ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

‘মানসিকতায় পরিবর্তন আনতে হবে’

প্রকাশিত: ০৯:৫২, ২৫ নভেম্বর ২০১৯

 ‘মানসিকতায় পরিবর্তন  আনতে হবে’

স্পোর্টস রিপোর্টার, কলকাতা থেকে ॥ ভারত অধিনায়ক বিরাট কোহলি বলেছেন, ‘টেস্ট ক্রিকেট হচ্ছে মানসিক লড়াই।’ সত্যিই তাই। বাংলাদেশ সেই লড়াইয়ে আগেই হেরে গেছে। তাতে ইডেন টেস্টও ইনিংস ও ৪৬ রানের ব্যবধানে হেরেছে। বাংলাদেশ টেস্ট অধিনায়ক মুমিনুল হক কী ভাবছেন? কেন এমন হলো? তারও ভাবনায় মানসিকতাই এসেছে। আর তাই মুমিনুল বলেছেনও, ‘মানসিকতায় পরিবর্তন আনতে হবে।’ দ্বিতীয় ও শেষ টেস্ট শেষে সংবাদ সম্মেলনে এসে মুমিনুল টেস্ট নিয়ে এবং দল নিয়ে অনেক কথাই বলেন। তার সারসংক্ষেপ এখানে তুলে ধরা হলো। -দল হিসেবে খেলা মুমিনুল হক ॥ প্রথমত একটি দল হিসেবে আমরা ভাল খেলতে পারিনি। বোলাররা মোটামুটি ভাল বোলিং করেছে। সেই হিসেবে চিন্তা করলে আমাদের উন্নতি করার অনেক জায়গা আছে। সেগুলো যদি উন্নতি করতে পারি তাহলে হয়তো আস্তে আস্তে ভাল করতে পারব। সামনের বছর অনেকগুলো টেস্ট খেলা আছে। আমার কাছে মনে হয় আস্তে আস্তে উন্নতি করতে পারলে সেগুলোতে ভাল করতে পারব। -ছন্নছাড়া মুমিনুল ॥ আপনারা সবাই অবগত যে আমরা কিন্তু টেস্ট সেভাবে খেলি না। আমরা যদি সামনের বছর, প্রায় দশটির মতো টেস্ট ম্যাচ আছে, আমরা যখন টানা অনেকগুলো টেস্ট ম্যাচ খেলব আস্তে আস্তে ওভারকাম হয়ে যাবে হয়তো। -লাল এবং গোলাপি বলের চ্যালেঞ্জ মুমিনুল ॥ লাল বলের চেয়ে গোলাপি বলে খেলা বেশি চ্যালেঞ্জিং। বিশেষ করে নতুন বলে চ্যালেঞ্জ বেশি। আমরা যদি নতুন বলের ঐ চ্যালেঞ্জটি নিতে পারতাম, শেষের দিকে যখন শিশির পড়া শুরু হয়েছিল তখন থেকে বিষয়গুলো সহজ হয়ে গিয়েছিল। আমার কাছে মনে হয় গোলাপি বলে নতুন বলটা একটু চ্যালেঞ্জ আছে। আমরা সেই চ্যালেঞ্জটি নিতে পারিনি, সেই কারণে আমরা পিছিয়ে গেছি। -অজুহাত মুমিনুল ॥ একজন পেশাদার ক্রিকেটার হিসেবে এখানে অজুহাত দেয়ার কোন মানেই হয় না। আমি কোন অজুহাত দিচ্ছি না যে এটার কারণে এটা হয়নি। পরাজিতরা অজুহাত দেয়, তবে আমি দিচ্ছি না। আমরা দল হিসেবে ভাল খেলতে পারিনি, এমনকি একটি জুটিও গড়তে পারিনি। আপনারা দেখবেন যে রিয়াদ এবং মুশফিক ভাই কাল (শনিবার) বেশ ভাল একটি জুটি গড়েছিল। এভাবে ছোট ছোটভাবে যদি জুটি হতো তাহলে হয়তো আমরা আয়ত্ত করতে পারতাম ব্যাপারগুলো। আমরা খুব বাজে ব্যাটিং করেছি। -সিরিজ থেকে শিক্ষা মুমিনুল ॥ এই সিরিজ থেকে আমাদের অনেক কিছু শেখার আছে। এই বলের বিরুদ্ধে আপনি কিভাবে খেললেন কিংবা পরবর্তীতে কিভাবে প্রস্তুতি নিবেন এসব। দল হিসেবে সবাই ঐ শিক্ষাটা নিবে। এই শিক্ষাটা পরবর্তী এক বছর কিংবা দুই বছর বা পরের সিরিজে কাজে দিবে। -টেকনিক্যাল ইস্যু মুমিনুল ॥ তেমন টেকনিক্যাল ইসু্যু ধরা পড়েনি। টেকনিক্যাল ব্যাপারে অবশ্য সবসময় বলা যায় না, তবে সবাইকে এক্ষেত্রে উন্নতি করতে হবে। সেটা টেকনিক্যাল বা ট্যাক্টিক্যাল সব জায়গায়। -টস সিদ্ধান্ত মুমিনুল ॥ আমি যদি টস জিতে ফিল্ডিংই করতাম তাহলে দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাটিং করা লাগত। একই ধরনের চ্যালেঞ্জের মোকাবেলা করা লাগত। লাল বলের চেয়ে নতুন পিঙ্ক বলে চ্যালেঞ্জ অনেক বেশি। সবাই দেখলাম। যখন বলে শিশির পড়ে তখন সেটা ভিজে। তখন অনেকটা কমে আসে। দ্বিতীয় ইনিংসে আমরা ব্যাটিং করলে সেই জিনিসটাও আসতে পারত। -টেস্টে উন্নতি না হওয়া মুমিনুল ॥ এখন আস্তে আস্তে উন্নতি হচ্ছে ঘরোয়াতে। শেষ দুই বছর স্পোর্টিং উইকেট হচ্ছে। পেস বোলার বের হয়ে আসছে। টেস্ট ক্রিকেটে উন্নতি করতে হবে পেস বোলার বের হয়ে আসতে হবে। ওইভাবে এখন বের হচ্ছে। উন্নতি হবে আমার কাছে মনে হয়। আমরা যদি ভারতের মতো দলের সঙ্গে খেলি তাহলে অনেক হোমওয়ার্ক করতে পারব। কোন্ জায়গায় দুর্বলতা আছে বা কোথায় আরও উন্নতি করতে হবে। -ভারতের বিপজ্জনক পেসার মুমিনুল ॥ তিনজনই খুব ভাল ছিল। তিনজনকে খেলতেই কষ্ট হচ্ছিল। কিন্তু ইশান্ত শর্মা একটু বেশি চ্যালেঞ্জিং। ওর উচ্চতার কারণে ও একটু ভয়ঙ্কর। শামির সিমিংটা ভাল। তিনজনই ভাল আসলে। তারা বিশ্বের সেরা বোলিং এ্যাটাক। যারা অস্ট্রেলিয়া সাউথ আফ্রিকাকে হারিয়েছে। কারণ স্কিলের দিক দিয়ে অনেক ভাল তারা। সঙ্গে ট্যাকটিকটাও ভাল বোঝে। আমার কাছে মনে হয় ভারতের পেসারদের স্কিলটাও অনেক ভাল অন্য বোলারদের চেয়ে। -ভয় পাওয়া মুমিনুল ॥ না না ভয় পাচ্ছে না। আমার কাছে মনে হয় না ভয় পাচ্ছে। ভয় পেলে এই লেভেলে খেলাটা খুব কঠিন। ভয়ের কিছু নেই। এখানে সবাই সবার মতো খেলছে। -কি করতে হবে মুমিনুল ॥ পরিশ্রম কিন্তু মানুষকে পারফেক্ট করে। এরকম পরিশ্রম আসবে, হতাশ না হয়ে আপনি কি শিক্ষা গ্রহণ করছেন এটা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। আমার কাছে মনে হয় পেশাদার ক্রিকেটাররা এটাই করে। যেটা হয়ে গেছে সেটা নিয়ে চিন্তা করে না। চিন্তা করে এখান থেকে আমি কি শিক্ষাটা নেব। যেটা আমার পরবর্তীতে কাজে দিবে, আমি যদি এটা নিয়েই পড়ে থাকি সামনের দিনটা তো শেষ না। -সাকিব তামিমকে মিস করা মুমিনুল ॥ মিস তো সবাই করেছে। তামিম সাকিবকে সিরিজের প্রথম থেকেই বলা হয়েছে অবশ্যই মিস করেছে। এই অযুহাত দেয়াও ঠিক না। তামিম-সাকিব নেই আমাদের যারা ওদের জায়গায় খেলেছে তাদের বড় একটি সুযোগ ছিল। আমার জন্য বড় সুযোগ ছিল অধিনায়ক হিসেবে। -ভারত সিরিজ থেকে শিক্ষা মুমিনুল ॥ শিক্ষার তো অনেক কিছুই আছে। কিভাবে পেস বলে এই চ্যালেঞ্জ আমরা পরবর্তীতে উতরে যাব পেস বলের বিরুদ্ধে কিভাবে খেলব। সেশন বাই সেশন কিভাবে খেলব। পিঙ্ক বলে আমাদের ভাল একটি শিক্ষা হয়েছে। নতুন পিঙ্ক বলে একটু চ্যালেঞ্জ থাকে। পরের দিকে চ্যালেঞ্জটা একটু কমে আসে। এই ছোট ছোট বিষয়গুলো খুব কাজে দিবে। -প্রথমবার অধিনায়ক হিসেবে সহযোগিতা পাওয়া মুমিনুল ॥ আমি পুরোপুরি সাপোর্ট পেয়েছি। মুশফিক ভাই, রিয়াদ ভাই থেকে শুরু করে সবার সাপোর্ট পেয়েছি। ম্যানেজমেন্ট থেকে তো অবশ্যই সাপোর্ট পেয়েছি। শতভাগ সাপোর্ট পেয়েছি। -কি বদলাতে হবে মুমিনুল ॥ মানসিকতা একটু পরিবর্তন হতে হবে আমাদের সবারই। যুদ্ধ করার জন্য যে মন মানসিকতা সেটা উন্নতি করতে হবে আমার যা মনে হয় সবার। দিন দিন এটা ইম্প্রুভ হবে। এমন নিশ্চিত কোন কারণ নেই। নতুন অধিনায়কত্ব নিয়েছি। সবকিছু গুছিয়ে নিতে হয়তো একটু সময় লাগবে। আপনারা একটু অপেক্ষা করেন সব ঠিক হয়ে যাবে। -দলের কাছে বার্তা মুমিনুল ॥ বার্তা হলো এই সিরিজ থেকে তারা যদি শিক্ষাটা নিতে পারে পরবর্তী সিরিজে তা দেখতে পাবেন। যদি শিক্ষা নিতে না পারে তাহলে দেখতে পাবেন না। যখন খেলবে মনোযোগ দিয়ে খেলাটা অনেক গুরুত্বপূর্ণ।
×