ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

মোস্তাফা জব্বার

জগৎজ্যোতি দাস ॥ ইতিহাসের বীরশ্রেষ্ঠ

প্রকাশিত: ০৯:৩৩, ২৪ নভেম্বর ২০১৯

জগৎজ্যোতি দাস ॥ ইতিহাসের বীরশ্রেষ্ঠ

॥ দুই ॥ বীর মুক্তিযোদ্ধা শহীদ জগৎজ্যোতির লড়াইয়ের প্রেক্ষিতটা একটু বর্ণনা করা দরকার। জগৎজ্যোতি বাংলাদেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের হাওড়ের সন্তান। হবিগঞ্জ জেলার আজমিরীগঞ্জ থানার জলসুখা গ্রামে তার পিতভূমি। আমি জগৎজ্যোতির গ্রামের বাড়ির পাশে বিরাট গ্রামের এ বি সি হাইস্কুলে পড়েছি, যেখানে তিনিও পড়েছেন। বাংলাদেশের অন্য অঞ্চলে যেভাবে মুক্তিযুদ্ধ হয়েছে হাওড় অঞ্চলে যুদ্ধটা সেভাবে হয়নি। বিশেষ করে শাল্লা থানায় যুদ্ধটা ভিন্ন চিত্রের ছিল। একাত্তর সালের ২৬ মার্চ বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণার পরও হাওড়ে পানি আসার আগে সেখানে পাকিস্তানের পক্ষের কোন মানুষ কোথাও নজরে আসেনি। একটি মুক্ত স্বাধীন অঞ্চল হিসেবে খালিয়াজুরি-শাল্লাসহ হাওড়ের থানাগুলো মুক্তাঞ্চল হিসেবে স্বাধীন বাংলার পতাকা উঁচিয়ে রেখেছিল। আমার থানা খালিয়াজুরি পুরো নয় মাসই মুক্তাঞ্চল ছিল। পাকবাহিনী দূরে থাক তাদের দেশীয় দোসররাও কোথাও দৃশ্যমান ছিল না। ৭০ সালের নির্বাচনের সময় আমরা আমাদের থানাটিকে যেমনভাবে মুক্তিযুদ্ধের অনুকূলে নিতে পেরেছিলাম সেটি পুরো মুক্তিযুদ্ধ চলাকালেও ছিল। থানা সদরে পুলিশ থাকলেও বস্তুত বেসরকারীভাবে প্রশাসন চালাতাম আমরা। কিন্তু পাশের থানা শাল্লা ছিল রাজাকারদের দখলে। হাওড়ে পানি আসার সঙ্গে সঙ্গেই হাওড়ের গ্রামগুলো জ্বলতে থাকে। বাহারা ইউনিয়নের এককালীন চেয়ারম্যান সরাফত আলী এবং শ্যামারচর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আব্দুল খালেকের নেতৃত্বে সেই এলাকার মানুষের মধ্য থেকে বাছাই করে ১৬০ জনের একটি রাজাকার বাহিনী সুনামগঞ্জ থেকে সশস্ত্র প্রশিক্ষণ নিয়ে সশস্ত্র হয়ে শাল্লা থানার হিন্দু গ্রামগুলো পোড়ানো শুরু করে। পুরো হাওড় এলাকায় এত বিশাল আকারের রাজাকার বাহিনী আর কোথাও ছিল না। তাদের বিরুদ্ধে প্রাথমিক প্রতিরোধ করার ক্ষমতাও মুক্তিযোদ্ধাদের ছিল না। বস্তুত অনেকটা সময় লেগে যায় মুক্তিযোদ্ধাদের সংগঠিত হতে। ২৬ মার্চের পরই জগৎজ্যোতিদের মতো অনেক তরুণ টেকেরহাটে পৌঁছে মুক্তিযুদ্ধের প্রশিক্ষণ নিয়ে প্রায় একই সময়ে শাল্লা এলাকায় আসে। টেকেরহাটে সুরঞ্জিত সেন ছিলেন। শাল্লা থানাটির দেখাশোনা করতেন প্রয়াত বীর মুক্তিযোদ্ধা সালেহ চৌধুরী। আমার গ্রামের আবুল কাশেম মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিতে টেকেরহাট চলে যান। জগৎজ্যোতির বিশাল বাহিনীর অন্যতম যোদ্ধা হিসেবে কাশেমও যোগ দেন। আমি আরও পরে যুদ্ধে যোগ দিই। তবুও রাজাকারদের প্রচ- দাপট শাল্লার হিন্দু গ্রামগুলোর অস্তিত্ব বিপন্ন করে তোলে। বাংলাদেশের হাওড় অঞ্চল সম্পর্কে খুব স্পষ্ট ধারণা যাদের নেই তারা সেই এলাকার রাজনীতিটাও বুঝতে পারবেন না। এই এলাকাটি সারা বাংলার চাইতে ভৌগোলিক দিক থেকে যেমন আলাদা তেমনি এর বাসিন্দাদের অনুপাতটাও ভিন্ন। সত্তর সালের দিকে পুরো হাওড় এলাকায় জনসংখ্যার অর্ধেক ছিল মুসলমান ও বাকিটা হিন্দু। শত শত বছর ধরে এই দুই সম্প্রদায়ের মানুষ সম্প্রীতির সঙ্গে বসবাস করে আসছে এই এলাকায়। এলাকাটি বাম রাজনীতিরও কেন্দ্র ছিল। মুসলিম লীগ বা পাকিস্তান ঘরানার কোন দলের বাস্তব অস্তিত্ব এই এলাকাটিতে ছিল না। আমার বাড়ি খালিয়াজুরিতে এখনও একটি ইউনিয়ন আছে যার সকল মানুষই হিন্দু। ন্যাপ ও কমিউনিস্ট পার্টির প্রভাব ছিল সেই এলাকাতে। আমার থানায়ও আওয়ামী লীগ তেমন প্রবল শক্তিশালী ছিল না। থানা সদরে একজন মানুষ নৌকার পক্ষে কাজ করতেন। শিক্ষায় পিছিয়ে বলে ছাত্র সংগঠনও তেমন ছিল না। আমি ও জগৎজ্যোতি যে স্কুলের ছাত্র ছিলাম তাতে শতকরা ৭০ জন ছাত্র ছিল হিন্দু। মুসলমানরা তাদের সন্তানদের পড়াত না। ৭০ সালে আমার এলাকায় কুঁড়েঘরের প্রার্থী ছিল। পাশের থানা শাল্লা-দিরাইতে সুরঞ্জিত বাবু জিতে এসেছিলেন। এটি একাত্তর সালে যেমনি সুবিধার বিষয় ছিল তেমনি অসুবিধারও ছিল। সুবিধাটি হলো আমরা শতভাগ মানুষের সমর্থন নিয়ে মুক্তিযুদ্ধ করেছি। অসুবিধা ছিল ঐ এলাকার হিন্দু জনগোষ্ঠীই পাকিস্তানীদের আক্রমণের মূল লক্ষ্য ছিল। আমরা মুক্তিযোদ্ধারা একদিকে সমগ্র জনগোষ্ঠীর আদরে থাকতাম, অন্যদিকে আমাদের বড় চ্যালেঞ্জ ছিল হিন্দু জনগোষ্ঠীকে রক্ষা করা, তাদের সম্পদ রক্ষা করা। আমরা প্রায় পুরো হাওড় এলাকাটিকে রক্ষা করতে পারলেও শাল্লা থানাটিকে রক্ষা করতে পারিনি। এর প্রধানতম কারণ ছিল সরাফত-খালেকের রাজাকার বাহিনী। হাওড় এলাকার আর কোন থানায় এত বড় ক্ষতি হয়নি। এত মানুষের ঘর-সম্পদ আর কোথাও পোড়ানো হয়নি। তবে প্রাণহানির বড় ঘটনা ঘটেনি এজন্য যে, হিন্দু গ্রামবাসীরা তাদের গ্রাম ছেড়ে পালিয়ে গিয়েছিল। বীর মুক্তিযোদ্ধা জগৎজ্যোতি দাস ছাত্র ইউনিয়ন করতেন। টেকেরহাট হাওড়ের ছাত্র ইউনিয়ন কর্মীদের মুক্তিযোদ্ধাদের প্রশিক্ষণ কেন্দ্র হয়। অন্যদিকে আমরা যারা ছাত্রলীগ করতাম তারা নেত্রকোনার মহেশখলায় জমায়েত হই। জগৎজ্যোতিকে নিয়ে লেখাটির পরের অংশ শুরু হয়েছে এভাবে, ‘নিষ্ঠুরের মতো ইলিয়াসের ঘোর ভাঙ্গেন হাসান মুর্শেদ। প্রশ্ন করেন, তারপর কি হলো ইলিয়াস ভাই?’ ইলিয়াস বলেন, সেই অসম্ভব যন্ত্রণার গল্প। প্রিয় কমান্ডারের নিথর শরীর বিলের কাদাপানির ভেতর যতটা সম্ভব পুঁতে ফেলতে হয়, যেন শত্রুর হাতে এই বীরের কোন অবমাননা না হয়। নিজের এসএমজিটার সঙ্গে তুলে নেন দলনেতার এলএমজিটাও। বুকে বাঁধা গামছা থেকে চুইয়ে পড়তে থাকা রক্ত উপেক্ষা করে গুলি ছুড়তে ছুড়তে পেছনে ফিরতে থাকেন ইলিয়াস। ইলিয়াসের চেষ্টাটুকু সফল হয় না। পরদিন সকালে লাশ কাদাপানির ভেতর থেকে ভেসে ওঠে। রাজাকার তেলাপোকাগুলো বেরিয়ে আসে তখন, টেনে-হিঁচড়ে লাশটা নিয়ে আসে তাদের ঘাঁটিতে। তারপর জগৎজ্যোতির মা-বাবাকে লাশের সামনে টেনে আনল ওরা। পাথরের মতো পাষাণ হয়ে মা বললেন, এই লাশ তার জ্যোতির না, জ্যোতির বাম হাতে একটা আঙ্গুল বেশি। কেন জ্যোতির মা সন্তানের লাশকে অগ্রাহ্য করেছিলেন? মা হয়ে কিভাবে এ সাহস করলেন তিনি? তিনি কি তখন তার স্বামী আর বেঁচে থাকা অপর সন্তানের জীবন বাঁচানোর কথা ভাবছিলেন? জানা যাবে না তা আর কখনই। মারা গেছেন তিনি ক’বছর আগে। তাতে খুব বেশি লাভ হলো না। বাড়ি ফিরে যেতে যেতে জ্যোতির বাবা-মা দেখলেন, তাদের ভিটায় আগুন, জ্বলছে সব। ওদিকে নর্দমার ময়লায় লুকিয়ে থাকা রাজাকার তেলাপোকাগুলো জ্যোতির লাশটা নৌকার সামনে বেঁধে নিল, আজমিরীগঞ্জ থেকে জলসুখা পর্যন্ত ঘাটে ঘাটে উৎকট উৎসাহের সঙ্গে প্রদর্শন করল ‘গাদ্দার’-এর লাশ। পৈশাচিক উল্লাসে। তারপর আজমিরীগঞ্জ পৌঁছে বৈদ্যুতিক খুঁটির সঙ্গে বেয়নেটে ক্ষতবিক্ষত লাশটা বেঁধে রাখল তারা। সবাইকে দেখিয়ে দেখিয়ে জানাল, এই হচ্ছে সেই কুখ্যাত ভারতীয় দালাল, গাদ্দার ... হাসান মুর্শেদের দেয়া তথ্য থেকে আরও জানা যায় যে, ‘১৬ নবেম্বর জগৎজ্যোতির মৃত্যুদিন। প্রথম বীরশ্রেষ্ঠ হওয়ার কথা ছিল জগৎজ্যোতি দাসের, স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র থেকে জগৎজ্যোতির মৃত্যুর পর তাকে সর্বোচ্চ বীরত্বভূষণ দেবার কথা বলা হয়েছিল বারবার, কিন্তু অব্যাখ্যানীয় কোন কারণে তা আর হয়ে ওঠেনি, বীরশ্রেষ্ঠ তো দূরে থাক, ভাটি অঞ্চলের কিংবদন্তি জগৎজ্যোতিকে আজ প্রায় কেউই চেনে না।’ জগৎজ্যোতিকে যে এখন কেউ চেনেই না তার প্রমাণ হচ্ছে যে, তার মৃত্যুদিবসে কেউ একটু আহা উহুও করে না। রাজনৈতিক দলগুলো নিশ্চুপ। আমি কোন রাজনৈতিক দলের পক্ষ থেকে এই মহাবীরকে স্মরণ করতে শুনিনি। তিনি যে স্কুলে লেখাপড়া করেছেন, যে এলাকায় তার বাড়ি এবং যে এলাকায় তিনি যুদ্ধ করেছেন তাদের কেউ তাকে স্মরণে রাখার মতো কোন কর্মকা- করেন না। কদিন আগে আজমিরীগঞ্জ থেকে একটি পাঠাগারের চিঠি আমার কাছে আসে, যাতে পাঠাগারটির নাম জগৎজ্যোতি বলে উল্লেখ করা হয়। স্বাধীনতার এত সময় পরেও কেবলমাত্র বইয়ের পাতায় বা অনলাইনে একজন জাতীয় বীরের বিবরণ সীমিত থাকবে সেটি প্রত্যাশিত নয়। যে সময় দেশে স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি ক্ষমতায় আছে সেই মুহূর্তে আমরা এই প্রত্যাশাটি করতেই পারি যে, এই বীর তার প্রাপ্য সম্মান পাবে। আমি রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দসহ নীতিনির্ধারকদের সকলের কাছে আবেদন জানাই যেন এই বীর পুরুষটিকে আমাদের নতুন প্রজন্মের কাছে পরিচয় করিয়ে দেয়া হয়। নিজে হাওড় এলাকার মানুষ হিসেবে আমি এটিও চাই যে, এই এলাকার মানুষের কাছে জগৎজ্যোতি দাসের যুদ্ধ এবং তার বীরত্ব যেন তুলে ধরা হয়। তবে এই নিবন্ধের শেষ প্রান্তে একটি সান্ত¡নার কাহিনীর কথা আমি উল্লেখ করতে পারি। আমরা সবাই জানি ১৬ নবেম্বর জগৎজ্যোতি শহীদ হবার এক মাসের মাঝেই দেশটি স্বাধীন হয়। পাকিস্তানীরা আত্মসমর্পণ করে। ৯৩ হাজার পাকিস্তানী সৈন্য আত্মসমর্পণ করলেও তারা এমনকি তাদের দালালদের দিকে নজরও দেয়নি। শাল্লা থানায় যেসব রাজাকার অগ্নিসংযোগ, লুটপাট ও পাকিস্তান বাহিনীর পদলেহন করেছিল তারা পরাজয়ের পর আত্মগোপন করে। শাল্লার পাশের থানা বলে ১৬০ জনের সেই রাজাকার বাহিনী আমাদের থানা খালিয়াজুরিতে বিভিন্ন গ্রামে আশ্রয় নেয়। শাল্লার সদর দফতর ঘুঙ্গিয়ার গাঁওয়ে মুক্তিযোদ্ধারা ক্যাম্প স্থাপন করে। তাই ভয়ে ওরা সেই থানায় যাবার কথা ভাবেনি। কিন্তু যখন টের পেল যে, পাকিস্তানের পতন হয়েছে তখন আত্মসমর্পণের পথ খুঁজতে থাকে। আমি তখন আমার থানার মুক্তিযোদ্ধা ক্যাম্প লিপ্সায়। জানুয়ারি মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহে আমার গ্রামের বাড়ি কৃষ্ণপুর থেকে একজন লোক একটি টেলিগ্রাম ও আব্বার একটি নির্দেশ বহন করে আনেন। টেলিগ্রামটি ছিল আফতাব আহমদ নামক আমার এক বন্ধুর। সে লিখেছিল, কাম শার্প আফতাব। ঢাকা থেকে পাঠানো সেই টেলিগ্রামটি আমার ঢাকা ফেরার রাস্তা গড়ে তোলে। মুক্তিযুদ্ধের নয় মাস আমরা দুই বন্ধু বিচ্ছিন্ন ছিলাম। বাবার আদেশটি ছিল গ্রামের বাড়ি যাবার। বাবার আদেশ মানতে গিয়ে বাড়ি এসে জানতে পারি যে, শাল্লা থানার রাজাকাররা আমার কাছে আত্মসমর্পণ করতে চায়। আমার গ্রামের মুক্তিযোদ্ধা কাশেমকেও তারা আমার সঙ্গে দেখতে চায়। কাশেম যেহেতু শাল্লার মুক্তিযোদ্ধা ক্যাম্পে ছিল সেহেতু তাকেও খবর দিয়ে আনা হয়। কাশেমদের বাড়িতেই অস্ত্র সমর্পণ করার ব্যবস্থা করা হয়। কাশেমরা ওদের আত্মীয় ছিল। তাই তারা অনেক ভরসা করে তাদের বাড়িটাকেই নিরাপদ মনে করে। রাজাকাররা দল বেঁধে কাশেমদের বাড়িতে আমার হাতে অস্ত্র সমর্পণ করে। ওদের অনুরোধ ছিল আমি যেন তাদের লিপ্সা নিয়ে যাই। কিন্তু ওদের আত্মসমর্পণের পর আমি তাদের এবং অস্ত্রগুলো শাল্লা পাঠানোর ব্যবস্থা করি। আমি লিপ্সার মুক্তিযোদ্ধা ক্যাম্পে পাঠাতে চাইনি। এর দুটি কারণ ছিল। প্রথমত তারা শাল্লার রাজাকার, তাদের শাল্লাই পাঠানো সঠিক। দ্বিতীয়ত আমি ঢাকা আসব, লিপ্সা যাব না, তাই লিপ্সা নিয়ে যাওয়া আমার পক্ষে সম্ভব নয়। শাল্লায় তখন ক্যাম্পের দায়িত্ব সুকুমার নামক আমার এক বন্ধুর হাতে। রাজাকাররা শাল্লা পৌঁছালে মুক্তিযোদ্ধারা তাদের সঙ্গে স্বাভাবিক আচরণ করে। এরপর তাদের সভার নামে একসঙ্গে জড়ো করা হয়। সেই সভা থেকেই তাদের ভেরামোহনা নদীর পাড়ে নিয়ে গিয়ে লাইন ধরে দাঁড় করিয়ে ব্রাশফায়ার করা হয়। সেখানে থেকে কেউ কেউ পালিয়ে বাঁচে। তবে মূল নেতা দুই চেয়ারম্যানসহ তাদের স্বজন ও নেতারা সবাই মারা যায়। ঘুঙ্গিয়ারগাঁও ওরফে শাল্লা থানার হাজার হাজার মানুষ তাদের ঘরবাড়ি ও সম্পদ ফিরে পায়নি- কিন্তু মুক্তিযোদ্ধারা তাদের সেই সান্ত¡নার জায়গাটুকু প্রদান করতে সক্ষম হয় যে, অত্যাচারীর পতন কোন না কোনভাবে হয়ই। আমার জানা মতে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে যেমনি জগৎজ্যোতির মতো বীর আমরা খুব বেশি পাইনি, তেমনি রাজাকারদের তাদের কৃতকর্মের শাস্তিও তেমনভাবে দেয়া যায়নি। এই ঘটনার বহু বছর পর আমি সুকুমারের খোঁজ করেছিলাম। কিন্তু তার কোন খোঁজ আমি আর পাইনি। কাশেম মুক্তিযুদ্ধের পর ট্রাভেল এজেন্সিতে চাকরি করার পর টঙ্গীর একটি স্কুলে শিক্ষকতা করে এখন টঙ্গীতেই অবসর জীবনযাপন করে। আমি কাশেমের কাছে শাল্লার ঘটনার বিবরণ জানতে চেয়েও হতাশ হয়েছি। কোন বিষয়েই কাশেম কোন কথা বলে না। (সমাপ্ত) ঢাকা ॥ ২১ নবেম্বর ১৯ লেখক : তথ্যপ্রযুক্তিবিদ, কলামিস্ট, দেশের প্রথম ডিজিটাল নিউজ সার্ভিস আবাসের চেয়ারম্যান- সাংবাদিক, বিজয় কী-বোর্ড ও সফটওয়্যারের জনক
×