ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

চ্যালেঞ্জের মুখে

প্রকাশিত: ০৮:৫৮, ২৫ নভেম্বর ২০১৯

 চ্যালেঞ্জের মুখে

শনিবার জনকণ্ঠের প্রথম পাতায় মুন্সীগঞ্জের ভয়াবহ সড়ক দুর্ঘটনার যে সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে তা পড়লে যুগপৎ ক্ষুব্ধ ও শোকাহত হতে হয়। দেশে প্রতিদিনই ছোট-বড় সড়ক দুর্ঘটনা সংঘটিত হয়ে চলেছে। এটি যেন অবধারিত। দুর্ঘটনা বলেকয়ে আসে না, কিন্তু সড়কে যাত্রী ও পথচারীদের আহত-নিহত হওয়ার বিষয়টিকে নিছক দুর্ঘটনা হিসেবে দেখার অবকাশ নেই। এ হচ্ছে ঘোরতর অনিয়ম ও স্বেচ্ছাচারিতা। এই নৈরাজ্য দূর করতে নতুন প্রজন্ম ও শিক্ষার্থীরা গত বছর সড়কে নেমে এসে এক অভূতপূর্ব আন্দোলনের জন্ম দিয়েছিল। সরকার সড়কে শৃঙ্খলা ফেরাতে নতুন সড়ক আইনও প্রণয়ন করেছে। কিন্তু যাদের দ্বারা সড়কে হতাহতের ঘটনা ঘটে চলেছে, সেই চালক ও পরিবহন শ্রমিকগোষ্ঠী এই আইনের বিরোধিতা করে অচলাবস্থার সৃষ্টি করছে প্রায়ই। তারা ধর্মঘট, আন্দোলন, অবরোধ ইত্যাদির মাধ্যমে সড়কে এক অস্বাভাবিক পরিস্থিতি তৈরি করেছে, যা মোটেই দায়িত্বশীল আচরণ নয়। সরকারের আশ্বাসেও পরিবহন সেক্টরে সঙ্কট নিরসন হয়নি। পুরোপুরি কাটেনি অচলাবস্থা। প্রায় এক সপ্তাহেও স্বাভাবিক হয়নি সারাদেশে বাস চলাচল। গণপরিবহন বন্ধ রয়েছে যশোরের বেনাপোলে। এতে বেনাপোল কাস্টমস প্রায় ১০০ কোটি টাকা রাজস্ব আদায় থেকে ইতোমধ্যেই বঞ্চিত হয়েছে। সরকারের পক্ষ থেকে সড়ক পরিবহন আইন-২০১৮ পুনরায় সংশোধনের আনুষ্ঠানিক ঘোষণা চাইছে পরিবহন শ্রমিক নেতারা। এই প্রেক্ষাপটে আইন বাস্তবায়নে সরকারকে কঠোর হওয়ার পরামর্শ বিশেষজ্ঞদের। দীর্ঘ চেষ্টার পর আইনটি বাস্তবায়নে সরকারের সামনে চ্যালেঞ্জ এসেছে। সড়কে কোন যানবাহন নামানোর আগে প্রাথমিক কিছু শর্ত থাকে। যানটি যথাযথভাবে নিবন্ধিত কিনা, তার ফিটনেস সনদ আছে কিনা, চালকের লাইসেন্স আছে কিনা ইত্যাদি। এর পরই রয়েছে সনদের বিষয়টি। গণপরিবহনের ক্ষেত্রে বিষয়টি আরও গুরুত্বপূর্ণ। তাতে বহু মানুষ আরোহন করে থাকেন। সেখানে প্রত্যেকেরই জীবনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা চাই। সড়কে আইন না মেনে চললে একটি যানবাহন ভয়ঙ্কর দানব ও হন্তারক হয়ে উঠতে পারে। তার হাজার হাজার দৃষ্টান্ত আমাদের চোখের সামনে রয়েছে। নতুন সড়ক পরিবহন আইনে আইন ভাঙ্গার জন্য শাস্তি ও জরিমানা যথেষ্ট বাড়ানো হয়েছে। এতে কেবল চালক-চালকের সহকারী বা যানবাহনের মালিকই নয়, পথচারীর জন্যও দ-ের বিধান রাখা হয়েছে। দুর্ঘটনায় প্রাণহানি ঘটলে নতুন আইনে দায়ী চালকের সর্বোচ্চ সাজা পাঁচ বছর কারাদন্ড। আসামির জামিনও হবে না। পুরনো আইনে জামিনের সুযোগ ছিল। নতুন আইন চালকের ওপর ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে এবং তাকে বেপরোয়াভাব বাদ দিয়ে দায়িত্বশীল হতে সাহায্য করবে বলে আশা করা যায়। চালক সতর্ক থাকলে সড়ক দুর্ঘটনা কমবে। আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন মহাজোট সরকার ২০০৯ সালের শুরুতে দায়িত্ব নেয়ার পর একটি যুগোপযোগী সড়ক পরিবহন আইন প্রণয়নের উদ্যোগ নেয়। একের পর এক আইনের খসড়া তৈরি করা হয়। কিন্তু সড়ক পরিবহন খাতের মালিক ও শ্রমিক সংগঠনগুলোর প্রবল বাধার মুখে আইনটি চূড়ান্ত করার উদ্যোগ বারবার স্থগিত হয়ে যায়। অবশেষে ১ নবেম্বর থেকে নতুন সড়ক পরিবহন আইন ২০১৮ কার্যকর হয়েছে। এর পর থেকেই নানাভাবে এই আইনের বিরোধিতা করতে দেখা যাচ্ছে সংশ্লিষ্ট স্বার্থান্বেষীদের। বলাবাহুল্য, অহেতুক সড়ক দুর্ঘটনা শূন্য পর্যায়ে নামিয়ে আনার জন্য চাই সব পক্ষের সহনশীলতা, সচেতনতা ও দায়িত্বশীলতা। জনদুর্ভোগ সৃষ্টিকারী কোন কর্মসূচীই এক্ষেত্রে গ্রহণযোগ্য নয়। দেশবাসীর প্রত্যাশা, সরকার চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করে নিরাপদ সড়ক নিশ্চিতে যথাযথ সুদৃঢ় ভূমিকা রাখবে।
×