ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

উন্নত সমাজ গঠনের জন্য আয়কর

প্রকাশিত: ১২:৫১, ২৪ নভেম্বর ২০১৯

উন্নত সমাজ গঠনের জন্য আয়কর

দিন যতই যাচ্ছে ততই যেন আয়কর জমা দেয়ার প্রবণতা বৃদ্ধি পাচ্ছে। সত্যিকার অর্থেই এটা ইতিবাচক দিক। জনসচেতনতা যে দিন দিন বাড়ছে এ যেন তারই অন্যতম উদাহরণ। অন্তত এবারের আয়করমেলা যেন সেটাই প্রমাণ করে। রাজধানী ঢাকাসহ দেশের আটটি বিভাগীয় শহরে সপ্তাহব্যাপী আয়কর মেলার আয়োজন করে এনবিআর। বুধবার রাজধানীর বেইলি রোডের অফিসার্স ক্লাবে মেলার শেষ দিনে ছিল আয়কর দাতাদের উপচেপড়া ভিড়। ২০১০ সাল থেকে আয়কর মেলা চালু হওয়ার পর থেকে প্রতি বছরই মেলায় করদাতার সংখ্যা এবং মেলার কলেবর বৃদ্ধি পেয়েছে। এ প্রসঙ্গে কালিপদ হালদার (সদস্য- গ্রেড ১, করপ্রশাসন ও মানবসম্পদ ব্যবস্থাপনা, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড) বলেছেন, আয়কর জমা করা নিয়ে মানুষের যে ভীতি বা ভ্রান্ত ধারণা ছিল তা কিন্তু আজ অতীত। আমরা আয়কর মেলার মাধ্যমে তা প্রমাণ করতে সক্ষম হয়েছি। ছয় দিনে আয়কর মেলায় ৫ লাখ ৪০ হাজার করদাতা রিটার্ন দাখিল করেছেন। ওই সময়ে আয়কর আদায় হয়েছে ২ হাজার ১৬ কোটি টাকা। নতুন ই-টিআইএন নিয়েছেন ২৬ হাজার ৮৩১ জন। সব মিলিয়ে এ পর্যন্ত আয়কর মেলা থেকে সেবা নিয়েছেন ১৫ লাখ ১২ হাজার ৫৯২ জন। ডাটা হিসাব করলে দেখা যায় প্রতিবছরই বৃদ্ধি পেয়েছে করদাতার সংখ্যা। মানুষ এখন বুঝতে শিখেছে কর দেয়া মানে নিজ দেশকে কিছু দেয়া। সমৃদ্ধ সমাজ গঠনে কর প্রদান অন্যতম। কথার রেশ ধরেই তাকে প্রশ্ন করা হয়, মেলা ছাড়া অফিসে গিয়ে আয়কর প্রদান করার ব্যাপারে এখনও মানুষের মনে ভীতি রয়েছে, ব্যাপারটি কিভাবে দেখেন? এর উত্তরে তিনি বলেছেন, করের ব্যাপারে প্রায়ই মানুষ ভুল মানুষের দারস্থ হয়। আর দোষ পরে যায় অফিসের। কিন্তু আমি একজন কর কর্মকর্তা হিসেবে দ্ব্যার্থভাবে বলতে পারি প্রতিটি অফিসেই হেল্প ডেস্ক রয়েছে যারা সঠিক তথ্য দিয়ে কর দাতাদের সহায়তা করে থাকে। কোনভাবেই ভুল ব্যাখ্যা দেয়া হয় না। তাই মেলা শেষ হলেও অফিসে এসে যেন সবাই সেবা নেয় সে ব্যাপারটাও নিশ্চিত করা হয়েছে। অতএব দ্বিধাদ্বন্দ্ব না রেখে যে কোন কর অঞ্চল অফিসে এসে সেবা নিতে পারবে। তিনি আরও বলেন, বঙ্গবন্ধুর হাতে গড়া এ দেশ ক্রমান্বয়ে সমৃদ্ধির দিকে আগাচ্ছে, আর তা আরও সমৃদ্ধ করতে আয়কর অন্যতম ভূমিকা রাখে। ব্যাপার অনেকটা এমন নিজেদের দেশ নিজেরা গড়ছি। এর মধ্যে অন্যরকম এক ভাললাগা রয়েছে। আর এ ভাললাগাই বুঝি আয়কর মেলাকে উৎসবে পরিণত করেছে। ভবিষ্যতেও এ ধারা অব্যাহত থাকবে। এছাড়াও ডিজিটাল ডিভাইসের সম্পৃক্ততা দিন দিন আরও বাড়বে। তখন এই পরিষেবা আমরা খুব সহজেই মানুষের দোরগোড়ায় পৌঁছে দিতে সক্ষম হব। মেলা ঘুরে আরও জানা যায়, নির্ধারিত সময়ের মধ্যে আয়কর রিটার্ন জমা দেয়া না হলে জরিমানার মুখে পড়বেন করদাতারা। এক্ষেত্রে প্রতিদিনের জন্য ৫০ টাকা হারে জরিমানা গুনতে হবে। সময়মতো রিটার্ন জমা দিতে ব্যর্থ হলে এবং কোন যথাযথ কারণ না দেখাতে পারলে পূর্ববর্তী বছরের প্রদেয় আয়করের ১০ শতাংশ জরিমানা (যেটি ১ হাজার টাকার কম হতে পারবে না) গুনতে হবে। অবশ্য নতুন করদাতার ক্ষেত্রে জরিমানা ৫ হাজার টাকা বেশি হবে না। কিন্তু পুরনো করদাতার ক্ষেত্রে এ জরিমানার পরিমাণ হবে পূর্ববর্তী বছরে প্রদেয় করের অর্ধেক। তবে তা ১ হাজার টাকার কম হবে না। সেক্ষেত্রে যাদের আয়করের পরিমাণ বেশি, তাদের জরিমানাও বেশি। বিদ্যমান আয়কর অধ্যাদেশ অনুযায়ী, প্রত্যেক টিআইএন ধারীকে আয়কর রিটার্ন দাখিল করতে হবে। বর্তমানে দেশে টিআইএন ধারীর সংখ্যা ৪০ লাখের ওপরে। যদিও গত বছর রিটার্ন দাখিল করে প্রায় ২১ লাখ করদাতা। মেলার শেষ বেলায় করদাতাদের উপস্থিতি দেখে এনবিআর চেয়ারম্যান বলেন, শেষ দিনে যতক্ষণ পর্যন্ত করদাতারা মেলা প্রাঙ্গণে উপস্থিত থাকবেন, ততক্ষণ তাদের আয়কর রিটার্ন জমা নেয়া হবে। শেষ হিসাব পর্যন্ত কর আদায় ও সেবা গ্রহীতার সংখ্যা বাড়বে বলে জানা গেছে। প্রসঙ্গত, মূলত হয়রানিমুক্ত পরিবেশে আয়কর রিটার্ন দেয়ার সুযোগ থাকায় সাধারণ করদাতার বড় অংশই মেলায় এসে রিটার্ন দাখিল করছেন। কিন্তু করদাতাদের অভিযোগ, কর অফিসে হয়রানি এবং নানা ছুতোয় এক শ্রেণীর অসাধু কর কর্মকর্তা কিংবা কর্মচারী বাড়তি টাকা দাবি করেন। এসব কারণে অনেকেই কর অফিসে গিয়ে কর প্রদানে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন না। এ প্রসঙ্গে এনবিআর চেয়ারম্যান মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়া সম্প্রতি আয়কর মেলার উদ্বোধনকালে বলেছেন, আয়কর অফিসেও আয়কর মেলার মতো পরিবেশে রিটার্ন প্রদান কিংবা অন্যান্য কর সংক্রান্ত সেবা পাওয়া যাবে। এক্ষেত্রে সার্বিক সহযোগিতা করতে কর কর্মকর্তাদের নির্দেশ দিয়েছেন তিনি। তিনি বলেন, এনবিআরের কর্মকর্তা কারো বিরুদ্ধে কোন ধরনের অভিযোগ প্রমাণ হলে যথাযথ ব্যবস্থা নেয়া হবে। তবে এ কথা সত্যি দেশের উন্নয়নে জনগণের সম্পৃক্ততা যত বাড়বে ততই এগিয়ে যাবে দেশ। আয়কর মেলা যেন সে কথারই ছাপ রেখে যাচ্ছে বার বার।
×