ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

নওশাবার মামলা হাইকোর্টে স্থগিত

প্রকাশিত: ০৩:৫৮, ২০ নভেম্বর ২০১৯

নওশাবার মামলা হাইকোর্টে স্থগিত

অনলাইন রিপোর্টার ॥ ফেসবুকে গুজব ছড়ানোর অভিযোগে অভিনেত্রী কাজী নওশাবা আহমেদের বিরুদ্ধে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি আইনের মামলার কার্যক্রম ছয় মাসের জন্য স্থগিত করেছে হাইকোর্ট। নওশাবার এক আবেদনের শুনানি করে বিচারপতি মো. রেজাউল হক ও বিচারপতি ভীষ্মদেব চক্রবর্তীর হাইকোর্ট বেঞ্চ বুধবার রুলসহ এই আদেশ দেয়। কেন ওই মামলার কার্যক্রম বাতিল করা হবে না- রুলে তা জানতে চেয়েছে আদালত। চার সপ্তাহের মধ্যে সরকারকে তা জানাতে বলা হয়েছে। আদালতে নওশাবার পক্ষে শুনানি করেন ব্যারিস্টার জ্যোর্তিময় বড়ুয়া। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল আমিনুর রহমান চৌধুরী টিকু। পরে জ্যোর্তিময় বড়ুয়া সাংবাদিকদের বলেন, ২০১৮ সালের ৫ আগস্ট তথ্য প্রযুক্তি আইনে নওশাবার বিরুদ্ধে মামলাটি দায়ের করা হয়। কিন্তু ওই বছর ৮ অক্টোবর তথ্য প্রযুক্তি আইন বিলুপ্ত করে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন কার্যকর করা হয়। “নতুন আইনের ৬১ ধারা মতে, তথ্য প্রযুক্তি আইনের কোনো মামলা বিচারাধীন থাকলে তা ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে চলমান থাকবে। কিন্তু এ মামলার অভিযোগপত্র দেওয়া হয় চলতি বছরের ৩০ এপ্রিল। আর অভিযোগ আমলে নেওয়া হয় ৩ সেপ্টেম্বর। তাই এ মামলার কার্যক্রম অবৈধ।” এ কারণে মামলা বাতিল চেয়ে আবেদন করা হয়েছিল জানিয়ে এই আইনজীবী বলেন, “আদালত ৬ সপ্তাহের স্থগিতাদেশ দিয়ে রুল জারি করেছে।” নিরাপদ সড়কের দাবিতে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মধ্যে গুজব ছড়ানোর অভিযোগে গত বছর ৪ আগস্ট রাতে রাজধানীর উত্তরা থেকে নওশাবাকে গ্রেফতার করে র‌্যাব। ওই দিন আন্দোলনের মধ্যে ঢাকার জিগাতলায় সংঘর্ষ বাঁধলে ফেসবুকে লাইভে এসে দুই শিক্ষার্থীর মৃত্যু এবং একজনের চোখ তুলে ফেলার ‘খবর’ দেন নওশাবা, যা পরে গুজব প্রমাণিত হয়। নওশাবাকে গ্রেফতার করার পর তার বিরুদ্ধে তথ্যপ্রযুক্তি আইনে মামলা করে র্যাব। ওই মামলায় দুই দফায় মোট ছয়দিন তাকে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। এর মধ্যে অসুস্থ হয়ে পড়ায় তাকে হাসপাতালে নিয়ে চিকিৎসাও দেওয়া হয়। পরে গতবছর কোরবানির ঈদের আগে ২১ আগস্ট জামিনে মুক্তি পান নওশাবা। সেজন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ধন্যবাদ জানিয়ে ফেসবুকে একটি বার্তা দেন এই অভিনেত্রী, যা তার স্বামী এহসান রহমান জিয়ার ফেইসবুক ওয়ালে প্রকাশ করা হয়। ‘ঢাকা অ্যাটাক’, ‘ভুবন মাঝি’সহ কয়েকটি সিনেমায় অভিনয় করা নওশাবার ওই বার্তায় বলা হয়, “আমি আবারো একান্ত অনুরোধ করে বলতে চাই, যেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর সুযোগ্য কন্যা, গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ সরকারের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী তার চিরায়ত মাতৃত্বসুলভ মমতায় আমার আবেগতাড়িত ও অনিচ্ছাকৃত ভুলকে ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখেন।” আলোচিত এ মামলার তদন্ত শেষে পুলিশের কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিটের পরিদর্শক শওকত আলী সরকার গত ১২ মে ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিম আদালতে নওশাবার বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দাখিল করেন। সেখানে বলা হয়, “কাজী নওশাবা ইচ্ছাকৃত ও পরিকল্পিতভাবে রাষ্ট্রের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করতে জনসাধারণের অনুভূতিতে আঘাত করে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটনোর জন্য মিথ্যা ও মানহানিকর তথ্য প্রকাশ এবং প্রচার করে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি আইন-২০০৬ (সংশোধনী) এর ৫৭ (২) ধারায় অপরাধ করেছেন।” ঢাকার মহানগর হাকিম দিদার হোসেন ২৮ মে ওই অভিযোগপত্র আমলে নিয়ে নওশাবাকে আদালতে হাজির হওয়ার নির্দেশ দেন। অভিযোগ গঠনের শুনানির আগেই মামলাটি হাইকোর্টের আদেশে স্থগিত হয়ে গেল।
×