ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

আমাদের সন্তানরা ফের রাস্তায় নামলে কারও পিঠের চামড়া থাকবে না

প্রকাশিত: ১১:০৯, ২২ নভেম্বর ২০১৯

আমাদের সন্তানরা ফের রাস্তায় নামলে কারও পিঠের চামড়া থাকবে না

স্টাফ রিপোর্টার ॥ ডিএমপি কমিশনার শফিকুল ইসলাম বলেছেন, সড়কে শৃঙ্খলা আনার এটাই শেষ সুযোগ। আরেকবার যদি আমাদের সন্তানরা রাস্তায় নামে, তাহলে কারও পিঠের চামড়া থাকবে না। তা আমি পুলিশ কমিশনার হই, আর আপনি পরিবহন মালিক সমিতির বড় নেতাই হোন। বৃহস্পতিবার রাজারবাগ পুলিশ লাইন্সে ট্রাফিক সচেতনতামূলক পক্ষের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেন। ডিএমপি কমিশনার জানান, নতুন এ আইনের পর আমরা মালিক-শ্রমিক-পুলিশ মিলে যদি সড়কে শৃঙ্খলা আনতে না পারি, তাহলে আমাদের সন্তানরাই আমাদের রাস্তা থেকে তুলে দেবে। তখন আপনিও রাস্তায় নামতে পারবেন না, আমিও ডিউটি করতে পারব না। সহ্যের একটা সীমা থাকে। ধরুন আপনার একটা ভুল বা আমার একটা ত্রুটির জন্য এমন একজন মানুষ মারা গেল যার বাসায় দুটি বাচ্চা রয়েছে। তাদের মুখে ভাত দেয়ার মতো পরিবারে নেই কোন কর্মক্ষম মানুষ ওই মানুষটির কথা কি আমরা কেউ চিন্তা করি? আমার সন্তানরা রক্তাক্ত হবে। আমরা আনফিট গাড়ি নিয়ে, অদক্ষ চালক দিয়ে বছরের পর বছর গাড়ি চালিয়ে যাব- সেটা মানুষ বেশি দিন সহ্য করবে না। তিনি জানান, নতুন সড়ক-পরিবহন আইনটা করা হয়েছে সড়কে শৃঙ্খলা আনার জন্য। সরকার ও ট্রাফিক পুলিশ জরিমানা আদায় উদ্দেশ্যে নয় ঢাকা মহানগরীতে এখন প্রতি মাসে ৬/৭ কোটি টাকা জরিমানা করি। এ টাকা সরকারের একেবারেই নস্যি আমি কমিশনার হিসেবে যোগদানের পর ট্রাফিকে যারা আছেন তাদের বলে দিয়েছি, মামলার কোন টার্গেট নেই। সড়কেশৃঙ্খলা থাকলে মামলার প্রয়োজন নেই। মূল বিষয় হলো সবাই যদি আইন মেনে চলে, তাহলে মামলার প্রয়োজন নেই। গাড়ি রেকারিং বিষয়ে ডিএমপি কমিশনার জানান, একমাত্র যে গাড়িটি রাস্তায় পাওয়া যাবে, সেই গাড়ির মালিক বা চালককে খোঁজা হবে। না পেলে ওই গাড়ি রেকারিং করা হবে। এর বাইরে কোনো গাড়ি রেকারিং করা হবে না। তিনি বলেন, আমরা যারা রাস্তায় নামি তাদের প্রত্যেকই সবার আগে যেতে চাই। বাকিরা পেছনে পড়ে থাক- সবাইকে এই মানসিকতা থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। আইন মানতে হবে। আইনকে শ্রদ্ধা করে স্ব স্ব জায়গা থেকে আইন মানতে হবে। চালকদের উদ্দেশে ডিএমপি কমিশনার বলেন, আমার আপনার কারণে এমন এক ব্যক্তি মারা গেল, পরিবারে যারা দু’টি শিশুর মুখে খাবার তুলে দেয়ার কেউ নেই। সবকিছু আলোচনার মাধ্যমে সমাধান করতে পারব কিন্তু কোন সন্তানের চোখের পানির দাম দিতে পারব না। অরাজক পরিস্থিতি আর কতদিন মানবেন? এসব অরাজকতায় অনেক চালকও চলে গেছেন। যাদের পরিবারেও কেউ না কেউ আছে। তাদের খোঁজ নিয়েছে কেউ? তাদের মা, স্ত্রী-সন্তান হয়ত কষ্টে কাটাচ্ছেন। তাই আসুন আমরা সবাই শৃঙ্খলা মেনে চলি। ডিএমপি কমিশনার বলেন, বর্তমান নতুন আইনে এক জরিমানা দিলেই পরিবহন মালিক শ্রমিকের সারামাসের উপার্জন চলে যাবে। সুতরাং আমরা মিটিং করে সিদ্ধান্ত নিয়ে বলেছি, যারা অব্যাহত আইন অমান্য করবে, আমরা শুধু তার বিরুদ্ধে আইন প্রয়োগ করব। তাও সামান্য কি অমান্য করেছেন, কেন করেছেন বুঝিয়ে দেব। কিন্তু এটা একবার-দুইবার বলব, তৃতীয়বার বলব না। তখন আপনাকে জরিমানা করব। আপনি অব্যাহত আইন অমান্য করবেন আর আমরা আপনাকে ছাড় দিয়ে যাব, তাহলে তো আর আইন প্রয়োগ কখনই সম্ভব হবে না ট্রাফিক পক্ষের বিষয়ে পুলিশ কমিশনার জানান, অন্তত ১৫ দিন আমরা শৃঙ্খলা নিয়ে কথা বলব। পেশাজীবী, চাকুরি, শিক্ষক, শিক্ষার্থী, চালক, হেলপার, মালিক সবার সঙ্গে কথা বলব। এটিই আমাদের শেষ সুযোগ। আমরা চাই, আমাদের সন্তানদের যেন মাঠে নামতে না হয়। এবার তারা মাঠে নামলে আমাদের পিঠের চামড়া রাখবে না। তখন আমাদেরও কিছু করার থাকবে না। ট্রাফিক পক্ষের আলোচনাসভায় ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার (ট্রাফিক) মফিজ উদ্দিন আহমেদ জানান, ঢাকা শহরে আমরা ট্রাফিক শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে নানামুখী কাজ করে যাচ্ছি। এবারের ট্রাফিক পক্ষে আমরা ৪৫ ¯োগান সবার কাছে পৌঁছাব। সবাইকে সচেতন করতেই এই উদ্যোগ। মূল সড়কে যেন রিকশা চলতে না পারে সে জন্য কয়েকটি জোনে ভাগ করে তাদের পোশাক দিয়ে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনা হবে। ঢাকায় ১৫১ সিএনজি পাম্প স্টেশন রয়েছে। তাদের সঙ্গে আমাদের আলোচনা হবে। নির্দেশের বাইরে কাউকে জ্বালানি সরবরাহ করা হবে না।
×