ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

বরাদ্দ দাবি সিডিউল ক্রেতাদের

রেলের পূর্বাঞ্চলে ১৫ কোটি টাকার বাণিজ্যিক প্লট দখলমুক্ত

প্রকাশিত: ০৯:১৪, ২২ নভেম্বর ২০১৯

রেলের পূর্বাঞ্চলে ১৫ কোটি টাকার বাণিজ্যিক প্লট দখলমুক্ত

মাকসুদ আহমদ, চট্টগ্রাম অফিস ॥ চট্টগ্রামে দীর্ঘ ১০ বছর পর রেলের বাণিজ্যিক মাস্টারপ্ল্যানের আওতায় থাকা ভূমি অবৈধ দখলদার মুক্ত করেছে জেলা প্রশাসন ও রেলওয়ে ম্যাজিস্ট্রেট। বুধবার সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত পরিচালিত অভিযান চলেছে রেলের পূর্বাঞ্চলীয় প্রধান ভূ-সম্পত্তি কর্মকর্তা ইশরাত রেজার নির্দেশনায়। অভিযানে প্রায় সাড়ে চার একর জায়গা উদ্ধার হয়েছে। যার বাজার মূল্য প্রায় ৩০ কোটি টাকা। শুধু বাণিজ্যিক প্লট থেকেই বছরে রাজস্ব আদায়ের সম্ভাবনা রয়েছে প্রায় ৬০ লাখ টাকা। এছাড়াও রেলের ইঞ্জিনিয়ারিং কলোনি, সিগন্যাল কলোনিসহ ভেলুয়ার দীঘিরপাড় থেকেও অবৈধ দখলদারদের উচ্ছেদ করা হয়েছে। এই উচ্ছেদের কারণে যারা প্রতিদিন দীঘিতে গোসল করত তাদের মধ্যে বুধবার অভিযানের পর উল্লাস দেখা দিয়েছে। এ ব্যাপারে পূর্বাঞ্চলীয় প্রধান ভূ-সম্পত্তি কর্মকর্তা ইশরাত রেজা জানান, বাণিজ্যিক নক্সার আওতায় থাকা প্রায় সাড়ে ১৩ হাজার বর্গফুট জায়গা উদ্ধার করা হয়েছে ভেলুয়ার দীঘিরপাড় থেকে। এ ভূমি বরাদ্দ দেয়া হলে রেল বছরে প্রায় অর্ধ কোটি টাকা রাজস্ব পাবে। এছাড়াও রেল কোয়ার্টারের পার্শ্বে থাকা ভূমিতে যারা অবৈধ স্থাপনা গেড়েছে তাদেরও উচ্ছেদ করার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। অভিযোগ রয়েছে, ২০১১ সালের মার্চে ভেলুয়ার দীঘির পশ্চিমপাড়ের প্রায় সাড়ে ১৩ হাজার বর্গফুট জায়গা বাণিজ্যিক লাইসেন্সের আওতায় বরাদ্দ দেয়ার জন্য পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দিয়েছিলেন বিভাগীয় ভূ-সম্পত্তি কর্মকর্তা। ৫২টি বিভিন্ন সাইজের প্লটের জন্য ৫শ’ টাকা দরে সিডিউল বিক্রি করা হয়। কিন্তু টেন্ডার ওপেনিংয়ের আগের দিন অশুভ শক্তির প্রভাবে বন্ধ করে দেয়া হয় টেন্ডার প্রক্রিয়া।কিন্তু সিডিউল বিক্রির প্রায় সাড়ে তিন লাখ টাকা ফেরত দেয়নি সিডিউল ক্রেতাদের। প্রশ্ন উঠেছে যেহেতু টেন্ডার বাতিল হয়েছে সেহেতু রেলের ফান্ডে সিডিউলের অর্থ জমা পড়েনি। এই ফান্ড আত্মসাতকারীকে খুঁজে বের করার দাবি জানিয়েছেন সিডিউল ক্রেতারা। অথবা যাদের কাছে এখনও সিডিউল রয়েছে তাদের অগ্রাধিকার ভিত্তিতে বাণিজ্যিক প্লট বরাদ্দ দেয়ার। এই বাণিজ্যিক প্লট বরাদ্দ নিতে এক সিডিউল ক্রেতা অভিযোগ করেছেন, ২০১১ সালের ১৫ মার্চ একটি জাতীয় ও স্থানীয় পত্রিকায় ভেরুয়ার দীঘির পশ্চিমপাড়ের ৫২টি প্লট, ঝাউতলা আবহাওয়া অফিস সংলগ্ন দুটি প্লট ও ফৌজদারহাট রেলস্টেশন এলাকায় প্রায় ১০ হাজার বর্গফুটের একটি বাণিজ্যিক প্লট বরাদ্দের জন্য টেন্ডার আহ্বান করা হয়। টেন্ডার জমার শেষ তারিখ ছিল ২০১১ সালের ৩১ মার্চ। প্রতিটি ৫শ’ টাকা দরে প্রায় সাড়ে ৫শ’ সিডিউল বিক্রি হয়েছে। প্রায় পৌনে তিন লাখ টাকার সিডিউল বিক্রি হয়েছে বলে ভূ-সম্পত্তি বিভাগের এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন। এমনকি এমআইসিআর নম্বরযুক্ত পে-অর্ডারের মাধ্যমে টেন্ডার সিকিউরিটিও তৈরি করা হয়েছিল। আরও অভিযোগ রয়েছে, রেলের তৎকালীন পূর্বাঞ্চলীয় জেনারেল ম্যানেজার নুরুল আমীনকে ভেলুয়ার দীঘিরপাড়ের অবৈধ দখলদাররা মোটা অঙ্কে ম্যানেজ করে টেন্ডার বাতিল করিয়েছে জমাদানের ঠিক আগের দিন। পরে জিএমের নির্দেশে টেন্ডার স্থগিত করা হয়। এর আগে ২০১১ সালের ২৩ মার্চ দরপত্র দাখিলের দিন বাড়িয়ে ১২ এপ্রিল নেয়া হয়েছিল। আরও জানা গেছে, ২০০৪ সালের ১৮ আগস্ট ভেলুয়ার দীঘিরপাড় এলাকায় সিইও/এলপি/৯৫২ নম্বর বাণিজ্যিক নক্সা অনুমোদন দেয়া হয়। ১৫০ বর্গফুট থেকে সর্বোচ্চ ৪০০ বর্গফুট পরিমাপের মোট ৫২টি প্লটে মোট ১৩ হাজার ৪৬০ বর্গফুট জায়গা বাণিজ্যিক ভিত্তিতে বরাদ্দের সিদ্ধান্ত দেয়া হয়। এই নক্সায় দীঘিতে যাতায়তের জন্য ১৮ ফুট প্রশস্থ রাস্তা ও ৫৪ ফুট প্রশস্থ সিঁড়ি রাখারও কথা ছিল।
×