ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

ধর্মঘট প্রত্যাহার ॥ বৈঠকের পর ঘোষণা

প্রকাশিত: ১১:০২, ২১ নভেম্বর ২০১৯

ধর্মঘট প্রত্যাহার ॥ বৈঠকের পর ঘোষণা

স্টাফ রিপোর্টার ॥ অবশেষে বাস-ট্রাক ও কাভার্ডভ্যান ধর্মঘট প্রত্যাহার করা হয়েছে। নতুন আইনের বিরোধিতা থেকে সড়কে ধর্মঘটের পরিপ্রেক্ষিতে পরিবহন মালিক-শ্রমিক নেতৃবৃন্দ এবং স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের মধ্যকার ফলপ্রসূ বৈঠকের পর এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। বুধবার রাত ৯টার পর মন্ত্রীর ধানম-ির বাড়িতে এই বৈঠক শুরু হয়। প্রায় চার ঘণ্টাব্যাপী বৈঠকের পর এক ব্রিফিংয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেন, সড়ক পরিবহন আইনটি প্রয়োগের পর মালিক-শ্রমিকরা ৯ দফা প্রস্তাব উত্থাপন করে আন্দোলনে নামে। তাদের দাবিগুলো নিয়ে বৈঠকে দীর্ঘ আলোচনা হয়। এর মধ্যে যৌক্তিক দাবিগুলো পূরণের বিষয়ে আমরা আশ্বাস দিয়েছি। তিনি আরও বলেন, আগামী ৩০ জুন পর্যন্ত চালকদের কাছে যেসব কাগজপত্র আছে গাড়ি চালাতে তারা ওই সব কাগজপত্র ব্যবহার করতে পারবেন। তবে এরপর তাদের বিআরটিএর কাছ থেকে সঠিক কাগজপত্র আনতে হবে। গাড়ির ফিটনেস হালনাগাদ না করার ট্যাক্স জরিমানার বিষয়গুলোও বিবেচনার কথা জানান মন্ত্রী। এছাড়া গাড়ির দৈর্ঘ্য-প্রস্থ নিয়ে যে জটিলতা রয়েছে তা ৩০ জুনের মধ্যে ঠিক করে ফেলতে হবে বলে জানান তিনি। পাশাপাশি আইন সংশোধনের দাবির বিষয়ে যোগাযোগ মন্ত্রীর কাছে সুপারিশ পাঠানো হবে। সেটি পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর যোগাযোগ মন্ত্রী তা আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠাবেন। এসব আলোচনার পর মালিক ও শ্রমিক নেতারা সন্তুষ্ট হয়ে ধর্মঘট প্রত্যাহারের প্রতিশ্রুতি দেন। বৈঠকে ট্রাক-কাভার্ডভ্যান ঐক্য পরিষদের নেতা রুস্তম আলী খান বলেন, বৈঠকে ফলপ্রসূ আলোচনা হয়েছে। আমরা সরকারের দেয়া প্রতিশ্রুতি মেনে নিয়েছি। এখন থেকে কর্মবিরতি প্রত্যাহারের ঘোষণা দিচ্ছি। বৈঠকে পরিবহন মালিক-শ্রমিক নেতাদের পাশাপাশি সড়ক পরিবহন মন্ত্রণালয়ের সচিব নজরুল ইসলাম, বিআরটিএ কর্মকর্তারাও উপস্থিত ছিলেন। আনুষ্ঠানিকভাবে ধর্মঘট আহ্বানকারী ট্রাক-কভার্ডভ্যান মালিক-শ্রমিক ঐক্য পরিষদের নেতাদের মধ্যে বৈঠকে ছিলেন রুস্তম আলী খান, তাজুল ইসলাম, মকবুল আহমেদসহ প্রমুখ। বৈঠকে ২০ সদস্যের মালিক-শ্রমিক নেতারা অংশ নেন। এর আগের খবরে বলা হয়, পরিকল্পিতভাবে যানবাহন বন্ধ করে জনভোগান্তির মধ্যে সড়ক পরিবহন আইন সংশোধন চান পরিবহন মালিক-শ্রমিকরা। যার ধারাবাহিকতায় বুধবার প্রায় সারাদেশে বন্ধ ছিল পরিবহন চলাচল। ফলে আন্তঃজেলা রুটে যাত্রী ও পণ্যবাহী যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। কিছু কিছু এলাকায় যানবাহন চালানোর চেষ্টা করা হলে চালকরা হামলা ও বাধার শিকার হন। বিক্ষুব্ধ শ্রমিকরা চালকদের মুখে পোড়া মবিল মাখিয়ে দেন বিভিন্ন এলাকায়। এদিকে সারাদেশের মতো রাজধানী ঢাকার রাস্তাও কার্যত ফাঁকা ছিল। বেশিরভাগ সিটি সার্ভিস সকাল থেকেই বন্ধ হয়ে যায়। ঢাকা থেকে আন্তঃজেলা রুটের বাস খুব একটা ছেড়ে যায়নি। দিনভর তেজগাঁও ও যাত্রাবাড়ী, সায়েদাবাদ, চট্টগ্রাম মহাসড়কসহ বিভিন্ন এলাকায় বিক্ষোভ করেছেন পরিবহন শ্রমিকরা। পরিবহন শ্রমিকদের স্বেচ্ছা কর্মবিরতিতে দেশের দক্ষিণ পশ্চিমাঞ্চল ও উত্তরের বেশ কিছু জেলায় দুদিন ধরেই বাস চলাচল বন্ধ। বুধবার সকাল থেকে ঢাকা-চট্টগ্রাম, ঢাকা-সিলেট ও ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কেও দূরপাল্লার বাস চলাচলে বাধা দেয়া হয়। সড়ক পরিবহন আইন সংশোধনসহ নয় দফা দাবিতে বুধবার সকাল ৬টা থেকে অনির্দিষ্টকালের পরিবহন ধর্মঘট আহ্বান করা হয় বাংলাদেশ ট্রাক-কাভার্ডভ্যান মালিক-শ্রমিক ঐক্যপরিষদের পক্ষ থেকে। ফলে গত দুদিনের তুলনায় বুধবার জনদুর্ভোগ আরও বাড়ে। অচল হয়ে যায় গোটা দেশ। বাস্তবতা হলো বাস মালিকরা বলছেন, তারা ধর্মঘটের ডাক দেননি। বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশনের কর্মকর্তারাও বলছেন, ধর্মঘটের সঙ্গে তাদের কোন সম্পর্ক নেই। স্থানীয় শ্রমিক ইউনিয়নগুলো নিজেদের দায়িত্বে গাড়ি চলাচল বন্ধ রেখেছে। প্রশ্ন হলো তাহলে তাদের ইশারায় সারাদেশে একযোগে বাস চলাচল বন্ধ। সেইসঙ্গে শ্রমিকরা রাস্তায় এত বেপরোয়াই বা কেন। নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিভিন্ন পরিবহন কোম্পানির চালক ও শ্রমিক নেতারা বলছেন, সারাদেশের পরিবহন শ্রমিকরা মালিকদের হাতে রীতিমতো জিম্মি। মালিক ও শ্রমিক ইউনিয়নের কেন্দ্রীয় নেতাদের ইশারা ছাড়া কোন অবস্থাতেই সারাদেশে একযোগে ধর্মঘট হতে পারে না। নিরাপদ সড়ক চাই আন্দোলনের চেয়ারম্যান ও চিত্রনায়ক ইলিয়াস কাঞ্চন বলেছেন, সারাদেশের মানুষকে জিম্মি করে অধিকার আদায় ঠিক নয়। যদি কোন দাবি দাওয়ার বিষয় থাকে তাহলে মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে শান্তিপূর্ণ আলোচনা হতে পারত। কোন প্রকার চাপের মুখে আইন বাস্তবায়ন থেকে সরকারকে সরে না আসতে পরামর্শ দেন তিনি। চলমান সঙ্কট নিরসনে মঙ্গলবার রাতে ট্রাক-কাভার্ডভ্যান মালিক-শ্রমিক ঐক্যপরিষদের নেতাদের সঙ্গে কোন রকম সমঝোতা ছাড়া স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক শেষ হয়। আজ বৃহস্পতিবার ও আগামীকাল শুক্রবার বৈঠক আহ্বান করেছে কেন্দ্রীয় শ্রমিক ফেডারেশনের নেতারা। তারা বলছেন, এই বৈঠকে সারাদেশের নেতাদের আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। তাদের দাবি-দাওয়াগুলো সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের জমা দেয়া হবে। এদিকে পণ্যবাহী পরিবহনের ধর্মঘটের ফলে পণ্য পরিবহনে বড় ধরনের সমস্যায় পড়তে হচ্ছে ব্যবসায়ীদের। সবজিসহ বিভিন্ন ধরনের পণ্যের দাম বাড়ার আশঙ্কা করছেন অনেকে। বাংলাদেশ ট্রাক-কাভার্ডভ্যান মালিক-শ্রমিক ঐক্যপরিষদের আহ্বায়ক মোঃ রুস্তম আলী খান বলেন, দেশজুড়ে তাদের কর্মবিরতি চলছে। দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত কর্মসূচী চলবে। তিনি বলেন, মঙ্গলবার আমরা কর্মসূচী ঘোষণা করার পর রাতে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে একটা বৈঠক হয়েছিল। কিন্তু সেখানে দাবি পূরণে আশ্বাস পাইনি। এজন্য কর্মবিরতি চলছে, এটা চলবে। সায়েদাবাদ বাস টার্মিনাল থেকে পূর্বাঞ্চলের বিভিন্ন রুটের বাস চলাচল বন্ধ রয়েছে বলে জানিয়েছেন সায়েদাবাদ আন্তঃজেলা বাস মালিক সমিতির সভাপতি আবুল কালাম। তিনি বলেন, ট্রাক শ্রমিকরা বিভিন্ন স্থানে বাস চলাচলে বাধা দিচ্ছে। বাস শ্রমিকরাও সড়ক আইনের বিরোধিতা করছেন, তারা কাজ করছেন না। যাত্রী নিয়ে ঢাকা আসার পথে কুমিল্লার আলেখারচরে ট্রাক শ্রমিকরা বাসের হেলপার, চালকদের মারধর করছে এবং গাড়ি আটকে রাখছে বলে জানান আবুল কালাম। আবার ঢাকা থেকে ছেড়ে যাওয়ার পথে নারায়ণগঞ্জের সাইনবোর্ড, মদনপুর ও ডেমরায় বাস আটকে দেয়া হয়। মহাখালী আন্তঃজেলা বাস মালিক সমিতির সভাপতি আবুল কালাম বলেন, শ্রমিকরা কাজে ফিরছেন না। তাই সকাল থেকে বৃহত্তর ময়মনসিংহসহ বিভিন্ন রুটে বাস চলাচল বন্ধ। শাস্তির মাত্রা বাড়িয়ে নতুন সড়ক পরিবহন আইন প্রণয়নের শুর থেকে তার বিরোধিতা করে আসছিলেন পরিবহন মালিক-শ্রমিকরা। এক নবেম্বর ঘোষণা হলেও সোমবার থেকে আইনটি কার্যকর শুরুর পর কোন চাপে পিছু হটবেন না বলে সড়ক পরিবহনমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের ঘোষণা দেন। এরপর পরিবহন মালিক-শ্রমিকরা দৃশ্যত চাপ বাড়িয়ে দেন। আবুল কালাম বলেন, সড়ক পবিরহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের মোবাইল কোর্ট পরিচালনায় শিথিল হতে বললেও তা হচ্ছে না। এ কারণে বাস চালক-শ্রমিকরাও আতঙ্কিত, তারা বাস চালাচ্ছে না। সড়কের বিভিন্ন জায়গায় বাধা এবং চালকদের ‘অনীহার’ কারণে মহাখালী থেকে চলাচলকারী বেশিরভাগ পরিবহনের বাস বন্ধ রয়েছে বলে জানান মহাখালী আন্তঃজেলা বাস মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আবদুল মালেক। তিনি বলেন, ঢাকা থেকে ছেড়ে যাওয়ার পর বাসগুলো আর ফেরত আসছে না। তিনদিন ধরে এ অবস্থা। এখান থেকে গিয়ে ওইপার থেকে আর গাড়ি ছাড়ে না। টুকটাক গাড়ি যাচ্ছে, যাত্রীরাও ভয়ে আসছে না। আবার গাড়ি ছেড়ে গেলে বিভিন্ন জায়গায় ব্যারিকেডে পড়ছে। সড়ক আইন বাতিলের দাবিতে খুলনা ও বরিশাল বিভাগে যে শ্রমিক বিক্ষোভ চলছে, তার প্রভাব রাজধানীতে পড়েছে বলে জানিয়েছেন গাবতলী বাস মালিক সমিতির সদস্য মোহাম্মদ সালাউদ্দিন। তিনি বলেন, খুলনা ও বরিশাল বিভাগের উদ্দেশ্যে যে গাড়িগুলো ছেড়ে যাচ্ছে, তা ওই জেলাগুলো থেকে তা আর ফিরে আসছে না। বিক্ষুব্ধ শ্রমিকরা গাড়িগুলো ফিরতে দিচ্ছেন না। তাই ঢাকায় বাসের সঙ্কট। বাস না চালাতে মালিক পক্ষ থেকে চালক বা শ্রমিকদের কোন নির্দেশনা দেয়া হয়নি বলে জানান তিনি। সোহাগ পরিবহনের গাবতলী কাউন্টার থেকে দক্ষিণ বঙ্গের কোন বাস ছাড়ছে না বলে জানিয়েছেন কাউন্টারের কর্মী শাহান। মানিকগঞ্জ রুটের ভিলেজ লাইন পরিবহনের কাউন্টার সুপারভাইজার স্বপন আহমেদ জানালেন ওইপার থেকে বাস ঢাকায় আসছে না। ফলে তাদের অর্ধেক বাস চলাচল বন্ধ। দুপুরে মহাখালী বাসস্ট্যান্ডে গিয়ে দেখা যায়, গাড়ি না ছাড়লেও শত শত যাত্রী কাউন্টারের সামনে বা রাস্তার ধারে অপেক্ষা করছেন। তাদের মধ্যে নারী ও শিশুরাও রয়েছে। ধর্মঘট শ্রম আইন পরিপন্থী পরিবহন সেক্টরে অচলাবস্থা নিরসনে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণের লক্ষ্যে শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে শ্রম অধিদফতরের মহাপরিচালক সভাকক্ষে পরিবহন সেক্টরের বিভিন্ন সংগঠনের শ্রমিক নেতাদের সঙ্গে জরুরী মতবিনিময় সভা ডাকা হয় বিকেলে। সভায় সভাপতিত্ব করেন শ্রম অধিদফতরের মহাপরিচালক এ কে এম মিজানুর রহমান। বৈঠকে মহাপরিচালক ধর্মঘটী ট্রাক কাভার্ডভ্যান মালিক-শ্রমিক ঐক্যপরিষদের নেতাদের উদ্দেশে বলেন, শ্রম আইন অনুযায়ী অনির্দিষ্টকালের এই পরিবহন ধর্মঘট অবৈধ। কোন নোটিস ছাড়াই ধর্মঘট আহ্বান করা হয়েছে। তাই অবিলম্বে ধর্মঘট প্রত্যাহার করার আহ্বান জানান তিনি। জবাবে পরিষদের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক দুঃখ প্রকাশ করে বলেন, আমরা চাপের মুখে কর্মসূচী ঘোষণা করতে বাধ্য হয়েছি। রাজধানীতে পরিবহন চলাচলে বাধা, বিক্ষোভ রাজধানী ও আশপাশের বিভিন্ন স্থানে ট্রাক শ্রমিকদের সব ধরনের যানবাহন চলাচলে বাধা দিতে দেখা গেছে। মূলত দূরপাল্লার বাসসহ গণপরিবহন চলাচলে বাধা দেয় তারা। তেজগাঁওয়ে ট্রাকস্ট্যান্ড সংলগ্ন আনিসুল হক সড়ক, মহাখালী ট্রাক টার্মিনালের সামনে, টঙ্গীর আবদুল্লাহপুর, মোহাম্মদপুর বাসস্ট্যান্ড, যাত্রাবাড়ী ও শনিরআখড়া এলাকায় এমন বাধা দেয়ার খবর পাওয়া গেছে। বিষয়টি স্বীকার করেছেন বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির মহাসচিব খন্দকার এনায়েত উল্যাহ। তিনি বলেন, ট্রাক শ্রমিকরা ধর্মঘট ডেকেছে। এর সঙ্গে মালিকদের সম্পর্ক নেই। তবে দুই চারজন মালিকও এতে যুক্ত হয়েছেন। বুধবার সকাল থেকে শ্রমিকরা বিভিন্ন স্থানে বাসসহ অন্যান্য যানবাহন চলাচলে বাধা দেয়। গাড়িতে কালি মেখে দিয়েছে। এই অবস্থায় আমরা কীভাবে গাড়ি নামাই? এরপরও আমরা যাত্রীসেবায় নগরীতে এবং দূরপাল্লায় বাস ছাড়ার চেষ্টা করছি। কিছুদূর যাওয়ার পরই শ্রমিকরা এসব যানবাহন চলাচলে বাধা দেয়। বাধ্য হয়েই গাড়ি থামিয়ে রাখতে হয়। ভয়েই অনেকে গাড়ি ছাড়ছেন না। বাংলাদেশ ট্রাক-কাভার্ডভ্যান মালিক সমিতির সভাপতি মোঃ তোফাজ্জল হোসেন মজুমদার বলেন, শ্রমিকরা তাদের স্বার্থে ধর্মঘট ডেকেছে। তারা যদি আমাদের ট্রাক নিয়ে রাস্তায় না নামে, আমরা কী করব। সকাল থেকে তারা বিভিন্ন স্থানে আন্দোলন করছে। ঐক্যপরিষদের আহ্বায়ক রুস্তম আলি খান বলেন, আমরা ৯ দফা দাবিতে আন্দোলন ডেকেছি। আন্দোলন শান্তিপূর্ণভাবে হচ্ছে। আমরা মনে করি আমাদের দাবিগুলো যৌক্তিক। সরকার সেগুলো মেনে নেবে। সকাল থেকে রাজধানীতে বাস চলাচল কমতে থাকে। বিভিন্ন এলাকায় শ্রমিক বিক্ষোভের কারণের প্রাইভেটকারও নামেনি। সাধারণ যাত্রীদের যাতায়াতের ভরসা ছিল এ্যাপভিত্তিক পরিবহন ও রিক্সা। অনেকে পায়ে হেঁটে গন্তব্যে যেতে দেখা গেছে। ট্রাক চলাচলে শ্রমিকদের বাধা বুধবার সকালে তেজগাঁওয়ে ট্রাক টার্মিনালে গিয়ে দেখা গেছে, সেখান থেকে কোন ট্রাক ছাড়তে দেয়া হচ্ছে না। শ্রমিকরা রাস্তায় নেমে বিভিন্ন মালবাহী পরিবহনকে বাধা দিচ্ছে। এসময় আনোয়ার হোসেন নামে এক ট্রাকচালককে মারধর করতেও দেখা গেছে। ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) দক্ষিণ ট্রাফিক বিভাগ ধানম-ি জোনের সহকারী কমিশনার আকরাম হাসান বলেন, আমার এলাকায় যান চলাচলে বাধার কোন ঘটনা ঘটেনি। আমরা সজাগ অবস্থানে রয়েছি। গাড়ির চাপ এখন স্বাভাবিক রয়েছে। সাত ঘণ্টা অবরোধের পর... এদিকে প্রায় সাত ঘণ্টা অবরোধ করে রাখার পর যাত্রাবাড়ীর রাস্তা ছেড়ে দেন শ্রমিকরা। এর আগে সকাল থেকে যাত্রাবাড়ী, সাইনবোর্ড এলাকায় বিশেষ করে নারায়ণগঞ্জ অংশে বাস চলাচলে বাধা দিয়েছেন ট্রাক, কাভার্ডভ্যান চালক ও শ্রমিকরা। এছাড়া গাজীপুর ও ডেমরা এলাকাতেও বাধা দেয়ার খবর পাওয়া গেছে। বিভিন্ন জায়গায় এ ধরনের বাধার কারণে রাজধানীতে গণপরিবহনের সংখ্যা ছিল অনেক কম। সকাল থেকে নারায়ণগঞ্জ অংশে শ্রমিকরা রাজধানীতে বাস প্রবেশে বাধা দিলেও দুপুর দেড়টার পর থেকে আবারও যান চলাচল বেড়েছে বলে জানান ডিএমপি ট্রাফিক ডেমরা বিভাগের সহকারী কমিশনার রবিউল ইসলাম। তিনি বলেন, বাস চলাচলে বাধা দেয়ার কারণে সাধারণ জনগণের দুর্ভোগ হয়েছে। তাদের কথা ভেবে আমরা মহাসড়কে রিক্সা ভ্যান এ্যালাউ করেছি। এখন কিছুটা স্বাভাবিক হয়েছে। শেরপুরে বাস-ট্রাক চালকদের কর্মবিরতি নিজস্ব সংবাদদাতা জানান, শেরপুরে বাস, ট্রাক ও সিএনজিচালিত অটোরিক্সার চালকরা কর্মবিরতি পালন করছেন। এতে বুধবার ভোর থেকে শেরপুর জেলার অভ্যন্তরীণ ও দূরপাল্লার রুটে বাস, ট্রাক ও সিএনজি অটোরিক্সা চলাচল বন্ধ রয়েছে। অন্যদিকে পণ্য পরিবহন বন্ধ থাকার পাশাপাশি যাত্রী সাধারণ চরম দুর্ভোগ ও ভোগান্তিতে পড়েছেন। খোয়ারপাড় থেকে স্বল্পসংখ্যক সিএনজিচালিত অটোরিক্সা শ্রীবরদী, ঝিনাইগাতী, নালিতাবাড়ী রুটে যাতায়াত করলেও সকল রুটে দূরপাল্লার বাসসহ ট্রাক চলাচল বন্ধ রয়েছে। জেলা সড়ক পরিবহন শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি আব্দুল হান্নান ও ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, প্রশাসনের সঙ্গে বৈঠকের পর তাদের আশ্বাসের প্রেক্ষিতে মঙ্গলবার চালকেরা কর্মবিরতি প্রত্যাহার করে নিয়েছিলেন। ওইদিন বিকেলে দুটি বাস ঢাকার উদ্দেশে রওনাও দিয়েছিল। কিন্তু পথিমধ্যে অন্য চালকদের বাধা পেয়ে বাসগুলো ফিরে আসে। ফলে চালকরা বুধবার ভোর থেকে ফের ধর্মঘট পালন করছেন। টঙ্গীতে মহাসড়ক অবরোধ, গাড়ি ভাংচুর, আহত ৫ নিজস্ব সংবাদদাতা জানান, টঙ্গীর চেরাগআলী মার্কেট ট্রাকস্ট্যান্ডের সামনে চালক-শ্রমিকরা ঢাকা-গাজীপুর মহাসড়কে অবরোধ করলে রাস্তায় সমস্ত যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। এ সময় উত্তেজিত চালক-শ্রমিকদের ইটপাটকেল নিক্ষেপে কয়েকটি গাড়ি ভাংচুর এবং ৫ পথচারী ও যাত্রী আহত হন। অবরোধের সময় স্থানীয় পুলিশ ও সিভিল প্রশাসনের কয়েক কর্মকর্তা সড়কে আটকা পড়েন এবং তাদের গাড়িতেও ইটপাটকেল এসে পড়ে। এ ঘটনার পর ঢাকা-গাজীপুর মহাসড়কে গণপরিবহনসহ সকল প্রকার যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। টঙ্গী পশ্চিম থানার ওসি জনকণ্ঠকে জানান, পরিস্থিতি সম্পূর্ণ পুলিশের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। সাতক্ষীরায় জনদুর্ভোগ চরমে স্টাফ রিপোর্টার, জানান, সাতক্ষীরায় তৃতীয় দিনেরমতো ধর্মঘট পালন করে শ্রমিকরা। কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনাল থেকে বুধবার সকাল থেকে কোন বাস ছেড়ে যায়নি। বন্ধ রয়েছে অভ্যন্তরীণ রুটের সকল বাস চলাচলও। তবে যাত্রীবাহী বাস বন্ধ থাকলেও বিআরটিসি বাস চলাচল করতে দেখা গেছে। ধর্মঘটের প্রভাব পড়তে শুরু করেছে সাতক্ষীরার ভোমরা স্থলবন্দরে। এর ফলে বিপাকে পড়েছেন ভোমরা স্থলবন্দরের ব্যবসায়ীরা। ট্রাক ঠিকমতো না পাওয়ায় তাদের দ্বিগুণ খরচে পণ্য পরিবহন করতে হচ্ছে। জেলা ট্রাক শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক শাহিনুর রহমান শাহিন জানান, কেন্দ্রীয় শ্রমিক ফেডারেশন ট্রাক ধর্মঘটের বিষয়ে এখনও কোন সিদ্ধান্ত নেয়নি। তবে নতুন সড়ক পরিবহন আইনের ভয়ে অনেকে ট্রাক চালাচ্ছেন না বলে তিনি জানান। কুড়িগ্রামের যান চলাচল বন্ধ স্টাফ রিপোর্টার জানান, কুড়িগ্রামের অভ্যন্তরীণ ও দূরপাল্লার সকল রুটে বাস, ট্রাক, ট্যাংকলড়ি, কাভার্ডভ্যান চলাচল বন্ধ থাকায় দুর্ভোগে পড়েছে যাত্রী ও ব্যবসায়ীরা। সড়ক পরিবহন আইন সংশোধনের দাবিতে বুধবার সকাল থেকে শ্রমিকরা ধর্মঘট পালন করলেও তাদের সঙ্গে যোগ দেয় বাস শ্রমিকরাও। সাভারে পরিবহন সঙ্কট সংবাদদাতা জানান, সাভার উপজেলার ঢাকা-আরিচা মহাসড়কসহ বিভিন্ন রাস্তায় অন্যান্য দিনের তুলনায় বাস চলাচল কম ছিল। আশুলিয়া বাসস্ট্যান্ডে অভ্যন্তরীণ বাস চলাচল বন্ধ করে দেয় পরিবহন শ্রমিকরা। নীলফামারীতে বাস ধর্মঘটে বিপাকে যাত্রীরা স্টাফ রিপোর্টার জানান, নীলফামারীতে ধর্মঘট পালন করেছে চালক ও শ্রমিকরা। বুধবার এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত জেলা শহর থেকে দূরপাল্লার কোন বাস ছেড়ে যায়নি। এদিকে জেলার ডোমার, ডিমলা, জলঢাকা, কিশোরীগঞ্জ, সৈয়দপুর ও সদর থেকে বাস চলাচল বন্ধ রয়েছে। সিলেটে ট্রাক ধর্মঘট স্টাফ রিপোর্টার জানান, সকাল ৬টা থেকে অনির্দিষ্টকালের ধর্মঘটে সিলেটের বিভিন্ন এলাকায় সারি সারি ট্রাক দাঁড়িয়ে ছিল। সেখান থেকে কোন ট্রাক ছেড়ে যায়নি। সিলেট ট্রাক মালিক গ্রুপের নেতারা জানান, সকাল থেকে শান্তিপূর্ণ কর্মবিরতি চলছে। বরিশালে অভ্যন্তরীণ রুটে বাস চলাচল শুরু স্টাফ রিপোর্টার জানান, বরিশালে শুরু হওয়া অনির্দিষ্টকালের পরিবহন শ্রমিকদের কর্মবিরতি প্রত্যাহার করা হয়েছে। বুধবার সকাল থেকে বরিশালের অভ্যন্তরীণ রুটে শুরু হয়েছে বাস চলাচল। নগরীর থুল্লাবাদ কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনালে এলাকা থেকে ছেড়ে যাচ্ছে বাস। ঢাকা-মাওয়া মহাসড়কে বাস চলাচল বন্ধ স্টাফ রিপোর্টার মুন্সীগঞ্জ থেকে জানান, পরিবহন শ্রমিক ধর্মঘটের কারণে ঢাকা-মাওয়া মহাসড়কে বাস চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে। এতে এ রুটে চলাচলকারী শত শত যাত্রী দুর্ভোগে পড়েছে। তবে ফেরি, লঞ্চ ও স্পীডবোট চলাচল স্বাভাবিক রয়েছে। কিন্তু ঘাটে যান না থাকায় ফেরিগুলোকে অলস সময় কাটাতে দেখা গেছে। হবিগঞ্জে ট্রাক মালিক-শ্রমিকরা কর্মবিরতিতে নিজস্ব সংবাদদাতা জানান, সকাল থেকে লাগাতার কর্মবিরতিতে গেল হবিগঞ্জ ট্রাক কাভার্ডভ্যান পণ্য পরিবহন মালিক শ্রমিক ঐক্য পরিষদ। হবিগঞ্জ ট্রাক মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক জানান, কেন্দ্রীয় নির্দেশনা অনুযায়ী ওই কর্মসূচীর প্রতি তারা একত্মতা পোষণ করেছেন। দাবি না মানা পর্যন্ত এই কর্মবিরতি চলবে। পণ্য পরিবহন বন্ধের প্রভাব চট্টগ্রাম বন্দরে স্টাফ রিপোর্টার, চট্টগ্রাম অফিস থেকে জানান, চট্টগ্রামে গণপরিবহন চলাচলে বাধা দিচ্ছে ট্রাক-কাভার্ড ভ্যান শ্রমিকরা। ফলে বুধবার নগরী ও জেলায় যাত্রীদের পড়তে হয় চরম দুর্ভোগে। এদিকে, পণ্য পরিবহন বন্ধ থাকায় উৎকণ্ঠা দেখা দিয়েছে বন্দর ও বন্দরসংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোর মধ্যে। চট্টগ্রাম বন্দরে কন্টেনার ওঠানামা স্বাভাবিক থাকলেও ডেলিভারি হয়নি পণ্য পরিবহনে ব্যবহৃত যানবাহন প্রবেশ না করায়। এতে করে চিন্তার ছাপ আমদানি-রফতানিকারক মহলে। এর প্রভাব পড়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে বাজারেও। বগুড়া থেকে সকল রুটে যান চলাচল বন্ধ স্টাফ রিপোর্টার জানান, বুধবার বগুড়া থেকে আন্তঃজেলা ও দূরপাল্লার কোন রুটে বাস-কোচ চলেনি। ঢাকাগামী কোচের কাউন্টারগুলো বন্ধ। ফলে রাজধানীমুখী কোচ বন্ধ। যাত্রীরা মহাবিপাকে। যারপরনাই দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে তাদের। বিশেষ করে নারী ও শিশুদের দুর্ভোগ চরমে। তবে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন সংস্থার (বিআরটিসি) বাসগুলো চলছে। সিরিয়াল বাতিলের হুঁশিয়ারি শ্রমিক নেতার স্টাফ রিপোর্টার জানান, অবশেষে তিন দিনের মাথায় রাজশাহী থেকে সকল রুটে বাস চলাচলের ঘোষণা দিয়েছেন মোটর শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক মাহাতাব হোসেন চৌধুরী। বুধবার সকাল সাড়ে নয়টার দিকে রাজশাহী বাস টার্মিনালে তিনি এই ঘোষণা দেন। তবে এই ঘোষণার পরও রাজশাহীতে বাস চলাচল স্বাভাবিক হয়নি বিকেল পর্যন্ত। বিভিন্ন রুটে সীমিতসংখ্যক বাস চলাচল করছে। রাজশাহী সড়ক পরিবহন গ্রুপের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক মতিউল ইসলাম টিটো জানান, এই ধর্মঘটে মালিকদের কোন সমর্থন নেই। কিন্তু শ্রমিকরা গাড়ি চালাচ্ছেন না। সিরাজগঞ্জে অনির্দিষ্টকালের ধর্মঘট স্টাফ রিপোর্টার জানান, ৯ দফা দাবিতে সিরাজগঞ্জে বাস ও ট্রাক-কাভার্ডভ্যান মালিক-শ্রমিক ঐক্য পরিষদের ডাকে অনির্দিষ্টকালের ধর্মঘট চলছে। সড়ক পরিবহন আইন সংশোধনের দাবিতে সড়ক-মহাসড়কে দূরপাল্লার বাস, ট্রাক, লরি ও কাভার্ডভ্যান চলছে না। তাদের সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করেছে ট্রাক ও লোকাল বাস সার্ভিসও। ঝালকাঠিতে বাস চলাচল বন্ধ নিজস্ব সংবাদদাতা জানান, ঝালকাঠিতে দ্বিতীয় দিনেও অনির্দিষ্টকালের জন্য বাস চলাচল বন্ধ রয়েছে। ঝালকাঠি থেকে ঢাকাসহ জেলার অভ্যন্তরীণ ও দূরপাল্লার সকল রুটে আকস্মিক বাস বন্ধ রাখার কারণে এসব রুটে যাতায়াতকারী যাত্রীরা দুর্ভোগে পড়েছেন। বেনাপোলে আটকে আছেন পাসপোর্ট যাত্রীরা স্টাফ রিপোর্টার জানান, পরিবহন ধর্মঘটের কারণে হুমকির মুখে পড়েছে বেনাপোলের আমদানি-রফতানি বাণিজ্য। এ বন্দর দিয়ে ভারত থেকে পণ্য আমদানি-রফতানি অব্যাহত থাকলেও থমকে গেছে পণ্য পরিবহন প্রক্রিয়া। এছাড়া ভারত থেকে আসা পাসপোর্ট যাত্রীদের অনেকেও আটকে পড়ে আছেন বেনাপোলে। নারায়ণগঞ্জে ৮ ঘণ্টা মহাসড়ক অবরোধ স্টাফ রিপোর্টার জানান, নতুন সড়ক পরিবহন আইনের বিরোধিতা করে নারায়ণগঞ্জে পরিবহন শ্রমিকরা বৃহস্পতিবার সকাল ৭টা থেকে বেলা ২টা পর্যন্ত ৮ ঘণ্টা সিদ্ধিরগঞ্জের সাইনবোর্ড এলাকায় ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক অবরোধ করে রাখে। এতে দেশের গুরুত্বপূর্ণ ঢাকা-চট্টগ্রাম ও ঢাকা-সিলেট মহাসড়কসহ আশপাশের সড়কে যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়।
×