ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

বাঁশখালীতে ২০০০ মেট্রিক টন লবণ মজুদ, ;###;উপকূলের চাষীরা মূল্য না পেয়ে হতাশ

লবণ বিক্রি হচ্ছে প্রতিকেজি মাত্র ৪ টাকা দরে

প্রকাশিত: ০৯:২৯, ২৫ নভেম্বর ২০১৯

লবণ বিক্রি হচ্ছে প্রতিকেজি মাত্র ৪ টাকা দরে

জোবাইর চৌধুরী, বাঁশখালী ॥ লবণের মূল্য বৃদ্ধি পেয়েছে বলে সোশ্যাল মিডিয়ায় গুজব ছড়িয়েছে সুবিধাবাদী কুচক্রি মহল। দেশের কয়েকটি এলাকায় লবণের মূল্যবৃদ্ধির অজুহাতে চড়া দামে লবণ বিক্রির খবর পাওয়া গেলেও রবিবার বাঁশখালীতে গত মৌসুমে উৎপাদিত লবণ বিক্রি হচ্ছে প্রতিকেজি মাত্র ৪ টাকা দরে। এদিকে, গত মৌসুম শেষ হয়ে চলতি বছরের লবণ উৎপাদন শুরু হলেও বছরজুড়ে উৎপাদিত লবণের অস্বাভাবিক দর পতনে হতাশায় ভুগছেন উপজেলার প্রান্তিক লবণ চাষি। উপকূলীয় অঞ্চলের মধ্যে দেশের কক্সবাজার এবং খুলনার পর চট্টগ্রামের একমাত্র বাঁশখালীতেই লবণ উৎপাদন হয়ে থাকে। বাঁশখালীতে পুইছড়ি, ছনুয়া, শেখেরখিল, গন্ডামারা, চাম্বলের ডিপুটিঘোনা, শীলকুপের পশ্চিম মনকিচর, সরল, মিনজির তলা, কাথরিয়া, খানখানাবাদ (আংশিক) এলাকায় লবণের ব্যাপক উৎপাদন হয়ে থাকে। প্রতিবছরের ন্যায় এ বছরও শীতে মৌসুমে এখানকার কয়েক হাজার লবণ চাষী লবণ উৎপাদনের কাজে মাঠে নেমেছেন। তবে লবণ চাষীর হতাশার শেষ নেই। উচিত মূল্য না পাওয়াতে গত মৌসুমের শত শত মেট্রিকটন লবণ এখনও তাদের নিয়ন্ত্রণে মজুদ রয়েছে। সরেজমিনে দেখা যায়, রবিবার (২৪ নবেম্বর) বিকেল পর্যন্ত বাঁশখালীতে গত মৌসুমে উৎপাদিত লবণ বিক্রি হয়েছে প্রতিমণ ১৮০ টাকা থেকে ১৯০ টাকা দরে। সে হিসাবে বাঁশখালী তথা চট্টগ্রামে পাইকারি লবণ বিক্রি হয়েছে মাত্র ৪ টাকা থেকে ৪ টাকা ৭৫ পয়সা দরে। জানা গেছে, দেশের বঙ্গোপসাগর উপকূলবর্তী চট্টগ্রামের বাঁশখালীতে কয়েকটি ইউনিয়ন জুড়েই লবণ উৎপাদন হয়ে আসছে। সরকারী হিসাবে প্রতিবছর নবেম্বরের ১৫ থেকে পরবর্তী বছরের মের ১৫ তারিখ পর্যন্ত লবণ উৎপাদন মৌসুম ধরা হয়। এই সাত মাসের মধ্যে সম্পূর্ণ আবহাওয়ার ওপর নির্ভরশীল হয়েই বছরের পর বছর ধরে হাজার হাজার চাষি তাদের মাথার ঘাম পায়ে ফেলে দেশের লবণ উৎপাদন করে এলেও সেই চাষিদের কোন খবর কেউ রাখে না। এদের জীবন-জীবিকার একমাত্র উৎস যখন লবণের মাঠ, বাপ-দাদার আমল থেকে যাদের লবণচাষ করে চলে সংসার তারা বার বার প্রতারিত হয়। পায় না ন্যায্য মূল্য। কুচক্রি পাইকারের কাছে মণপ্রতি লবণে ৭ থেকে ১০ কেজি বেশি গুনতে হয়। শ্রমিকের মজুরি, জমির লাগিয়তসহ সব মিলে লোকসানের মাসুল গুনতে হয় লবণচাষীকে। প্রান্তিক লবণচাষিরা জানায়, পাইকারি লবণের দাম একেবারে কমে গেলেও পাইকাররা করছে আরও জুলুম। তারা লবণের ঘাটতির নাম করে প্রতিমণে ৭ থেকে ১০ কেজি লবণ বেশি নিচ্ছেন। তারা বলেন, একে তো লবণের দাম কম তার ওপর প্রতিমণে ফড়িয়া বা দালালরা লবণের ঘাটতির নামে অতিরিক্ত লবণ নিয়ে তাদের আরও ঠকাচ্ছেন। উত্তর-পশ্চিম গন্ডামারা লবণ উৎপাদনকারী সমবায় সমিতি লি.’র সভাপতি আবু আহমেদ বলেন- এখনও আমাদের বাঁশখালীতে গত মৌসুমের উৎপাদিত প্রায় ২ হাজার মেট্রিকটন লবণ মজুদ রয়েছে। উচিত মূল্য না পাওয়াতে চাষিরা হতাশায় ভোগছে। আমাদের সমিতির আওতায় ১২শ’ কানি লবণ চাষের জমি আছে। এখনও অনেক লবণের মাঠ লাগিয়ত হয়নি। চাষিরা লবণের লোকসান গুনতে গুনতে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছে চাষ থেকে। তিনি বলেন- এ কারণে চাষিরা চান, উৎপাদিত লবণ সরকারীভাবে ক্রয় করা হলে তারা অন্তত উৎপাদিত লবণের প্রকৃত মূল্য পেতেন। শিল্প কারখানার ব্যবহারের বিপরীতে আমদানিকৃত লাখ লাখ মেট্রিক টন উদ্বৃত্ত লবণই জনস্বাস্থ্য ও আইনের তোয়াক্কা না করে অসাধু চক্র প্যাকেটজাত করে বাজারজাত করায় একদিকে মাঠ পর্যায়ে উৎপাদিত লবণের দরপতন শুরু হয়, যা বর্তমানেও অব্যাহত।
×