, এ নিয়ে কারও চিন্তিত হওয়ার প্রয়োজন নেই। কারণ এসব ক্ষেত্রে ডিউটি খুবই কম। বিশেষ করে কৃষি দ্রব্যাদির ক্ষেত্রে কোন ট্যাক্সই নেই। চালের উপর ট্যাক্স বেশি দেয়া আছে কারণ চালে আমরা স্বয়ংসম্পূর্ণ। যদি কখনও প্রয়োজন হয় তবে কমিয়ে দেয়া হবে। সুতরাং ভোক্তাদের জানাতে চাই যে, লবণ, চিনি, তেল, চাল, ডাল বা পেঁয়াজ এ ধরনের নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের ক্ষেত্রে ভবিষ্যতে কোন সমস্যা হবে না। এফবিসিসিআই সভাপতি জানান, নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যসামগ্রীর বছরব্যাপী চাহিদা, বাংলাদেশে পণ্যের উৎপাদন, আমদানি, মজুদ ব্যবস্থা, সরবরাহ ব্যবস্থাপনা ও যৌক্তিক মূল্য নির্ধারণের প্রয়োজনীয় দিক-নির্দেশনার বিষয়ে বৈঠকে আলোচনা হয়েছে। আগামীতে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের কোন সমস্যা সৃষ্টি হলে সরকারী-বেসরকারী যৌথ উদ্যোগে তা মোকাবেলা করা হবে- এমন সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে বলেও জানান তিনি। এদিকে রাজধানী ছাড়া ঢাকার বাইরের প্রায় অধিকাংশ জেলাগুলোতে পেঁয়াজের দাম বেড়েছে। স্টাফ রিপোর্টার সিলেট অফিস থেকে জানান, সিলেটের বাজারে পেঁয়াজের মূল্য আবারও লাফ দিয়েছে। দু’দিন পূর্বেও ৯০/১০০ টাকা দরে বিক্রি হলেও রবিবার হঠাৎ করে লাফ দিয়ে কেজিপ্রতি ৮০/৯০ টাকা বৃদ্ধি পেয়েছে। সিলেটের নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের সবচেয়ে বড় পাইকারি বাজার কালিঘাট ঘুরে দেখা গেছে পেঁয়াজের প্রচন্ড সঙ্কট। অনেক বড় পাইকারি দোকানে পেঁয়াজ নেই। যেসব দোকানে কিছু পুরনো পেঁয়াজ রয়ে গেছে সেগুলো বিক্রি হচ্ছে কেজিপ্রতি ১৭০-১৭৫ টাকা। নতুন করে কোন পেঁয়াজ বাজারে আসছে না। ব্যবসায়ীরা জানান, গত সপ্তাহের শেষ পর্যন্ত সিলেটের বাজার ভারতীয় পেঁয়াজে সয়লাব ছিল। ফলে দামও প্রচুর কমেছিল। কিন্তু গত শনিবার থেকে পরিবহন ধর্মঘট ও নানা কারণে সীমান্ত দিয়ে পেঁয়াজ বাজারে আসছে না। যে পরিমাণে আসছে সেগুলো পর্যাপ্ত নয়। আর এজন্য পাইকারি বাজারে পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে চড়া দামে। আর খুচরা বাজারে কেজিপ্রতি আরও ৫-১০ টাকা বেশি দামে বিক্রি করা হচ্ছে। এদিকে, পেঁয়াজের সঙ্কটের কারণে হঠাৎ করে পেঁয়াজের দাম বেড়ে যাওয়ায় বাজারে ক্রেতার সংখ্যাও কমে গিয়েছে বলে জানান ব্যবসায়ীরা। স্টাফ রিপোর্টার, রাজশাহী অফিস জানায়, রাজশাহীতে টিসিবির খোলাবাজারের পেঁয়াজে ব্যাপক সাড়া মিলেছে। রবিবার সকাল থেকে নগরীর ৫ পয়েন্টে লাইনে দাঁড়িয়ে সাধারণ মানুষ পেঁয়াজ কিনেছেন। তবে শৃঙ্খলা রক্ষায় শুরু থেকেই রাজশাহী মহানগরে পুলিশ পাহারায় খোলাবাজারে পেঁয়াজ বিক্রি শুরু করেছে ট্রেডিং কর্পোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি)। সকাল থেকেই লম্বা লাইনে দাঁড়িয়ে টিসিবির পেঁয়াজ কিনছেন ভোক্তারা। এর আগে শনিবার সকাল থেকে রাজশাহীর খোলাবাজারে টিসিবির পেঁয়াজ বিক্রির কথা ছিল। তবে সময় মতো পেঁয়াজ রাজশাহীতে গিয়ে না পৌঁছানোয় রবিবার থেকে বাজারে পেঁয়াজ বিক্রি কার্যক্রম শুরু হয়েছে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে এবং নিরাপত্তার স্বার্থে পুলিশ পাহারা রাখা হয়েছে। টিসিবির রাজশাহী কার্যালয়ের আঞ্চলিক প্রধান প্রতাপ কুমার জানান, শনিবার ঢাকা থেকে ট্রাকবোঝাই পেঁয়াজ আসতে দেরি হয়। তাই রবিবার থেকে এ কার্যক্রম শুরু হয়েছে। বাজার থেকে একজন ভোক্তা প্রতিদিন সর্বোচ্চ এক কেজি পেঁয়াজ কিনতে পারছেন। কেজিপ্রতি খরচ পড়বে ৪৫ টাকা। যা বর্তমান বাজারের চাইতে প্রায় ১০০ টাকার কম। তিনি বলেন, বাজারে ক্রেতাদের চাহিদা পূরণে টিসিবি প্রতিদিন সরবরাহ করবে পাঁচ টন পেঁয়াজ। প্রতিপয়েন্টে দেয়া হবে এক টন করে। দেশে পেঁয়াজের বাজার স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত টিসিবির এ কার্যক্রম অব্যাহত থাকবে। রাজশাহীর পাঁচটি পয়েন্টে বিক্রি করা হচ্ছে। সম্ভব হলে পরে আরও বিক্রি পয়েন্ট বাড়ানো হবে। পয়েন্টগুলো হচ্ছে, মহানগরের সাহেববাজার জিরো পয়েন্ট, কোর্ট এলাকা, ভদ্রা মোড়, রেলগেট ও আম চত্বর। এসব এলাকায় টিসিবির নির্ধারিত ডিলারদের মাধ্যমে খোলাবাজারে প্রতিদিন পেঁয়াজ বিক্রি করা হচ্ছে। নিজস্ব সংবাদদাতা, রংপুর জানায়, রংপুরে ৪৫ টাকা কেজি দরে টিসিবির পেঁয়াজ বিক্রি রবিবার থেকে শুরু হয়েছে। পেঁয়াজ কিনতে সকাল থেকে নগরীর, মাহিগঞ্জ, রংপুর প্রেসক্লাব চত্বর, সিটি বাজার, কাচারী বাজার ও শাপলা চত্বর এলাকায় ক্রেতাদের দীর্ঘ লাইন দেখা গেছে। দীর্ঘ অপেক্ষার পর ১ কেজি করে পেঁয়াজ কিনতে পেরে খুশি তারা। পেঁয়াজের ট্রাকগুলো বিক্রয় কেন্দ্রগুলোতে পৌঁছানোর আগেই ভোর থেকে সেখানে ভিড় করতে থাকেন নারী, পুরুষ, শিশু থেকে বৃদ্ধরা পর্যন্ত। কে আগে নেবেন এই নিয়ে ক্রেতাদের মধ্যে বিশৃঙ্খলা দেখা দিলে পুলিশ হস্তক্ষেপ করতে বাধ্য হয়। পুলিশের উপস্থিতিতে পেঁয়াজ বিক্রি শুরু হয়। নগরীর মাহিগঞ্জ এলাকার টিসিবির ডিলার শাহাদাত হোসেন শাওন জানান, সরকারের নির্দেশনা অনুযায়ী প্রত্যেক ক্রেতাকে ১ কেজি করে পেঁয়াজ দেয়া হচ্ছে। তিনি জানান, মাত্র ১ হাজার কেজি পেঁয়াজ বরাদ্দ দেয়া হয়েছে, কিন্তু চাহিদা অনেক। তিনি বরাদ্দ বাড়ার জন্য সরকারের কাছে আবেদন জানান। প্রেসক্লাব চত্বরে পেঁয়াজ কিনতে আসা গৃহবধূ সেলিনা জানান, রংপুরের বিভিন্ন বাজারে ২শ’ ৬০ থেকে ৩শ’ টাকা দরে পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে। ৪৫ টাকা দরে পেঁয়াজ কিনতে পেরে তিনি খুশি। চাকরিজীবী তোফায়েল জানান, টিসিবি থেকে যে পেঁয়াজ দেয়া হচ্ছে তা নি¤œমানের। সাইজে এত বড় যে ৪/৫টি পেঁয়াজ এক কেজি হচ্ছে। আবার কেনার পর দেখা গেছে ভেতরে পচা। তবুও বাধ্য হয়ে তাদের কিনতে হচ্ছে। তবে অনেক ক্রেতা বাজারমূল্যের চেয়ে অনেক কম দামে পাওয়ায় টিসিবির এ উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছেন। সংবাদদাতা, সৈয়দপুর, নীলফামারী জানায়, সৈয়দপুরে তিনদিনের ব্যবধানে পেঁয়াজের দাম লাগামহীন ভাবে বেড়েছে। রবিবার (২৪ নবেম্বর) শহরের একমাত্র পাইকারী বাজার ঘুরে দেখা যায়, তিনদিন আগে যে পেঁয়াজ ১৪০ থেকে ১৫০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। সে পেঁয়াজ ২৪০ থেকে ২৫০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। বাজারে পর্যাপ্ত পেঁয়াজের আমদানি থাকলেও প্রশাসনের নজরদারির অভাবে ব্যবসায়ীরা দাম বাড়ানো হয়েছে বলে অভিযোগ ভোক্তাদের। এদিকে, ব্যবসায়ীদের দাবি, পেঁয়াজের আমদানি কম হওয়ায় পেঁয়াজের দাম বেড়েছে। প্রতিটি বাজারেই শুধু দেশী পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে। দেশের বাইরে থেকে আমদানি করা পেঁয়াজ এবং দেশীয় নতুন মুড়িকাটা পেঁয়াজ বাজারে এখনও ওঠেনি। এতে দাম বেশি হলেও ক্রেতা ও বিক্রেতাদের দেশী পেঁয়াজের ওপরই নির্ভর করতে হচ্ছে। আর এই সুযোগে পেঁয়াজের দাম বাড়িয়েছে ব্যবসায়ীরা। দাম চড়া হওয়ায় সচেতন ক্রেতারা প্রশাসনকে বাজার নজরদারি করার জন্য দাবি জানান। তবে দুই দিনে পেঁয়াজের বাজার অস্বাভাবিকভাবে বৃদ্ধি পেলেও তা নিয়ন্ত্রণে প্রশাসনকে কোন রকম পদক্ষেপ নিতে দেখা যায়নি। সৈয়দপুর রেল বাজারে পেঁয়াজ কিনতে আসা রোস্তম আলী বলেন, গত সপ্তাহে ১৪০ টাকা কেজি দরে পেঁয়াজ কিনেছিলাম। কিন্তু বাজারে এসে দেখি ২৪০ টাকায় প্রতিকেজি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে। পাতা পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৮০ থেকে ১০০ টাকা দরে। পেঁয়াজ ব্যবসায়ী রাজু আহমেদ বলেন, গত সপ্তাহে পেঁয়াজের দাম অর্ধেকে নেমেছিল। উপজেলায় নতুন মুড়িকাটা পেঁয়াজ বাজারে না ওঠায় পেঁয়াজের দাম বৃদ্ধি পাচ্ছে। আমরা পেঁয়াজ কিনে বিক্রি করি। তাই বেশি দামে কিনে বিক্রিও করতে হচ্ছে বেশি দামে। এ ব্যাপারে সৈয়দপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এসএম গোলাম কিবরিয়া বলেন, পেঁয়াজের দাম বৃদ্ধির বিষয়টি জেনেছি। দ্রুত বাজার ব্যবস্থা নিয়ন্ত্রণ করতে অভিযান চালানো হবে। স্টাফ রিপোর্টার, নীলফামারী জানায়, অব্যাহত পেঁয়াজের সঙ্কট কাটাতে শতভাগ চেষ্টা করছে সরকার। এমনকি জরুরী ভিত্তিতে কার্গো উড়োজাহাজ করে বিভিন্ন দেশ থেকে পেঁয়াজ আমদানিও করা হচ্ছে। এতে পেঁয়াজের কেজি দেড় শ’ টাকায় নেমে এসেছিল। শনিবারও পেঁয়াজ খুচরা বাজারে পাওয়া যায় ১৩৫ থেকে ১৪০ টাকায়। কিন্তু রবিবার সকাল থেকে হুট করে নীলফামারীর হাটবাজারে পেঁয়াজের কেজি ডবল সেঞ্চুরি ছাড়িয়ে ২২০/২৩০ টাকায় বিক্রি হতে থাকে। ব্যবসায়ীরা বলছেন চাহিদার তুলনায় সরবরাহ কম থাকায় দাম নিয়ন্ত্রণে আসছে না। কয়েকটি পাইকারি ও খুচরা বাজার ঘুরে দেখা যায়, খুচরা পর্যায়ে দেশী পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ২২০ থেকে ২৩০ টাকা কেজি দরে। খুচরায় মিয়ানমারের পেঁয়াজ ১৮০ টাকা, মিসর ও চায়নার পেঁয়াজ ১৭০ থেকে ১৮০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। তবে আমদানি করা পেঁয়াজ আরও বেশি পরিমাণে আসার পর দাম কমবে বলে আশা করছেন ব্যবসায়ীরা। এছাড়া বাজারে নতুন গাছ পেঁয়াজের সরবারহও দিন দিন বাড়ছে। তবে পেঁয়াজের বাজারে অস্থিরতার জন্য দাম নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করেন ক্রেতা ও ব্যবসায়ীরা। অপরদিকে বাজারে নতুন দেশী পেঁয়াজ ১৫০ টাকা ও পাতা পেঁয়াজ ১২০-১৩০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এদিকে, জানা গেছে উত্তরাঞ্চলের মধ্যে শুধু রংপুর বিভাগীয় শহরে রবিবার হতে টিসিরি মাধ্যমে ৪৫ টাকা কেজি দরে পেঁয়াজ বিক্রি করা হচ্ছে। কিন্তু নীলফামারীসহ অন্য জেলায় টিসিবির পেঁয়াজ বিক্রি শুরু হয়নি। ভোক্তদের অভিযোগ জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে টিসিবির পেঁয়াজ বিক্রি না হওয়ার কারণে একটি সিন্ডিকেট হাটবাজারে ইচ্ছামতো পেঁয়াজের দাম বৃদ্ধি করে দিচ্ছে। জেলা সদরের হাটবাজার ছাড়াও জেলার ডোমার, ডিমলা, জলঢাকা, কিশোরীগঞ্জ, সৈয়দপুরে দেশী পেঁয়াজ খুচরা বাজারে বিক্রি হচ্ছে ২৫০ টাকা কেজিতে। জেলা শহরের বড় বাজারের পাইকারী পেঁয়াজ বিক্রেতা (আড়তদার) আলম হোসেন বলেন, বাজারে পেঁয়াজের আমদানি না থাকায় দাম বেশি। এর আগে ভারতের পেঁয়াজ সরবারহ বেশি ছিল তাই দাম কম ছিল, এখন সেটাও নেই। একই কথা বলেন, ওই বাজরের খুচরা বিক্রেতা বুলু মিয়া। জেলা মার্কেটিং কর্মকর্তা এটিএম এরশাদ আলম খান বলেন, বাজারে আবারও ২১০-২২০ টাকা কেজি দরে পেঁয়াজের কেজি বিক্রি হচ্ছে। নীলফামারী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর উপপরিচালক নিখিল চন্দ্র বিশ্বাস জানান, এ বছর নীলফামারী জেলায় কন্দ পেঁয়াজের আগাম চাষ হয়েছে ২১৭ হেক্টর জমিতে। আর এই জমি থেকে আগাম পাতা পেঁয়াজ বিক্রি করতে পারবে প্রায় ১৩ হাজার মেট্রিক টন। তিনি বলেন, কৃষি বিভাগ পেঁয়াজ চাষীদের সব রকম কৃষি পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছে। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় এবার পেঁয়াজের বাম্পার ফলন পাবে কৃষক। আশা করি, বাজারে পেঁয়াজ নিয়ে ভোক্তাদের ভোগান্তি কমে যাবে।
×