ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

মুনাফাখোর ও অসাধু ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ হোন

প্রকাশিত: ১১:২০, ২৪ নভেম্বর ২০১৯

মুনাফাখোর ও অসাধু ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ হোন

জনকণ্ঠ ডেস্ক ॥ রাষ্ট্রপতি মোঃ আবদুল হামিদ অসাধু ব্যবসায়ী, লুটেরা, মুনাফাখোর ও মজুদদারদের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার জন্য দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেছেন, এরা গুজব ছড়িয়ে নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যের কৃত্রিম সঙ্কট তৈরি করে। রাষ্ট্রপতি শনিবার বিকেলে বাংলাদেশ আর্মি স্টেডিয়ামে ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৩তম সমাবর্তন অনুষ্ঠানে বক্তব্য প্রদানকালে এ কথা বলেন। খবর বাসসর। তিনি বলেন, ‘পরিবহন মালিক ও শ্রমিকরা ঐক্যবদ্ধ রয়েছে। অসাধু ব্যবসায়ী, মুনাফাখোর, লুটেরা ও মজুদদারদের মধ্যেও ঐক্য রয়েছে। এখন এই দুষ্কৃতকারীদের বিরুদ্ধে আমাদের সকলকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে।’ সম্প্রতি পেঁয়াজ, লবণ ও চালসহ নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্যবৃদ্ধির কথা উল্লেখ করে তিনি এই পরিস্থিতির তীব্র নিন্দা করেন। তিনি বলেন, এতে সাধারণ জনগণকে দুর্ভোগ পোহাতে হয়েছে। রাষ্ট্রপতি পেঁয়াজ, লবণ ও চালসহ নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যের মজুদের ব্যাপারে গুজব সম্পর্কে সতর্ক থাকার জন্যও দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানান। রাষ্ট্রপতি হামিদ বলেন, ‘গণমাধ্যম কর্মীদেরও এর বিরুদ্ধে ব্যাপক প্রচার চালাতে হবে।’ পবিত্র রমজান মাসে নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্যবৃদ্ধির ব্যাপারে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে মোঃ আবদুল হামিদ বলেন, ‘বিভিন্ন দেশে ধর্মীয় উৎসব উপলক্ষে নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যের দাম হ্রাস পায়। এমনকি রমজান মাসে মধ্যপ্রাচ্যের মানুষও পণ্যের মূল্যহ্রাস করে। কিন্তু বাংলাদেশে আমরা ভিন্ন চিত্র দেখতে পাই। এদেশে রমজান মাস এলেই ইফতারি তৈরিতে ব্যবহৃত বেগুন, শসা ও অন্যান্য প্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বেড়ে যায়।’ তিনি বলেন, ‘জনগণকে অবশ্যই এই দুষ্কর্মের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে।’ গ্র্যাজুয়েটদের অভিনন্দন জানিয়ে রাষ্ট্রপতি বলেন, ‘শিক্ষিত হয়ে তোমরা কর্মজীবনে প্রবেশ করবে। মনে রেখ, জ্ঞান, শিক্ষা ও অভিজ্ঞতা অর্জনের কোন শেষ নেই।’ তিনি দেশের কল্যাণে নিজেদের জ্ঞান ও প্রজ্ঞা কাজে লাগাতে গ্র্যাজুয়েটদের পরামর্শ দেন। রাষ্ট্রপতি বলেন, বাংলাদেশকে বিশ্বের রোল মডেল হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে তোমাদের কাছে জাতির অনেক প্রত্যাশা। তোমরা তোমাদের প্রতিভা ও কাজের মাধ্যমে বাংলাদেশকে বিশ্বের দরবারে তুলে ধরবে। মোট ৩ হাজার ২৫০ শিক্ষার্থী বিভিন্ন বিষয়ে গ্র্যাজুয়েট লাভ করেছে। এদের মধ্যে চারজনকে চমৎকার ফলাফলের স্বীকৃতি স্বরূপ স্বর্ণ পদক প্রদান করা হয়েছে। শিক্ষার গুণগতমান নিশ্চিত করা বড় চ্যালেঞ্জ বিডি নিউজ জানায়, গুণগত শিক্ষা নিশ্চিত করা দেশের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ উল্লেখ করে রাষ্ট্রপতি মোঃ আবদুল হামিদ উচ্চশিক্ষা যাতে কোনভাবেই সার্টিফিকেটসর্বস্ব না হয় সেদিকে নজর দিতে সংশ্লিষ্টদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। শনিবার রাজধানীর আর্মি স্টেডিয়ামে ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের ত্রয়োদশ সমাবর্তনে রাষ্ট্রপতি এ আহ্বান জানান। দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর আচার্য আবদুল হামিদ বলেন, যুগের চাহিদাকে ধারণ করে বর্তমানে পাবলিক ও প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের সংখ্যা ক্রমাগত বাড়ছে। সরকারী বেসরকারী মিলে বর্তমানে দেশে বিশ্ববিদ্যালয়ের সংখ্যা ১৪৮। এছাড়াও তিনটি আন্তর্জাতিক বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে। ‘বাংলাদেশের জন্য অন্যতম বড় চ্যালেঞ্জ হচ্ছে শিক্ষার গুণগতমান নিশ্চিত করা। কারণ গুণগত শিক্ষা ছাড়া শিক্ষা মূল্যহীন। তাই উচ্চশিক্ষা যাতে কোনক্রমেই সার্টিফিকেটসর্বস্ব না হয় তা নিশ্চিত করতে হবে।’ সমাবর্তনে শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে রাষ্ট্রপতি বলেন, ‘শুধু পাঠ্যপুস্তক অধ্যয়নে সীমাবদ্ধ থাকলেই চলবে না। পাঠ্যবিষয়ের সঙ্গে সঙ্গে বহির্জগতের জ্ঞানভাণ্ডার হতে জ্ঞান আহরণ করতে হবে। নিজেকে কর্মী ও জ্ঞানী করে তোলাই হবে তোমাদের মূল লক্ষ্য। তোমাদের উচিত ত্যাগ ও সত্যের অভিমুখী হওয়া। সেই সঙ্গে হতে হবে সুস্থ ও সবল মনের অধিকারী। উচ্চ চিন্তা ও সহজ জীবনাচরণ তোমাদের প্রকৃত মানুষ হিসেবে গড়ে তুলবে।’ শিক্ষক ও অভিভাবকদের উদ্দেশে রাষ্ট্রপতি বলেন, ‘আপনারা উন্নত জাতি তৈরির মহান কারিগর। আপনাদের হতে হবে নৈতিকভাবে বলিষ্ঠ চরিত্রের অধিকারী। আপনাদের হতে হবে নিরপেক্ষ, অকুতোভয়, সত্যবাদী।’ ‘অভিভাবকবৃন্দের প্রতি অনুরোধ, আপনারা আপনাদের সন্তানদের প্রতি যতœশীল হোন। এই সন্তানরাই আমাদের ভবিষ্যত। সব সময় মনে রাখবেন, অনেক ত্যাগ-তিতিক্ষার বিনিময়ে প্রায় অর্ধশতাব্দী আগে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে স্বাধীনতাকামী জনগণ প্রাণের বাজি রেখে একটি রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের মাধ্যমে দেশকে স্বাধীন করেছে। ত্যাগের এই অগ্নিশিখা নিজেদের মাঝে প্রজ্জ্বলিত রাখতে হবে। আমাদের রয়েছে গর্ব করার মতো ইতিহাস ও ঐতিহ্য। এই গর্বের গাথা সবার মাঝে ছড়িয়ে দেয়া আমাদের সবার দায়িত্ব ও কর্তব্য।’ অনুষ্ঠানে সমাবর্তন বক্তা ছিলেন জাতিসংঘের সাবেক মহাসচিব বান কি মুন। অন্যদের মধ্যে আরও বক্তব্য রাখেন, শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি, পররাষ্ট্রমন্ত্রী একে আব্দুল মোমেন, ব্র্যাক ইউনিভার্সিটির ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারপার্সন তামারা হোসেন আবেদ, ব্র্যাক ইউনিভার্সিটির উপাচার্য ভিনসেন্ট চ্যাং।
×