ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

ঠাকুরগাঁওয়ে এবতেদায়ি সমাপনী পরীক্ষায় ৪৬ প্রক্সি পরীক্ষার্থী শনাক্ত

প্রকাশিত: ০৯:১৯, ২২ নভেম্বর ২০১৯

ঠাকুরগাঁওয়ে এবতেদায়ি সমাপনী পরীক্ষায় ৪৬ প্রক্সি পরীক্ষার্থী শনাক্ত

নিজস্ব সংবাদদাতা, ঠাকুরগাঁও, ২১ নবেম্বর ॥ একজন নয়, দু’জন নয়, একে একে খুঁজে পাওয়া গেল ৪৬ প্রক্সি পরীক্ষার্থী। সেটাও একটি পরীক্ষা কেন্দ্রেই। বৃহস্পতিবার দুপুরে জেলার বালিয়াডাঙ্গী উপজেলার কালমেঘ সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে চলমান এবতেদায়ি শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষায় এসব পরীক্ষার্থীকে শনাক্ত করেন ওই কেন্দ্রের দায়িত্বে থাকা কেন্দ্র সচিব ও কালমেঘ আর আলী উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী প্রধান শিক্ষক হযরত আলী। কেন্দ্র সচিব বলেন, পরীক্ষা শুরুর প্রথমদিন থেকে সন্দেহ হয়েছিল আমার। সঠিক প্রমাণের জন্য অপেক্ষা করছিলাম। অনুসন্ধানে সত্যতা পেয়ে গত বুধবার একজন ও বৃহস্পতিবারে আরও ৩৬ জনকে শনাক্ত করা হয়। বুধবার শনাক্তকৃত একজনসহ মাদ্রাসাটির সকল পরীক্ষার্থীই ভুয়া। বাকি নয়জন পরীক্ষার্থীর মধ্যে কেউ বৃহস্পতিবারের পরীক্ষায় অংশ নিতে আসেনি। ভুয়া পরীক্ষার্থীরা হলো, লালাপুর স্বতন্ত্র এবতেদায়ি মাদ্রাসার ১০ জন, ছোট পলাশবাড়ী বলিদ্বারা স্বতন্ত্র এবতেদায়ি মাদ্রাসার ৮ জন, রায়পুর সাজাদ আলী স্বতন্ত্র এবতেদায়ি মাদ্রাসার ১১ জন, আরাজি সরলিয়া স্বতন্ত্র এবতেদায়ি মাদ্রাসার ৬ জন এবং লালাপুর সফিজ উদ্দীন স্বতন্ত্র মাদ্রাসার ১১ জন। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, চলমান জেডিসি পরীক্ষায় অংশ নেয়া পরীক্ষার্থীদের ৬০০ টাকার বিনিময়ে এবতেদায়ি শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষায় অংশ নিতে বাধ্য করেন মাদ্রাসা প্রধানগণ। ভুয়া পরীক্ষার্থীদের বাড়ি ঠাকুরগাঁও সদর ও বালিয়াডাঙ্গী উপজেলার বিভিন্ন এলাকায়। তারা চলতি বছর বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান থেকে জেএসসি ও জেডিসি পরীক্ষা দিয়েছে। গত বুধবার শনাক্ত হওয়া লালাপুর গ্রামের ভুয়া পরীক্ষার্থী জানায়, লালাপুর স্বতন্ত্র এবতেদায়ি মাদ্রাসার প্রধান শিক্ষক ও তার ছেলে ৬শ’ টাকার লোভ দেখিয়ে পরীক্ষায় অংশ নিতে বলে। আমাদের কোন সমস্যা হবে না, বাকি সবকিছু তারা ম্যানেজ করেছেন বলে জানায় ওই শিক্ষার্থী। তবে তার অভিভাবক জানান, তার ছেলের জেএসসি পরীক্ষা শেষ হয়েছে। আবার অন্য মাদ্রাসার হয়ে পরীক্ষা দিচ্ছে, এ বিষয়ে তিনি তার ছেলে ধরা পরার পর জেনেছেন। এমনচিত্র শনাক্ত হওয়া ৫টি মাদ্রাসার সকলের। সকলেই প্রতিবছর ভুয়া পরীক্ষার্থী দিয়ে ফলাফল দেখিয়ে বেতন ভাতা উত্তোলন করে খাচ্ছেন বলে অভিযোগ স্থানীয়দের। এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা খায়রুল আলম সুমন জানান, বৃহস্পতিবার পরীক্ষা কেন্দ্রে শনাক্ত হওয়া পরীক্ষার্থীদের অভিভাবকের নিকট মুচলেকা নিয়ে ৩৬ পরীক্ষার্থীকে ছেড়ে দিয়েছেন। বুধবার একজনকে একইভাবে মুচলেকা নিয়ে ছেড়ে দেয়া হয়েছে। শনাক্ত হওয়া ৫ মাদ্রাসা প্রধানদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে জানান তিনি। উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মোফাজ্জল হোসেন ম-ল জানান, উপজেলার প্রায় সকল স্বতন্ত্র এবতেদায়ি মাদ্রাসাগুলোর সভাপতি উপজেলা নির্বাহী অফিসার। ভুয়া পরীক্ষার্থী শনাক্ত হওয়া কেন্দ্রে ৬২৭ পরীক্ষার্থী চলমান এবতেদায়ি শিক্ষা সমাপনী ও প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষায় অংশ নিচ্ছেন। এদের মধ্যে প্রাথমিকের ৫৫০ জন এবং মাদ্রাসার ৭৭ জনের মধ্যে ৪৬ জনই ভুয়া বলে শনাক্ত হয়েছে। তিনি আরও জানান, পরীক্ষায় ডিআর ফরম অনুসারে প্রবেশপত্র ইস্যু করা হয়। ছবির সঙ্গে নামের মিল আছে কিনা তা যাচাই করেন মাদ্রাসা সুপার। তার স্বাক্ষর করার পর আমি প্রবেশপত্রে স্বাক্ষর করি। এত শিক্ষার্থীর ছবি কিংবা সে সঠিক পরীক্ষার্থী কি না তা চিহ্নিত করার সুযোগ নেই। তবে প্রাথমিকভাবে তথ্য পাওয়া গেছে, মাদ্রাসা সুপাররা যোগসাজশ করে এমন কা- ঘটিয়েছেন। লালমনিরহাটে ১০ নিজস্ব সংবাদদাতা লালমনিরহাট থেকে জানান, হাতীবান্ধা উপজেলায় এবতেদায়ি পরীক্ষায় অংশ নেয়া ১০ প্রক্সি পরীক্ষার্থীকে বহিষ্কার করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার উপজেলার এসএস সরকারী উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্র থেকে তাদের বহিষ্কার করা হয়। বহিষ্কারকৃতরা হলেন আব্দুর রোপ, আশারাফুল হক, সাফিউল আলম স্বাধীন, ফরহাদ হোসেন, আবু নাঈম মিলন, আব্দুল করিম, সুরাইয়া আক্তার, কুলছুম খাতুন, সাবিনা ইয়াসমি ও নাজমুন্নাহার আক্তার নুরি। জানা গেছে, জেলার হাতীবান্ধা উপজেলার এসএস সরকারী উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রে অংশ নেয়া ভবানীপুর স্বতন্ত্র এবতেদায়ি মাদ্রাসা বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ষষ্ঠ, সপ্তম ও অষ্টম শ্রেণীর শিক্ষার্থীদের ‘ভাড়ায়’ এনে এবতেদায়ি পরীক্ষা দেয়ার ব্যবস্থা করে। বিষয়টি জানাজানি হলে বৃহস্পতিবার পরীক্ষা চলাকালীন ওই কেন্দ্র থেকে ১০ ভুয়া পরীক্ষার্থী শনাক্ত করা হয় ও তাদের বহিষ্কার করা হয়। এ বিষয়ে হাতীবান্ধা এসএস সরকারী উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ও কেন্দ্র সচিব রেজাউল করিম প্রধান জানান, খবর পেয়ে ১০৭ নং কক্ষে ওই পরীক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা হলে তারা দোষ স্বীকার করে। হাতীবান্ধা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সামিউল আমিন ১০ ভুয়া পরীক্ষার্থী বহিষ্কারের বিষয়টি নিশ্চিত করে জানান, এ বিষয়ে অভিযুক্ত মাদ্রাসার বিরুদ্ধে বিধি অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হবে। সাতক্ষীরায় ৯ স্টাফ রিপোর্টার সাতক্ষীরা থেকে জানান, এবতেদায়ি শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষায় জালিয়াতির আশ্রয় গ্রহণ করে অন্য শিক্ষার্থীদের স্থলে পরীক্ষায় অংশগ্রহণের অভিযোগে নয় ভুয়া পরীক্ষার্থীসহ এক মাদ্রাসা শিক্ষককে আটক করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার দুপুরে দেবহাটার সখিপুর দাখিল মাদ্রাসা কেন্দ্র থেকে তাদের আটক করা হয়। আটক নুরুল ইসলাম উত্তর পারুলিয়া স্বতন্ত্র এবতেদায়ি মাদ্রাসার শিক্ষক। এছাড়া আটক ভুয়া শিক্ষার্থীরা উত্তর পারুলিয়া স্বতন্ত্র এবতেদায়ি মাদ্রাসার শিক্ষার্থীদের স্থলে পরীক্ষা দিচ্ছিল। তারা উপজেলার বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে বিভিন্ন শ্রেণীতে অধ্যয়নরত। দেবহাটা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) বিপ্লব কুমার সাহা জানান, আটক শিক্ষার্থীরা শিশু হওয়ায় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সাজিয়া আফরীন মুচলেকা নিয়ে তাদের অভিভাবকদের জিম্মায় দিয়েছেন। আর শিক্ষক নুরুল ইসলামকে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে বিচারিক আদালতে পাঠানো হয়েছে।
×