ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

উন্নতির দিকনির্দেশনা দিলেন কোহলি

প্রকাশিত: ০৯:৫২, ২৫ নভেম্বর ২০১৯

  উন্নতির দিকনির্দেশনা দিলেন কোহলি

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ এই প্রথম ভারতের মাটিতে পূর্ণাঙ্গ টেস্ট সিরিজ খেলেছে বাংলাদেশ দল। টেস্ট মর্যাদা লাভের ১৯ বছরে ভারতের মাটিতে মাত্র ৩ টেস্ট খেলার সুযোগ হয়েছে। এর আগে একমাত্র টেস্ট খেলেছিল দুই বছর আগে। এবার ২ ম্যাচের সিরিজ। কিন্তু এমন এক সিরিজে চরম ভরাডুবি হয়েছে বাংলাদেশ দলের। ইন্দোরে প্রথম টেস্টে তৃতীয়দিনের ১ ঘণ্টা আগে এবং দ্বিতীয় টেস্টে ইডেনে ২ দিন এবং ৪৭ মিনিট সময়েই ইনিংস ব্যবধানের লজ্জাজনক পরাজয়বরণ করেছে। ১৯ বছর ধরে টেস্ট খেলে এমন বাজে পরিস্থিতি কেন বাংলাদেশ দলের? এই উত্তরটা পুরোপুরি জানা নেই বিরাট কোহলির। তবে তিনি ক্রিকেট কাঠামো, কেন্দ্রীয় চুক্তির বিষয়গুলো নিয়ে প্রয়োজনীয় দিক নির্দেশনা দিয়েছেন ইডেন টেস্ট শেষে সংবাদ সম্মেলনে। উদাহরণ হিসেবে নিজ দেশের ক্রিকেটারদের কিভাবে গড়ে তোলা হয় সেটাও জানিয়েছেন। কোহলি মূলত টেস্ট ক্রিকেটারদের আর্থিক নিরাপত্তার বিষয়টি তুলে ধরেন। এ সময় সাকিব আল হাসান ও তামিম ইকবালের মতো অভিজ্ঞ দুই ক্রিকেটার না থাকা এবং তরুণদের নিয়ে গড়া দলের জন্যই বাংলাদেশের এমন পরাজয়ের পেছনে কারণ হিসেবে দেখেছেন ভারতীয় অধিনায়ক। বাংলাদেশ দলে এবার ছিলেন না বিশ্বের অন্যতম অলরাউন্ডার সাকিব। ব্যাট হাতে দুর্দান্ত যেমন তিনি, তেমনি বল হাতেও প্রতিপক্ষের জন্য বাড়তি চ্যালেঞ্জ। আবার অভিজ্ঞ ওপেনার তামিমও এই ভারত সফরে ছিলেন না। টেস্ট স্কোয়াডে অভিজ্ঞতম দুইজন মুশফিকুর রহিম ও মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ। পাশাপাশি ‘টেস্ট স্পেশালিস্ট’ মুমিনুল হক সৌরভ থাকলেও তিনি প্রথমবার দলকে নেতৃত্ব দেয়ার চাপে পড়ে দুই টেস্টেই হয়েছেন চরমভাবে ব্যর্থ। বাকিরা সবাই ছিলেন টেস্টে অনভিজ্ঞ। তাই খুব বাজেভাবে উভয় টেস্টে ইনিংস ব্যবধানে হেরে গেছে বাংলাদেশ দল। এ বিষয়ে কোহলি বলেন, ‘প্রথমত তাদের সবচেয়ে অভিজ্ঞ দুই খেলোয়াড় ছিল না। সাকিব ছিল না, তামিমও নেই। আর তারপর শুধু মুশফিক একা। মাহমুদুল্লাহও ছিল, কিন্তু আপনি শুধু দুইজন খেলোয়াড় দিয়ে দলকে এগিয়ে নিতে পারবেন না। বাকিরা তরুণ, তাই তাদের শুধু অভিজ্ঞতা অর্জনই হবে।’ আর সেই অভিজ্ঞতা অর্জনের জন্য তরুণদের দিতে হবে অনেক সুযোগ। তবে বাংলাদেশ দল বরাবরই টেস্ট ক্রিকেট খেলে অনিয়মিতভাবে। লম্বা বিরতি দিয়ে দিয়ে টেস্ট খেলতে গেলে তা উন্নতির অন্তরায়। কোহলি বলেন, ‘তারা যদি অনেক টেস্ট ক্রিকেট খেলে তাহলে অনেক অভিজ্ঞও হবে। যদি দুইটা টেস্ট ম্যাচ খেলার দেড় বছর পর আবার খেলতে নামেন তাহলে আপনি কোনভাবেই বুঝতে পারবেন না পরিস্থিতিগুলো কিভাবে সামলে উঠতে হবে এবং চাপের মুখে কিভাবে খেলতে হবে। তবে দক্ষতা, মেধা অবশ্যই দলটিতে আছে। মানুষ আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলে, কারণ তারা খেলার জন্য যথেষ্ট যোগ্য। কিন্তু এটা খুবই জরুরী ম্যাচের এমন পরিস্থিতিসমূহ নিয়মিত মোকাবেলা করা। শুধু তখনই তারা বুঝবে যে কিভাবে এ অবস্থায় ভাল করা যায়। আমি যে বিষয়টার দিকে ইঙ্গিত করেছি যে বোর্ড এবং খেলোয়াড়দের অবশ্যই বুঝতে হবে এটা কতখানি বড় ব্যাপার তাদের জন্য। আর এটাই একমাত্র উপায় টেস্ট ক্রিকেটে এগিয়ে যাওয়ার।’ টেস্ট ক্রিকেটে উন্নতির জন্য কি কোন পন্থাই নেই? বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি) কি করতে পারে এ ব্যাপারে? বিশেষভাবে কোহলি আর্থিক নিরাপত্তার বিষয়টি নিশ্চিত করা জরুরী এমন দাবিই করলেন। এ বিষয়ে কোহলি যে দিক নির্দেশনা দিলেন তা হলো, ‘ক্রিকেটারদের কাজটা নির্দিষ্ট সীমা পর্যন্ত। নির্ভর করে যে কোন ক্রিকেট বোর্ড এটাকে কিভাবে চালিয়ে নেয়। দক্ষিণ আফ্রিকার দিকে যদি তাকান, তাদের অনেক ধরনের ইস্যু আছে কিছু বছর যাবত। আমি নিশ্চিত করে জানি না যে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড টেস্ট ক্রিকেট নিয়ে কিভাবে পর্যালোচনা করে, কতটা ঊৎকর্ষের জন্য কাজ করছে এবং কতটা গুরুত্ব দিচ্ছে। আমার মনে হয় টেস্ট ক্রিকেটের শক্তিটা আসে আর্থিক কাঠামোর মাধ্যমে। যদি টেস্ট ক্রিকেটে ভাল আর্থিক সুযোগ-সুবিধার পর্যায়টা বজায় না রাখা হয়, কিছুদিন পর তাদের অনুপ্রেরণা নি¤œমুখী হবে। কারণ যেসব খেলোয়াড় ২০ ওভারের ম্যাচ খেলে মাত্র ৪ ওভার বোলিং করে তারা প্রায় ১০ গুণ উপার্জন করে। দিনশেষে এটা রুটি-রুজির ব্যাপার। তাই ৫-৬ বছর ধরে লেগে থাকার যুক্তিটায় আর কেউ ভ্র‍ুক্ষেপ করবে না। তখন যে কেউ পেশাটাই বদলে জানিয়ে দেবে যে শুধু টি২০ খেলব। আমার মনে হয় এই বিষয়টা শুধু সামঞ্জস্যপূর্ণ করা যেতে পারে কেন্দ্রীয় চুক্তির মাধ্যমে। আপনি দেখেন কিভাবে অস্ট্রেলিয়া, ইংল্যান্ড ও নিউজিল্যান্ড অনেক বছর ধরে শক্তিশালী- তাদের চুক্তির কাঠামোটা শুরু হয় টেস্ট দিয়ে এবং এরপর পর্যায়ক্রমে বাকিগুলো। তাই আমার দৃষ্টিতে, আমরা সেই পরিবর্তনগুলো এখানে করেছি যেন টেস্ট খেলোয়াড়দের মনোভাব এমন হয় যে দীর্ঘ সময় এটার সঙ্গে লেগে থাকলেও ভবিষ্যতটা নিরাপদই হবে। অনুপ্রেরণা, ইচ্ছাশক্তি তো থাকাই উচিত, তবে সেই সঙ্গে যৌক্তিক কিছুও থাকতে হবে। যদি তীব্র মনোবাসনা নিয়ে খেলে যান, কিন্তু আর্থিক বিষয়টা ভুলে যান, সেক্ষেত্রে পেশাদার ক্রিকেটার হিসেবে এটা নিয়ে আপনি বেঁচে থাকতে পারবেন না এবং অবশ্য অন্য কোথাও কাজ খুঁজবেন। তাই আমি মনে করি এই ব্যাপারটাই আমাদের খুঁজে বের করতে হবে এবং তারপর দেখা যাবে কি হয়।’ আর ভারতীয় ক্রিকেট কন্ট্রোল বোর্ড (বিসিসিআই) এ বিষয়টি অনেক আগেই উপলব্ধি করেছে। সে জন্যই এখন তাদের প্রচুর পরিমাণে ব্যাকআপ খেলোয়াড় আছে যারা সুযোগ পেলেই দারুণ পারফর্মেন্স করেন। নির্দিষ্ট কিছু ক্রিকেটারকে নিয়ে বিসিসিআই সবসময়ই যত্নবান। আর এ বিষয়টি অত্যন্ত গুরত্বপূর্ণ। কোহলি বলেন, ‘শামি নজরেই ছিলেন, ইশান্ত দীর্ঘদিন ধরে খেলছেন- আমার নেতৃত্ব নেয়ারও ৪-৫ বছর আগে থেকে। ভুবি (ভুবনেশ্বর) আছে। ২০১২ সালে উমেশও নিজেকে বিকশিত করেছে। বুমরাহ বিলম্বে যোগ হয়েছে, কিন্তু এরা সবাই কিন্তু অনেকদিন ধরেই আছে। এখন সবকিছুই সময়মতো ঘটে চলেছে। তারা অনেক অভিজ্ঞতা অর্জন করেছে এবং এখন সবাই মিলে ভাল বোলিং করছে। এটা বের করা অনেক সময়সাপেক্ষ ছিল। তাদের জন্য আলাদা ফিটনেস রুটিন ছিল এবং অন্য সবকিছুই। তারা নিজেদের প্রস্তুতিটা নিজেদের ব্যবস্থাপনায় চালিয়ে গেছে। তাদের যখন চাপ হয়ে যায়, আমরা তাদের কাছ থেকেই সেটা জেনে নিয়ে বিশ্রাম দেই। আমাদের কথা হচ্ছে টেস্ট ক্রিকেটে একেবারে তরতাজা অবস্থায় সবাইকে চাই আমরা, অন্যকিছু যেন তারা দুঃশ্চিন্তা না করে এমনটাই বলা হয়। এ কারণেই এখন আমাদের বিকল্প বোলার থাকে। এর কারণ ম্যানেজমেন্টের সঙ্গে খেলোয়াড়দের সম্পর্কটা খুবই ভাল এবং তারা যখন খেলে না তখনও নিজেরা অনেক বেশি নিরাপদ ও নিশ্চিন্ত বোধ করে। এসব কারণে এখন আমাদের রিজার্ভ বেঞ্চের শক্তিটাও অনেক সহায়তা করছে।’
×