বাজার ব্যবস্থাপনায় প্রায়ই অস্থিতিশীল পরিবেশ তৈরি করা অসাধু ব্যবসায়ী সিন্ডিকেটের এক লাগামহীন প্রক্রিয়া। সম্প্রতি পেঁয়াজের অস্বাভাবিক মূল্য বৃদ্ধিতে সারাদেশ যখন অস্থির, তেমন দুঃসময়ে হঠাৎ করে লবণের ওপর ষড়যন্ত্রকারীদের অপছায়া সারাদেশে শঙ্কার সঙ্গে তৈরি করেছে চমকও। গুজব রটিয়ে বাজার অর্থনীতিকে বেসামাল করা দুষ্ট চক্রের এক অপকৌশল। এতে ভোগান্তিতে পড়ে সাধারণ ভোক্তা শ্রেণীই শুধু নয়, খুচরো বিক্রেতারাও। গত দুই মাস ধরে চলতে থাকা পেঁয়াজের ব্যবসায় ফুলে ফেঁপে উঠেছে শক্তিশালী ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট। পরিণামে সিংহভাগ জনগোষ্ঠী ও ছোট ব্যবসায়ীরা পড়েছে সব থেকে বেশি বিপাকে। যাই হোক, শেষ অবধি পেঁয়াজ আগের অবস্থায় ফিরে না এলেও কিছুটা সহনীয় পর্যায়ে ভোক্তা শ্রেণীকে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলতে দিয়েছে। সাধারণ ক্রেতা গোষ্ঠী যখন পেঁয়াজকে তাদের হাতের লাগালে পেতে শুরু করেছে, তেমন মুহূর্তে রব ওঠে হঠাৎ করেই লবণ ধরাছোঁয়ার বাইরে চলে যাচ্ছে। এবার ক্রেতার চাইতেও বেশি সচকিত হলো সরকার এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। সরকারের পক্ষ থেকে তাৎক্ষণিক লবণের কোন সঙ্কট নেই বলে জানানো হয়। আগামী তিন মাসের লবণ মজুদ আছে বলেও আশ্বস্ত করে। ফলে হঠাৎ তৈরি হওয়া এমন অসহনীয় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসতে সময় নেয় না। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীও তাৎক্ষণিক কার্যক্রমে পরিস্থিতির লাগাম টেনে ধরে।
বর্তমানে সামাজিক গণমাধ্যমে বিভিন্ন গুজব, অপ্রয়োজনীয় গল্প ছড়িয়ে পুরো পরিবেশকে অস্থিরতায় নিয়ে যেতে প্রায়ই চেষ্টা করে। সাধারণ মানুষ কোন চিন্তা-ভাবনা ছাড়াই এতে বিভ্রান্ত হয়। রটানো ঘটনার শিকার হয়ে উপস্থিত কিছু কার্যক্রমও তৈরি করে ফেলে। সম্প্রতি ভোলায় সংঘটিত এক অপ্রত্যাশিত ও স্পর্শকাতর ঘটনাকে কেন্দ্র করে যে উত্তেজক পরিস্থিতি তৈরি হয়, তাও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের এক চক্রান্তের চিত্র। মহানবী হযরত মুহম্মদ (স)-এর ওপর অবমাননার অভিযোগে মিথ্যা গুজব রটিয়ে হীনস্বার্থ চরিতার্থ করার দূরভিসন্ধিকেও পুলিশ তাৎক্ষণিক তথ্যপ্রযুক্তির কল্যাণে চিহ্নিত করতে সক্ষম হলে অপরাধীরা ধরা পড়ে। মূলত এমন সব অসামাজিক কর্মকা-ে খুব সতর্কাবস্থায় সম্পৃক্ত থাকে স্বাধীনতাবিরোধী অপশক্তি। যারা শুদ্ধ ধর্মীয় চেতনাকে হরেক রকম মনোবিকৃতির মোড়কে আবিষ্ট করে ধর্মপ্রাণ মানুষকে বিভ্রান্ত করতে ন্যক্কারজনক কারসাজিতে লিপ্ত হয়। ২০১৩ সালের ঘটনা অনেকেরই স্মরণে থাকার কথা। মানবতাবিরোধী অপরাধীদের বিচার এবং রায়ের শাস্তি প্রদানকে কেন্দ্র করে এক ধরনের মিথ্যা অপপ্রচারে সাধারণ মানুষকে উস্কে দেয়ার ঘটনা। যুদ্ধাপরাধী ও আজীবন কারাদ-প্রাপ্ত মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীকে চাঁদে দেখা গেছে বলে মানুষকে বিভ্রান্ত করার অপপ্রয়াস সে সময় চালানো হয়েছিল। যে কারণে ঘটেছিল প্রাণহানিসহ দাঙ্গা-ফ্যাসাদ-ভাংচুর। বিচারের প্রক্রিয়াকে দীর্ঘসূত্রতা কিংবা রায় বানচালের অসৎ উদ্দেশ্যেই এমন ঘটনা ঘটানো হয়। তবে সাধারণ মানুষকে অত্যন্ত সতর্ক এবং সাবধানতার ফলে গুজবের মতো অনাকাক্সিক্ষত এসব বিষয়কে পাশ কাটাতে হবে। যাচাই-বাছাই করতে হবে সত্যতা কতখানি। সচেতন দায়বদ্ধতায় যে কোন গভীর ষড়যন্ত্রকে নস্যাৎ করে দেয়া ছাড়া অন্য কোন বিকল্প নেই।
শীর্ষ সংবাদ: