ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

যুবলীগের নতুন চেয়ারম্যান পরশ,সাধারণ সম্পাদক নিখিল

প্রকাশিত: ১১:১২, ২৪ নভেম্বর ২০১৯

যুবলীগের নতুন চেয়ারম্যান পরশ,সাধারণ সম্পাদক নিখিল

বিশেষ প্রতিনিধি ॥ দেশের সর্ববৃহৎ যুব সংগঠন আওয়ামী যুবলীগের নতুন কমিটি গঠনেও চমক। যার হাত ধরে গড়ে উঠেছিল যুবলীগ, বর্তমানে চরম ভাবমূর্তি সঙ্কট থেকে উত্তরণে সেই শহীদ শেখ ফজলুল হক মনির বড় ছেলেকেই চেয়ারম্যান হিসেবে বেছে নিলেন সংগঠনটির নেতাকর্মীরা। শনিবার অনুষ্ঠিত যুবলীগের সপ্তম জাতীয় কংগ্রেসের দ্বিতীয় অধিবেশনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় অধ্যাপক শেখ ফজলে শামস পরশ চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন। তার রানিংমেট অর্থাৎ সাধারণ সম্পাদক হিসেবে চমক দিয়েই যুবলীগ ঢাকা মহানগর উত্তরের সভাপতি মাইনুল হোসেন খান নিখিলকে বেছে নেয়া হয়েছে। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ভাগ্নে শেখ ফজলুল হক মনির বড় ছেলে ৫১ বছর বয়সী শেখ ফজলে শামস পরশ এতদিন রাজনীতি থেকে নিজেকে দূরেই সরিয়ে রেখেছিলেন। শিক্ষকতা নিয়েই ব্যস্ত ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজী সাহিত্যের এই সাবেক ছাত্র। তার ছোট ভাই ব্যারিস্টার ফজলে নূর তাপস অনেক বছর আগেই রাজনীতিতে এসে সংসদ সদস্য হয়েছেন, আওয়ামী লীগ সমর্থক আইনজীবী সংগঠনেরও বড় পদে দায়িত্বে রয়েছেন। আগামী তিন বছরের জন্য যুবলীগের চেয়ারম্যান হিসেবে সংগঠনটির ভাবমূর্তি পুনরুদ্ধারের বড় চ্যালেঞ্জ নিয়েই রাজনীতিতে নতুন যাত্রা শুরু করলেন বঙ্গবন্ধুর দৌহিত্র শেখ পরশ। যুবলীগের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হওয়ার পর তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় শেখ ফজলে শামস পরশ বলেন, বাংলাদেশের সাধারণ মানুষ বঙ্গবন্ধু কন্যার ওপর আস্থাশীল। তারা দেখেছেন, প্রধানমন্ত্রী কীভাবে গত দশ বছরে দেশকে আর্থ-সামাজিকভাবে দাঁড় করিয়েছেন। আমাদের দায়িত্ব হচ্ছে, আমরা যেন কর্মের মাধ্যমে বিশ্বাস ও আস্থার এই বন্ধনকে আরও সুদৃঢ় করতে পারি। আমাদের এখন থেকে একটাই পরিচয়, আমরা সবাই বঙ্গবন্ধুর কন্যার সাধারণ কর্মী। তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যার ফলে তার দ্বিতীয় বিপ্লব কর্মসূচী সম্পন্ন হয়নি। বর্তমানে তার কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স কর্মসূচীকে দ্বিতীয় বিপ্লবের একটি কর্মসূচী হিসেবে নিয়েছেন। যুবলীগের সব কর্মীকে নিয়ে এই কর্মসূচীকে সফল করার জন্য কাজ করব। যুব সমাজকে নোংরা রাজনীতির ম-ল থেকে বের করে এনে ‘জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু’র পতাকাতলে নিয়ে এসে দেশের উন্নয়নে কাজ করার প্রত্যয়ও ব্যক্ত করেন তিনি। ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের পর বিকেল ৩টায় রমনার ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনে বসে যুবলীগের দ্বিতীয় কাউন্সিল অধিবেশন, যাতে উপস্থিত ছিলেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। কাউন্সিলের নেতৃত্ব নির্বাচনের অধিবেশনে কংগ্রেস প্রস্তুতি কমিটির চেয়ারম্যান চয়ন ইসলাম পরবর্তী চেয়ারম্যান হিসেবে শেখ পরশের নাম প্রস্তাব করেন। তখন বিদায়ী সাধারণ সম্পাদক হারুনুর রশিদ তা সমর্থন করেন। আর কোন নামের প্রস্তাব না ওঠায় পরশের বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় চেয়ারম্যান নির্বাচিত হওয়ার ঘোষণা দেন আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। সাধারণ সম্পাদক পদের জন্য সাতজনের নাম প্রস্তাব করা হয়। ওই ছয়জন হলেন- মহিউদ্দিন আহমেদ মহি, এ্যাডভোকেট বেলাল হোসাইন মনজুর আলম শাহীন, সুব্রত পাল, বদিউল আলম বদি, ইকবাল মাহমুদ বাবলু ও মাইনুল হোসেন খান নিখিল। পরে নিজেদের মধ্যে সমঝোতা করে সাধারণ সম্পাদকের নাম চূড়ান্ত করার জন্য ২০ মিনিট সময় দেয়া হয়। তবে সমঝোতা না হওয়ায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে যোগাযোগ করে তার মতামত অনুসারে নিখিলকে সাধারণ সম্পাদক হিসেবে ঘোষণা করেন ওবায়দুল কাদের। নতুন নেতৃত্ব ঘোষণার সময় উপস্থিত ছিলেন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবউল আলম হানিফ, জাহাঙ্গীর কবির নানক, আবদুর রহমান, সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ হোসেন বিএম মোজাম্মেল হক, আফম বাহাউদ্দিন নাছিম, দফতর সম্পাদক ড. আব্দুস সোবহান গোলাপ, উপ-দফতর সম্পাদক ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া প্রমুখ। যুবলীগ চরম ভাবমূর্তি সঙ্কটে পড়ার পর প্রথমে যুবলীগের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান হিসেবে প্রথমে শেখ ফজলে নূর তাপস এমপির নাম বিভিন্ন যোগাযোগ মাধ্যমে চাউর হয়। অবশ্য পরে তা সত্য হয়নি। তবে সম্মেলন প্রস্তুতির জন্য যুবলীগের যে কমিটি হয়েছিল, তাতে শেখ ফজলে শামস পরশের যুক্ত হওয়া আলোচনার কেন্দ্রে নিয়ে আসে তাকে। এছাড়া শুক্রবার ওবায়দুল কাদের যখন সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সম্মেলনের মঞ্চ দেখতে এসেছিলেন, তখন তার সঙ্গে শেখ পরশও ছিলেন। এরপর সম্মেলনের অভ্যর্থনা উপকমিটির বৈঠকে যোগ দিতে বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ের কার্যালয়ে গেলে কর্মীরা করতালি দিয়ে ‘পরবর্তী চেয়ারম্যান’ হিসেবে তাকে শুভেচ্ছাও জানান। আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারক পর্যায়ের একাধিক নেতার সঙ্গে কথা বলে আভাস পাওয়া গেছে, এতদিন ধরে রাজনীতিবিমুখ শেখ ফজলে শামস পরশ তার ফুপু প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশেই রাজনীতিতে নামতে রাজি হন। সৎ ও মেধাবী নেতৃত্ব তুলে আনার অংশ হিসেবেই শেখ পরশের মতো একজনকে রাজনীতিতে এনে নতুন চমক দেন বঙ্গবন্ধুর কন্যা শেখ হাসিনা। শেখ পরশ যুবলীগের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান শেখ ফজলুল হক মনির বড় ছেলে। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যার কালরাতে শেখ পরশের বাবা-মাও শহীদ হন। ওই সময় তিনি ও তার ছোট ভাই ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস এমপি ভাগ্যক্রমে বেঁচে যান। ওই সময় পরশের বয়স ছিল ছয় বছর এবং তাপসের বয়স ছিল মাত্র চার বছর। পঁচাত্তর ট্র্যাজেডিতে বাবা-মাকে হারানো শেখ পরশ-তাপসের বেড়ে ওঠা চাচাদের সঙ্গে। তার চাচা আওয়ামী লীগের সভাপতিম-লীর সদস্য শেখ ফজলুল করিম সেলিমও যুবলীগের চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করেছেন। যুবলীগের নতুন চেয়ারম্যান শেখ পরশ ধানম-ি সরকারী বালক বিদ্যালয় থেকে মাধ্যমিক, ঢাকা কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরেজী সাহিত্যে ¯œাতকোত্তর ডিগ্রী নেন। যুক্তরাষ্ট্রের কলোরাডো বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ডিগ্রী নেয়ার পর দেশে ফিরে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতার সঙ্গে জড়িত ছিলেন শেখ পরশ। অন্যদিকে যুবলীগের নতুন সাধারণ সম্পাদক মাইনুল হোসেন খান নিখিল ঢাকা মহানগর উত্তর যুবলীগের সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন। তৃণমূল থেকে উঠে আসা এ যুবনেতা বৃহত্তর লালবাগ থানা ছাত্রলীগের সক্রিয় সদস্য হিসেবে রাজনীতিতে জড়ান। পরে মিরপুরে ওয়ার্ড যুবলীগের যুগ্ম আহ্বায়ক থেকে মহানগর ও কেন্দ্রীয় পর্যায়ে নেতৃত্ব দেন। উল্লেখ্য, স্বাধীনতার পর ১৯৭২ সালের ১১ নবেম্বর যুবকদের সংগঠিত করার লক্ষ্য নিয়ে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান গড়ে তুলেছিলেন ‘বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগ’। ওই সময় তিনি সংগঠনটির দায়িত্ব দেন নিজের ভাগ্নে মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক শেখ ফজলুল হক মনিকে। যিনি যুবলীগের নতুন চেয়ারম্যান শেখ পরশের পিতা।
×