ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

হিযবুত তাহরীরের চট্টগ্রাম আঞ্চলিক প্রধানসহ আটক ১৫

প্রকাশিত: ১১:১৪, ২৪ নভেম্বর ২০১৯

হিযবুত তাহরীরের চট্টগ্রাম আঞ্চলিক প্রধানসহ আটক ১৫

মাকসুদ আহমদ, চট্টগ্রাম অফিস ॥ আবাসিক এলাকায় আবারও জঙ্গী সংগঠনের সদস্যরা ভাড়াটিয়া হিসেবে অবস্থান নিচ্ছে এমন তথ্যের প্রমাণ মিলেছে শুক্রবার গভীর রাতে চট্টগ্রামের চাঁন্দগাও আবাসিক এলাকায়। সিএমপির পাঁচটি টিম গোপন তথ্যের ভিত্তিতে একযোগে অভিযান চালিয়ে হিযবুত তাহরীর চট্টগ্রামের আঞ্চলিক প্রধান ক্যান্টনমেন্ট ইংলিশ স্কুলের বাংলা বিভাগের শিক্ষকসহ ১৫ জনকে আটক করে। তাদের কাছ থেকে হিযবুত তাহরীর প্রচারপত্র, ট্রেনিং ম্যানুয়েলের ইলেক্ট্রনিক ডিভাইস ও প্রায় তিন লাখ টাকা উদ্ধার করেছে পুলিশ। শনিবার সকালে সিএমপির সভাকক্ষে অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (অপরাধ) আমেনা বেগম সংবাদকর্মীদের এসব তথ্য দিয়েছেন। অভিযোগ রয়েছে, হিযবুত তাহরীর বাংলাদেশ এখনও তৎপর রয়েছে তাদের কর্মকা-ে। অথচ, সংগঠনটিকে ২০০৯ সালের ২২ অক্টোবর নিষিদ্ধ করা হয়েছিল জঙ্গী কর্মকা-ের কারণে। বিভিন্ন প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়াকে হুমকিস্বরূপ চিঠি প্রেরণ ছাড়াও আইনৃঙ্খলা বাহিনীর চৌকস কর্মকর্তাদেরও প্রাণনাশের হুমকি দিয়ে হিযবুত তাহরীর সদস্যরা আতঙ্কে রেখেছিল। ঢাকার পুরানা পল্টনের ৫৫/এ হোল্ডিংয়ে থাকা এসএম সিদ্দিক ম্যানশনে এদের একটি অফিস খোলা হয়েছিল তখন। এছাড়াও ২৭ পুরানা পল্টন লেনের পল্টন টাওয়ারের তৃতীয় তলায় ২০১/সি নম্বর কক্ষেও এ সংগঠনের আরেকটি অফিস বিদ্যমান ছিল। তবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পক্ষ থেকে বিভিন্ন ধরনের অভিযান পরিচালিত হওয়ার পর বিলুপ্ত হয়ে যায় এদের অফিসকক্ষ। কিন্তু দেশব্যাপী ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রয়েছে এদের সদস্যরা। সে সঙ্গে তাদের অবস্থানের বিষয়টি নিশ্চিত করলেও ঠিকানা নিশ্চিত করছে না। এদেশে ইসলামের নামে কোন ধরনের রাজনীতি না করার জন্য ২০০৩ সালের ফেব্রুয়ারি থেকে ২০১৫ সালের মে পর্যন্ত সরকারের পক্ষ থেকে ৬টি সংগঠনকে নিষিদ্ধ করা হয়েছে। এসব সংগঠনের সদস্যরাই দেখা গেছে ইসলামের ব্যানারে প্রচার করতে গিয়ে দেশের সাধারণ মানুষকে ব্রেন ওয়াশ করে তাদের পথে ধাবিত করার অপতৎপরতায় লিপ্ত। ফলে সরকারের পক্ষ থেকে ৬টি সংগঠনকে জঙ্গী সংগঠন হিসেবে তথ্য-প্রমাণের ভিত্তিতে নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। কারণ, এরা দেশ ও জাতির শত্রু, স্বাধীনতাবিরোধী এবং ইসলামকে বিকৃত করে ধর্মের নামে অপপ্রচারে লিপ্ত। এদিকে অভিযোগ উঠেছে, সরকারের পক্ষ থেকে জঙ্গী সংগঠনগুলোকে নিষিদ্ধ করার মধ্য দিয়ে শেষ হচ্ছে সরকারী সংস্থাগুলোর দায়িত্ব ও কর্তব্য। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী বিশেষ করে পুলিশ ও র‌্যাবের দুর্বল রিপোর্টের কারণে জঙ্গীরা যেমন জামিন পাচ্ছে, তেমনি জঙ্গীদের জামিন পাইয়ে দিতে কাজ করছে ওই ঘরানার একশ্রেণীর আইনজীবী। সরকারের পক্ষ থেকে আইনজীবীদের ওপর কোন ধরনের নির্দেশনা না থাকায় সরকারবিরোধী ও জাতিবিরোধী এসব জঙ্গী পুনরায় সুযোগ পেয়ে যাচ্ছে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টিসহ প্রাণহানি ঘটানোর কর্মকা-ে। প্রেস ব্রিফিংয়ে জানানো হয়েছে, চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের দক্ষিণ জোনের পক্ষ থেকে নগরীর বিভিন্ন আবাসিক এলাকা ও আন্দরকিল্লা জামে মসজিদে অভিযান চালিয়ে নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গী সংগঠন হিজবুত তাহরীর ১৫ জনকে আটক করা হয় শুক্রবার রাতে। এদের মধ্যে রয়েছে চট্টগ্রাম ক্যান্টনমেন্টের সীমানায় থাকা ক্যান্টনমেন্ট ইংলিশ স্কুলের বাংলা বিভাগের শিক্ষক আবুল মোহাম্মদ এরশাদুল আলম। তিনি তার ব্যক্তিগত কোচিং সেন্টারে শিক্ষার্থীদের হিযবুত তাহরীর সঙ্গে জড়াতে বিভিন্নভাবে প্রভাব খাটিয়েছেন বলে আটককৃতদের কয়েকজন জানিয়েছে। স্কুল শিক্ষক ছাড়াও ১৪ জনকে আটক করা হয়। এরা হলো- আজিম উদ্দিন, আব্দুল্লাহ আল মাহফুজ, ইমতিয়াজ ইসমাইল, ওয়ালিদ ইবনে নাজিম, নাসিরউদ্দিন, লোকমান গণি, ফারহান বিন ফরিদ, মোহাম্মদ সম্্রাট, কামরুল হাসান, আরিফুল ইসলাম, আব্দুল্লাহ আল মুমিন, মোহাম্মদ করিম, আজিমুল হুদা ও নাজমুল হুদা। আটককৃতদের ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদে এই জঙ্গী সংগঠনের সঙ্গে জড়িত থাকার প্রমাণ মিলেছে। তাদের বিরুদ্ধে পুলিশ বাদী হয়ে মামলা দায়ের করেছে।
×