ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

সতর্কতা ও সক্ষমতা

প্রকাশিত: ০৮:৪৫, ২৩ নভেম্বর ২০১৯

সতর্কতা ও সক্ষমতা

বুধবার ঢাকার রাজধানী সুপার মার্কেটে অগ্নিকন্ডের ঘটনায় হতাহতের ঘটনা না ঘটলেও আর্থিক ক্ষতি হয়েছে বহু ব্যবসায়ী ও বিক্রেতার। রাজধানীর নানা মার্কেটে নানা সময়ে আগুন লাগার ঘটনা ঘটে এবং যথারীতি এ নিয়ে সচেতন মহল গুরুত্বপূর্ণ কথা বলে থাকেন। কিন্তু এ থেকে যে কেউ শিক্ষা নেয় সে শিক্ষা কাজে লাগিয়ে আগুন লাগার আশঙ্কা থেকে মুক্তিলাভ কিংবা আগুন লাগলে তা থেকে বাঁচার কিংবা ক্ষয়ক্ষতি ন্যূনতম পর্যায়ে নিয়ে আসার লক্ষ্যে কাজ করে- এমন প্রত্যয় জন্মে না। এবার মার্কেটের অগ্নিকান্ড সঙ্গত কারণেই নানা প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে। ফায়ার সার্ভিসের ২৫টি ইউনিট টানা দেড় ঘণ্টার চেষ্টায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে সক্ষম হয়। আগুনে অন্তত ৬৫টি দোকান ভস্মীভূত হয়েছে। ক্ষতি হয়েছে শতাধিক দোকানে। তাৎক্ষণিকভাবে ব্যবসায়ীরা ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ দশ কোটি বলে দাবি করেছেন। ক্ষতির পরিমাণ আরও বাড়বে বলে ব্যবসায়ীদের দাবি। আমরা বার বার বলছি, কোন কারণে আগুন লাগতে পারে- এমনটা ভেবে নিয়েই আধুনিক ভবনে অগ্নিপ্রতিরোধ বা অগ্নিনির্বাপক ব্যবস্থা গ্রহণ করাটাই নিয়ম। বৈদ্যুতিক শর্টসার্কিট এবং ধূমপানের কারণে সিগারেটের না নেভানো আগুন থেকে আগুন লাগা এবং তা ছড়িয়ে পড়ার ঘটনাই বেশি ঘটতে দেখা যায়। ফলে আগুন লেগে গেলে সে আগুন নেভানোর সক্ষমতা থাকা অবশ্যকর্তব্য। ফায়ার সার্ভিসের জরিপ প্রতিবেদনে দেখা যাচ্ছে ঢাকা মহানগরীর ৯৮ ভাগ হাসপাতাল ও ক্লিনিকই রয়েছে অগ্নিঝুঁকিতে। এসব হাসপাতাল বা ক্লিনিকে আগুন লাগলে ঝুঁকি মোকাবেলায় করণীয় সম্পর্কে সরকারী-বেসরকারী হাসপাতাল বা ক্লিনিক কর্তৃপক্ষেরই কোন প্রকার প্রশিক্ষণ নেই। বলাবাহুল্য, যে কোন প্রতিষ্ঠানের জন্য পূর্ব প্রস্তুতির কোন বিকল্প নেই। এটাও স্মরণে রাখা চাই, বহুতল ভবনের প্রতিটি ফ্লোরে আগুন নেভানোর পর্যাপ্ত উপকরণ ও সরঞ্জাম হাতের কাছে থাকলে প্রাথমিক ক্ষয়ক্ষতি অনেকটা হ্রাস করা সম্ভব। তাছাড়া যে কোন বহুতল ভবনেরই জরুরী নির্গমন পথ (ফায়ার এক্সিট ডোর) থাকা বাঞ্ছনীয়। একটি অগ্নিকা-ের ঘটনায় শত শত সচ্ছল পরিবার একদিনেই নিঃস্ব, সহায়-সম্বলহীন হয়ে যেতে পারে না। জরুরী ভিত্তিতে মার্কেটটির ক্ষতিগ্রস্ত অংশ পুনর্নির্মাণ এবং আগুনে নিঃস্ব হয়ে যাওয়া পরিবারগুলোর ব্যবসায় ও অর্থনৈতিক পুনর্বাসনের উদ্যোগ নিতে হবে। এ ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি রোধের পাশাপাশি ফায়ার সার্ভিসের সীমাবদ্ধতা ও সক্ষমতা সম্পর্কে বিচার-বিশ্লেষণ করে দুর্ঘটনা মোকাবেলায় আরও কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে। মাসাধিককাল আগে ফায়ার সার্ভিসের পক্ষে অগ্নিকা-ের শিকার রাজধানী মার্কেটে মহড়া দেয়া হয়েছিল। সে সময় মার্কেটের বৈদ্যুতিক তারসহ আরও কিছু দুর্বলতা পাওয়া যায়। এসব ত্রুটি সারাতে মার্কেট কর্তৃপক্ষকে একমাস সময়ও দেয়া হয়। মার্কেট কর্তৃপক্ষ দুই মাস সময় চেয়েছিল। যদিও তার আগেই অগ্নিকান্ডের ঘটনা ঘটল। মার্কেটের মতো বহুল জনসমাগম স্থলে আগুন লাগার ব্যাপারে প্রথমত সতর্কতা বাঞ্ছনীয়। যে যে কারণে আগুন লাগতে পারে সে কারণগুলো মার্কেট কর্তৃপক্ষকে খতিয়ে দেখতে হবে মাঝেমধ্যেই। সক্ষমতা অত্যন্ত জরুরী। প্রতিটি মার্কেটে যদি মোটামুটি পর্যায়ের অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা নাও থাকে, অন্তত তাৎক্ষণিকভাবে আগুন নিভিয়ে ফেলার সার্বিক ব্যবস্থা থাকা চাই। বিশেষ করে যে সব দোকান দাহ্য পদার্থে ভরপুর, সেসব দোকানে অভ্যন্তরীণভাবে আগুন নেভানোর ব্যবস্থা থাকাটাই সমীচীন। সতর্কতা ও সক্ষমতাই যোগাতে পারে আগুনের মতো ভয়াবহ বিপদ মোকাবেলা করার সাহস ও শক্তি।
×