ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

এনামুল হক

আফ্রিকায় প্রভাব বাড়াচ্ছে রাশিয়া

প্রকাশিত: ১১:৫৫, ২০ নভেম্বর ২০১৯

আফ্রিকায় প্রভাব বাড়াচ্ছে রাশিয়া

বিশ্বের দরিদ্রতম ও ভঙ্গুরতম দেশগুলোর অন্যতম মধ্য আফ্রিকান প্রজাতন্ত্রের (সিএআর) প্রেসিডেন্ট ফস্টিন আর্চেজ তুয়াদেরা কঠিন বিপদে পড়ে ২০১৭ সালের অক্টোবরে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভøাদিমির পুতিনের সাহায্য চেয়েছিলেন। পুতিন তাৎক্ষণিক তাতে সাড়া দিয়েছিলেন। অস্ত্র ও সৈন্য পাঠিয়ে বিপন্ন তুয়াদেরা সরকারকে রক্ষা করেছিলেন। কয়েক মাস পর একটি রুশ কোম্পানি লোবায়ে ইনভেস্ট সে দেশে সোনা ও হীরার অনুসন্ধানের অনুমতি পায়। ব্যাপারটা যেমন গোপনীয় তেমনি এতে চক্রান্তের কৃষ্ণ হাত ছিল। তিন রুশ সাংবাদিক এ ব্যাপারে ওই দেশটিতে তথ্যানুসন্ধানে এলে ২০১৮ সালের জুলাই মাসে তাদের সেখানে হত্যা করা হয়। বলাই বাহুল্য মধ্য আফ্রিকান রাষ্ট্রে রুশ সাহায্যেও পেছনে তাদের বিশাল অর্থনৈতিক স্বার্থ ছিল। এ বছরের ২৩ ও ২৪ অক্টোবর রাশিয়ার কৃষ্ণ সাগার তীরবর্তী সোচি শহরে ৪০ জনেরও বেশি আফ্রিকান নেতার এক শীর্ষ বৈঠক প্রেসিডেন্ট পুতিনের উদ্যোগে অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে বাণিজ্য ও বিনিয়োগ নিয়ে অনেক কথাবার্তা হয়। তবে মধ্য আফ্রিকান প্রজাতন্ত্র ও অন্যান্য দুর্বল রাষ্ট্রে রাশিয়ার কার্যকলাপের প্রকৃতিকে অনেকেই ভুলে যাননি। আফ্রিকায় রাশিয়ার হস্তক্ষেপের দীর্ঘ ইতিহাস আছে। ¯œায়ুযুদ্ধের সময় সোভিয়েত ইউনিয়ন আফ্রিকার এঙ্গোলা, মোজাম্বিক ও গিনি বিসাউয়ের মতো দেশগুলোর মুক্তি আন্দোলনে সাহায্য করেছিল, ঔপনিবেশিক শাসনোত্তর দেশগুলোর নেতাদের মার্ক্সবাদ লেনিনবাদের পথে টেনে এনেছিল। অনেক ক্ষেত্রে পাশ্চাত্যের সঙ্গে প্রক্সিযুদ্ধও চালিয়েছিল। সোভিয়েতের পতনের পর রাশিয়ার উচ্চাভিলাষ ভাটা পড়েছিল। কিন্তু গত দশকে বিশেষ করে ক্রিমিয়ার ঘটনা নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের আরোপিত নিষেধাজ্ঞার পর রাশিয়া আফ্রিকাকে উত্তরোত্তর গুরুত্বপূর্ণ একটি ক্ষেত্র হিসেবে রাখতে থাকে। ২০১৫ সাল থেকে এ পর্যন্ত ডজন খানেক আফ্রিকান নেতা রাশিয়া সফর করেছেন। ২০০৬ থেকে ২০১৮ সালের মধ্যে সাহারা সন্নিহিত আফ্রিকার সঙ্গে রাশিয়ার মোট বাণিজ্য ৩৩৬ শতাংশ বেড়েছে। রাশিয়া আফ্রিকায় বৃহত্তম অস্ত্র রফতানিকারক দেশ। ২০১৩ থেকে ২০১৭ সালের মধ্যে এই মহাদেশে যত অস্ত্র সরবরাহ হয়েছে তার ৩৯ শতাংশই রাশিয়ার দেয়া। এর মধ্যে হেলিকপ্টার, ট্যাঙ্ক, ক্ষেপণাস্ত্র সবই আছে। রাশিয়া যে শুধু অস্ত্র যোগায় তা নয়। অনেক আফ্রিকান দেশের অভ্যন্তরীণ ব্যাপারে রাশিয়া গভীরভাবে জড়িত। এর মধ্য দিয়ে রাশিয়ার আফ্রিকান নীতির মূলমন্ত্রটি ফুটে ওঠে এবং সেটা হলো সুবিধাবাদ। ভঙ্গুর রাষ্ট্রগুলোর তরফ থেকে সুযোগ পেলেই রাশিয়া গিয়ে সেখানে ঢোকে। ঢোকার পর রাশিয়া নিজের প্রভাব বাড়ায় এবং রাষ্ট্রীয় সুবিধা ও আনুকুল্যভোগী ব্যক্তি এবং প্রতিষ্ঠান দিয়ে সেখানে ব্যবসায়িক তৎপরতা চালিয়ে অর্থোপার্জন করে। এই কাজগুলো খুব কম খরচে করা যায় অথচ প্রাপ্তিটা হয় অনেক বেশি। মধ্য আফ্রিকান প্রজাতন্ত্র হলো রাশিয়ার এই কৌশলের প্রতীকী দৃষ্টান্ত। মাত্র ৫৬ লাখ ডলার খরচ করে পুতিনের অনুগ্রহভাজনরা খনিজ সম্পদ আহরণের সুযোগ পেয়েছে, ভাড়াটে লোকদের চাকরি দিয়েছে এবং অন্যান্য দেশের রাজনীতিতে হস্তক্ষেপ করার জন্য পুতিনের কৌশল পরীক্ষা করে দেখতে পেরেছে। অবশ্য মধ্য আফ্রিকান প্রজাতন্ত্রই যে একমাত্র পরীক্ষা ক্ষেত্র তা নয়। মাদাগাস্কারেও রাশিয়ার তৎপরতা রয়েছে। সেখানে রুশ এজেন্টরা ২০১৮ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ৩৬ জন প্রার্থীর মধ্যে অন্তত ৬ জন প্রার্থীকে সাহায্য করেছিল বলে অভিযোগ আছে। জিম্বাবুইয়েতে রুশ উপদেষ্টারা গত বছরের নির্বাচনের আগে শাসক দল জানু-পিএফ পার্টিকে পরামর্শ দিয়েছিল এবং বিনিময়ে ক্রেমলিনের সঙ্গে যুক্ত ফার্মগুলো খনিজ সম্পদ আহরণ ও সার ব্যবসায় চুক্তিতে স্বাক্ষর করেছিল। রাশিয়া গণপ্রজাতন্ত্রী কঙ্গোর নির্বাচনে সাবেক প্রেসিডেন্ট কাবিলার মনোনীত প্রার্থীর অনুকূলে আনার চেষ্টা করেছিল। গিনিতে রাশিয়া সংবিধান লঙ্ঘন করে তৃতীয় দফা মেয়াদের জন্য প্রেসিডেন্ট পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে প্রেসিডেন্ট আলফা কনডের উদ্যোগকে সমর্থন করছে। বলা বাহুল্য এদেশে রাশিয়ার ব্যবসায় স্বার্থ আছে। রাশিয়ার এ্যালুমিনিয়াম ফার্ম রুসালকে ২৭ শতাংশ বক্সাইট যোগায় এই দেশটি। মোজাম্বিকে রাশিয়ার কোম্পানি গ্যাস কন্ট্রাক্ট পেয়েছে এবং রুশ গোয়েন্দারা দুর্নীতিবাজ শাসক দল ফ্রেলিমোকে ক্ষমতায় রাখার আপ্রাণ চেষ্টা চালাচ্ছে। ‘ সূত্র : দি ইকোনমিস্ট
×