ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

কোহলিময় ইডেনের ‘গোলাপি টেস্ট’

প্রকাশিত: ১২:০৪, ২৪ নভেম্বর ২০১৯

কোহলিময় ইডেনের ‘গোলাপি টেস্ট’

মিথুন আশরাফ, কলকাতা থেকে ॥ ইডেন গার্ডেন্সের টেস্টটি এখন একটি নামেই চলছে, ‘গোলাপি টেস্ট’। সবকিছুই গোলাপিময়। সবার মুখে শুধু ‘গোলাপি, গোলাপি’ ছন্দ। আর এই ইডেনের ‘গোলাপি টেস্ট’ হয়ে গেল যেন কোহলিময়। তিনি বাংলাদেশের বিরুদ্ধে প্রথম ইনিংসে এমন এক ইনিংস উপহার দিলেন, মনমুগ্ধ করে ফেললেন। ১৯৪ বলে ১৮ চারে ১৩৬ রানের ইনিংসটি গড়ার পথে ইডেন গার্ডেন্স ভর্তি দর্শককেও মাতালেন। এবাদত হোসেনের দুর্দান্ত ডেলিভারিতে পেছন দিকে শূন্যে ভেসে ডিপ স্কয়ার লেগে তাইজুল ইসলামের অসাধারণ ক্যাচে আউট হন কোহলি। তিনি নিজেও এমন ক্যাচ ধরায় অবাক হন। তবে এই এক ইনিংস যেন ম্যাচের গতিবিধিও ঠিক হয়ে যায়। শুধু তাই নয়, উপমহাদেশে প্রথমবার দিবারাত্রির টেস্ট হচ্ছে। সেই টেস্টে প্রথম সেঞ্চুরিয়ান হয়ে ইতিহাসের পাতায়ও নাম লেখালেন কোহলি। সেঞ্চুরি হতে এক রান বাকি। ক্যারিয়ারের ২৭তম টেস্ট সেঞ্চুরিটি করবেন। যখনই স্ট্রাইক পেয়েছেন, আর দর্শকরা ‘কোহলি, কোহলি’ চিৎকারে স্টেডিয়াম কাঁপিয়ে তুলেছেন। তাইজুল ইসলামের বলটি স্কয়ার লেগে ঠেলে দিয়ে যখন রান নিলেন, সেঞ্চুরি পূর্ণ হয়ে গেল, তখনই স্টেডিয়ামে সে কী উচ্ছ্বাস! কোহলির সেঞ্চুরিতেই যেন ইডেন টেস্টটি প্রাণ খুঁজে পেল। অধিনায়ক হিসেবে ২০তম সেঞ্চুরি করে ফেলেন কোহলি। টেস্ট সেঞ্চুরিতে বর্তমান ক্রিকেটারদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি সেঞ্চুরি এখন তার। ২৬ সেঞ্চুরি করা স্টিভেন স্মিথকেও পেছনে ফেলেছেন কোহলি। সব ফরমেট মিলিয়ে বর্তমান ক্রিকেটারদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ৭০টি সেঞ্চুরিও করে ফেলেছেন কোহলি। সব ফরমেটে সেঞ্চুরির দিক দিয়ে তার সামনে শুধু ভারতের কিংবদন্তি ব্যাটসম্যান শচীন টেন্ডুলকর (১০০টি সেঞ্চুরি) ও অস্ট্রেলিয়ার রিকি পন্টিং (৭১টি সেঞ্চুরি) আছেন। ইডেন গার্ডেন্সে টানা দুটি সেঞ্চুরি করলেন কোহলি। ২০১৭ সালে যখন শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে ইডেন গার্ডেন্সে সর্বশেষ টেস্টটি খেলেন, তাতেও দ্বিতীয় ইনিংসে অপরাজিত ১০৪ রানের ইনিংস করেন। এরপর এবার বাংলাদেশের বিরুদ্ধে খেলতে নেমে সেঞ্চুরি করলেন। ভারতের ‘নন্দন কানন’ খ্যাত কলকাতার ইডেন গার্ডেন্সে সব ফরমেট মিলিয়ে ১৩টি ম্যাচ খেলে ৩টি সেঞ্চুরি হয়ে গেল কোহলির। এই স্টেডিয়ামে ২০০৯ সালে প্রথমবার (ওয়ানডেতে) খেলেই ১০৭ রানের ইনিংস খেলেন। যেটি কোহলির ক্যারিয়ারের প্রথম সেঞ্চুরি ছিল। এরপর ২০১৭ সালে শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে টেস্টে এবং শনিবার বাংলাদেশের বিরুদ্ধে সেঞ্চুরি করলেন। প্রথমদিনই ৫৯ রান করে অপরাজিত ছিলেন। দ্বিতীয়দিন ১৫৯ বলে ১২টি চারে সেঞ্চুরি পূরণ করেন কোহলি। মধ্যাহ্ন বিরতিতে যাওয়ার আগেই সেঞ্চুরি হাঁকিয়ে ফেলেন। অধিনায়কদের মধ্যে সব ফরমেট মিলিয়ে আবার কোহলি সবাইকে ছাপিয়ে গেছেন। রিকি পন্টিং ৪১টি সেঞ্চুরি করেছিলেন। কোহলিও তাই করলেন। মাত্র ছয় বছরের অধিনায়ক ক্যারিয়ারে এতগুলো সেঞ্চুরি করেন কোহলি। পন্টিং এগারো বছর অধিনায়ক ক্যারিয়ারে তা করেন। টেস্টে অধিনায়কদের মধ্যে ভারত সব অধিনায়ককেই ছাপিয়ে গেছেন কোহলি। অধিনায়ক হিসেবে ২০টি সেঞ্চুরি করেন। কিংবদন্তি ব্যাটসম্যান সুনীল গাভাস্কার ১১টি করেছিলেন। কোহলির ওপরে আছেন অস্ট্রেলিয়ার স্টিভেন স্মিথ (২৫টি সেঞ্চুরি)। তবে কোহলি পাঁচ বছরে করেছেন। স্মিথ ১১ বছরের অধিনায়ক ক্যারিয়ারে তা করেন। কোহলি অসাধারণ ব্যাটিং করেন। অসাধারণ এক ক্যাচে আউটও হন। দলকে ৩০৮ রানে নিয়ে গিয়ে সাজঘরে ফেরেন কোহলি। ততক্ষণে ২০২ রানে এগিয়ে যায় ভারত। বাংলাদেশের বিরুদ্ধে দ্বিতীয় সেঞ্চুরি করেন কোহলি। ইডেন টেস্টসহ বাংলাদেশের বিরুদ্ধে চারটি টেস্ট খেলেন কোহলি। ২০১৭ সালে হায়দরাবাদ টেস্টের প্রথম ইনিংসে ২০৪ রানের ইনিংস খেলেছিলেন কোহলি। সেটি বাংলাদেশের বিরুদ্ধে কোহলির প্রথম সেঞ্চুরি ছিল। এবার দ্বিতীয় সেঞ্চুরিও হয়ে গেল। কোহলি যখন খেলতে থাকেন তখন সবার মধ্যেই আসলে আনন্দ কাজ করে। তিনি যে বিশ্বসেরা ব্যাটসম্যানদের একজন তা আবারও বুঝিয়ে দেন। বাংলাদেশ বোলারদের ভোগাতে থাকেন। বাংলাদেশ দ্রুতই গুটিয়ে যায়। এরপর খেলা সাদামাটা হয়ে যায়। কেমন যেন নিরামিশ টাইপ হয়ে যায়। কিন্তু কোহলি যে ব্যাটিং করেন তাতে টেস্টে আমেজ আসে। দর্শকরা তো এও বলতে থাকেন, এমন এক ঐতিহাসিক টেস্টে কোহলিরই সেঞ্চুরি করা ঠিক আছে। অন্য কেউ সেঞ্চুরি করলে আসলে এই টেস্টের সেই মেজাজ থাকত না। কোহলি সেঞ্চুরি করায় টেস্টের দ্বিতীয়দিনও উৎসবের রং থাকে। যে রং স্বাভাবিকভাবেই গোলাপি হয়ে ওঠে। গোলাপি বলে যে খেলা। শেষ পর্যন্ত সবকিছুকে ছাপিয়ে ভারতের বর্তমান সেরা ব্যাটসম্যান কোহলিময়ই হয়ে উঠল ইডেনের ‘গোলাপি টেস্ট’।
×