ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

ইসরাইলের বসতি স্থাপন ইস্যুতে রুদ্ধদ্বার বৈঠক

নিরাপত্তা পরিষদের নিন্দা

প্রকাশিত: ০৯:১০, ২২ নভেম্বর ২০১৯

নিরাপত্তা পরিষদের নিন্দা

অধিকৃত ফিলিস্তিনী ভূখণ্ডে ইসরাইলের বসতি স্থাপন নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের দীর্ঘদিনের সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করায় তীব্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদ। বুধবার পরিষদের বৈঠকে যুক্তরাষ্ট্র ছাড়া বাকি ১৪ সদস্য মার্কিন ঘোষণার তীব্র বিরোধিতা করে। সম্প্রতি মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেও বলেন, তারা পশ্চিম তীরে ইসরাইলী বসতি স্থাপনকে আর আন্তর্জাতিক আইনের লংঘন মনে করেন না। এপি। নিরাপত্তা পরিষদের সদস্যরা সতর্ক করে জানায়, নতুন মার্কিন নীতি ইসরাইল-ফিলিস্তিন দ্বন্দ্ব অবসানে দুই রাষ্ট্র সমাধানকে বাধাগ্রস্ত করবে। পম্পেওর ঘোষণার দুইদিন পর নিরাপত্তা পরিষদের মধ্যপ্রাচ্য বিষয়ক মাসিক বৈঠকে সদস্য রাষ্ট্রগুলোর পক্ষ থেকে নতুন মার্কিন নীতির প্রতি তীব্র নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া দেখানো হয়। তারা বলে, আন্তর্জাতিক আইনের অধীনে সকল ইসরাইলী বসতি অবৈধ। শুধু জাতিসংঘে নিযুক্ত ইসরাইলের রাষ্ট্রদূত ড্যানি ডানোন যুক্তরাষ্ট্রের পদক্ষেপের সমর্থনে কথা বলেন। তবে ইসরাইল নিরপত্তা পরিষদের সদস্য নয়। তিনি বলেন, এই পদক্ষেপ একটি ঐতিহাসিক ভুলের বৈধতা দিচ্ছে। বৈঠক শুরুর আগে যুক্তরাষ্ট্রের পাঁচ ইউরোপিয়ান মিত্র ব্রিটেন, ফ্রান্স, জার্মানি, বেলজিয়াম ও পোলান্ড এক যৌথ বিবৃতিতে পুনরাবৃত্তি করে যে, আন্তর্জাতিক আইনের অধীনে সকল বসতি স্থাপন কর্মকা- অবৈধ। তারা সকল বসতি স্থাপন কর্মকা- বন্ধে ইসরাইলের প্রতি আহ্বান জানায় এবং বলে, এ ধরনের কর্মকা- দুই রাষ্ট্র সমাধানের কার্যকারিতা এবং দীর্ঘস্থায়ী শান্তি স্থাপনের উদ্দেশ্যকে ব্যাহত করছে। তারা পশ্চিম তীরে সম্ভাব্য বসতি সম্প্রসারণের ঘোষণার বিষয়েও উদ্বেগ পুনরাবৃত্তি করেছে। মধ্যপ্রাচ্যে শান্তি প্রক্রিয়ায় নিযুক্ত জাতিসংঘের বিশেষ কো-অর্ডিনেটর নিকোলাই ম্লাদেনোভ যুক্তরাষ্ট্রের পদক্ষেপে দুঃখ প্রকাশ করে বৈঠকের উদ্বোধন করেন। তিনি পুনরাবৃত্তি করেন জাতিসংঘের অবস্থান হচ্ছে ২০১৬ সালের ডিসেম্বরে নিরাপত্তা পরিষদের প্রস্তাবের অধীনে ওই বসতি স্থাপন আন্তর্জাতিক আইনের অধীনে ঘোর লংঘন। তিনি আরও সতর্ক করে বলেন যে, ইসরাইল ও ফিলিস্তিনী যোদ্ধাদের মধ্যে সাম্প্রতিক তীব্র সংঘর্ষের পর গাজায় যুদ্ধ পরিস্থিতি বিরাজ করছে। প্যালেস্টিনিয়ান ইসলামিক জিহাদের এক কমান্ডারকে হত্যার উদ্দেশ্যে ইসরাইল তার ওপর হামলা চালানোর পর থেকে সেখানে এ অবস্থা তৈরি হয়। যুক্তরাষ্ট্রের সহকারী দূত চেরিথ নরম্যান বসতি স্থাপন বিষয়ে পম্পেওর ঘোষণার পুনরাবৃত্তি করেন যেখানে ১৯৭৮ সালের স্টেট ডিপার্টমেন্টের লিগাল ওপিনিয়নের প্রসঙ্গ অস্বীকার করা হয়েছে। ওতে বলা হয় যে, অধিকৃত ভূখ-ে সাধারণ নাগরিকদের বসতি স্থাপন আন্তর্জাতিক আইনের সঙ্গে অসামঞ্জস্যপূর্ণ। তিনি জোর দিয়ে বলেন, এই জটিল রাজনৈতিক সমস্য শুধু ইসরাইল-ফিলিস্তিন সরাসরি আলোচনার মাধ্যমেই সমাধান হতে পারে। সবচেয়ে বেশি মুসলিম জনসংখ্যার দেশ ইন্দোনেশিয়ার দূত দিয়ান ট্রাইআনসায়া জানি মার্কিন ঘোষণাকে দায়িত্বজ্ঞানহীন ও উস্কানিমূলক বলে মন্তব্য করেছেন। তিনি বলেন, এটা নিঃশংসয়ে ইসরাইলকে কার্যত বসতি সম্প্রসারণে অবৈধ অনুমতি দিয়েছে এবং দুই রাষ্ট্রভিত্তিক সমাধানে শান্তি প্রক্রিয়ার প্রতি একটি বাধা। ১৫ দেশের সদস্য এবং ইরসাইলের ডানোন ও ফিলিস্তিনী দূত রিয়াদ মানসুরের বক্তৃতার পর নিরাপত্তা পরিষদ রুদ্ধদার বৈঠকে বসে। ওই অধিবেশন শেষে, পরিষদের ১০ অস্থায়ী সদস্য দেশের প্রতিনিধি সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন। যেখানে সহকারী জাার্মান দূত জার্জেন শুল্জ একটি যৌথ বিবৃতি পাঠ করে শোনান। ওই বিবৃতিতে বলা হয়, ইসরাইলের বসতি স্থাপন কর্মকা- অবৈধ, দুই রাষ্ট্র সমাধানের কার্যকারিতা নষ্ট করছে এবং দীর্ঘস্থায়ী সমন্বিত শান্তি স্থাপনের উদ্দেশ্যকে ক্ষতিগ্রস্ত করছে। এতে সব রকমের বসতি স্থাপন কর্মকা- বন্ধ করতে ইসরাইলের প্রতি আহ্বান জানানো হয় এবং পশ্চিম তীরে সম্ভাব্য বসতি সম্প্রসারণের ইসরাইলের ঘোষণায় উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়। এরপর আরবদের প্রতিনিধি কুয়েতের দূত মানসুর আল কাতাইবি বলেন, বিবৃতির বিষয়ে রুদ্ধদার বৈঠকে ১৪ দেশ একমত হয়েছে। তিনি যুক্তরাষ্ট্রের প্রতি পরিষ্কার ইঙ্গিত করে বলেন, একটি দেশ বাধা সৃষ্টি করছে। ফিলিস্তিনী দূত মানসুর বলেন, তিনি পরিষদের ১৪ দেশ এবং আন্তর্জাতিক আইনের প্রতি তাদের অঙ্গীকারে কৃতজ্ঞ।
×