ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

ইডেনে সৌহার্দ্যরে ঐতিহাসিক টেস্ট শুরু আজ

প্রকাশিত: ১১:৪৪, ২২ নভেম্বর ২০১৯

ইডেনে সৌহার্দ্যরে ঐতিহাসিক টেস্ট শুরু আজ

মিথুন আশরাফ কলকাতা থেকে ॥ বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যকার সম্পর্ক সবসময়ই খুব ভাল। সৌহার্দ্যপূর্ণ। বন্ধুত্বপরায়ণ। এই মিত্রতা আরও বেড়ে যাচ্ছে। আজ বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যকার সিরিজের দ্বিতীয় ও শেষ টেস্ট শুরু হবে। কলকাতার ইডেন গার্ডেন্সে ঐতিহাসিক টেস্টটি হবে। এই টেস্টকেও ছাপিয়ে যাচ্ছে যেন বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যকার সৌহার্দ্য। বন্ধুত্বের টেস্ট হিসেবে ইডেন টেস্ট গণ্য হচ্ছে। টেস্টে যে বাংলাদেশ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি উপস্থিত থাকবেন। খেলাও দেখবেন। সঙ্গে দুই দেশের বোর্ড সভাপতি ভারতের সৌরভ গাঙ্গুলী ও বাংলাদেশের নাজমুল হাসান পাপন তো থাকবেনই। দুই দেশের সাবেক টেস্ট অধিনায়করা এবং ২০০০ সালে ভারতের বিরুদ্ধে টেস্ট দিয়ে যে বাংলাদেশ ইতিহাসের প্রথম টেস্ট খেলে সেই ম্যাচের ক্রিকেটাররাও উপস্থিত থাকবেন। থাকবেন ক্রিকেট এ্যাসোসিয়েশন অব বেঙ্গলের (সিএবি) সব কর্মকর্তা। যাদের প্রচেষ্টাতেই আসলে সৌহার্দ্যরে ইডেন টেস্টের সকল আয়োজনের বীজ বোনা হয়েছে। থাকছেন মাশরাফি বিন মর্তুজাও। টেস্টে বাংলাদেশের যে কোন শুরুতেই যেন হাত বাড়িয়ে দেয় ভারত। বাংলাদেশ যখন নিজেদের ইতিহাসের প্রথম টেস্ট খেলে তখন ভারতের বিরুদ্ধেই খেলে। যখন ‘টেস্ট বিশ্বকাপে’র শুরুটা করে তখনও ভারতের বিরুদ্ধে টেস্ট দিয়েই শুরু করে। ইন্দোরে হয় টেস্টটি। এবার যখন দিবারাত্রির টেস্ট (দুপুর দেড়টায় শুরু) প্রথমবারের মতো খেলবে, সেটিও ভারতের বিরুদ্ধেই খেলবে। খেলা হবে গোলাপি বলে। উনিশ বছর আগে ২০০০ সালের ২৬ জুন দিনটি বাংলাদেশ ক্রিকেট ইতিহাসে অবিস্মরণীয় দিন। সেদিন ঘোষণা হয়, বাংলাদেশ দল টেস্ট মর্যাদা পেয়েছে। আইসিসির পূর্ণ সদস্য পদ পায় বাংলাদেশ। টেস্টে কুলিন জগতে নাম লেখায়। তবে পথ খুব সহজ ছিল না। যদি তখনকার সময়ে ক্রিকেটের নিয়ন্ত্রক সংস্থা আইসিসির সভাপতি জগমোহন ডালমিয়া না থাকতেন, তাহলে হয়তো বাংলাদেশের টেস্ট খেলার স্বাদ ২০০০ সালের ১০ নবেম্বর পূরণই হতো না। ডালমিয়া বাংলাদেশের ক্রিকেটের জন্য অপরিসীম ভূমিকা রেখেছেন। ২০০০ সালে আইসিসির সভাপতির পদ ছেড়ে ভারত ক্রিকেট বোর্ডের সভাপতি হওয়ার আগেই বাংলাদেশের টেস্ট মর্যাদা পাওয়ার জন্য সর্বোত্তম চেষ্টা করেন ডালমিয়া। শেষ পর্যন্ত বাংলাদেশ টেস্ট মর্যাদা পায়ও। ডালমিয়ার মতো একজন বন্ধুত্বপরায়ণ ভারতীয় ছিলেন বলেই তা সম্ভব হয়। আজ বাংলাদেশ প্রথমবার দিবারাত্রির টেস্টও খেলবে। এর আগে ১১৬টি টেস্ট খেলে। ১৩টি জিতে। ৮৭টিতে হারে। ১৬টি টেস্ট ড্র করে। টেস্টটি হচ্ছে আবার কলকাতাতেই। ডালমিয়ার জন্মভূমিতে। এই টেস্টের আগে ভারত ক্রিকেট বোর্ডের সভাপতি হয়েছেন সৌরভ গাঙ্গুলী। যিনি আবার কলকাতার। তাকে বলা হয় কলকাতার মহারাজ। তিনি যখন প্রথমবার সভাপতি হয়েছেন, আবার কলকাতাতেই ম্যাচ পেয়ে গেছেন। সেই ম্যাচটিকে বর্ণিল আয়োজনে করতে চেয়েছেন। সেই আয়োজন করতে গিয়ে এমন আবহ তৈরি করেছেন যেখানে টেস্টের চেয়েও দুই দেশের সৌহার্র্দ্য, বন্ধুত্বই বেশি করে ধরা পড়ছে। তিনি একের পর এক সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। তা জানিয়েছেন সিএবি কর্মকর্তাদের। তারা সকল আয়োজনের ব্যবস্থা করেছেন। শুরুতে গাঙ্গুলী ম্যাচটি দিবারাত্রিতে করার সিদ্ধান্ত নিলেন। এরপর এক এক করে আরও কিভাবে ম্যাচকে বর্ণিল করা যায় সেই চিন্তা করলেন। তাতে গাঙ্গুলীর কাছে মনে হলো বাংলাদেশ প্রথমবারের মতো ইডেন গার্ডেন্সে টেস্ট খেলবে, এই টেস্টে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা উপস্থিত থাকলে অনেক বেশি উজ্জ্বলতা ছড়াবে। যেমন ভাবনা, তেমন কাজ। গাঙ্গুলী সিদ্ধান্ত নিলেন। প্রধানমন্ত্রীকেও আমন্ত্রণ জানালেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও আমন্ত্রণে সাড়া দিলেন। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী থাকবেন। তাহলে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নয় কেন? কিন্তু সময় না মেলায় এ জায়গায় গ্রীন সিগন্যাল মিলেনি। কিন্তু পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জী না থাকলে কী হয়? তাকেও রাখছেন গাঙ্গুলী। এমনকি শেখ হাসিনা ও মমতাকে দিয়েই ইডেন গার্ডেন্সের ঘণ্টা বাজিয়ে টেস্ট শুরু করার সিদ্ধান্তও নেয়া হয়। টেস্ট যখন কাছাকাছি চলে আসে ‘গোলাপি’ রঙ্গে রাঙিয়ে তোলা হয় সব। খেলা যে হবে গোলাপি বলে। প্রথমবারের মতো বাংলাদেশ ও ভারত দুইদলই গোলাপি বলে দিবারাত্রির টেস্টও খেলবে। দুই দেশের প্রধানরা থাকবেন, দুই দেশের বোর্ডের প্রধানরা কী আর বাদ যাবেন? তা কি হতে পারে। গাঙ্গুলী ও পাপন একসঙ্গেই বসে খেলা দেখবেন। গাঙ্গুলী চিন্তা করলেন বাংলাদেশ যেহেতু ভারতের বিরুদ্ধে নিজেদের প্রথম টেস্ট খেলেছে, তাই সেই টেস্টের দলে থাকা সব ক্রিকেটারকে এই ম্যাচে রাখতে। তিনি সবাইকে আমন্ত্রণ জানিয়েছেন। প্রথম টেস্টের দলে থাকা ক্রিকেটারদের মধ্যে নাঈমুর রহমান দুর্জয় অধিনায়ক ছিলেন। ভারতের অধিনায়ক ছিলেন গাঙ্গুলী। দুই অধিনায়ক আবার এক হবেন। সঙ্গে আকরাম খান, হাবিবুল বাশার, খালেদ মাসুদ পাইলটদেরও থাকার কথা রয়েছে। আর ভারত দলে থাকা শচীন টেন্ডুলকর, রাহুল দ্রাবিড়রা তো টেস্টের শোভা বাড়াবেন। ভারতের সব টেস্ট দলের অধিনায়কদের টেস্টে থাকার জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। দুই দেশের সরকারী মহলের উচ্চপর্যায়ের কর্মকর্তারা তো থাকবেনই, দুই দেশের ক্রিকেটাররাও এক সঙ্গে থাকবেন। মিলনমেলাই হবে। ঐতিহাসিক এই টেস্টের উদ্বোধনীতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে উপস্থিত থাকবেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জী, সৌরভ গাঙ্গুলী, নাজমুল হাসান পাপন, শচীন টেন্ডুলকর, রাহুল দ্রাবিড়, নাঈমুর রহমানসহ অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ ক্রিকেটার। এছাড়া ইডেনে প্রথমদিনের খেলা শেষে বাংলাদেশ ও ভারতের ক্রিকেটারদের সম্মান প্রদর্শন করা হবে। খেলার বিরতিতে সৌরভ গাঙ্গুলী, শচীন টেন্ডুলকর, রাহুল দ্রাবিড়, অনীল কুম্বলে এবং ভিভিএস লক্ষণের মধ্যে একটি চ্যাট শো’র পরিকল্পনাও করা হয়েছে। রাতে সব ক্রিকেটারকে নিয়ে একটি বিশেষ আয়োজনও আছে। যেখানে ২০০০ সালে বাংলাদেশ-ভারত টেস্টের ক্রিকেটারদের বিশেষ সম্মান জানানো হবে। দুই দেশের ক্রিকেটারদের মধ্যেও মিলনমেলা ঘটবে। ভারতের বিরুদ্ধে এখন পর্যন্ত টেস্টে ভাল কিছু করতে পারেনি বাংলাদেশ। শুধুই হার হয়েছে। ১০ টেস্টের মধ্যে ৮টিতেই হার হয়েছে। দুটি টেস্ট ড্র করেছে। তাও বৃষ্টির আশীর্বাদে। চারটি টেস্টে এর মধ্যে ইনিংস ব্যবধানে হার হয়েছে বাংলাদেশের। ইন্দোর টেস্টে ইনিংস ও ১৩০ রানে হেরে সিরিজে ১-০ ব্যবধানে পিছিয়ে পড়েছে বাংলাদেশ। ইডেন টেস্টে বাংলাদেশ হেরে গেলে ২-০ ব্যবধানে সিরিজ হার হবে। তবে প্রথমবার ভারতের মাটিতে পূর্ণাঙ্গ টেস্ট খেলতে গিয়েই যে দিবারাত্রির টেস্ট খেলবে বাংলাদেশ, সেটি আবার ইডেন গার্ডেন্সে প্রথমবার খেলতে নামবে, টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের ম্যাচও হবে; এ নিয়েই বেশি উত্তেজনা ছড়াচ্ছে। ম্যাচে হার-জিতের চেয়ে আসলে দুই দেশের মধ্যে যে একটা সৌহার্দ্যপূর্ণ আবহ তৈরি করা হয়েছে, সেটিই দিন শেষে সবকিছুকে ছাপিয়ে যাচ্ছে।
×