ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

ব্যাংকের অনুমোদন ছাড়াই লেনদেন হবে আন্তর্জাতিক ক্রেডিট কার্ড

প্রকাশিত: ০৯:৩২, ২৫ নভেম্বর ২০১৯

  ব্যাংকের অনুমোদন ছাড়াই লেনদেন হবে আন্তর্জাতিক ক্রেডিট কার্ড

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ আন্তর্জাতিক ক্রেডিট কার্ডের মাধ্যমে অনলাইনে জুয়া খেলা, বৈদেশিক লেনদেন, বিদেশী কোন প্রতিষ্ঠানের শেয়ার কেনাবেচা, ক্রিপ্টো কারেন্সি ও লটারির টিকেট কিনে ডলার পাচারের অভিযোগে এই লেনদেনে শর্তারোপ করে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। কার্ডের মাধ্যমে অনলাইনে অর্থ পরিশোধের ক্ষেত্রে প্রধান শর্ত ছিল নির্ধারিত ফরম পূরণ করে অনলাইনে সফটকপি বা ব্যাংকে হার্ডকপি পাঠিয়ে অনুমোদন নেয়া। কিন্তু আইটিফার্মসহ সংশ্লিষ্টদের চাপের মুখে পিছু হটতে বাধ্য হলো কেন্দ্রীয় ব্যাংক। রবিবার নতুন সার্কুলার জারি করে অনুমোদন দেয়ার বিষয়টি প্রত্যাহার করে নেয়া হয়েছে। অবৈধ লেনদেনে ঠেকাতে সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে ব্যাংকগুলোকে। এছাড়া এই বিষয়টি সমাধানের জন্য ডাকা বৈঠকটিও নির্ধারিত দিনের একদিন আগেই অনুষ্ঠিত হয়েছে। উল্লেখ্য, আন্তর্জাতিক ক্রেডিট কার্ড ব্যবহারকারী গ্রাহক এককভাবে কোন পণ্য বা সেবামূল্যের ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ ৩০০ ডলার পর্যন্ত পরিশোধের সুযোগ নিতে পারেন। কিন্তু অনলাইনে পণ্য কেনাকাটার নামে এই সুযোগের অপব্যবহার করছেন অনেকেই। গত ১৪ নবেম্বর অনলাইনে ক্রিপ্টোকারেন্সি কেনা ও জুয়া ও লটারিতে অংশ নেয়াসহ আন্তর্জাতিক ক্রেডিট কার্ডের ‘অপব্যবহার’ রোধে সার্কুলার জারি করে কেন্দ্রীয় বাংক। ওই সার্কুলারে বলা হয়, আন্তর্জাতিক ক্রেডিট কার্ড দিয়ে অনলাইনে বিদেশী পণ্য বা সেবা কিনতে হলে গ্রাহককে অনলাইন ট্রানজেকশন অথরাইজেশন ফর্ম (ওটিএএফ) পূরণ করে মোবাইল এ্যাপ বা ইন্টারনেট প্লাটফর্মের মাধ্যমে বা হার্ড কপি ব্যাংকে জমা দিতে হতো। ব্যাংক যাচাই-বাছাই করে অসঙ্গতি না পেলে ক্রেডিট কার্ডকে শুধু সেই লেনদেনের জন্য সক্রিয় করে দেবে। অনুমোদন ছাড়া অনলাইনে ডলারের কেনাকাটায় কার্ড কাজ করবে না। এর ফলে, অনলাইনে বিদেশী পণ্য বা সেবা কিনতে ডলার পরিশোধের ক্ষেত্রে কার্ড ব্যবহারকারীদের নির্দিষ্ট ফরম পূরণ করে জমা দিয়ে ব্যাংকের কাছ থেকে অনুমতি নিতে হচ্ছিল। এ নিয়ম ‘বাস্তবসম্মত নয়’ বলে দাবি আইটি ফার্মগুলো। তাদের অভিযোগ ও দাবি পর্যালোচনার জন্য ২৫ নবেম্বর সোমবার বৈঠক ডাকে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। ওই বৈঠকে কয়েকটি ব্যাংকের কার্ডডিভিশন ও বাংলাদেশ এ্যাসোসিয়েশন অব সফটওয়্যার এ্যান্ড ইনফরমেশন সার্ভিসেসের (বেসিস) নেতাদের উপস্থিত থাকার কথা ছিল। কিন্তু উর্ধতন কর্তৃপক্ষে চাপে রবিবার সকাল ১১টায় বৈঠকটি অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক হুমায়ন কবীর, বেসিস সভাপতি সৈয়দ আলমাস কবির, সহ-সভাপতি শোয়েব আহমেদ মাসুদ, মুশফিকুর রহমান, ১১টি ব্যাংকের কার্ড ডিভিশনের প্রধানরা উপস্থিত ছিলেন। বৈঠক শেষে নতুন সার্কুলার জারি করে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। নতুন সার্কুলারে বলা হয়েছে, আন্তর্জাতিক ক্রেডিট কার্ডের মাধ্যমে অনলাইনে পণ্য ও সেবার মূল্য বিদেশে পাঠানো যাবে। এক্ষেত্রে অনলাইনে জুয়া খেলা, বৈদেশিক লেনদেন, বিদেশী কোন প্রতিষ্ঠানের শেয়ার কেনাবেচা, ক্রিপ্টো কারেন্সি ও লটারির টিকেট কেনার মতো অপরাধমূলক কর্মকা-ে লেনদেন ঠেকাতে বাংকগুলোকে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে হবে। এজন্য গ্রাহকের জন্য (কেওয়াইসি), মানিলন্ডারিং গাইডলাইন্স পরিপালন এবং কর ও শুল্ক পরিশোধ নিশ্চিত করবে সংশ্লিষ্ট ব্যাংক। এই সার্কুলারের ফলে গ্রাহককে কোন অনুমোদন নিতে হবে না। বেসিস প্রেসিডেন্ট সৈয়দ আলমাস কবির বলেন, গ্রাহকদের ভোগান্তিতে না ফেলে কিভাবে অনলাইনে অবৈধ লেনদেন প্রতিরোধ করা যায় সেই বিষয়ে বৈঠকে বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে। প্রত্যেক গ্রাহককে আর অনুমোদন নিতে হবে না। যে ৫টি গেটওয়ের মাধ্যমে লেনদেন হয় ওই গেটওয়েগুলোতে অনলাইন ক্যাসিনো, জুয়াসহ অন্যান্য অপরাধমূলক কর্মকা-ের সঙ্গে জড়িত ওয়েবসাইটের কোড ব্লক করা থাকবে। কেউ চাইলেই ব্লক থাকা সাইটে অর্থ পাঠাতে পারবে না। তাই অনলাইনের অনুমোদন নেয়ার শর্তটি বাতিল করে নতুন সার্কুলার জারি করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
×