ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

এক কর্মকর্তার কা-ে পাল্টে যাচ্ছে ইউজিসি তদন্ত টিমের গঠন প্রক্রিয়া

উপাচার্যদের বিরুদ্ধে তদন্তে কোন কর্মকর্তা নয়

প্রকাশিত: ১১:২১, ২৪ নভেম্বর ২০১৯

উপাচার্যদের বিরুদ্ধে তদন্তে কোন কর্মকর্তা নয়

বিভাষ বাড়ৈ ॥ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) এক কর্মকর্তার অসদাচরণ, অসৌজন্য ও হয়রানিমূলক আচরণে অসন্তোষ ছড়িয়ে পড়েছে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যসহ প্রবীণ শিক্ষকদের মাঝে। বিশ্ববিদ্যালয় পরিদর্শন ও তদন্তে গিয়ে কনিষ্ঠ এ কর্মকর্তা উপাচার্যসহ প্রবীণ শিক্ষকদের সঙ্গে অব্যাহত অসদাচরণ করছেন বলে অভিযোগ এনেছেন উপাচার্যরা। পরিস্থিতি সামাল দিতে ইউজিসির তদন্ত বা পরিদর্শন টিমে কমিশনের সদস্য পদমর্যাদার নিচে কোন কর্মকর্তাকে না রাখার জন্য শিক্ষামন্ত্রী ডাঃ দিপু মনির হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন তারা। এদিকে কর্মকর্তার অসদাচরণকে অগ্রহণযোগ্য অভিহিত করে পরিদর্শন ও তদন্ত টিমের দায়িত্ব বণ্টনে পরিবর্তন আনার সিদ্ধান্ত নিয়েছে ইউজিসি। শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও ইউজিসি কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, পরিদর্শন ও তদন্ত টিমের প্রধান হিসেবে ইউজিসির কোন সদস্য থাকলেও পরিচালক মোঃ কামাল হোসেন তাদের অবস্থানের বাইরে গিয়ে উপাচার্য ও বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রবীণ শিক্ষকদের সঙ্গে অসৌজন্যমূলক আচরণ করছেন। পরিদর্শনের নামে উপাচার্যদের সঙ্গে তিনি হয়রানিমূলক আচরণ করছেন। কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয় পরিদর্শনে গিয়ে শিক্ষার্থীদের শিক্ষার সুযোগ বৃদ্ধির বিপরীতে শিক্ষা সংকোচনের পক্ষে অবস্থান নিয়েছেন। পরিদর্শনে ইউজিসির সদস্য হিসেবে দায়িত্বরত অধ্যাপকদের মতামতের বাইরে গিয়ে একগুঁয়েমি আচরণ করেছেন বলে অভিযোগ করেছেন শিক্ষকরা। প্রায় একই ধরনের অভিযোগ এনেছেন ইউজিসির একাধিক সদস্যও। কর্মকর্তাকে নিয়ে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে তদন্তে যাওয়াকে বিব্রতকর হিসেবে উল্লখ করেছেন কমিশনের একাধিক সদস্য। এ পরিস্থিতিকে নিজেদের জন্য অমর্যাদাকর অভিহিত করে ‘মর্যাদা রক্ষায়’ শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও ইউজিসির হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন উপাচার্য ও প্রবীণ শিক্ষকরা। তারা পরিস্থিতি পরিবর্তনের জন্য ইউজিসির তদন্ত বা পরিদর্শন টিমে কমিশনের সদস্য পদমর্যাদার নিচে কোন কর্মকর্তাকে না রাখার দাবি জানিয়েছেন। সম্প্রতি শিক্ষামন্ত্রী ডাঃ দিপু মনির সঙ্গে উপাচার্যদের এক বৈঠকে বিষয়টি নিয়ে কথা বলেন কয়েক উপাচার্য। বৈঠকের পরও মন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলেন কয়েক অধ্যাপক। বিষয়টি জানার পর যাকে কেন্দ্র করে এমন পরিস্থিতি সেই কর্মকর্তার বিষয়ে ইউজিসির কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে তার সম্পর্কে তথ্য নিয়েছেন মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা। ইউজিসির ওই কর্মকর্তাসহ পুরো পরিদর্শন প্রক্রিয়ার দ্রুত পরিবর্তনও চান অনেক উপাচার্য। বিশেষত প্রবীণ শিক্ষকদের অনেকেই। একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য বলছিলেন, যেহেতু মন্ত্রীর কাছে ইউজিসির পরিদর্শন বা তদন্তে কর্মকর্তাদের নিয়ে আনুষ্ঠানিক কথা হয়েছে তাই আশা করি দ্রুতই একটি সমাধান হবে। তার বিরুদ্ধে সরাসরি কোন অভিযোগ না আনলেও তদন্তে কর্মকর্তাদের বাইরে রাখার পক্ষে স্পষ্ট অবস্থানের কথা জানালেন প্রবীণ শিক্ষক বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. আবদুল মান্নান। তিনি জনকণ্ঠকে বলছিলেন, মন্ত্রীর সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে আমাদের কথা হয়েছে। এক উপাচার্য বিষয়টি তুলেছিলেন। আমিও বলেছি, হ্যাঁ, অবশ্যই উপাচার্যদের বিষয়ে পরিদর্শন ও তদন্তে ইউজিসি কর্মকর্তাদের রাখা ঠিক নয়, এটা উচিত নয়। বিষয়টি নিয়ে আমিসহ সবাই একমত হই যে এটা ঠিক নয়। তবে ইউজিসি চেয়ারম্যান তখন একটি কথা বলেছিলেন। তিনি বলেছিলেন, ‘কর্মকর্তাদের রাখা হয় কারণ তারা আইনকানুন, নীতিমালার বিষয়গুলো ভাল জানেন। কখন আমি বলেছিলাম, আপনি (ইউজিসি চেয়ারম্যান) আপনার জায়গা থেকে ঠিকই বলেছেন। একই সঙ্গে আমার সুপারিশ হচ্ছে, যেসব প্রবীণ শিক্ষক উপাচার্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করে অবসরে গেছেন তাদের মধ্য থেকে কমিশনের সদস্য করা হলে তদন্ত নিয়ে কোন সমস্যা থাকে না। তারা উপাচার্যদের বিষয়ে তদন্তে গেলেও কোন উপাচার্য ও প্রবীণ কোন শিক্ষকের জন্য মর্যাদাহানির কিছু ঘটত না।’ আরেক প্রবীণ শিক্ষক মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. আলাউদ্দিন জনকণ্ঠকে বলেন, নাম ধরে কোন কর্মকর্তাকে অভিযুক্ত করছি না। তবে এটা তো ঠিক যে ইউজিসির কর্মকর্তা তো ভিসিদের পদমর্যাদার অনেক নিচে। কোন অধ্যাপকের বিরুদ্ধে তদন্ত করার জন্য তো তার নিচের কাউকে দেয়া যায় না, কমপক্ষে কোন অধ্যাপককে দিয়ে তদন্ত করতে হয়। তেমনই এক উপাচার্যের বিরুদ্ধে তদন্তে যদি তার অনেক নিচের পদমর্যাদার কোন কর্মকর্তাকে দেয়া হয় তাহলে তা কখনই ভাল হয় না। এতে উপাচার্যদের মর্যাদা, তাদের সম্মানটা ঠিক রাখা হয় না। বিষয়টি মন্ত্রীকে বলা হয়েছে, উপাচার্যদের বিরুদ্ধে তদন্তে ইউজিসির সদস্যদের নিচের কাউকে যেন না পাঠানো হয়। এদিকে ইউজিসির একাধিক সদস্য ও কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ইউজিসির তদন্ত কমিটি নিয়ে উপাচার্যদের অসন্তোষের বিষয়টি নিয়ে তারাও বিব্রত। ইউজিসির একাধিক সদস্য ও কর্মকর্তা ইতোমধ্যেই প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. কাজী শহীদুল্লার কাছে বিষয়টি তুলে ধরেন। কর্মকর্তার আচরণের বিষয়টিও চেয়ারম্যানকে জানান তারা। তবে একাধিকবার চেষ্টা করেও বিষয়টি নিয়ে ওই কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলা সম্ভব হয়নি। অবশ্য ইউজিসি চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. কাজী শহীদুল্লা জনকণ্ঠকে বলেন, হ্যাঁ, আমি বিষয়টি জেনেছি। অসদাচরণকে অগ্রহণযোগ্য অবিহিত করে তদন্ত টিমের দায়িত্ব বণ্টনে পরিবর্তন আনার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। উপাচার্যরাও আমার কাছে এখনও লিখিত কিছু দেননি। কমিশনের সদস্যদের মাধ্যমে আমি জানতে পেরেছি এক কর্মকর্তার সমস্যা। আমি তাই সিদ্ধান্ত নিয়েছি উপাচার্যদের বিরুদ্ধে তদন্তে কর্মকর্তাদের আর রাখা হবে না। যদি রাখাও হয় সেক্ষেত্রে কর্মকর্তার জন্য শর্ত দেয়া হবে। কী শর্ত দেয়া হবেÑ এ প্রশ্নে ইউজিসি চেয়ারম্যান বলেছেন, শর্ত থাকবে কমিশনের সদস্যদের সঙ্গে তদন্তে গিয়ে কর্মকর্তা উপাচার্যদের সঙ্গে কথা বলতে পারবেন না। কোন প্রশ্ন করতে পারবেন না।
×