ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

রঙিন পাখার সানবার্ড

লম্বা সুচালো ঠোঁটের ছোট্ট পাখি, মিষ্টি গান

প্রকাশিত: ১১:২০, ২৪ নভেম্বর ২০১৯

লম্বা সুচালো ঠোঁটের ছোট্ট পাখি, মিষ্টি গান

মোরসালিন মিজান ॥ শীত পুরোপুরি শুরু হয়নি। তার আগেই আসতে শুরু করেছে অতিথি পাখি। আরও বেশি শীতের দেশ ছেড়ে বাংলাদেশে আসছে ওরা। সুনামগঞ্জের টাঙ্গুয়ার হাওড়ে কিংবা ঢাকার পার্শ্ববর্তী জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে দেখা যাচ্ছে অতিথি পাখিদের। অবশ্য পাখি বিশেষজ্ঞরা অতিথি বলতে নারাজ। বলছেন, পরিযায়ী পাখি। এই পাখিদের পেয়ে স্থানীয় পাখিরাও যেন ভীষণ আনন্দে মেতেছে। গান ধরেছে ঠোঁটে। তেমন একটি পাখির কথা আজ হোক, নাম সানবার্ড। তারও বেশি পরিচিত মৌটুসি নামে। কয়েক বছর আগে পাখিটির দেখা মিলেছিল সুনামগঞ্জের একটি গ্রামে। প্রথম দেখার সে স্মৃতি এখনও চোখে লেগে আছে। ছোট্ট পাখি। এইটুকুন শরীর। কিন্তু ভীষণ রঙিন পাখা। অনেকগুলো জাত পাত। অন্যতম একটি পার্পেল-রাম্পড সানবার্ড বা বেগুনিকোমর মৌটুসি। দেশের বিভিন্ন এলাকায় দেখা যায়। এমনকি রাজধানী শহর ঢাকায় এরা দিব্যি আছে। একটু শুধু খেয়াল করলেই চোখে পড়বে। পাখি বিশেষজ্ঞ ইনাম আল হকের গবেষণা বলে, বেগুনিকোমর মৌটুসি দৈর্ঘ্যে মাত্র ১০ সেন্টিমিটার পর্যন্ত হয়ে থাকে। ডানা ৫.২ সেন্টিমিটার। লেজ ৩.৩ সেন্টিমিটার পর্যন্ত লম্বা হয়। পাখিটি ওজনেও খুব কম। ৯ গ্রামের মতো। তবে মজার ব্যাপার হলো, পাখি যত ছোট দেখতে, ততই লম্বা ঠোঁট! মাপলে সেটি ১.৭ সেন্টিমিটার পর্যন্ত হতে পারে। অত্যন্ত সরু ঠোঁটের অগ্রভাগ নিচের দিকে সামান্য ঝুঁকে থাকে। সুবিধাটি কাজে লাগিয়ে ফুল থেকে খুব সহজেই মধু সংগ্রহ করতে পারে এরা। এইটুকুন পাখিকে প্রকৃতি যেন রং তুলিতে নিখুঁত এঁকে নিয়েছে! আগেই বলা হয়েছে, সানবার্ড সুন্দর গান গায়। গান গাইতে গাইতেই চলে মধু আহরণ। ফুলে ফুলে ঘুরে বেড়িয়ে মধু সংগ্রহ করার সময় পাখিটিকে অনেকে দেখে থাকবেন। মৌটুসির গোলাকার চোখ। মাঝখানটা আবার বাদামি। এ অংশকে বৃত্তাকারে ঘিরে রাখে লাল রঙের আউট লাইন। পায়ের রং কালো। ১.৫ সেন্টিমিটার পর্যন্ত হয়। বেগুনিকোমর মৌটুসি নাম শুনে মেয়ে পাখি বলেই মনে হয়। আদতে এই নামে আছে ছেলে পাখিও। উভয়ের রং রূপ আলাদা। মেয়ে পাখিগুলো মেয়েদের মতোই সুশ্রী। আদুরে। ছেলে পাখি যে কম সুন্দর, তা নয়। বরং মেয়ে পাখিদের মাথা ঘুরিয়ে দেয়ার মতো আকর্ষণীয়! নামের সঙ্গে হুবহু মিলে যায় কোমরের রং। হ্যাঁ, বেগুনি কোমর। গলাও বেগুনি। ডানা ও লেজের ওপরের আচ্ছাদন কালচে বাদামি। মাথার চাঁদি ও কাঁধের পট্টি ধাতব সবুজ। মাথার পাশে আবার মেরুন রং। পাখির বুক ও পেটের অংশটি বিশেষ চোখে পড়ে। কাঁচা হলুদ বেটে কেউ যেন মাখিয়ে দিয়েছে সেখানে! ডানা মেলে ওড়ার সময় এ অংশটি চমৎকারভাবে দৃশ্যমান হয়। পাখির দেহের পেছনের অংশ, কাঁধ-ঢাকনি গাঢ় তামাটে ও মেরুন রঙে সাজানো। এভাবে নানা রঙে প্রকাশিত হয় বেগুনিকোমর মৌটুসি। রাজধানী শহর ছাড়াও চট্টগ্রাম খুলনা ও সিলেট বিভাগের বিভিন্ন গ্রামে পাখিটি দেখা যায়। চোখ খোলা রাখুন। দেখুন। সানবার্ড সত্যি দেখার মতো আদুরে একটা পাখি।
×