ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

হংকংয়ে কৃষ্ণ সন্ত্রাস

প্রকাশিত: ১১:৫৫, ২০ নভেম্বর ২০১৯

হংকংয়ে কৃষ্ণ সন্ত্রাস

হংকংয়ের কমিউনিস্ট পার্টি নিয়ন্ত্রিত সংবাদপত্রগুলোর ভাষায় নগরী এখন কৃষ্ণ সন্ত্রাসের করাল গ্রাসে। মূল চীন থেকে যারা এখানে পড়াশোনা, চাকরি-বাকরি বা ব্যবসা-বাণিজ্য করতে এসেছে তাদের সাবধানে, হিসাব করে কথাবার্তা বা আচরণ করতে হয়। নইলেই বিপদ। ক্ষিপ্ত হংকংবাসীদের হাতে তাদের হেনস্তা বা নাকাল হওয়ার বহু ঘটনা ঘটেছে। এমনকি মারধরেরও শিকার হতে হয়েছে অনেককে। গত কয়েক সপ্তাহে এমন ঘটনা অধিকতর নৈমিত্তিক হয়ে উঠেছে। হংকংয়ের বিক্ষোভ আন্দোলনের টার্গেট উত্তরোত্তর হয়ে দাঁড়িয়েছে মূল ভূখ-ের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত সম্পত্তি বা প্রতিষ্ঠান। গত ২ নবেম্বর বিক্ষোভকারীরা চীনের রাষ্ট্রীয় বার্তা সংস্থা ‘সিনহুয়ার’ অফিস ভবনে ভাংচুর চালায়। তারা দরজার গ্লাস ভাঙ্গে। দেয়ালে লিখন আঁকে এবং লরিতে ছোটখাট আগুন লাগায়। মূল চীনের অন্যান্য যেসব প্রতিষ্ঠানে সম্প্রতি ভাংচুর হয়েছে তার মধ্যে রয়েছে টং রেন ট্যাং নামে একটি ফার্মেসির শাখা, ইলেক্ট্রনিক্স কোম্পানি জিয়াওমির একটি আউটলেট এবং চুং হুয়া নামে একটি বইয়ের দোকান। মূল চীনের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত কিছু দোকান হামলার হাত থেকে রক্ষা পেতে ধাতব বা ব্যারিকেড রচনা করেছে। এ জাতীয় ঘটনার কারণে চীনের মূল ভূখ- থেকে হংকংয়ে ট্যুরিস্টের আগমনের সংখ্যা নাটকীয়ভাবে কমে গেছে। অক্টোবরের প্রথম সপ্তাহে যা ছিল জাতীয় ছুটির সময় এক বছর আগের তুলনায় ট্যুরিস্টের সংখ্যা ৫৬ শতাংশ কম ছিল। ট্যুরিস্টদের অন্যতম আকর্ষণ হচ্ছে বুধিনিয়া ফুলের এক বিশাল ভাস্কর্য। এটি চীনের কেন্দ্রীয় সরকারের তরফ থেকে হংকংকে উপহার দেয়া হয়েছিল। সম্প্রতি এক রবিবার মূল চীনের পর্যটকবাহী মাত্র গোটা দশেককোচ সেখানে আসে। অথচ গোলযোগ শুরু হওয়ার আগে প্রায় একশ’ কোচ সেখানে আসত। মূল চীনের ছাত্ররা বিশেষভাবে বিপন্নবোধ করছে। কারণ বিক্ষোভে অংশগ্রহণকারীদের অগ্রভাবে এমন অনেকে থাকে যাদের সঙ্গে একই ক্লাসে তারা পড়াশোনা করে। স্থানীয় এই ছাত্ররা ক্যাম্পাসের রাস্তায় স্লোগান লিখে রাখছে এবং করিডোরগুলোর দেয়াল রাজনৈতিক বক্তব্যে ছেয়ে ফেলছে। মূল চীনের ছাত্ররা চুপচাপ থাকছে, নিজেদের অন্তরালে রাখছে, সংযত আচরণ করছে। কেউ কেউ বৈরী পরিস্থিতিতে পড়ার আশঙ্কায় প্রকাশ্য স্থানে মান্দারিন ভাষায় কথা বলা পরিহার করছে। গত ১ অক্টোবর চীনের জাতীয় দিবসে হুয়াংসহ মূল চীনের কয়েক ডজন ছাত্র চীনের জাতীয় সঙ্গীত গাওয়ার জন্য হংকং বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে সমবেত হলে স্থানীয় ছাত্ররা ১৯৮৯ সালের তিয়েনআন মেন স্কোয়ারের বিক্ষোভের ঘটনার প্রতি সমর্থন জানিয়ে ক্যান্টনি ভাষায় স্লোগান দিতে শুরু করলে উত্তেজনা বাড়তে থাকে এবং তা ছড়িয়ে পড়ে। স্থানীয় ছাত্ররা অনেক সময় মূল চীনের ছাত্রদের কমিউনিস্ট পার্টির মতাদর্শের ধারক বলে মনে করে। স্থানীয়রা কখনও কখনও মূল চীনের ছাত্রদের জিজ্ঞেস করে, তারা যদি স্বাধীনতা ও গণতন্ত্রকে সমর্থন না করে তাহলে হংকংয়ে পড়তে এসেছে কেন। বলাবাহুল্য সে প্রশ্নের জবাব কেউ দেয় না কারণ অনেকে পাল্টা সমালোচনার পাত্র হতে চায় না আবার অনেকে সরাসরি বিক্ষোভে অংশগ্রহণ করায় তারা উত্তর দিয়ে কোনভাবে চিহ্নিত হতে চায় না পাছে কর্তৃপক্ষের রোষানলে পড়ে। এ কথা সত্য যে, মূল চীনের ছাত্রদের অল্প কিছু অংশ গণতন্ত্র আন্দোলনের ব্যাপারে প্রবল আগ্রহ প্রদর্শন করে থাকে। আবার অনেকে পড়াশোনা শেষ করে মূল ভূখ-ে একটা ভাল চাকরি পাওয়াই তাদের মূল লক্ষ্য মনে করে। তাদের মতে রাজনীতি একটা গৌণ ব্যাপার। তবে হংকংয়ের উদার সংস্কৃতি এ বছর অনেককে বদলেও দিয়েছে। যেমন চায়না ইউনিভার্সিটি ইন হংকং থেকে এ বছর মাস্টার্স করা জুলি লী মিডিয়ার মাধ্যমে জানতে পেরেছে যে তার হাইস্কুলের এক সহপাঠী যে শ্রমিকদের অধিকারের পক্ষে প্রচারাভিযানের সমর্থন দেয়ার জন্য মূল ভূখ-ে গ্রেফতার হয়েছিল সে দেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রকারী নয় যা সরকারী মিডিয়া প্রচার করেছে। জুলি স্থানীয় সহপাঠীদের সঙ্গে রাজনৈতিক বিতর্কে অংশ নেয় এবং সেটা উপভোগও করে থাকে। কিন্তু সেও হংকংবাসীদের সহিংসতা ও ভাংচুরের ঘটনায় ত্যক্ত হয়ে উঠেছে। হংকং ছেড়ে মূল চীনে ফিরে যেতে পারলেই এখন সে বাঁচে। চলমান ডেস্ক সূত্র : দি ইকোনমিস্ট
×